বন্ডে অনুমোদন দিল বিএসইসি

আগের সংবাদ

ছাত্র বিক্ষোভে ফের উত্তাল সড়ক : ২০১৮ সালের আন্দোলনের রেশ > ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দাবি পূরণের আল্টিমেটাম

পরের সংবাদ

বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ছে

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মেয়েটি ভালো থাকবে, সেই প্রত্যাশায় তাকে স্কুলে পাঠিয়েছিল পরিবার। অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী এই কিশোরীকে যৌন নির্যাতন করেন ওই স্কুলেরই পরিচালনা কমিটির সদস্য। কিশোরীর বাবা থানায় মামলা করেন। বিচারিক হাকিম আদালতে নির্যাতনের বিষয়ে জবানবন্দিও দিয়েছিল কিশোরী। এক অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ। কিন্তু তার আগেই জীবনের হিসাব চুকিয়ে দিয়েছে কিশোরী। বেছে নিয়েছে আত্মহননের পথ। গত ৭ নভেম্বর নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর থেকেই তার পরিবারকে হুমকি দেয়া হচ্ছিল। প্রধান আসামি স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ার কারণেই হয়তো হতাশা দেখা দিয়েছিল কিশোরীর মনে। খবরে প্রকাশ, অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার না হওয়া এবং ক্রমাগত হুমকির কারণেই আত্মহননের পথ বেছে নেয় সে।
বাংলাদেশে শিক্ষার্থী, বিশেষ করে শিশু ও কিশোরীরা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের এক জরিপ জানাচ্ছে, গত মে মাসে ধর্ষণের শিকার হয় ৫৫ শিশু। এর মধ্যে তিনজনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। গত আগস্টে ৫২ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে সাত শিশুকে। আর ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এক শিশুকে। শেরপুরের শ্রীবরদীতে ধর্ষণের শিকার হয়ে তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীর অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায় গত সেপ্টেম্বরে। গত বছর ধর্ষণের শিকার হয়ে লোকলজ্জার ভয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছিল পঞ্চগড়ের ষষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী।
সহিংস নিপীড়নের শিকার হচ্ছে শিশু। এ ধরনের নির্যাতন ও নিপীড়নের ঘটনা কেন বাড়ছে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্যাতনের মামলাগুলোর ‘ঠিকমতো বিচার না হওয়ার’ কারণেই সহিংসতার ঘটনা বাড়ছে। কঠোর আইনও ধর্ষণ প্রতিরোধে ফলপ্রসূ না হওয়ার কারণ হলো- যারা এ অপরাধ করছে, তারা ধর্ষণকে অপরাধ বলেই মনে করে না। পারিপার্শ্বিক নানা কারণে গড়ে ১০০টি ঘটনার মধ্যে ১০টির ক্ষেত্রেও ভুক্তভোগী নারী বা তার পরিবার মামলা করতে রাজি হয় না। আর যা-ও বা মামলা করা হয়, সেগুলো বছরের পর বছর ঝুলে থাকে। এর মধ্যে জামিনে বেরিয়ে এসে ভুক্তভোগীসহ তার পরিবারকে হুমকি-ধমকি দিতে থাকে আসামি।
করোনা ভাইরাস মহামারিকে কেন্দ্র করে দেশের মানুষ নানা সমস্যায় জর্জরিত। এ সময় শুধু শিশু নির্যাতনের সংখ্যাই বাড়েনি, বেড়েছে বাল্যবিয়েও। তিন দশক ধরে শিশুদের অধিকার রক্ষায় খুব ভালো কাজ করে যাচ্ছে সরকারি-বেসরকারি বহু প্রতিষ্ঠান। সেই কাজের সুফলও অনেক ক্ষেত্রে পেয়েছে দেশ। শিশুদের অধিকার, সুরক্ষা নিয়ে তৈরি বিভিন্ন সূচকেও তার প্রমাণ মেলে। কিন্তু তারপরও বাল্যবিয়ে এবং শিশু নির্যাতন পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যর্থতাকে যেমন অস্বীকার করা যায় না, তেমনি কিছু অভিভাবক তারাও দায় এড়াতে পারেন না। আমরা দেখেছি, অনেক সচেতন অভিভাবকও নিজের সন্তানের বাল্যবিয়ের আয়োজন করতে। আর এসব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোও চোখ বন্ধ করে রাখে। এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেই শিশুরাই। অথচ তাদের জীবনও সাফল্যের আনন্দে ভরে উঠতে পারত।
বর্তমানে নারীর প্রতি সহিংসতা কমেনি। সহিংসতার নিপীড়নের শিকার হচ্ছে শিশুও। নারী নির্যাতন ও নিপীড়নের ঘটনা কেন বাড়ছে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্যাতনের মামলাগুলোর ‘ঠিকমতো বিচার না হওয়ার’ কারণেই নারীরা বেশি সহিংসতার শিকার হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কঠোর আইনও ধর্ষণ প্রতিরোধে ফলপ্রসূ না হওয়ার কারণ হলো যারা এ অপরাধ করছে, তারা ধর্ষণকে অপরাধ বলেই মনে করে না।
এক জরিপে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারের পর ২৪ ঘণ্টা থেকে ১৫ দিনের মধ্যে জামিন পাচ্ছে ধর্ষণ মামলার আসামিরা। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের হিসাব অনুযায়ী ২০১৭ সালে ৩.৬৬ শতাংশ মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। ২০১৭ সালে হাজারে শাস্তি পেয়েছে চারজন। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি বলছে, দেশে ধর্ষণ ও নিপীড়নের ঘটনায় মামলা হচ্ছে ১০ শতাংশেরও কম। ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৫৩৬টি ধর্ষণের মামলার তদারকি করেছে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)। এর মধ্যে বিচার হয়েছে মাত্র চারটির।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নির্যাতন কমাতে হলে সত্যিকার অর্থে আইনের কঠোর প্রয়োগ হতে হবে। মামলাগুলোর দ্রুত বিচার হতে হবে। বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়িয়ে তুলছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আর কে চৌধুরী
মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষক, ঢাকা।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়