প্রকাশিত: জুন ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
করোনা পরিস্থিতির জেরে দেশের বেশিরভাগ সিনেমা হলই একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। আর কিছু সিনেমা হল ভালো সিনেমা মুক্তির অভাবে হয়ে আছে তালাবন্ধ। তবে একটু হলেও খুশির খবর হলো, গতকাল শুক্রবার ঢাকাসহ সারাদেশের ১৬টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে শাকিব খান অভিনীত নতুন সিনেমা ‘নবাব এলএলবি’। পরিচালক অনন্য মামুন জানান, যেসব এলাকায় লকডাউন নেই সেসব এলাকার হলেই চলছে সিনেমাটি। তবে মাত্র হাতেগোনা কয়েকটি হলে তার সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ায় আফসোসও করেছেন এই নির্মাতা। আর এই সিনেমার মাধ্যমে দীর্ঘ ১৫ মাস পর বড় পর্দায় ফিরলেন শাকিব খান। সর্বশেষ গত বছরের ৬ মার্চ শাকিব অভিনীত ‘শাহেনশাহ’ সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছিল।
অন্যদিকে এই সিনেমা মুক্তির মাধ্যমে খুলতে চেয়েছিল রাজধানীর জনপ্রিয় প্রেক্ষাগৃহ ‘মধুমিতা’। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হওয়ায় হল খোলার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে মধুমিতা কর্তৃপক্ষ। এদিকে হল খোলার কারণে গত সপ্তাহে রাজধানীর ‘আনন্দ’ সিনেমা হলকে জরিমানা করার কথাও শোনা গেছে। এখন দেখার বিষয় সরকার যেখানে ‘শাট ডাউন’ জারি করতে প্রস্তুত সে পরিস্থিতিতে কিছু হল খুললেও ঠিক ক’দিন সিনেমাটি হলে চলে কিংবা কতজন দর্শক হলমুখি হয়! কিছু হল কর্র্তৃপক্ষ আবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যদি করোনা পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হয় তবে ঈদের সিনেমা দিয়ে হল খুলবেন।
দীর্ঘ ১৪ মাস পর মধুমিতা হল খোলার কথা থাকলেও করোনার নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধিতে সেই আশায় বাধা পড়ে। ঢাকার আশপাশের ৭ জেলায় নতুন করে লকডাউন এবং ঢাকার সঙ্গে দূরপাল্লার সব মাধ্যমে যোগাযোগ বন্ধের কারণে পরিচালক ও প্রযোজকদের কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ। ‘মধুমিতা’র স্বত্বাধিকারী ইফতেখারউদ্দীন নওশাদ বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম শাকিব খানের ছবি দিয়ে হল খুলতে। শাকিব খান সবসময়ই ব্যবসা সফল সিনেমা উপহার দেন। ভেবেছিলাম এতদিন পরে তার ছবি দিয়ে এতদিন বন্ধের ক্ষতি পুষাতে। কিন্তু নতুন করে সংক্রমণ বাড়ার কারণে সেটা আমরা পারছি না আপাতত।’
একদিকে প্রশাসন বলছে বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকার কথা, সেখানে সিনেমা হল খোলা রাখা যাবে না। তবে এই নিয়ে মতবিরোধও আছে। পরিচালক-প্রযোজকরা সিনেমা হলকে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে বলতে নারাজ। তাদের মতে, আমাদের দেশে সবকিছুই চলছে। শুধু সিনেমা হলের ক্ষেত্রে সব বন্ধ!
হল খোলা প্রসঙ্গে ইফতেখারউদ্দীন নওশাদ বলেন, ‘দেশের সব কিছু খোলা। মার্কেট খোলা, গণপরিবহন খোলা। সবাইকে প্রশাসন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলছে। কিন্তু তা কি আদৌ মানা হচ্ছে। আমাদের এমন কোনো নির্দেশনা প্রশাসন থেকে দিক, আমরাও স্বাস্থ্যবিধি মেনেই হল চালু রাখব। আমাদের সেই সুযোগও আছে। আর যদি এভাবেই হল বন্ধ থাকে তাহলে তো সিনেমা হলের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে। আমরা হয়তো ঈদে হল চালু করব। আমরা যতই সিনেমা হল আধুনিকায়ন করি না কেন, নতুন কনটেন্ট এবং ভালো কনটেন্ট না এলে এই শিল্পকে বাঁচানো সম্ভব না। শুধু সিনেপ্লেক্স করব এই বললে হবে না। বিশ্বায়নের যুগে সব ধরনের সিনেমা দেখাতে হবে। এখন অনলাইনে সব ধরনের সিনেমা দর্শকরা দেখতে পাচ্ছেন। শুধু হলের পায়ে শেকল পরালেই হবে না।’
নওশাদ আরো যোগ করেন, ‘এটা শুধু ব্যবসা না। এই সিনেমা হলগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের হাজার হাজার স্মৃতি জড়িয়ে আছে। যেখানে দিন দিন বাংলাদেশের সিনেমা হলের সংখ্যা কমছে সেখানে এই করোনাকালীন পরিস্থিতি কফিনের শেষ পেরেক গেড়ে দিয়েছে।’
সিনেমাপ্রেমীরাও অনেকটা হতাশ। তাদের মতে, সারা বিশ্বেই যেখানে সিনেমার রমরমা ব্যবসা হচ্ছে, সেখানে আমরা উলটো পথে হাঁটছি। আমাদের সিনেমা হলের যে গৌরব ছিল তা হারিয়েই গিয়েছে।
সিনেমাপ্রেমীরা আরো বলছেন, ভালো কনটেন্টের পাশাপাশি হলের সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখলেই আসলে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। এদিকে মুক্তির মিছিলে আছে ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’, ‘মিশন এক্সট্রিম’, ‘মিশন এক্সট্রিম-২’, ‘বিদ্রোহী’, ‘পাপ-পুণ্য’, ‘হাওয়া’, ‘বিক্ষোভ’, ‘শান’, ‘রিকশা গার্ল’, ‘জ্বিন’, ‘ক্যাসিনো’, ‘দিন দ্য ডে’, ‘বর্ডার’, ‘পরান’, ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ-২সহ বেশ ক’টি ছবি। ‘১৯৭১ সেইসব দিন’, ‘গিরগিটি’, ‘আদম’, ‘জ্যাম’, ‘গাঙচিল’, ‘বীরত্ব’, ‘ঢাকা ২০৪০’, ‘আগুন’, ‘সিক্রেট এজেন্ট’, ‘ওস্তাদ’, ‘উন্মাদ’Ñ এই ছবিগুলোর মধ্যে কিছুর শুটিং শেষের পথে। যার বেশিরভাগই মুক্তি পেতে পারতো এই বছরেই। ইতোমধ্যে বড় বাজেট ও ভিন্ন গল্পের তারকাসমৃদ্ধ কয়েকটি ছবি পেয়ে গেছে সেন্সর ছাড়পত্র। বেশ ক’টি আছে সেন্সর ছাড়পত্রের অপেক্ষায়। সব মিলিয়ে সবাই সিনেমার সুদিনের অপেক্ষাতেই আছেন।
হ দেবরাজ দেব
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।