এস কে সুর চৌধুরী ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব স্থগিত

আগের সংবাদ

রূপগঞ্জে হতাহত বেড়েছে চার কারণে : ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৫২ জনের মৃতদেহ উদ্ধার, আহত শতাধিক, এখনো নিখোঁজ ৫১ জন

পরের সংবাদ

ভ্যাকসিন নিয়ে ভুল ধারণা নয়

প্রকাশিত: জুলাই ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কোভিড ১৯-এর ভারতীয় স্ট্রেইন ডেল্টা ভাইরাসের সংক্রমণে আজ আমরা দেশে মহাদুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছি। সাম্প্রতিক সময়ে করোনা শনাক্ত ও মৃত্যুর হার অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এই মহামারি করোনা নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে ১৪ দিনব্যাপী অতীতের চেয়েও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। আর জনগণ কর্তৃক এই বিধিনিষেধ পালনে সেনাবাহিনী, বিজিবি থেকে শুরু করে দেশের সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। আবার এই মহাদুর্যোগের কবলে পড়ে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবুও এই হিমশিম অবস্থার মধ্যেও সরকারি প্রচেষ্টা সর্বোচ্চ পর্যায়ে অব্যাহত রয়েছে। এই প্রচেষ্টার ধারাবাহিক আলোকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশব্যাপী ৪০ বছরের ঊর্ধ্বে নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার লক্ষ্যে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত ও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি ভ্যাকসিন কোভিশিল্ড এবং পরবর্তীতে মেডিকেলে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য চীনের সিনোফার্মের ভ্যাকসিন প্রদান কর্মসূচি হাতে নেয়। আর এতে আমাদের মোট জনগোষ্ঠীর কিছু অংশ সেই কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখে স্বীয় সুরক্ষার মধ্য দিয়ে দেশকে কিছুটা হলেও নিরাপদ রেখেছে। আবার অন্যদিকে কেমন জানি মনে হচ্ছিল তখন থেকে কিছু কিছু জনগণের মধ্যে সেরাম ইনস্টিটিউট কিংবা চীনের সিনোফার্মের ভ্যাকসিন নিয়ে কিছুটা সংশয় বিরাজ করছিল। কাজেই যতদিন পর্যন্ত মনের এই সংশয় দূর না হবে ততদিন পর্যন্ত ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রমে শতভাগ সফলতা আসবে না। তাই আমি প্রথমে সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন নিয়ে একটু আলোচনায় আসি। এ প্রসঙ্গে বলতে চাই যেখানে করোনার আগে স্বাভাবিক সময়ে এদেশের অধিকাংশ রোগী উন্নত চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তির লক্ষ্যে ভারতের চেন্নাই, ব্যাঙ্গালুরু, মুম্বাই কিংবা কলকাতার মতো জায়গাগুলোতে সশরীরে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে দেশে ফিরছিল, সেক্ষেত্রে বিশ্বের কয়েকটি ভ্যাকসিন উৎপাদনের তালিকায় অগ্রগণ্য ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি কোভিশিল্ড নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা কোনো অবস্থাতেই কাম্য হতে পারে না। এবার চীনের সিনোফার্মের ভ্যাকসিন নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে দেখি, এক্ষেত্রেও কিছু কিছু লোকের মধ্যে এই ভ্যাকসিন নিয়ে মনের অ্যালার্জি রয়েছে। তাদের ধারণা চীনের উহান প্রদেশের ল্যাবে যেহেতু প্রথম এই ভাইরাস সৃষ্টি হয়েছিল কাজেই এক্ষেত্রে তাদের তৈরি ভ্যাকসিনেও কোভিড-১৯ ভাইরাসের জীবাণুর অস্তিত্ব থাকতে পারে। দ্বিতীয়ত আমাদের দেশে চীন থেকে নিম্নমানের আমদানিকৃত কিছু জিনিসপত্র এ দেশের জনগণ ক্রয় করে প্রতিনিয়তই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এই দুটি কারণে চীনের সিনোফার্মের ভ্যাকসিন নিয়েও অনেকের মধ্যে এক ধরনের মনের অ্যালার্জি সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু আমি এক্ষেত্রে বলতে চাই, যেহেতু ভ্যাকসিনটি জীবন রক্ষাকারী ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত এবং সর্বোপরি আমাদের দেশের ঔষধ প্রশাসন কর্তৃক পরীক্ষিত সেহেতু এই ভ্যাকসিনের গুণগত মান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করার কোনো অবকাশ নেই। আবার অন্যদিকে কিছু কিছু মানুষের মধ্যে বদ্ধমূল ধারণা এই ভ্যাকসিন গ্রহণে শারীরিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। তাই আমি এই প্রসঙ্গে বলতে চাই, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাইডলাইন অনুযায়ী কারা এই ভ্যাকসিন দিতে পারবেন তার একটি রূপরেখা দেয়া হয়েছে। কাজেই এই রূপরেখার বাইরে যদি কেউ ভ্যাকসিন গ্রহণ করার পর শারীরিক প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হয় সে ক্ষেত্রে ভ্যাকসিনের ওপর দোষ চাপিয়ে দেয়া কোনো অবস্থায় মেনে নেয়া যায় না। ক্ষেত্রে আমার অনুরোধ থাকবে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভ্যাকসিন গ্রহণ নিয়ে যে অসমর্থিত খবরগুলো প্রকাশ করা হচ্ছে সেগুলো নিজের বিবেকের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে কিংবা নিজের বিবেকের ওপর আত্মতুষ্টি হতে না পারলে প্রয়োজন বোধে জাতীয় পরামর্শক কমিটির যে হটলাইন টেলিফোন নম্বরগুলো আছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শমতে যতদিন ৮০ শতাংশ জনগণকে ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আনা না যাবে ততদিন করোনা নিয়ন্ত্রণ সহনীয় পর্যায়ে আসবে না। ইতোমধ্যেই আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ জননেত্রী শেখ হাসিনা চলতি মাস থেকে গণভ্যাকসিনেশন কর্মসূচি বাস্তবায়নের ঘোষণা করেছেন এবং এতে যত অর্থের প্রয়োজন তা বরাদ্দের আশ্বাস দিয়েছেন। এটি করোনা নিয়ন্ত্রণে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে আমি মনে করছি। কাজেই ভ্যাকসিন গ্রহণে আর সংশয় প্রকাশ না করে যারা এখনো এই কর্মসূচির বহির্ভূত রয়েছেন তারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দিষ্ট সিডিউল মোতাবেক ভ্যাকসিন গ্রহণ করে করোনামুক্ত বাংলাদেশ গঠনে এগিয়ে আসবেন এই প্রত্যাশাটুকু রাখছি।
লেখক, চট্টগ্রাম থেকে।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়