বেড়ানোর বাহানায় ইয়াবা পাচার, গ্রেপ্তার দুই

আগের সংবাদ

মহাসড়ক যেন মরণফাঁদ

পরের সংবাদ

আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য চসিক ও জেলা প্রশাসনের সহায়তা

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ১৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : নগরীর ফিরিঙ্গিবাজারে মেরিনার্স রোডের পাশে এয়াকুবনগরে আগুনে পুড়ে সর্বস্ব হারানো পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে চট্টগ্রামের প্রশাসনসহ স্থানীয় নাগরিকরা। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসনসহ অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন ইতোমধ্যে। গত সোমবার দুপুরে সেখানে আগুন লেগে অন্তত অর্ধশতাধিক পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যায়। তবে এ দুর্ঘটনার খবর পেয়ে চট্টগ্রামের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী সে দিনই ছুটে যান ঘটনাস্থলে। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে আর্থিক সাহায্যসহ ঘর নির্মাণের প্রতিশ্রæতি দেন তিনি। এদিকে আগুনে এই মানবিক বিপর্যয়ের সংবাদ জানতে পেরে গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসনও এসব হতদরিদ্র মানুষের পাশে এসে দাঁড়াল। এ ধরনের মানবিক সাহায্যে প্রশাসনসহ অন্যদের এগিয়ে আসায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজন অশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও প্রশাসনের প্রতি।
ওই এলাকার অসুস্থ মেয়ে অর্পিতা দাশের অস্ত্রোপচারের জন্য রাখা ৫০ হাজার টাকা আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় গত সোমবার। সে টাকা কীভাবে পুনরায় যোগাড় করবেন তা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় ছিলেন তার মা সুগন্ধা দাশ। আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া ঘরের এক পাশে বসে কেঁদেই যাচ্ছিলেন স্বামী হারা সুগন্ধা দাশ। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তার এমন অসহায়ত্বের খবর পান চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ছুটে আসেন ফিরিঙ্গিবাজারে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায়। মেয়ের চিকিৎসার ৫০ হাজার টাকা অর্পিতা দাশের মায়ের হাতে তুলে দেন তিনি। পাশাপাশি তিনি অর্পিতার চিকিৎসার বিষয়েও উদ্যোগ নেবেন বলে তার মাকে আশ্বস্ত করেছেন।
জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘সুগন্ধা দাশের মেয়ের চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা তুলে দিয়েছি। পাশাপাশি বন্দর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা বলব, যাতে কম খরচে কীভাবে অর্পিতার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায়। ’
জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধামন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে সুগন্ধা দাশ বলেন, অনেক কষ্টে মেয়ের অস্ত্রোপচারের জন্য টাকাটা জমিয়েছিলাম। কিন্তু আগুন আমার সবকিছুই ছাই করে দিয়েছে। এখন আমাকে জেলা প্রশাসক পুড়ে যাওয়া ৫০ হাজার টাকা দিয়ে সহায়তা করেছেন। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী ও ডিসির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। জানা গেছে, ২০১৭ সালে স্বামী পরিমল দাশকে হারান সুগন্ধা। এরপর থেকে ছেলে ও মেয়ের কথা ভেবে আর বিয়ে করেননি এই নারী। বড় ছেলের বয়স মাত্র ২০। তিনি অবশ্য এখনো তেমন কিছু করেন না। আর ১৬ বছরের মেয়ে অর্পিতা নবম শ্রেণিতে পড়ছে পাথরঘাটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। বন্দর হাসপাতালে দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করা মায়ের আয়েই চলছিল অর্পিতাদের সংসার। এর মধ্যে অর্পিতা অসুস্থ হয়ে পড়ায় আরও বিপাকে পড়েছিলেন মা। তবে জেলা প্রশাসকের সহায়তা পাওয়ার পর আপাতত তার সেই দুশ্চিন্তা আর নেই।
নতুন বই ও ফরম পূরণের টাকা পেয়ে খুশি অঙ্কিতা আগুনে পুড়ে যায় ফিরিঙ্গিবাজার এয়াকুবনগরের বস্তিতে থাকা হরি কমল দাশের মেয়ে অঙ্কিতা দাশের সব বই ও এইচএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপের টাকা। এনিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে অঙ্কিতার বই পুড়ে যাওয়ার খবর প্রকাশিত হয়। অনেকেই তাকে বই দেয়ার জন্য ইচ্ছা পোষণ করেন। পরে তার এইচএসসির ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের সবগুলো বই কিনে দিয়েছেন কোতোয়ালি থানা ছাত্রলীগের সভাপতি অনিন্দ্য দেব। ফরম ফিলাপের জন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান সরকারের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা সহায়তা দিয়েছেন।
শুধু অঙ্কিতা দাশের বই পুড়েনি, পুড়েছে তার বড় বোন কুয়াশা দাশের জন্য কেনা বিয়ের গহনা। আগুনে ছাই হয় বিয়ের জন্য জমানো টাকাও। আগুনের ভয়াবহতা থেকে বের করতে পারেননি কোনো কিছুই। বই পেয়ে খুশিতে কেঁদে ফেলেন অঙ্কিতা। তিনি বলেন, আমি কল্পনা করিনি এত অল্প সময়ে আমার বই ও ফরম ফিলাপের টাকা যোগাড় হবে। আগুন লাগার পর আমার পরিবার নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। সংবাদ প্রকাশের পর আমার পরিবারের সঙ্গে অনেকেই যোগাযোগ করেছেন। অনেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ সহযোগিতা ও আন্তরিকতা কখনোই ভুলবার নয়। আমি এবং আমার পরিবার তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাকিব হাসান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একেএম গোলাম মোরশেদ খান, ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, পাথরঘাটা ওয়ার্ড কাউন্সিলর পুলক খাস্তগীর, সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর লুফুন্নেছা দোভাষ বেবী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়