অনতু রেজা, নারায়ণগঞ্জ থেকে : জেলার বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্র নদে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মহাঅষ্টমী পুণ্য স্নœানোৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত সোমবার বিকালে শুরু হয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিকালে শেষ হয় স্নান।
স্নœানোৎসব উপলক্ষে তিন স্তরের কঠোর নিরাপত্তা গ্রহণ করে জেলা পুলিশ। তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসানো হয় সিসি ক্যামেরা। স্নানোৎসবকে ঘিরে বাহিনীর পোশাক ও সাদা পোশাকে দেড় হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিল।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে লাঙ্গলবন্দের ব্রহ্মপুত্র নদে মায়ের সঙ্গে স্নœান করতে নেমে পানিতে ডুবে রাজদ্বীপ নামে ৯ বছরের এক শিশু মারা গেছে। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাকে উদ্ধার করে বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। রাজদ্বীপ চট্টগ্রামের পটিয়ার এলাকার উজ্জ্বল দাসের ছেলে।
লাঙ্গলবন্ধ স্নান উৎসব উদযাপন কমিটির সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে স্নানের লগ্ন শুরু হয়। চলে মঙ্গলবার বিকাল ৪টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত। লগ্ন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্নানোৎসবে মেতে উঠে দেশ-বিদেশ থেকে আসা পুণ্যার্থীরা। আয়োজকরা জানান, মন্ত্র পাঠ করে ফুল, বেলপাতা, ধান, দুর্বা, হরিতকী, ডাব, আম্রপল্লব, নিয়ে পুণ্যার্থীরা স্নানে অংশ নেন। লগ্ন শুরুর পরপরই পুণ্যার্থীর ঢল নামে লাঙ্গলবন্দের তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত চলে স্নান। পাপমোচনের আশায় বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পুণ্যার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে লাঙ্গলবন্দ এলাকাটি।
স্নানোৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি সরোজ সাহা বলেন, স্নানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়াও ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পুণ্যার্থীরা এসেছেন। এবার ১০ থেকে ১২ লাখ পুণ্যার্থী স্নানোৎসবে অংশ নেন বলে মনে করেন তিনি। ব্রহ্মপুত্র নদের ১৯টি ঘাটের মাধ্যমে পুণ্যার্থীরা স্নান সম্পন্ন করেছেন।
সরোজ সাহা বলেন, নারীদের কাপড় বদলানোর জায়গা ও বিশুদ্ধ খাওয়ার পানিসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে উৎসবে। আয়োজকরা জানান, নলিত মোহন সাধু ঘাট, অন্নপূর্ণা ঘাট, রাজঘাট, মাকরী সাধু ঘাট, গান্ধী (শ্মশান) ঘাট, ভদ্রেশ্বরী কালী ঘাট, জয়কালী মন্দির ঘাট, রক্ষাকালী মন্দির ঘাট, পাষাণ কালী মন্দির ঘাট, প্রেমতলা ঘাট, মণি ঋষিপাড়া ঘাট, ব্রহ্ম মন্দির ঘাট, দক্ষিণেশ্বরী ঘাট, পঞ্চপাণ্ডব ঘাট ও পরেশ মহাত্মা আশ্রম ঘাটসহ ১৯টি ঘাটে স্নানোৎসব চলে।
নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ-সার্কেল) শেখ বিল্লাল হোসেন বলেন, স্নœানোৎসবকে ঘিরে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বাহিনীর পোশাকে, ডিবি ও সাদা পোশাকে পুলিশসহ প্রায় দেড় হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ৫০টির বেশি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। ৭টি ওয়াচ টাওয়ার বসানো হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে জেলার ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদে নৌ-পুলিশ কাজ করছে। স্নœানোৎসব শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।