মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস : মাদকের আগ্রাসন থেকে যুবসমাজকে বাঁচাতে হবে

আগের সংবাদ

৮০-তে পা রাখলেন ফেরদৌসী রহমান

পরের সংবাদ

একশ কোটি টাকার ঋণ চাই

প্রকাশিত: জুন ২৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের যে কোনো ব্যাংক থেকে একশ কোটি টাকা ঋণ নিতে চাই। এমন কোনো ব্যাংক কি দেশে আছে, যারা এই সামান্য টাকাটা ঋণ দেবে? ব্যাংকে গেলে ঋণের কথা শুনলে যেসব নিয়মকানুন, বিধিবিধান, সীমাবদ্ধতার কথা শুনতে হয় তাতে আগামী একশ বছরের প্রচেষ্টায় সফল হওয়ার কোনো সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। পত্রিকায় দেখি ব্যাংক ব্যক্তিকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে, লাখো-কোটি টাকা খেলাপি ঋণ পড়ে আছে, শত শত কোটি টাকা সুদ মওকুফ করছে, খেলাপি ঋণ গ্রহীতাদের আবার ঋণ দিচ্ছে। ব্যাংকগুলোর এই বিশাল ঋণ কার্যক্রমের মধ্যে একশ কোটি টাকা খুব বেশি টাকা কি? এই অঙ্কের টাকা চাওয়া কি খুব অন্যায় হয়ে যাচ্ছে? সাধারণ বিবেচনায় অনেকের কাছে অন্যায় আবদার মনে হলেও বিশ্বাস করি, ব্যাংকের কাছে এটি অন্যায় আবদার নয়। দেশের সরল বিশ্বাসে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী অন্যায় করলে তা অন্যায় হিসেবে বিবেচিত হয় না। ব্যাংকের প্রচলিত আইনের পরিপন্থি হলেও সরল বিশ্বাসে একশ কোটি টাকা ঋণ দিয়ে দিতে পারে, অবশ্যই পারে।
সত্যিকার অর্থে টাকাটা খুব দরকার। এক সময় দেশের প্রকৌশলীদের মিস্টার টেন পারসেন্ট বলা হতো। পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখে বুঝতে পারি, এখন আর টেন পারসেন্টে আটকে নেই। ৩১ কোটি টাকার হাসপাতাল ধুমধাম করে ফিতে কাটার পর এখন যেভাবে ফাঁকা মাঠ হয়ে গিয়েছে তাতে বিশ্বাস করতেই পারি বাংলাদেশ সব সম্ভবের দেশ। তাই ভরসা করতেই পারি, ব্যাংক থেকে একশ কোটি টাকা ঋণ পাওয়া সম্ভব। তবে কথা দিতে পারি, ঋণের টাকা হাতে পাওয়ার আগে সবরকমের চাহিদা মিটিয়ে তারপর বাকি টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরব। সবার চাহিদা পূরণের পর নিজের প্রয়োজন মেটাব। ব্যাংক থেকে মানুষ হাজার হাজার কোটি টাকা নিচ্ছে। পি কে হালদার সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা নিয়ে এখন কানাডায় বাতাস খাচ্ছে। শস্য-শ্যামলা সোনার বাংলা ছেড়ে কোথাও যেতে মন চায় না, সে কারণেই শত শত কোটি টাকা, সহস্র কোটি টাকার প্রয়োজন আমার নেই।
দেশের যে কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়ার জন্য যেসব গুণাবলির প্রয়োজন তার কিছুই আমার নেই। পৈতৃক সম্পত্তি নেই, বিবাহ সূত্রে সম্পদ প্রাপ্তির কোনো সুযোগ নেই, রাজনৈতিক কোনো পরিচয় নেই, প্রভাবশালী কোনো ব্যক্তি নই, প্রভাবশালী কোনো ব্যক্তির সুপারিশ পাওয়ার যোগ্যতা নেই, দখল করার সাহস নেই, দখল করে দেয়ার কোনো লোক নেই, ব্যাংকে ন্যূনতম যোগাযোগ নেই, ব্যাংকের কোনো কর্মচারীর সঙ্গে হৃদ্যতা নেই। ব্যাংক ঋণ প্রাপ্তির একমাত্র যোগ্যতা আমি এ দেশের একজন নাগরিক। এই নাগরিকত্বের মধ্যে কৃত্রিমতার লেশমাত্র নেই। কোনো সেকেন্ড হোম নেই, বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করার কোনো বাসনাও নেই। জীবনের শেষ দিনগুলো দেশের মাটিতে কাটাতে চাই। তাই ব্যাংক একশ কোটি টাকা ঋণ দিলে তা পাচারের সম্ভাবনা নেই বা বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার কোনো ইচ্ছাও নেই। ঋণটা খুব প্রয়োজন এবং দেশের চলমান পরিবেশ পরিস্থিতি ঋণ চাইতে সাহসী করে।
