বিমানের পাইলটদের কর্মবিরতির হুমকি

আগের সংবাদ

ইভ্যালি হাওয়া, বিপাকে গ্রাহক

পরের সংবাদ

কুরবানি হোক মানবিক

প্রকাশিত: জুলাই ১৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ১৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দরজায় কড়া নাড়ছে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তর ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে খুশি ছড়িয়ে দেয়ার দিনের জন্য অপেক্ষা আর মাত্র কয়েক দিনের। কিন্তু এই অপেক্ষার প্রহর শেষে আদৌ খুশি আসবে কিনা, নাকি বিষাদ-শঙ্কার কালোমেঘ বৃষ্টি হয়ে মাটিতে মিশে যাবে- নিশ্চিত করে কিছুই বলা যাচ্ছে না। জিলহজ মাসের চাঁদ উঠে গেছে, কিন্তু বাংলার আকাশে-বাতাসে আজ দৃশ্য-অদৃশ্য জীবাণুর ভয়ংকর ছোবল। একদিকে করোনা ভাইরাসে মৃত্যুর তালিকা প্রতিনিয়ত সব রেকর্ড ভেঙে দিচ্ছে, অন্যদিকে কিছু স্বার্থবাদী মানুষের জন্য আগুনে পুড়ে, পানিতে ডুবে, অনাহারে, তীব্র মানসিক যন্ত্রণায় আত্মাহুতি দেয়া মানুষের সংখ্যা নিতান্তই কম নয়। চোখ মেললেই দেখা যায় লাশের সারি, যাদের মৃত্যু এখন কেবলই একটি সংখ্যা। কান পাতলে শোনা যায় স্বজনদের আহাজারি, চিৎকার আর আর্তনাদ। যারা হারিয়েছে প্রিয়জন, তারা কী করে করবে ঈদ উদযাপন।
কপালে এত বেশি দুশ্চিন্তার ভাঁজ নিয়ে ঈদ উদযাপন স্মরণকালের ইতিহাসে হয়তো কেউ দেখেনি। ঈদুল আজহার সবচেয়ে বড় আনুষ্ঠানিকতা হলো পশু কুরবানি দেয়া। আর এই পশু কুরবানিকে ঘিরে উৎকণ্ঠা ও দুশ্চিন্তা সবচেয়ে বেশি। ব্যাপারির চিন্তায় একটা ভালো অঙ্কের লাভ, ক্রেতার চিন্তায় পছন্দসই পশু কেনায়। মধ্যবিত্ত ব্যস্ত সাধ ও সাধ্যের হিসাব মেলাতে, আর নি¤œ আয়ের মানুষের চিন্তা কালকের দিনটি কীভাবে পার হবে। সুদিনের প্রত্যাশায় চাতক পাখির মতো চেয়ে চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছে শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, বেকার যুবক, এমনকি আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসকরাও। এ যেন ক্ষত-বিক্ষত কোনো ঘোর অমাবস্যা।
এত শত আশঙ্কা ও অনিশ্চয়তার মাঝে আপনি যদি সুস্থভাবে ঈদ উদযাপনে শামিল হতে পারেন, তবে আপনি নিঃসন্দেহে একজন সৌভাগ্যবান ব্যক্তি। সৌভাগ্যবান বলছি এই কারণে যে, আপনার নিশ্বাস যদি এক মুহূর্তের জন্য বিশ্বাসঘাতকতা করে, তবে আপনার পরিজনদের জন্য এই দেখাই হবে শেষ দেখা। জীবন সমুদ্রে সাঁতার কাটতে কাটতে হঠাৎ হোঁচট খেয়ে চরম বিশ্বাসে বুকে আগলে নেয়া কোনো জাহাজের নাবিক যখন তীরে এসে তরী ডোবায়, ভাগ্য তখন মুচকি হেসে বলে, গুডবাই ম্যান।
মৃত্যু এই পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন অনিবার্য সত্যি। তা জেনেই জীবনের অজস্র উত্থান-পতনের মাঝে বেঁচে থাকার নিমিত্তে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে চলে মানুষ। যে সংগ্রামের গল্পে আছে বারবার পড়ে গিয়েও উঠে দাঁড়ানোর অদ্ভুত সুন্দর কিছু মুহূর্ত। আইসিইউর বেডে শুয়ে মুমূর্ষু রোগীটিও আশায় থাকেন, হয়তো তিনি বিধাতার চরম কৃপায় আরো কিছুদিনের জন্য সুন্দর পৃথিবীর আলো ছায়া উপভোগ করতে পারবেন। ক্ষেত্রবিশেষে হয়তো পারবেন, হয়তো পারবেন না। কিন্তু এখানে পারা না পারার চেয়েও বড় বিষয় হারার আগেই হেরে যাওয়া নয়, মরার আগেই মরে যাওয়া নয়। তাই প্রিয় জন্মভূমিতে আজ যতই আশঙ্কা, হতাশার সুর বাজুক না কেন, একটি সুস্থ সুন্দর আগামীর আশায় আমরা আশাবাদী হতেই পারি, কিছুটা ধৈর্য ধারণ করাই তো যায়।
আসুন মনে দৈন্যতাকে ঝেরে ফেলে সবাই একসঙ্গে ঈদ উদযাপন করি। অভিমান, দ্ব›দ্ব ভুলে কাঁধে কাঁধ রেখে আনন্দের ঝর্ণাধারার বার্তা নিয়ে আসা ঈদকে করে তুলি মানবিক। হিমালয় থেকে নেমে আসা একই জল গঙ্গোত্রী হিমবাহ হয়ে সীমানার ওপারে পবিত্র গঙ্গা, এপারে প্রমত্তা পদ্মা। তবে সৃষ্টির সেরা জীব হয়ে আমাদের কেন এত জাত-পাতের ফারাক। একই আকাশে জ্বলজ্বল করা তারা নক্ষত্রের কোনো দেশ, সীমা-পরিসীমা নেই। তাহলে একই মাটিতে থেকে কেন পৃথিবীর এক প্রান্তে মানুষ ক্ষুধা তৃষ্ণায় ছটফট করলে অন্যপ্রান্তে আমরা তাদের জন্য মানবিক হয়ে উঠতে পারি না। এই সবই তো কুরবানির শিক্ষা। ভ্রাতৃত্ব আর ভালোবাসার বিশালতার কাছে তো সবকিছুর ঠুনকো। ত্যাগের মহানুভবতার পরীক্ষায় পিতা ইব্রাহিম (আ.) দৃষ্টান্ত রেখে গিয়েছেন, তার সন্তান হিসেবে আমাদেরও কুরবানির যথার্থতা অনুধাবন করতে হবে। ভুল থেকে শিক্ষা না নিয়ে বারবার একই ভুল করে চলার সংস্কৃতির উত্তরণ না হলে অচিরেই নিয়তি আমাদের ঠেলে দেবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তাকওয়া অর্জন করতে না পারলে, নিজের পশুত্বকে কুরবানি করতে না পারলে, বৃথা যাবে সুন্দর আগামীর গড়ার সব প্রচেষ্টা। নির্বিকার মানবতার অবহেলা, বঞ্চনার চোখের জলের প্রতিটি ফোঁটার হিসাব আজ না হয় কাল দিতেই হবে।

মুসাদ্দিকুল ইসলাম তানভীর : শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়