জাপান পাঠাল আড়াই লাখ : দেশে চীনা টিকা তৈরির আনুষঙ্গিক কাজ শুরু

আগের সংবাদ

নিউইয়র্কে বিএসইসির বিনিয়োগ সম্মেলনে বক্তারা : করোনাতেও এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি

পরের সংবাদ

আফগানিস্তানের কী হবে?

প্রকাশিত: জুলাই ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

একদা মহাভারতের গান্ধার রাষ্ট্রটি এখন আফগানিস্তান নামে পরিচিত। বিশ্ব রাজনীতিতে এ সময়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ধূসর মরুভূমি পাহাড় অধ্যুষিত আফগানিস্তান। কী হবে? এ প্রশ্নের উত্তর কারো জানা নেই? তবে এর কারণ সবাই জানেন, আমেরিকা বা ন্যাটো সেখান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ৩১ আগস্ট ২০২১-এর মধ্যে সব সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা করে বলেছেন, ‘এখন সৈন্যদের ঘরে ফেরার সময় হয়েছে’। মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ (জুনিয়র) এ সিদ্ধান্তকে ‘ভুল’ হিসেবে অভিহিত করে বিশেষত আফগান নারীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। খবরে প্রকাশ, তালেবানরা তাদের অধিকৃত অঞ্চলে ১৫-৪৫ বছরের সব অবিবাহিত, তালাকপ্রাপ্ত বা স্বামী পরিত্যক্ত, বিধবা নারীদের তালিকা চেয়েছে।
এরপর কী? দি প্রিন্ট মিডিয়া বলেছে, আফগান প্রশ্নে ভারত ও চীন কি একসঙ্গে কাজ করতে পারবে? এসসিওভুক্ত (সাংহাই কো-অপারেশনে অর্গানাইজেশন) দেশগুলোর এক বৈঠকে তাসখন্দে সদ্য ভারতের বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর বলেছেন, ভারত শান্তির লক্ষ্যে আফগানিস্তানকে সহায়তা করবে। আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানিকে তিনি এ আশ্বাস দেন। ডব্লিউপিআর (ওয়ার্ল্ড পলিটিক্স রিভিউ) প্রশ্ন তুলেছে, ভারত-চীন কি আফগানিস্তানে প্রতিযোগিতায় নেমে পড়বে? সাম্প্রতিক সময়ে হিমালয়ে ভারত-চীন সংঘাতের পর দুই দেশের সহযোগিতা কি সম্ভব? বলা হচ্ছে, দিল্লি হয়তো স্থায়ীভাবে আফগানিস্তানে থাকার কথা ভাবছে না, চীন কি প্রত্যক্ষভাবে জড়াবে? আফগানিস্তানে শান্তি হয়তো দুই দেশের জন্যই দরকার, তাই সহযোগিতা কি একেবারেই অসম্ভব?
‘দি হিল’ মিডিয়া বলেছে, রাশিয়া ও আমেরিকার পর পরাশক্তি চীন কি আফগান বধ্যভূমিতে প্রবেশ করবে? অন্য দুই পরাশক্তির চেয়ে আফগানিস্তানে চীনের কিছু বাড়তি সুবিধা আছে। আফগানিস্তানের সঙ্গে চীনের সীমান্ত আছে। অনেকদিন ধরে চীন আফগানিস্তান কব্জায় নিতে চাচ্ছে, কারণ সে দেশে রুপার খনি এবং সঙ্গে রয়েছে সোনা, ইউরেনিয়াম ও লিথিয়াম। ওআরএফ (ওভারসিজ রিসার্স ফাউন্ডেশন) এক ধাপ এগিয়ে প্রশ্ন করেছে, ভারত-চীন-পাকিস্তান কি আফগান প্রশ্নে একসঙ্গে কাজ করতে পারে? আফগান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার ওই অঞ্চলে ‘শূন্যতা’ সৃষ্টি করবে তা সত্য, সেই শূন্যস্থান পূরণ করবে কে? মোল্লা ওমরের তালেবান সরকারের বর্বরতার কথা বিশ্ব জানে, আবার কি তালেবান সরকার আসছে? কাবুলে ক্ষমতাসীন আফগান সরকার গত ২০ বছর কী করেছে?
বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকা জানায়, ১৫ জুলাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ৩১ আগস্ট সম্পূর্ণ সৈন্য প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে তিনি ২০ বছরের আফগান যুদ্ধের পরিসমাপ্তি টানতে চান। বিবিসি নিউজ বলেছে, ইতোমধ্যে ইউএস ও ন্যাটো জেনারেলরা ক্ষমতা হস্তান্তর বা পদত্যাগ করেছেন। ন্যাটোভুক্ত অন্যান্য দেশ, এমনকি ইংল্যান্ড ইতোমধ্যে তাদের সব সৈন্য প্রত্যাহার করেছে। এনপিআর বলছে, মার্কিন ইন্টেলিজেন্স ধারণা করছে, ৬ মাসের মধ্যে কাবুলের পতন ঘটবে। আফগান সৈন্যরা নিজেদের পরিত্যক্ত ও নিঃসঙ্গ ভাবছেন।
আফগান যুদ্ধের কারিগর ডিফেন্স সেক্রেটারি ডোনাল্ড রামসফিল্ড গত মাসে মারা গেছেন। প্রেসিডেন্ট বাইডেন ৯/১১-এর ২০ বছর পূর্তির আগেই দুই দশকের যুদ্ধের সমাপ্তি টানতে চাইছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবান ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ দীর্ঘস্থায়ী আফগান যুদ্ধ শেষ করতে এক চুক্তিতে পৌঁছে। এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ২ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় হয় এবং ২ হাজার ৪০০ মার্কিনির প্রাণহানি ঘটে। ওই চুক্তির আলোকে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১-এর মধ্যে সব সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। ১৬ মে ২০২১ চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং যি এত দ্রুত সৈন্য প্রত্যাহারের সমালোচনা করে বলেন, এতে এ অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিঘিœত হবে।
মাস দুই আগে সৈন্য প্রত্যাহার শুরুর পর তালেবানদের অগ্রগতি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের বিস্মিত করেছে। পাকিস্তান অবাক হয়ে দেখছে যে, অল্প সময়ে তালেবানরা বেশ ক’টি শহর তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। অনেক সামরিক বিশেষজ্ঞ বলছেন, সম্পূর্ণ সৈন্য প্রত্যাহারের পর এক মাসের মধ্যে তালেবানদের কাছে রাজধানী কাবুলের পতন ঘটবে। তালেবানদের কাছে ক’টি তারিখ বেশ গুরুত্বপূর্ণ, সেপ্টেম্বর ১১, ২০০১ যেদিন ‘ওয়াল ট্রেড সেন্টার’ ধ্বংস হয়েছিল; ৭ অক্টোবর ২০০১ যেদিন মার্কিন নেতৃত্বে আফগানিস্তানে আক্রমণ শুরু হয়েছিল অথবা ১৩ নভেম্বর ২০০১, যেদিন ‘কাবুল’-এর পতন ঘটেছিল। অর্থাৎ এ তিনটি দিবসের যে কোনো একটিতে তালেবানরা কাবুল পুনর্দখল করতে চাইবে?
আলজাজিরা জানাচ্ছে, কাতারের রাজধানী দোহায় আফগান সরকার ও তালেবানদের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে, যদিও তালেবানদের অগ্রগতিতে আলোচনা থমকে পড়ছে। এর মধ্যে দিল্লিভিত্তিক রয়টারের পুলিৎজার বিজয়ী ফটোসাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকী শুক্রবার আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলে তালেবানদের গুলিতে নিহত হন। রয়টার প্রেসিডেন্ট মাইকেল ফ্রেডিনবার্গ এবং প্রধান সম্পাদক আলেসান্দ্রো গ্যালোনি বলেছেন, আমরা বিস্তারিত সংবাদ নিতে খোঁজ নিচ্ছি, তবে দানিশ সিদ্দিকী ছিলেন একজন ব্যতিক্রমী সাংবাদিক, একজন