জাতীয় দৈনিক বণিক বার্তা ৬ এপ্রিল ২০২১ লিড নিউজ করেছিল এক জনপ্রতিনিধির ব্যাংক ঋণ নিয়ে। নির্বাচন কমিশনে দেয়া তথ্য মতে, ২০০৮ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে আমিন বাজার এলাকায় তার সাড়ে তিন বিঘা জমি ছিল। ২০১৩ সালের নির্বাচনের হলফনামায় তিনি জমির পরিমাণ ১৪১ একরের বেশি দেখান। অন্যদিকে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের প্রতিবেদনে অভিযোগ তোলা হয়েছে শুধু বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ পাড়েরই জমি দখল হয়েছে ৫৪ একরের বেশি। বিদ্যুৎকেন্দ্র, রিয়েল এস্টেট কোম্পানি ও অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার নামে এ দখলকাজ করা হয়েছে। ব্যাংক এসব জমির ওপর ঋণ প্রদান করেছে। শুধু তাই নয়, বিশেষজ্ঞদের মতে, যেখানে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ৩৫০-৪০০ কোটি টাকার প্রয়োজন পড়ে সেখানে তার চারগুণ অর্থ ঋণ প্রদান করা হয়েছে। একে জনগণের জমি তার ওপর প্রয়োজনের চারগুণ অর্থ। এ প্রকল্প থেকে ঋণ আদায় সম্ভব নয় বলেই অনেকে মনে করেন এবং সেটাই হয়েছে। ঋণ ইতোমধ্যে খেলাপি হয়েছে এখন সুদ মওকুফ করেও আসলটা পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। অথচ ব্যাংক শিয়াল পণ্ডিতের মতো কুমির ছানা দেখছে আর ঋণ দিয়ে চলেছে।
গ্রামবাংলার একটা কথা আছে ‘আশায় মরে চাষা’। ব্যাংক দখলকৃত জমির বিপরীতে ঋণ দিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে উদ্ধার অভিযান চলার পরও মামলা চলছে বলে ঋণ পরিশোধের আশায় ব্যাংক ঋণ পুনঃতফসিল করে চলেছে। ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনাকারীদের কত অসীম ক্ষমতা। এই ক্ষমতার জন্যই অনেকে বাংলাদেশকে সব সম্ভবের দেশ ভাবতে পারে। সে সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই একশ কোটি টাকা ঋণ চাই। প্রজাতন্ত্রের মালিকের অংশ হিসেবে একজন সাধারণ নাগরিক নিশ্চয়ই নিজে সম্পদহীন হয়েও ব্যাংক ঋণ পাওয়া যেতে পারে, যেখানে ব্যাংকের রয়েছে অসীম ক্ষমতা। সেখানে সামান্য অনুগ্রহ করলেই ঋণপ্রাপ্তি ঘটতে পারে, ব্যাংক কর্তৃপক্ষের শুধু ইচ্ছার প্রয়োজন। তারা একজন সাধারণ নাগরিকের প্রতি ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটালেই হয়। কুমিরের ছানা দেখে ঋণ দেয়া আর সম্পদহীন, যোগ্যতাহীন জেনে ঋণ দেয়ার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। দেশের ব্যাংকগুলোতে সারা বছর সুদ মওকুফের যে খেলা চলে তার থেকে একশ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দেখালে ব্যাংকের আপাতদৃষ্টিতে কোনো ক্ষতি হবে না।
বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষরা রাজার রাজা। সাংবিধানিকভাবে এরা কর্মচারী বলে আখ্যায়িত হলেও নিজেদের জন্য মর্যাদাবান হিসেবে কর্মকর্তা উপাধি নির্ধারণ করে নিয়েছেন। এ ক্ষমতাধরদের সালাম দিয়ে স্যার বলা না হলে তারা আন্দোলন করে তা আদায় করে নেন। চেয়ারে বসে থাকা অবস্থায় বিশ্বকে এরা একভাবে দেখেন আর চেয়ার থেকে নেমে সবকিছু অন্যভাবে দেখে থাকেন। এরা সরল বিশ্বাসে কোনো কাজ করলে দেশের কোনো আইনে অন্যায় বা দুর্নীতি হয় না। তাই দেশের বোকা নাগরিক হিসেবে স্বীকৃত একজন নাগরিকের জন্য সরল বিশ্বাসে একশ কোটি টাকা ঋণ দেশের যে কোনো ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নিজেদের অসীম ক্ষমতার প্রকাশ ঘটাতে পারেন। বোকা নাগরিকদের প্রতি সহানুভ‚তিশীল হলে কৃতজ্ঞ হব, বাধিত হব।
এম আর খায়রুল উমাম : প্রকৌশলী ও লেখক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়