রাজধানীতে ছাদ থেকে নিচে পড়ে নারীর মৃত্যু

আগের সংবাদ

গরমে বিপর্যস্ত জনজীবন

পরের সংবাদ

বেড়েছে ব্যাংক খাতের আমানত : বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ১৯, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশের ব্যাংকিং খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি সামান্য কমেছে। তবে সুদের হার ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার কারণে আমানতের প্রবৃদ্ধি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী- ফেব্রুয়ারি মাসে মোট আমানত ১৬.৬১ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০.৪৩ শতাংশ বেশি, আবার জানুয়ারির ১০.৫৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির তুলনায় কম। তবে গত বছরের একই মাসের ৬.৮৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির তুলনায় এ প্রবৃদ্ধি অনেকটাই বেশি।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা বলছেন- বেশ কয়েকটি কারণে আমানতে এ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম- আমানতের সুদহার বাড়ানো। এতে সঞ্চয়ে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। ফলে মানুষ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকে টাকা রাখতে উৎসাহিত হচ্ছে।
এছাড়া রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধিও আমানতের প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে বলে মনে করা হচ্ছে। দেশে বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহ বৃদ্ধির অর্থ হচ্ছে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় আমানতের জন্য অর্থও বেশি পাওয়া।
ব্যাংকিং খাতে আমানত ক্রমেই বাড়ছে। আমানতের প্রবৃদ্ধি টানা তিন মাস ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংক খাতে আমানতে প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে ১১.০৪ শতাংশে পৌঁছায়, যা ২৮ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। এর আগে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে করোনা মহামারির বৈশ্বিক লকডাউন ও সে কারণে হওয়া অর্থনৈতিক গতিমন্থরতার প্রভাবে আমানত প্রবৃদ্ধির হার ১১.২৬ শতাংশে পৌঁছেছিল।
আর্থিক অবস্থা ভালো-খারাপ যেমনই হোক, সব ব্যাংকই আমানতের সুদহার বাড়িয়েছে। প্রতিষ্ঠিত আমানতে ব্যাংকগুলো ৯-১০ শতাংশ সুদহার দিলেও খারাপ অবস্থায় থাকা কিছু ব্যাংক আমানত টানতে ১২ শতাংশ পর্যন্ত চড়া সুদহার দিচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদহার বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করার ফলেও ব্যাংকিং খাতে আমানতের সুদহার কিছুটা বেড়েছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, সুদহারের সীমা তুলে নেয়ার ফলে ব্যাংকগুলো আমানতে বেশি সুদ দিতে পারছে। এতে সঞ্চয়কারীরা ব্যাংকে টাকা রাখতে আগ্রহী হচ্ছেন। এ ব্যাপারে সরকারি ব্যাংকের এক ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, একটা সময় সুদের হার অনেক কম ছিল। পরিস্থিতি বিবেচনায় সেটি হয়তো ঠিক ছিল। তবে এখন সুদের হার বাজারভিত্তিক করার কারণে মানুষজন ব্যাংকে টাকা জমা করতে আগ্রহী হচ্ছে। ব্যাংকগুলো বেশি সুদ দিতে পারছে। ফলে আমানতে প্রবৃদ্ধির হার বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন- গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৭.৬১ শতাংশ বেশি।
সংশ্লিষ্টদের মতে, রেমিট্যান্স আয়ে ইতিবাচক ধারা থাকলে আমানতের প্রবৃদ্ধিতে এর প্রভাব পড়ে। কারণ রেমিট্যান্সের একটা অংশ সঞ্চয়ে যুক্ত হয়। তবে মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের সঞ্চয় কমছে।
আনুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান হচ্ছে, কৃষি খাতের মতো অনানুষ্ঠানিক খাতে সেটি বাড়ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদের হার বাড়ানোর কারণে ব্যাংকগুলোও আমানতের সুদের হার বাড়াচ্ছে বলেও জানান তারা।
এদিকে আমানত বাড়ার প্রভাব পড়েছে মানুষের হাতে থাকা টাকায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ফেব্রুয়ারি মাস শেষে দেশের মানুষের হাতে প্রায় ২.৫৮ লাখ কোটি টাকা ছিল। জানুয়ারি মাসের তুলনায় এর পরিমাণ কিছুটা কম।
ব্যাংকাররা জানান, জনগণের হাতে থাকা নগদ টাকা ব্যাংকিং চ্যানেলে এলে সেটি নতুন আমানত ও ঋণ তৈরির গতি বাড়িয়ে দেয়। অর্থাৎ মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকা কমার অন্য আরেকটি মানে হলো সেগুলো ব্যাংকে ফিরে এসেছে এবং আমানতের প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সহায়তা করেছে।
আমানতের প্রবৃদ্ধি ভালো হওয়ার পেছনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকা ছাপানোর প্রভাব রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন বেশ কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তারা বলেন, যে হারে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দেয়া হয়েছে, সেটি আমানতের প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে দিয়েছে।
আবার ইসলামি ধারার কয়েকটি ব্যাংকসহ এমন কিছু ব্যাংক আছে আছে যারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সিআরআর) ও স্ট্যাচুটরি লিকুইডিটি রেশিও (এসএলআর) ঠিকমতো বজায় রাখতে না পারায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেপো ফ্যাসিলিটি, ইসলামিক ব্যাংকস লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটিসহ বিভিন্নভাবে এসব ব্যাংককে টাকা দিয়ে যাচ্ছে। শীর্ষ ব্যাংকাররা বলেন, এসব কারণে আমানতের প্রবৃদ্ধি বেশি হচ্ছে এবং একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি কমছে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়