৩১ আগস্ট পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ল

আগের সংবাদ

ট্র্যাকে জ্যামাইকান সুন্দরীদের রাজত্ব

পরের সংবাদ

পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস : সারা বছর নিষ্ক্রিয় প্রশাসন টনক নড়ে বর্ষা এলে

প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ৩১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাসরতদের সরাতে সারা বছর প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ না থাকলেও বর্ষা মৌসুম এলেই শুরু হয় উচ্ছেদে তোড়জোড়। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে চট্টগ্রামে পাহাড়ধসের ঘটনায় প্রাণহানি ঘটলেও পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস বন্ধ হয় না। পাহাড়ধসে প্রাণহানি বন্ধে এবং ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস বন্ধে বিভিন্ন সময় পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি নানা সুপারিশ করলেও এসবের কিছুই বাস্তবায়ন হয় না। অনেকেই বলছেন, চট্টগ্রামে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি সারা বছর থাকে বেহুঁশ, বর্ষায় ফেরে তাদের হুঁশ। এদিকে গত কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণে পাহাড়ধসের আশঙ্কা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
এবারো বর্ষার শুরুতে পাহাড়ধসে প্রাণহানি ঠেকাতে প্রশাসনের উদ্যোগ শুরু হয়। তবে এখনো পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে হাজার হাজার মানুষ। পাহাড়ধসে প্রাণহানি ঠেকাতে রয়েছে ব্যবস্থাপনা কমিটি। গত মে মাসে কমিটির ২১তম সভায় সেবা সংস্থাগুলোকে পাহাড়ের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে চিঠি পাঠানো হলেও এখনো কোনো সংস্থার সাড়া মেলেনি। এদিকে গত তিন দিন ধরে টানা ভারি বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরীতে পাহাড়ধসের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। অতি ভারিবর্ষণের কারণে পাহাড় ও ভূমিধসের ঝুঁকিতে রয়েছেন পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করা বাসিন্দারা। যদিও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন বলছে, পাহাড়ের আশপাশে থাকা লোকজনের সতর্ক করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। টানা বৃষ্টিপাতে ভূমিধসের আশঙ্কায় মঙ্গলবার রাত থেকে গত বুধবার সকাল পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের টিম চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়ে অভিযান চালায়। এ সময় নগরীর কয়েকটি পাহাড় থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসরত ৯২টি পরিবারকে সরিয়ে নেয় জেলা প্রশাসন। এ সময় ২০টি ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।
চট্টগ্রামের একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এবং ছয়জন সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ অভিযানে ছিলেন। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক ভোরের কাগজকে বলেন, ‘ছয়টি পাহাড় থেকে ৯২ পরিবারের ৩১০ জন নারী-পুরুষ ও শিশুকে সরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়া হয়। তাদের চারটি আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। অভিযান এখনো চলমান আছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ১৭টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ

পাহাড়ে ৮৩৫টি পরিবার বসবাস করছে। অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিমালিকানাধীন ১০টি পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা ৫৩১টি। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মালিকানাধীন সাতটি পাহাড়ে অবৈধ বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা ৩০৪টি। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় পাহাড়ের গা ঘেঁষে কিংবা পাহাড় কেটে বসতি গড়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালীরা পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন করলেও প্রশাসনের এ বিষয়ে তেমন নজর নেই। নগরীর বিভিন্ন পাহাড়ে প্রতিদিনই গড়ে উঠছে ঝুপড়ি থেকে শুরু করে চার-পাঁচ তলার দালান। পাহাড়ে বসবাস করা বেশির ভাগ মানুষই নিম্ন আয়ের। সেখানে বসবাসের জন্য নির্বিচারে পাহাড়কাটা হচ্ছে। ফলে বৃষ্টি হলেই পাহাড়ের মাটিধসে দুর্ঘটনা ঘটছে।
নগর বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রশাসনের ব্যর্থতায় দিন দিন বাড়ছে পাহাড়ে বসতি। মদত দিচ্ছে প্রভাবশালীরা। দফায় দফায় বৈঠক, তালিকা প্রণয়ন ও সুপারিশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ অবৈধ বসতি সরানোর কাজ।
পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাজমুল আহসান বলেন, যারা অবৈধভাবে এই পাহাড়গুলোতে বসবাস করছে তাদের গ্যাস-পানির সংযোগ আছে। এই সংযোগগুলো বিচ্ছিন্ন করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। অবৈধভাবে সরকারি জমি দখল করে ভাড়া দেয়া এবং উচ্চ আদালতে মামলা চলমান থাকাসহ নানা জটিলতা থাকায় বিভিন্ন পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তিনি বলেন, পাহাড় দখলের পেছনে রয়েছে ভূমিদস্যুতা। যারা দখলদার, তারা কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থাকেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়