ভালো স্বামী ও পিতা, যাকে সবাই ভালোবাসত। যদিও ভারতে করোনায় হিন্দু মৃতদেহ দাহ করার ছবি প্রকাশ করে তিনি কিছুটা সমালোচিত। তালেবানরা দানিশ সিদ্দিকী হত্যার দায় অস্বীকার করেছে। রয়টার জানাচ্ছে, পাকিস্তানে আফগান রাষ্ট্রদূতের কন্যা সিলসিলা আলিখিল বাড়ি ফেরার পথে ইসলামাবাদে অজ্ঞাত আততায়ীদের হাতে অপহৃত হন। দূতাবাস জানায়, সিলসিলার সঙ্গে নিতান্ত খারাপ আচরণ করা হয়েছে, তাকে অত্যাচার করা হয়েছে তবে কয়েক ঘণ্টা পর তাকে ছেড়ে দেয়া হয় এবং তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এর মধ্যে খবর বেরোয় যে, আফগান মহিলারা অস্ত্র হাতে তালেবানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে গেছেন, যদিও এর সত্যতা কতটুকু তা বলা মুশকিল। তবে ইয়াজদি মহিলাদের কথা ভুলে গেলে চলবে না, আফগান মহিলারা কি পারবেন ইয়াজদি মহিলাদের মতো সাহসী ভূমিকা নিতে? অসমর্থিত সূত্র জানায়, তালেবানরা চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনে রাজি। ইরানের সঙ্গে আফগানিস্তানের সীমান্ত রয়েছে, তবে শিয়া-সুন্নি বিভক্তির কারণে এদের মধ্যে সুসম্পর্কের সম্ভাবনা কম! উইকিপিডিয়া জানায়, আফগানিস্তানের সঙ্গে পূর্ব ও দক্ষিণে পাকিস্তান; পশ্চিমে ইরান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান; উত্তরে তাজাকিস্তান এবং উত্তর-পূর্বে চীনের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে।
ইসলামিক প্রজাতন্ত্র এ দেশটির জনসংখ্যা ৩৯ মিলিয়ন বা ৩ কোটি ৯০ লাখ, ৯৯.৭ শতাংশ মুসলমান, ০.৩ শতাংশ অন্যান্য। ২৫২ হাজার বর্গমাইলের এ দেশটি মূলত পশতু, তাজিক, হাজারা ও উজবেকদের নিয়ে গঠিত। এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানায়, জর্জ বুশ জার্মান মিডিয়া ‘ডয়েচে ভেল’কে এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের ফলে আফগানিস্তানের অবস্থা বিপর্যয়কর হবে বলে মন্তব্য করেছেন। উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট বুশ ৯/১১-এর পর ক্ষমতাসীন তালেবান মোল্লা ওমরকে আফগানিস্তানের সব সামরিক স্থাপনা ভেঙে ফেলা ও শীর্ষ সন্ত্রাসী ‘বিন লাদেন’কে হস্তান্তর করার আল্টিমেটাম দেন, মোল্লা ওমর তা মানতে অস্বীকার করেন, ফলে অক্টোবরে ন্যাটো আফগানিস্তান আক্রমণ করে।
‘দি গার্ডিয়ান’ পত্রিকা বলেছে, তালেবানদের অগ্রগতি এবং নিরাপত্তা বাহিনীর পশ্চাদপদতায় কাবুল সরকার বিস্মিত। এর মধ্যে ১ হাজারের বেশি সৈন্য সীমান্ত পাড়ি দিয়েছে, আরো কয়েকশ তালেবানের কাছে তাদের অস্ত্র সমর্পণ করেছে।
কী হবে? কেউ জানে না কী হবে! তবে ভারত-চীনের দিকে সবার নজর। কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, এর ফলে ভারত বিপদে পড়বে। অন্যরা বলছেন, আফগানিস্তান মোদির জন্য আশীর্বাদ হতে পারে? রাশিয়া ও মার্কিনিদের বিদায়ের পর ‘বল’ এখন ভারত-চীনের মাঠে; দেখা যাক, খেলার মোড় কোন দিকে ঘুরে। তবে যা হোক, আফগান জনগণ আরো দীর্ঘদিন রাজনীতির জাঁতাকলে পিষ্ট হবেন তা বলা বাহুল্য।
শিতাংশু গুহ : কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়