মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস : মাদকের আগ্রাসন থেকে যুবসমাজকে বাঁচাতে হবে

আগের সংবাদ

৮০-তে পা রাখলেন ফেরদৌসী রহমান

পরের সংবাদ

হিন্দু পারিবারিক আইন নিয়ে ঝামেলার দরকার কী?

প্রকাশিত: জুন ২৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

হিন্দু পারিবারিক আইন, বিবাহ বিচ্ছেদ বা বহুবিবাহ সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের সুপারিশ চ‚ড়ান্ত হয়েছে। সরকার এগুলো নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হলেও ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন’, ‘সংখ্যালঘু কমিশন’, বা ‘হেইট-ক্রাইম বিল’, অথবা হিন্দু ফাউন্ডেশন বা সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় নিয়ে কোনো সাড়া-শব্দ করছে না! হিন্দুরা তাই সন্দিহান, যেগুলো আগে দরকার তা না করে সরকার হিন্দু পারিবারিক আইন নিয়ে পড়ল কেন? সরকারের মধ্যে কিছু লোকের কি খেয়েদেয়ে কাজ নেই?
স্বাধীনতার পর গত ৫০ বছরে কোনো সরকার হিন্দুদের একটি দাবিও মেনে নেয়নি। না, নিয়েছে? শত্রæ-সম্পত্তি আইন বাতিল হয়েছে। বাতিল হওয়ার আগে হিন্দুরা এই আইনে কমবেশি ৩০ লাখ একর সম্পত্তি হারিয়েছে। বাতিল হলেও এর সুফল কোনো হিন্দুর ঘরে আসেনি; সম্পত্তি ফেরত অথবা ক্ষতিপূরণ পাননি। শত্রæ-সম্পত্তি আইন বাতিল অনেকটা ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি’র মতো, চুক্তি আছে শান্তি নেই, তেমনি শত্রæ-সম্পত্তি আইন নেই, জমিও নেই, বিষয়টি অনেকটা ‘লোক দেখানো’!
সরকার হিন্দু পারিবারিক আইনে হাত দিচ্ছে, মুসলিম পারিবারিক আইনে হাত দিচ্ছে না কেন? ধর্ম নির্বিশেষে সমগ্র বাংলাদেশের জন্য ‘ইউনিফর্ম সিভিল কোড’ চালু করলে তো ল্যাঠা চুকে যায়! এক দেশ, এক আইন; এক ব্যক্তি, এক বিয়ে; দুই সন্তান, স্ত্রী-পুত্র-কন্যার সম্পত্তিতে সমান অধিকারÑ এসব তো ভালো কথা। সরকার শুধু হিন্দুদের ভালো চাচ্ছেন কেন? সব নাগরিকের ভালো চাওয়া কি উচিত নয়? রাষ্ট্রের আইন ধর্মের আইনের ঊর্ধ্বে প্রতিষ্ঠিত হোক।
সরকার যে কারণে ’৭২-এর সংবিধান প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি, একই কারণে ‘মুসলিম পারিবারিক আইনে’ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না! ‘হিন্দু পারিবারিক আইন’ পাল্টাতে পারবে, কারণ হিন্দুরা দুর্বল? দুর্বলের ওপর সবলের আঘাত, বিষয়টা অনেকটা জোর করে হিন্দু-সম্পত্তি দখলের মতো হয়ে যাবে? হিন্দু নামধারী যারা এ উদ্যোগের পেছনে জোরালো ভ‚মিকা রাখছেন, তাদের অনেকেই হিন্দু নন অথবা সুবিধাভোগী! সাধারণ হিন্দুরা মনে করেন, এ উদ্যোগ হিন্দুদের বিরুদ্ধে নতুন ষড়যন্ত্র!
হিন্দুদের উদ্বেগের কারণ হিসেবে একটি দৃষ্টান্ত দেয়া যায়? সদ্য প্রধানমন্ত্রী ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেছেন। জনসংখ্যা অনুযায়ী ৬টি মন্দির, প্যাগোডা বা চার্চ থাকা উচিত ছিল, তা নেই। বিষয়টি তাও নয়, বিধি অনুযায়ী এই মসজিদগুলোর সভাপতি হবেন ইউএনও (উপজেলা নির্বাহী অফিসার)। সরকার নিজেই আইন ভঙ্গ করেছে চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলায়, কারণ তথাকার ইউএনও একজন হিন্দু! সেখানে একজন মুসলিম মৎস্য কর্মকর্তা সভাপতি হয়েছেন।
আরো দ্রষ্টব্য : ইসলামিক ফাউন্ডেশনে কোনো হিন্দু কর্মচারী নেই! প্রধান কার্যালয়ে ১৩৬ জন; ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে ১৩ জন করে, রাজশাহী ও রংপুরে ৯ জন করে, খুলনায় ১১ জন, বরিশালে ৬ জন, সিলেট ও ময়মনসিংহে ৪ জন করে কর্মকর্তার সবাই মুসলমান। বোর্ড অব গভর্নরসের ১২ জনই মুসলমান। এ পর্যন্ত ৩০ জন মহাপরিচালক এসেছেন-গেছেনÑ সবাই মুসলমান। হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের ১০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মধ্যে ৩ জন অহিন্দু। চেয়ারম্যান ধর্মমন্ত্রী, ধর্মমন্ত্রী সর্বদা একটি ধর্মের! সুতরাং যারা বলে বেড়ান যে, হিন্দুরা নাকি সব উচ্চপদ দখল করে আছেন, তাদের জ্ঞাতার্থে বলা যায়, দেখুন, ৫০টি উপজেলায় মাত্র ১ জন হিন্দু ইউএনও! এটাই বাস্তবতা। বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে মাত্র ৩ শতাংশ হিন্দু? সেনাবাহিনী বা পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রসঙ্গ না তোলাই ভালো? বাংলাদেশে হিন্দুরা ভালো নেই। সরকার সংখ্যালঘুদের ‘মঙ্গল’ চাইলে এসব দিকে নজর দিতে পারে। অযথা হিন্দু পারিবারিক আইন নিয়ে ঝামেলার দরকার কী?
শিতাংশু গুহ
২৪ জুন ২০২১, নিউইয়র্ক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়