রাজধানীতে ছাদ থেকে নিচে পড়ে নারীর মৃত্যু

আগের সংবাদ

গরমে বিপর্যস্ত জনজীবন

পরের সংবাদ

বোতলজাতে লিটারে বাড়ল ৪ টাকা, খোলায় কমল ২ : সয়াবিন তেলের দাম নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ১৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মরিয়ম সেঁজুতি : সয়াবিন তেল আর আগের দামে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই- এ কথা বলার দুদিন পরেই দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৪ টাকা বাড়িয়ে ১৬৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর খোলা সয়াবিন তেলের দাম ২ টাকা কমিয়ে ১৪৭ টাকা করা হয়েছে। আজ শুক্রবার থেকে তা কার্যকর হবে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্ববাজারে অর্ধেকের বেশি কমেছে সয়াবিন তেলের দাম। এছাড়া জ¦ালানি তেলের দাম কমার কারণে জাহাজ ভাড়াও কমেছে। একই সঙ্গে অন্যান্য পথে তেল পরিবহন খরচ কমেছে। সয়াবিন আমদানির খরচও কমেছে। ফলে তেলের দাম অনেক কমার কথা। কিন্তু দেশের বাজারে কমেনি বরং বাড়ানো হচ্ছে। তাদের মতে, সরকার ব্যবসায়ীদের চাপে পড়ে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া সরকার পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে বাড়তি দামেই বিক্রি হয়। এক্ষেত্রে সরকার কিছুই করতে পারছে না। পণ্যের দাম নির্ধারণে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের বিশ্লেষণে সমস্যা দেখছেন বিশ্লেষকরা।
জানতে চাইলে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন ভোরের কাগজকে বলেন, বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশ কমেছে। অথচ বাংলাদেশে দাম বাড়ছে। গত মাসে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনেও তা স্পষ্ট হয়েছে। আমার মতে, ট্যারিফ কমিশন যে বিশ্লেষণ করছে তা ঠিকমতো হচ্ছে না। কারণ ঠিকমতো বিশ্লেষণ করলে বিশ্ববাজারে দাম কমার সুফল আমরা পেতাম। তিনি বলেন, এ থেকেই বোঝা যায় সরকার ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে গেছে। আর তাই দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই- এমন ঘোষণার একদিন পরেই বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিলেন।
নাজের হোসাইন বলেন, সাধারণ মানুষের স্বার্থ এখানে গৌণ। গোষ্ঠীভিত্তিক কাজে প্রভাব প্রতিপত্তি আছে, তারা খারাপ ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে। সুতরাং সরকারও এসব গোষ্ঠীর কথা চিন্তা করে। অন্য এক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সম্প্রতি বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেছেন ঈদে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ছিল। এটা মূলত প্রকৃত বিষয় আড়াল করে কিছু মানুষকে সুবিধা দিতে এ ধরনের বক্তব্য দেয়া হয়। এতে সরকারের কাছে ভুল তথ্য যায়। তিনি বলেন, সরকারের কাছে সঠিক তথ্য তুলে ধরলে নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারত সরকার।
তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ববাজারে টানা ৫ মাস দাম কমেছে সয়াবিন তেলের। গত বছরের নভেম্বরে প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১ হাজার ১১৮ ডলার। সর্বশেষ গত মার্চ মাসে সেই দাম কমে হয় ৯১০ ডলার। অর্থাৎ গত ৫ মাসে টনপ্রতি দাম কমেছে ২০৮ ডলার। অথচ দেশের বাজারে ঠিক এর উল্টো চিত্র। গত ১৫ এপ্রিল ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ১৬ এপ্রিল থেকে আবারো ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে আগের দামে তেল বিক্রির উদ্যোগ নেন মালিকরা। পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জরুরি ব্যবস্থা নিয়ে মালিকদের সেই তৎপরতা রুখে দেয়। এ নিয়ে দুদিন ধরে দফায় দফায় বৈঠক শেষে গতকাল নতুন দাম নির্ধারণ করেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী। বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনও গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে নতুন এ দরের কথা জানিয়েছে।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ৪ টাকা বাড়িয়ে ১৬৭ টাকা এবং খোলা তেল ২ টাকা কমিয়ে ১৪৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ শুক্রবার থেকে এ দাম কার্যকর হবে। অথচ গত মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত মিট দ্য প্রেসে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, তেলে ৫ শতাংশ ডিউটি (ভ্যাট) কমিয়েছিলাম, এতে ভোক্তা পর্যায়ে ১০ টাকা কমেছিল তেলের দাম। সেই ভ্যাট ছাড়ের এ মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। আমাদের ট্যারিফ কমিশন এটা নিয়ে কাজ করছে। দেখা হচ্ছে মিলাররা কী দামে তেলের কাঁচামাল আনছেন এবং এর দাম কেমন পড়ছে ইত্যাদি বিষয়ে। তবে, তেল পূর্বের দামে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই, এটা বলতে পারি।

