একদিনে ২৭৮ করোনা রোগী শনাক্ত

আগের সংবাদ

দেশীয় কয়লা উত্তোলনে গুরুত্ব : বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে নীতি ও পরিবেশ, বিশ্বে কয়লার ব্যবহার বেড়েছে

পরের সংবাদ

ভেস্তে গেল পপি লাইব্রেরির কোটি টাকার নোট-গাইড বাণিজ্য মিশন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মসিউর রহমান ফিরোজ, সাতক্ষীরা থেকে : ওরিয়েন্টেশনের নামে নোট-গাইড বিক্রি করার কৌশল ভেস্তে গেছে ‘পপি লাইব্রেরি’ নামের একটি নোট-গাইড প্রকাশনা ও বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের। গতকাল শনিবার সাতক্ষীরা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজন করা হয়েছিল ওরিয়েন্টেশনের নামে মধ্যহ্নভোজের। এ নিয়ে সপ্তাহখানেক ধরে বেশ তোড়জোড় করছিল প্রকাশনাটি। তবে শুক্রবার রাতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে অনুষ্ঠানটি বাতিল করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, প্রত্যেক স্কুল থেকে তিনজন করে শিক্ষক নিয়ে প্রশাসনের কোনো অনুমতি ছাড়াই ওরিয়েন্টেশনের আয়োজন করেছিল ‘পপি লাইব্রেরি’। এতে জনপ্রতি এক প্যাকেট বিরিয়ানি ও ৫০০ টাকা দেয়ারও প্রস্তুতি ছিল পপি লাইব্রেরির। উদ্দেশ্য আগামী বছর থেকে নতুন শিক্ষাক্রমের নোট-গাইড বই বিক্রি করা।
সূত্র জানায়, নিষিদ্ধঘোষিত নোট-গাইড স্কুলে স্কুলে বিক্রি করতে কোটি টাকার বাণিজ্য করতে মরিয়া হয়ে মাঠে নামে একটি চক্র। আগামী বছর থেকে শুরু হতে যাওয়া নতুন শিক্ষাক্রমকে সামনে রেখে জামায়াত-বিএনপিসমর্থিত একটি শিক্ষক সংগঠন সক্রিয় এই মিশনে। পপি লাইব্রেরির আয়োজনে গতকাল মধ্যহ্নভোজ ও আলোচনা সভা করার কথা ছিল। গতকাল সাতক্ষীরায় শিক্ষকদের ওরিয়েন্টেশনের নামে ওই ভোজের আয়োজন করা হয়। পপি লাইব্রেরির ওরিয়েন্টেশন আয়োজনের কোনো সরকারি অনুমোদন নেই। এ কাজে পপি লাইব্রেরি ও জামায়াতে ইসলামী নিয়ন্ত্রিত ওই শিক্ষক সংগঠন জেলা সদরের দুই জনপ্রতিনিধি ও দুই সরকারি কর্মকর্তাকে সম্পৃক্ত করে শিক্ষকদের আমন্ত্রণ জানিয়ে পত্র দেয়া হয়।
শিক্ষক এবং সাংবাদিকদের এই অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয় জেলা সদরে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পৃক্ত এক তরুণ শিক্ষককে। যিনি শহরের নবারুণ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। সরকার নোট-গাইড নিষিদ্ধ করলেও স্থানীয় পর্যায়ে তারা সরকারের চেয়ে শক্তিশালী বলে সূত্রের দাবি। এ সবের নেপথ্যে সদর উপজেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল্লাহর মাধ্যমে আর্থিক বিনিয়োগ করছে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘পপি লাইব্রেরি’।
এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলার একাধিক শিক্ষক নেতা বলেন, জামায়াতে ইসলামীর পৃষ্ঠপোষকতায় জেলার কিছুসংখ্যক শিক্ষক এই অনৈতিক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তারা আর্থিক সুবিধা নিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। পপি লাইব্রেরির আঞ্চলিক ম্যানেজার শেখ আবদুল হাদি বলেন, আমরা এই অনুষ্ঠানে জেলার শিক্ষকদের ২০২৩-এর নতুন কারিকুলাম বিষয়ে ওরিয়েন্টেশন করছি। আর আমাদের এমপিকে জেলার শিক্ষকরা কখনো দেখেননি। তাই তার সঙ্গে পরিচয় করাতে চেয়েছি। আর সাংবাদিকদের দাওয়াত দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয় এক শিক্ষককে।
নবারুণ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মালেক জানান, আমি একটি দাওয়াতপত্র পেয়েছি মাত্র। এর বাইরে আর কিছু জানি না। সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাহিদুর রহমান বলেন, আমাকে না জানিয়ে চিঠিতে আমার নাম ছাপিয়েছে। আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। অনুমতি না নিয়েই তারা আমার নামে দাওয়াতপত্র ছেপেছে। কোনো নোট-গাইড প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা বা ওরিয়েন্টেশন করতে পারে না। নতুন কারিকুলামের শিক্ষাক্রম বিষয়ে এনসিটিবি, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড, মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর কাজ করছে। আমি অনুষ্ঠানে যাব না। অনুষ্ঠান বাতিল করার জন্য বলেছি। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, এই ওরিয়েন্টেশন সম্পর্কে আমার জানা নেই। কোনো নোট-গাইড প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, কর্মশালা বা ওরিয়েন্টেশন করতে পারে না। এটি শিক্ষা অধিদফতরের কাজ। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।
শুক্রবার রাতে একাধিক শিক্ষক জানান, শিক্ষক সংগঠনের পক্ষ থেকে মোবাইল ফোনে প্রত্যেক স্কুলের প্রধান শিক্ষককে শনিবারের প্রোগ্রাম বাতিল করা হয়েছে বলে তাদেরও জানানো হয়েছে। জেলা প্রশাসকের উদ্ধৃতি দিয়ে শিক্ষক নেতারা জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসক পপি লাইব্রেরির কথিত ওরিয়েন্টশন বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়