জাপান পাঠাল আড়াই লাখ : দেশে চীনা টিকা তৈরির আনুষঙ্গিক কাজ শুরু

আগের সংবাদ

নিউইয়র্কে বিএসইসির বিনিয়োগ সম্মেলনে বক্তারা : করোনাতেও এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি

পরের সংবাদ

‘পিক’ টাইমে কঠোর লকডাউনে উদ্বেগে পোশাক খাত

প্রকাশিত: জুলাই ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার আরোপিত ১৪ দিনের কঠোর ‘লকডাউন’ শুরু হয়েছে। গার্মেন্টসসহ সব ধরনের শিল্পকারখানা বন্ধ। সরকারের এ সিদ্ধান্তে উদ্বেগের মধ্যে আছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। কারণ করোনা মহামারির প্রকোপের মধ্যে বিশ্ববাজারে নতুন করে পোশাকের চাহিদা তৈরি হয়েছে। বেশির ভাগ কারখানাতেই প্রচুর কাজ রয়েছে। তাই এ মুহূর্তে কারখানা বন্ধ রাখায় বিপাকে পড়েছেন তারা। এরই মধ্যে সরকারের কাছে কারখানা খোলার অনুরোধ জানিয়েছেন এ খাতের মালিকরা। পাশাপাশি বিদেশি বায়ারদের কাছেও কিছুটা সময় আবেদন করেছেন বলে জানা গেছে। তবে সরকারের কাছে সহযোগিতার বিষয়ে কোনো চিন্তাভাবনা আপাতত নেই বলে জানিয়েছেন তারা। এদিকে পণ্যজট ছাড়াতে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বিজিএমইএকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে দ্রুত পণ্য খালাস না করা হলে জমে থাকা কন্টেইনারের ওপর দণ্ড আরোপ করা হবে। একদিকে লকডাউনের কারণে মানুষজনের যাতায়াত বন্ধ, অন্যদিকে দ্রুত পণ্য খালাসের তাগাদায় বিপাকে আছেন পোশাক মালিকরা। প্রায় দেড় বছরের ক্ষতি কাটিয়ে এখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে তৈরি পোশাক খাত। এখন আবার বিশ্বের ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ফিরতে শুরু করেছে। অর্ডার হচ্ছে পণ্যের, শিপমেন্ট হচ্ছে নিয়মিত। যদিও কন্টেইনার সংকট এখনো রয়ে গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পোশাক খাতের মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান ভোরের কাগজকে বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে এ সময়টা গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখন আমাদের পিক টাইম। কষ্ট করে অর্ডারগুলো ধরে রেখেছিলাম। এখন যেহেতু আন্তর্জাতিক বাজারে সবকিছু স্বাভাবিক হয়েছে, তাই এ সময়ে আমরা যেন দ্রুত পণ্যগুলো রপ্তানি করতে পারি, এজন্য আমাদেরকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কারখানা খোলার অনুমতি দেয়া হোক।
তিনি আরো বলেন, করোনা সংক্রমণ সারাদেশে বিস্তার লাভ করলেও পোশাক কারখানায় আমরা নিয়মের মধ্যে থাকার কারণে এখানে আঘাত হানতে পারেনি। এছাড়া আমরা কারখানাগুলোয় শ্রমিকদের ভ্যাকসিন দেয়া শুরু করেছি। আশা করছি, দ্রুতই আমরা সব পোশাক শ্রমিককে ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসতে পারব।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পাঠানো চিঠির বিষয়ে ফারুক হাসান বলেন, বিজিএমইএতে শনিবার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এ বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। আমরা আজ (রবিবার) যাদের আমদানিকৃত পণ্য আছে, তাদেরকে যত দ্রুত সম্ভব পণ্য খালাস করে নিয়ে আসার জন্য চিঠি পাঠিয়েছি। যদিও সরকার থেকে নির্দেশনা দেয়া আছে, পণ্য পরিবহন লকডাউনের বাইরে থাকবে। তবে পণ্য খালাসের সময় আমাদের ফ্যাক্টরিতে, কমার্শিয়ালে, স্টোরে লোক লাগবে। এ বিষয়গুলো যেন সহজ করে দেয়, এজন্য সরকারের কাছে আমরা আবেদন করেছি।
তিনি বলেন, আজকে (রবিবার) আবার বন্দর থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে যে, পণ্য খালাস না করা হলে অকডকে বা বেসরকারি ডিপোতে পণ্য পাঠিয়ে দেয়া হবে। এতে আমাদের তিন গুণ বেশি খরচ হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, একদিকে কঠোর লকডাউনে লোকজনকে বাইরে বের হতে দিচ্ছে না, অন্যদিকে সময়মতো বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা না হলে জরিমানা করা হচ্ছে। আবার কারখানার লোক ব্যাংকে যেতে দিবে না, স্থানীয়

প্রশাসন বলছে ফ্যাক্টরি খুলতে পারবে না। কারখানার ভেতরে সিকিউরিটি ছাড়া কোনো লোক থাকতে পারবে না। অথচ বন্দর থেকে বলা হচ্ছে মাল খালাস না করলে জরিমানা করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। এ যেন শাঁখের করাত। তিনি বলেন, আগামী ১ আগস্ট থেকে কারখানাগুলো খোলার অনুমতি দিলেও আমরা হয়তো কিছুটা হলেও সামাল দিতে পারতাম।
সরকারের কাছে আবার প্রণোদনা চাইবে বিকেএমইএ : সরকারের কাছে আবার প্রণোদনা চেয়ে আবেদন করার কথা জানিয়েছে বিকেএমইএ। নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান একটি চিঠিতে বলেন, করোনার বর্তমান ধরনটি মারাত্মক। তাই সরকার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মহামারি থেকে দেশের মানুষকে বাঁচানোর জন্য আর্থিক ক্ষতি হবে জেনেও বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। ১৪ দিনের এই বিধিনিষেধে রপ্তানি পরিকল্পনায় ব্যাঘাত ঘটবে তা ঠিক, কিন্তু ভবিষ্যতে করোনামুক্ত পরিবেশে ব্যবসা করার জন্য এই ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। এ সময় তৃতীয় পক্ষের পরামর্শ না নিয়ে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বিধিনিষেধ মেনে চলতে কারখানার মালিকদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত ২৩ জুলাই থেকে শুরু হওয়া কঠোরতম বিধিনিষেধে পোশাকসহ সব ধরনের শিল্পকারখানা বন্ধ আছে, যদিও কারখানা খোলা রাখতে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএসহ পাঁচ সংগঠন চেষ্টা-তদবির করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকার ছাড় দেয়নি। তবে চামড়া, ওষুধ ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাত কারখানা বিধিনিষেধের আওতামুক্ত রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়