প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : ফুলবাড়ীতে পাটের আঁশ ছড়ানো ও শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। কিন্তু দাম কম থাকায় লোকসানের আশঙ্কা করছেন তারা। চলতি মৌসুমে এক থেকে দেড় মাস অনাবৃষ্টির কারণে খাল-বিল শুকিয়ে যাওয়ায় ঠিক সময়ে পাট পচাতে পারেনি চাষিরা। খরার কবলে পড়ায় অধিকাংশ চাষি অতিরিক্ত খরচ করে দূর-দূরান্তে বিভিন্ন নদ-নদী ও ছড়ায় পাট পচার ব্যবস্থা করেন। আবার অনেক চাষি পাটকাঠির আশা ছেড়ে দিয়ে পাটগাছ থেকে আঁশ তুলে নিয়ে স্বল্প পানিতে ‘রিবন রোটিং’ পদ্ধতিতে পাট পচার ব্যবস্থা করেন। গত দেড় সপ্তাহ ধরে টানা বৃষ্টিতে নদ-নদী ও খাল-বিল ভরিয়ে গেলে পাট চাষিদের মধ্যে স্বস্তি দেখা দিয়েছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন নদ-নদীতে পাট চাষিরা এখনো কেউ কেউ পাট পচাচ্ছেন। আবার অনেকেই ওইসব নদ-নদীসহ বিভিন্ন খাল-বিলে পাট চাষিরা পাটের আঁশ ছড়ানো ও পাট শুকাতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। সেই সঙ্গে বিভিন্ন হাট-বাজারে পাট উঠতেও শুরু করেছে। এছাড়া বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় পাট কিনতে দূর-দূরান্তের পাইকারদের পাট ক্রয় করতেও দেখা গেছে।
বিভিন্ন এলাকার পাট চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের এক দিকে খরা অন্য দিকে শ্রমিকসহ কৃষিতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। পাটের মণ ২৫০০, ২৭০০, ২৮০০ ও ৩০০০ টাকায় বিক্রি করতে পারলেও লোকসানের আশঙ্কা করছেন পাট চাষিরা।
কুরুষাফেরুষা এলাকার পাট চাষি আবুল কাসেম ও এরশাদুল হক জানান, তারা প্রত্যেকেই দেড় বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। অনাবৃষ্টির কারণে বাড়ি থেকে ২ কিলোমিটার দূরে এক ডোবার হাঁটু পানিতে পাট পচে আঁশ ছড়ানোর কাজ শেষ করেছেন। এই দুই চাষি বেশির ভাগ কাজ নিজেরাই করেছে বলে বিঘায় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এই দুই চাষির পাটের আঁশ ছড়ানোর বদলে পাট কাটি দেয়ায় অনেকেই পাটের আঁশ ছড়ানোর কাজ করে দেন। ফলে ২০টি পাটের বোঝার আঁশ ছড়াতে শ্রমিককে ৪০০ টাকা দিতে হয়নি। পাট চাষি কাসেমের বিঘায় ৫ মণ পাট আসায় দেড় বিঘায় সাড়ে ৭ মণ পাট হয়েছে। অন্য কৃষক এরশাদুল হকের ফলন ভালো হওয়ায় দেড় বিঘায় ১৩ মণ পাট হয়েছে। তিনি ১৩ মণ পাট স্থানীয় পাইকারদের কাছে ৩০০০ টাকা মনে বিক্রি করতে পারলেও স্থানীয় পাইকাররা কৃষক কাসেম পাট ২৬০০ টাকা মণ বলায় তিনি এখনো পাট বিক্রি করতে পারেনি।
গোরকমণ্ডল এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, তিনি এ বছর ৪ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। এ বছর অতিরিক্ত খরার কারণে ফলন ভালো হয়নি। তবে এবারে পাট চাষে খরচ বেশি হয়েছে। তাই বিঘা প্রতি ৬ মণ পাট আসবে। তিনি আরো জানান, প্রতি বিঘায় পাট চাষ করতে খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকার ওপরে। আমার যে পাট বর্তমান বাজার দর ২৫০০ থেকে ২৭০০ টাকা বিক্রি হবে। ফলন ভালো ও পাটের রং ভালো হলে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। পাটের মণ ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকা মণ হলে পাট চাষিরা লাভবান হবেন। তা না হলে পাট চাষিরা লোকসান গুনতে হবে।
পূর্ব ফুলমতি এলাকার পাট চাষি তৈয়ব আলী বলেন, তিনি এ বছর ৮ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। পাট রোপণের কিছুই দিনের মধ্যে টানা বৃষ্টিতে ৫ বিঘা জমির পাট নষ্ট হয়ে গেলেও ৩ বিঘা জমির পাট ঘরে তুলতে পেরেছেন। কৃষক তৈয়ব আলীর তথ্য মতে এক বিঘা জমিতে হালচাষ, সার, ওষুধ ,পাট বীজসহ খরচ প্রায় ৫ হাজার টাকা। এক বিঘা পাট কাঁটাসহ ও জাগ দিতে শ্রমিককে দিতে হয় ৬ হাজার টাকা। পাটের বোঝা হয় ২০০ থেকে ২৫০ টি। ২০টি পাটের বোঝার আঁশ ছাড়ানোর জন্য শ্রমিককে দিতে ৪০০ টাকা। এক বিঘা পাটের আঁশ ছড়ানোর মোট ব্যয় ৫ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে এক বিঘা জমির পাটচাষ করতে খরচ হয় ১৬ হাজার থেকে ১৭ হাজার টাকা। ভালো ফলন হলে এক বিঘা পাটের জমিতে পাট আসবে ৮ থেকে ১০ মণ। বর্তমান পাটের বাজার ২৫০০, ২৭০০, ৩০০০ হাজার টাকা।
সার, কীটনাশক ওষুধ, শ্রমিকসহ কৃষিতে যে পরিমাণ খরচ বাড়ছে তাতে পাটের দাম ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকা মণ বিক্রি করতে পারলে পাটচাষিরা লাভের মুখ দেখবেন। না হলে প্রতি বছর পাট চাষিদের লোকসান গুনতে গুনতে পাটচাষে আগ্রহ হারাবে বলে জানান চাষি তৈয়ব আলী।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লিনুফা ইয়াছমিন জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে পাট চাষের লক্ষ্য মাত্রা নিধারণ করা হয়ে ৭৫৯ হেক্টর। পাট রোপণের সময় অতিবৃষ্টির কারণে এ বছর ৫৪০ হেক্টর জমিতে পাটচাষিরা পাট চাষ করেছেন। তিনি আরো জানান পাটচাষ এখন পরিত্যক্ত জমি ও চর এলাকাগুলোতে হচ্ছে। ‘উন্নতজাতের পাট চাষ করতে কৃষি বিভাগ প্রান্তিক চাষিদের পাট চাষে উদ্বুদ্ধ করেছি। কৃষি বিভাগ চলতি পাট মৌসুমে বিভিন্ন স্থানে কৃষকের মাধ্যমে প্রদর্শনী প্লট তৈরি করেছি। বর্তমান পাটের বাজার ২ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকায় চাষিরা পাট বিক্রি করছেন। দাম বাড়লে পাটচাষিরা আরো লাভবান হবেন।
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।