মামুনুর রশীদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা দলটি এবার উদযাপন করছে প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর। বাংলাদেশের নাট্যচর্চার ইতিহাসের নেতৃত্বদানকারী এই নাট্যদলটি নিয়ে প্রতিবেদন সাজিয়েছেন হেমন্ত প্রাচ্য

১৯৭২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশে নাট্যচর্চায় যাত্রা শুরু করে আরণ্যক। ওই বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি শহীদ মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটকটি দিয়ে প্রথম মঞ্চে আসে তারা। সেই নাটকটির প্রথম মঞ্চায়নে অভিনয় করেছিলেন প্রয়াত সুভাষ দত্ত, আলী যাকের ও ইনামুল হক। নির্দেশনা দিয়েছিলেন মামুনুর রশীদ। সেই আরণ্যক পূর্ণ করেছে পাঁচ দশকের গৌরবময় পথচলা। এই দীর্ঘ যাত্রায় আরণ্যক অসংখ্য তারকা শিল্পীর জন্ম দিয়েছে। তাদের মধ্যে ফজলুর রহমান বাবু, আজাদ আবুল কালাম, রোকেয়া প্রাচী, চঞ্চল চৌধুরী, বৃন্দাবন দাস, শাহানাজ খুশি থেকে শুরু করে শামীম জামান, আ খ ম হাসানসহ কত কত তারকার পাঠশালা হয়ে ভিত করে দিয়েছে এই আরণ্যক নাট্যদল। ফজলুর রহমান বাবু বলেন, ‘ফরিদপুরে আমার থিয়েটার চর্চা শুরু হয়, পরে ঢাকায় এসে যুক্ত হই আরণ্যকের সঙ্গে। এখানেই থিয়েটারের একটা বড় অধ্যায় কাটিয়েছি। আরণ্যকের সঙ্গে আমার পথচলা অনেক বছরের।’ অভিনয়শিল্পী চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘আরণ্যক আমার পাঠশালা। এখানেই তো আমি শিখেছি অভিনয়, শিখেছি থিয়েটার। আরণ্যকের এই বর্ণাঢ্য উৎসবে সবাইকে আমন্ত্রণ জানাই।’
‘নাটক শুধু বিনোদন নয়, শ্রেণিসংগ্রামের সুতীক্ষè হাতিয়ার’ সেøাগান নিয়ে পথ চল আরণ্যক ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বছরব্যাপী বিভিন্ন আয়োজন উদযাপন করছে। এ আয়োজনের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে বছরব্যাপী উৎসব উদ্বোধন, নতুন নাটক মঞ্চায়ন, মে দিবস উদযাপন, রাঢ়াঙ নাটকের ২০০তম প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন আয়োজন সম্পন্ন করেছে।
এবার আয়োজন করছে ৮ দিনের নাট্যোৎসব। ২৭ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজধানীর জাতীয় নাট্যশালায় এ উৎসব চলবে। এই নাট্যোৎসবের মাধ্যমে বছরব্যাপী এ আয়োজনের সমাপন ঘটবে। উৎসবে আরণ্যকের নতুন ও পুরনো নয়টি নাটক মঞ্চস্থ হবে। সেই সঙ্গে রয়েছে বহিরাঙ্গনের উন্মুক্ত অনুষ্ঠান। সঙ্গে সেমিনার, যন্ত্রসংগীত, আদিবাসী সংগীত, প্রকাশনা উৎসবসহ নানা আয়োজন সাজিয়েছে দলটি। একক কোনো দলের উৎসবে প্রদর্শিত ৯টি নাটকই নিজেদের প্রযোজনা, এটাও ঢাকার নাট্যচর্চায় নতুন সংযোজন। উৎসবে মঞ্চস্থ হবে ‘নানকার পালা’, ‘ওরা কদম আলী’, ‘ইবলিশ’, ‘সংক্রান্তি’, ‘ময়ূর সিংহাসন’, ‘রাজনেত্র’, ‘কবর’, ‘রাঢ়াঙ’, ‘কহে ফেসবুক’। আরণ্যকের তারকাদের পাশাপাশি এ প্রজন্মের নবীন শিল্পীরাও অভিনয় করবেন এসব নাটকে।

উৎসব সূচি
শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টায় শিল্পকলা একাডেমির নন্দন মঞ্চে উৎসবের উদ্বোধনী পর্ব হয়। পরে সন্ধ্যা ৭টায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে হয় মামুনুর রশীদ রচিত ও হারুন রশীদ নির্দেশিত নাটক ‘ওরা কদম আলী’।
আজ শনিবার ২৮ জানুয়ারি বেলা ১১টায় হবে প্রকাশনা উৎসব। এতে ৩টি বইয়ের প্রকাশনা উৎসব হবে, সঙ্গে থাকবে সেমিনার। বই ৩টি হলো- মামুনুর রশীদের নাটকসমগ্র ৪, হারুন রশীদের ৫টি নাটক এবং অপু মেহেদীর আরণ্যকের নাট্যচর্যা : সৃজনে সংগ্রামে নন্দনে। এছাড়া সেমিনারে প্রবন্ধ পাঠ করবেন অংশুমান ভৌমিক। সেদিন সন্ধ্যা ৭টায় নাট্যশালায় মঞ্চস্থ হবে মামুনুর রশীদ রচিত ও নির্দেশিত নাটক ‘ইবলিশ’।
২৯ জানুয়ারি নাট্যশালার লবিতে থাকবে যন্ত্রসংগীত, বেহালা বাদন এবং সন্ধ্যা ৭টায় মঞ্চস্থ হবে মান্নান হীরা রচিত ও শাহ আলম দুলাল নির্দেশিত নাটক ‘ময়ূর সিংহাসন’।
৩০ জানুয়ারি নাট্যশালার লবিতে থাকবে যন্ত্রসংগীত সরোদ বাদন এবং সন্ধ্যা ৭টায় নাট্যশালায় হারুন রশীদ রচিত ও নির্দেশিত নাটক ‘রাজনেত্র’ মঞ্চস্থ হবে।
৩১ জানুয়ারি বিকেল ৫টায় লবিতে থাকবে আদিবাসী সংগীত এবং সন্ধ্যা ৭টায় নাট্যশালায় মঞ্চস্থ হবে মামুনুর রশীদ রচিত ও নির্দেশিত ‘রাঢ়াঙ’।
১ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৫টায় লবিতে থাকবে লোকসংগীত এবং সন্ধ্যা ৭টায় নাট্যশালা মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হবে ‘নানকার পালা’।
২ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টায় লবিতে থাকবে যন্ত্রসংগীত বাঁশি এবং সন্ধ্যা ৭টায় মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হবে মামুনুর রশীদ রচিত ও নির্দেশিত ‘কহে ফেসবুক’।
৩ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টায় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে থাকবে ‘পঞ্চাশে আরণ্যক : অভিঘাতের অভিজ্ঞান’ বিষয়ক সেমিনার। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী।
বিকাল ৫টায় নাট্যশালায় মঞ্চস্থ হবে মুনীর চৌধুরী রচিত এবং হাশিম মাসুদের নির্দেশনায় ‘কবর’। সন্ধ্যা ৭টায় একই মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হবে ‘মামুনুর রশীদ রচিত ও নির্দেশিত নাটক ‘সংক্রান্তি’। রাত ৯টায় হবে উৎসব সমাপন।