বিশ্বব্যাংকের নিয়মিত মাসিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের গড়মূল্য নেমে এসেছে প্রতি টন ৯১২ ডলারে। ২০২২ সালে এই দাম ছিল ১ হাজার ৬৬৭ ডলার। সেই হিসাবে দুই বছরের ব্যবধানে সয়াবিন তেলের দাম কমেছে প্রায় ৫৫ শতাংশ। এছাড়া জ¦ালানি তেলের দাম কমার কারণে জাহাজ ভাড়াও কমেছে। ফলে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হলেও সয়াবিন তেলের দাম অনেক কমার কথা। কিন্তু দেশের বাজারে উল্টোচিত্র। এই সময়ে পণ্যটির দাম নামমাত্র কমানো হলেও বাজারে এর প্রভাব দেখা যায়নি। ভোক্তাদের বাড়তি দামেই তেল কিনতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন সর্বশেষ গত বছরের সেপ্টেম্বরে বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারপ্রতি ১৬৯ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। এরপর জানুয়ারিতে কোনো ঘোষণা ছাড়াই প্রতি লিটারে দাম ৪ টাকা বাড়িয়ে ১৭৩ টাকা ঘোষণা করেন ব্যবসায়ীরা। রোজার আগে পণ্যটির দাম নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। এরপর দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে ভ্যাটে ছাড় দেয় সরকার। এতে প্রতি লিটারে সয়াবিন তেলের দাম ১০ টাকা কমে আসে। গত ১৫ এপ্রিল সেই ভ্যাট ছাড়ের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর মঙ্গলবার থেকে আবারো লিটারে ১০ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেন মিল মালিকরা।
নতুন দাম নির্ধারণ নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভোজ্যতেল সমিতির একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্যারিফ কমিশনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় একটি বৈঠক হয়েছে। ট্যারিফ কমিশনের পক্ষ থেকে আমরা আন্তর্জাতিক বাজার মনিটর করে থাকি। বিভিন্ন আমদানি করা পণ্যের যৌক্তিক নির্দেশক মূল্য আমরা ট্যারিফ কমিশনের মাধ্যমে অবগত হই, যেন মূল্যটা যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে পারি। তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এনবিআর বিশেষ বিবেচনায় ভোক্তা পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতি দিয়েছিল। আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ করা হয়েছিল। আমরা হয়তো ধরে নিয়েছিলাম, আমদানি করার পর দাম বাড়বে। কিন্তু দুটি সার্কুলার ছিল। একটি হচ্ছে, আমদানি পর্যায়ের, আরেকটি ভোক্তা পর্যায়ের সরাসরি মিল গেট থেকে।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের এনবিআর রাজস্ব সংগ্রহের জন্য খুবই তৎপর। আমরা কিছু আলোচনা করার আগে, তেল উৎপাদনের মিলগুলোতে চিঠি চলে গেছে, ১৬ এপ্রিল থেকে যে মালগুলো বের হবে, তাদের ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিয়ে মাল বের করতে হবে। যদিও ইচ্ছা ছিল, একটু সময় নিয়ে ব্যাপারটা দেখব। কিন্তু আসলে সেই সুযোগ ছিল না। আমরা একটু দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার চেষ্টা করেছি, এ জন্য যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা সিদ্ধান্ত না দেব, বাজারে সাপ্লাইয়ের একটা ব্যাঘাত ঘটবে। এটা যেন না হয়, সে জন্যই আমরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি বলেন, আমরা যখন দাম বাড়াই, সেটা তাৎক্ষণিক কার্যকর হয় কেন, এমন প্রশ্ন থাকতে পারে। আসলে মিলগেট থেকে ভ্যাট দিয়ে পণ্য বের করতে হয়, যে কারণে এখানে অতিরিক্ত সময় দেয়ার সুযোগ আমাদের কাছে থাকে না। আর আমদানি করে মিলগেটে এনে প্রসেস করতে ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, খোলা সয়াবিন ছিল ১৪৯ টাকা লিটার, তা ২ টাকা কমিয়ে সর্বোচ্চ ১৪৭ টাকায় বিক্রি হবে। আর বোতলের এক লিটার সয়াবিনের দাম ১৬৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬৭ টাকা করা হয়েছে। ৫ লিটার সয়াবিনের বোতল ৮০০ টাকা ছিল, তা বাড়িয়ে ৮১৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সুপার পামওয়েলের দাম আগে নির্ধারণ করা ছিল না, এবার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য প্রতি লিটার ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, তেলের মূল্য কমানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা আমরা করেছি। কিন্তু সব বোঝা যদি আমরা উৎপাদকের কাঁধে চাপিয়ে দিই, তাহলে তারা নিরুৎসাহিত হবেন। এতে সাপ্লাই চেইনে অসুবিধা হবে। কাজেই সাপ্লাই চেইন নিরবচ্ছিন্ন রাখতে সয়াবিনে এই সমন্বয় করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়