জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় : প্রক্টর ড. মোস্তফা কামালের মেয়াদ বাড়ল

আগের সংবাদ

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে প্রধানমন্ত্রী : কেউ গৃহহীন থাকবে না

পরের সংবাদ

করোনা-ডেঙ্গু : বিপদ-আপদের মিতালি

প্রকাশিত: আগস্ট ৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অচেনা ঘাতক করোনা শিগগিরই যাচ্ছে না- এ তথ্যের সত্যতা আর আপেক্ষিক নয়। এর মাঝেই চেনা ঘাতক ডেঙ্গুর থাবা। চেনা-অচেনা এই শত্রæর সঙ্গে বসবাসে বাধ্যতা যেন অবধারিত। পরিত্রাণের আলামত নেই বললেই চলে। যদিও ২০২১ সালে করোনা মহামারি থেকে পরিত্রাণের আশায় ছিল দেশবাসী। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল ২০২১-এ করোনার চক্ষু আরো রক্তলাল। গত সাত মাসে এর ভয়াবহতা আরো তীব্র। তীব্র থেকে তীব্রতর। তার ওপর দৃশ্যমান এডিস মশার হানা এবার কেবল রাজধানী ঢাকায় নয়, দেশের প্রায় সব জেলা সদরেই। মহামারির সঙ্গে পরিবর্তিত জলবায়ুর জেরও সইছে বিভিন্ন দেশ। সেই তালিকায় বাংলাদেশও। বিপদের মধ্যে আপদ বা আপদের মধ্যে বিপদের এই দাপট কাবু করে ফেলেছে দেশটিকে।
প্রসঙ্গক্রমে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী একটি মূল গ্রিন হাউস গ্যাস, বায়ুমণ্ডলীয কার্বন ডাই-অক্সাইডের ঘনত্ব, এপ্রিল ২০২১ সালে প্রাক-শিল্প স্তরের ওপরে এক বৃহত্তর ৫০ শতাংশ রেকর্ড শীর্ষে পৌঁছার কথা বলতে হয়। এই উদ্বেগজনক বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিষয়টি বিশ্বের মিডিয়াতে প্রায় কোনো মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারেনি। যদিও এটি বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। একইভাবে উত্তর-পশ্চিম আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার একটি ভয়ংকর হিটওয়েভ অবাক করার মতো করে সংক্ষিপ্ত কাভারেজ পেয়েছে বিশ্ব মিডিয়ায়।
করোনার আগ্রাসী অভিঘাতে এরই মধ্যে দেশে দেশে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। বাংলাদেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে বিপুল জনগোষ্ঠী। প্রবাসী হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে দেশে ফিরেছে। কর্মসংস্থান কমেছে ৩০-৪০ শতাংশ, কারো কারো বেতনও কমেছে। বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ খাত তলানিতে চলে এসেছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতায় বড় টান পড়েছে। নিত্যদিনের চাহিদা মেটানো দায় হয়ে পড়েছে তাদের। আয় কমে যাওয়ায় মধ্যবিত্তরা প্রয়োজনের তুলনায় ব্যয় কমিয়েছেন। তার নিচের স্তরের মানুষ প্রয়োজন বিবেচনায় গুরুত্ব দিচ্ছে অগ্রাধিকার খাতকে। এরও নিচের স্তরের লোকজন অল্প খেয়ে-পরে কোনোমতে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসের সূত্র মতে, করোনার প্রভাবে স্বল্প বেতনের অদক্ষ কর্মীদের আয় বেশি কমেছে। যারা অস্থায়ী কর্মী, তাদের আয়ও বেশি কমেছে। একই সঙ্গে শিল্প, সেবা ও কৃষি খাতেও শ্রমিকদের আয় কমেছে। অর্থনীতির মূল ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে স্বল্প বেতনের দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমের চলাচল কমে যাওয়ায় তাদের আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাত রয়েছে। আয় কমায় আর্থসামাজিকভাবে তাদের একটি দুর্বল অবস্থানে ফেলেছে। করোনায় বেসরকারি খাতে ৪০ শতাংশ মানুষ চাকরি হারিয়েছেন বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। অবশ্য সরকারি হিসাব বলছে, এ সংখ্যা ১৬ লাখের বেশি। আয়শূন্য এসব মানুষের বেশিরভাগ আজো নতুন করে কোনো কাজ জোটাতে পারেনি। অনেকের কমে গেছে আগের নিয়মিত আয়ও। বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার তথ্য বলছে, গত সোয়া এক বছরে নতুন করে দারিদ্র্যের শিকার হয়েছে দেশের আড়াই থেকে ৩ কোটি মানুষ।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের জরিপে দেখা গেছে, ৭০ শতাংশ মানুষের আয় কমে গেছে। দারিদ্র্যসীমার নিচে আড়াই থেকে তিন কোটি মানুষ নেমেছে। ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া, কাজ হারানো, কাজের অনিশ্চয়তার কারণে কুরবানির সময় মানুষ যেভাবে খরচের যে পরিকল্পনা থাকে, সেটা এবার সম্ভব হয়নি। সে কারণেই দেখছি যে কুরবানির পশুর বড় একটা অংশ অবিক্রীত থেকে গেছে। অন্যদিকে সিপিডির তথ্য অনুযায়ী, ৮০ শতাংশ দরিদ্র পরিবারে খাবার গ্রহণের পরিমাণ কমেছে। সঞ্চয় কমেছে ৬৫ শতাংশ দরিদ্রের। এর মাঝে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো ডেঙ্গুর প্রকোপ মানুষকে ত্রাহিদশায় ফেলেছে। শহরের হাসপাতালগুলোতে ঠাঁই নেই অবস্থা অনেক দিন থেকেই। করোনা আক্রান্তদের জায়গা মিলছে না। ফ্লোরেও রোগীর গিজগিজ। তার ওপর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবে চিকিৎসা ব্যবস্থা চুরমার হওয়ার জোগাড়।
বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার সাধ্যই নেই অনেকের। ঢাকার বাইরে অক্সিজেন সংকটে মৃত্যুর খবর মামুলি সংবাদে পরিণত হয়েছে। এরপরও মন্দের মধ্যে ভালো খবর হচ্ছে ডেঙ্গুর বিষয়টি এবার অস্বীকারের চর্চা চলেনি। যা চলেছিল করোনা নিয়ে। শুরুতে আমলে নেয়া হয়নি। গুজব বলে দাবি করার চেষ্টা হয়েছে। গুজব রটানোর অভিযোগে ধরপাকড়ও চলেছে। সময় নিতে নিতে গত বছরের ৮ মার্চে প্রকাশ পায় করোনা আক্রান্তের তথ্য। আর করোনায় প্রথম মৃত্যু সংবাদ আসে আরো ১০ দিন পর ১৮ মার্চে। এর পর একে একে দৈনিক ২০০ ছাড়িয়ে সরকারি হিসাবে মৃত্যুসংখ্যা এখন ২১ হাজারে। তাও শুধু করোনায়। লক্ষণ বা উপসর্গে মৃত্যু এ হিসাবের বাইরে। শনাক্তের সংখ্যা চলে গেছে প্রায় ১৪ লাখে। আক্রান্তের সংখ্যা নিশ্চয়ই এর চেয়েও বেশি। টেস্ট না করা পর্যন্ত সেই সংখ্যা নির্ণয় করা অসম্ভব। হাহাকার-হাপিত্যেশের মাঝে করোনার টিকা এসেছে। বাংলাদেশে এখন অ্যাস্ট্রাজেনেকার পাশাপাশি ফাইজার, মডার্না ও সিনোফার্মের টিকা দেয়া হচ্ছে। টিকাদান বাড়লেও মৃত্যু কমেনি।
এমন সঙ্গিন অবস্থায় ডেঙ্গুর চোখ রাঙানি। জানুয়ারি থেকে ২৯ জুলাই সকাল পর্যন্ত ২ হাজার ২৯২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে। এই বছরের সর্বাধিক ১ হাজার ৯২০ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে শুধু জুলাই মাসেই, যা এ বছর মোট আক্রান্তের শতকরা ৮৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। চিকিৎসকরা বলছেন, করোনার চেয়ে ডেঙ্গুর কষ্ট আরো বেশি। করোনা-ডেঙ্গু উভয় ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া রোগীও পাচ্ছেন তারা। করোনার টিকা আবিষ্কারে অভূতপূর্ব সাফল্য দেখিয়েছে আধুনিক বিশ্ব। অতীতের বিভিন্ন মহামারি দমনে এত কম সময়ে টিকা আবিষ্কারের নজির নেই। আবিষ্কারের পাশাপাশি করোনার টিকা প্রয়োগের সাফল্যও একটি ঘটনা। কেউ সফল আবিষ্কারে, কেউ আমদানিতে, কেউ মজুতে। আর কেউবা প্রয়োগ ব্যবস্থাপনায়। যা অল্প সময়ের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান এনে দিয়েছে। ২০২০ সালের শেষ দিকে করোনার প্রথম ভ্যাকসিনের বিকাশ আসে বেশ দ্রুত। টিকা উৎপাদনকারী বা আমদানিতে সক্ষমতা দেখানো দেশগুলো বেশ স্বস্তিতে আছে। বাকিদের কারো কারো অন্দরে তিউনিসিয়ার ভাগ্য বরণের আতঙ্ক ভর করেছে।
কোনো কোনো দেশের সরকার কৃতিত্ব জাহির করতে মৃত্যুর এবং আক্রান্তের সংখ্যা কম দেখাচ্ছে। ভারতের এ সংক্রান্ত চাতুরির অভিযোগ বিশ্বগণমাধ্যমেও বেশ প্রচার পেয়েছে। বলা হচ্ছে, এটি আরেকটি মানবতাবিরোধী অপরাধ। এর মাঝে চীনে নতুন করে করোনা ছড়ানোর বিচ্ছিন্ন তথ্য এসেছে। বলা হচ্ছে, এটি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। উহান নয়, এবার শুরু নানজিং থেকে। নানজিংয়ের ৯৩ লাখ অধিবাসীকে পরীক্ষা করা হচ্ছে। একটা কেস পাওয়া গেলেও চীনে পুরো এলাকা বা শহরের সবাইকে পরীক্ষা করা হয়, যা পৃথিবীর কোথাও করার কথা শোনা যায না ও তা সম্ভবও নয়। কিন্তু চীনে এমন গণটেস্ট করে বলে পৃথিবী শুনে আসছে। সরকারিভাবে চীন এখন পর্যন্ত নীরব এ প্রশ্নে। ঘটনা সত্য হলে এটি আরেক বিপদের লাল বার্তা। ২০২০ সালের মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে চীনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক প্রায়?। কিন্তু পৃথিবীর কোনো দেশই আর পুরো স্বভাবিক হতে পারছে না। সেখানে চীনেই আবার করোনার বিস্তারের খবর মিথ্যা হলেই ভালো। তা সবার জন্য হবে ভালো খবর।
মোস্তফা কামাল : সাংবাদিক ও কলাম লেখক; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়