কাগজ ডেস্ক : স্পেনের এক জেলের ভিতর আত্মহত্যা করে জীবনের অবসান ঘটালেন জনপ্রিয় অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ম্যাকাফির নির্মাতা জন ম্যাকাফি। গত বুধবার স্পেনের একটি আদালত কর ফাঁকি দেয়ার অভিযোগে তাকে আমেরিকায় প্রত্যর্পণের অনুমতি দেয়। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বার্সেলোনার জেল থেকে ম্যাকাফির ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। স্পেনের বিচার বিভাগ বলেছে, জেলের চিকিৎসকরা তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সফল হননি।
গত বছরের অক্টোবরে ম্যাকাফিকে বার্সেলোনা বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই থেকেই তিনি জেলবন্দি ছিলেন। ৭৫ বছরের ম্যাকাফি অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারের একজন পথিকৃৎ। ম্যাকাফির আইনজীবী জাভিয়ের ভিলালবা বলেন, নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য এখনো সুযোগ পেতেন ম্যাকাফি। এটা একটা নিষ্ঠুর ব্যবস্থার ফলাফল। ওকে এত দিন জেলে রাখার কোনো কারণ ছিল না। রয়টার্র্সকে তিনি বলেন, নয় মাসের কারাবাসে অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারের এই অগ্রদূত হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। কারা কক্ষে গলায় ফাঁস নিয়ে জীবনের ইতি টানেন তিনি। জীবনের বেশির ভাগ সময় বিতর্কের মধ্যে থাকা জন ম্যাকাফি বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক অ্যান্টি ভাইরাস সফটওয়্যার উদ্ভাবন করেন। রয়টার্স তাদের প্রতিবেদনে তাকে বর্ণনা করে ‘লার্জার দ্যান লাইফ সফটওয়্যার মুঘল’ হিসেবে।
ম্যাকাফির হাত ধরেই বহু বিলিয়ন ডলারের অ্যান্টি ভাইরাস সফটওয়্যার শিল্পের সূচনা হয়।
এক পর্যায়ে প্রযুক্তি জায়ান্ট ইনটেলের কাছে ৭৬০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যে তিনি ‘ম্যাকাফি এসোসিয়েটস ইনকর্পোরেটেড’ বিক্রি করে দেন।
গত বছরের অক্টোবর মাসে তুরস্কগামী একটি ফ্লাইটে ওঠার সময় জন ম্যাকাফি স্পেনে গ্রেপ্তার হন। বিভিন্ন কনসালট্যান্সি, বক্তৃতা থেকে আয়, ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং নিজের জীবন কাহিনীর স্বত্ব বিক্রি থেকে বহু কোটি ডলার আয় করার পরও চার বছরের ট্যাক্স রিটার্ন জমা না দেয়ার অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। গত মাসে আদালতে শুনানির সময় ম্যাকাফি বলেন, তার যা বয়স, যদি দোষী প্রমাণিত হন, তাহলে সম্ভবত বাকি জীবন তাকে কারাগারেই কাটাতে হবে। আমি আশা করি স্পেনের আদালত এ বিষয়টি আমলে নেবে যে, মার্কিন বিচার বিভাগ আমাকে জেলে পুরে একটি দৃষ্টান্ত তৈরি করতে চাইছে। শেষ পর্যন্ত স্পেনের শীর্ষ আদালত গত বুধবার সকালে তাকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের অনুমোদন দেয়।
কম্পিউটার নিরাপত্তার পথিকৃৎ হলেও বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি স্বীকার করেছিলেন যে, তিনি নিজের কম্পিউটারে নিজের বা অন্য কারো তৈরি কোনো অ্যান্টি ভাইরাস সফটওয়্যার কখনো ব্যবহার করেননি। ২০১৩ সালের ওই আলাপকালে তিনি বলেন, আমি ক্রমাগত আমার আইপি (ইন্টারনেট প্রোটোকল) ঠিকানা বদলাই। কোনো ডিভাইস ব্যবহার করলে তার সঙ্গে আমার নাম যুক্ত করি না। ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার ভয় আছে এমন সাইটে না গিয়ে নিজেকে রক্ষা করি। ধরা যাক, পর্ন সাইট; আমি এই সাইটগুলোতে কখনোই যাই না। তিনি ২০১৬ এবং ২০২০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লিবারেটারিয়ান দলের প্রার্থী হওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করেন। খ্যাপাটে চরিত্রের ম্যাকাফি ২০১৯ সালে টুইট করে বলেন, তিনি আট বছর ধরে ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করেননি কারণ, কর অবৈধ!
নিজেকে ৪৭ সন্তানের জনক দাবি করা ম্যাকাফি বেশ কয়েক বছর বেলিজেও বসবাস করেন। ২০১২ সালে একজন প্রতিবেশীকে খুনের অভিযোগে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইলে সেখান থেকে তিনি পালিয়ে যান। অবশ্য পুলিশ পরে জানিয়েছিল, তিনি সন্দেহভাজন ছিলেন না। স্ত্রী জেনিস ম্যাকাফির সঙ্গে তার পরিচয় যখন হলো, তখন তিনি পলাতক জীবনযাপন করছেন। জেনিস একজন দেহ পসারিণী হিসেবে তার সঙ্গী হন, এমনটাই জানান ম্যাকাফি। তিনি টুইটারে ছিলেন নিয়মিত, সেখানে তার ১০ লাখ অনুসারী ছিল। গত ১৮ জুন টুইটারে পোস্ট করা তার সবশেষ বার্তায় ম্যাকাফি লেখেন, সব ক্ষমতাই দুর্নীতিযুক্ত।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।