কবিতাসমগ্র

আগের সংবাদ

অন্তর্দ্বন্দ্ব ঠেকাতে কঠোর বার্তা

পরের সংবাদ

তীব্র তাপদাহে ওষ্ঠাগত জনজীবন : তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে আরো কিছু দিন

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ১৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীসহ অন্তত ৫৪টি জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। শুধু দিনে নয়, বাড়ছে রাতের তাপমাত্রাও। কয়েক দিন ধরে বয়ে চলা খা খা রোদ ও তীব্র উষ্ণ বাতাসের এ দাবদাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। ঈদুল ফিতর ও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সপ্তাহখানেকের ছুটি শেষে কাজে ফিরছে মানুষ। গা পুড়ে যাওয়ার মত তাপে ঘরে-বাইরে ওষ্ঠাগত জীবন। তবে জীবিকার তাগিদে ঘরের বাইরে বের হওয়া নি¤œ আয়ের মানুষ বিশেষ করে দিনমজুর, রিকশাওয়ালা, হকাররা পড়ছেন বিপাকে। উষ্ণতা সহ্য করেই ছুটছেন পেটের দায়ে। বিপাকে ছুটি কাটিয়ে বাড়ি থেকে ফেরা মানুষও। তাপের তীব্রতা এত বেশি যে ভবনের ফ্লোর তপ্ত হয়ে যায়। ফ্যানের বাতাসেও উষ্ণতা। শরীর ঘামে না; শুষ্ক হয়ে যায়।
এদিকে অসহনীয় এ তাপদাহে গলাব্যথা, খুশখুশে, মাথাব্যথা, জ্বর, ডায়রিয়াসহ নানা রোগব্যধি দেখা দিয়েছে শহর থেকে গ্রামে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ মঙ্গলবার তিন বিভাগের কিছু জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টি থাকতে পারে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। তবে বৃষ্টি শুরু হলেও সহসাই গরম থেকে মুক্তি মিলছে না। এরই মধ্যে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন, সোমবার দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন রবিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল রাঙামাটিতে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবার ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা আগের দিন ছিল ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেখা যাচ্ছে, ঢাকাসহ সারাদেশের তাপমাত্রা ক্রমেই বাড়ছে। দেশের ৫৪টি জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। এ তাপমাত্রা অব্যাহত থাকবে আরো কয়েকদিন। এ সময়ের মধ্যে তাপমাত্রা আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এ গ্রীষ্ম ঋতুতে নয়, বসন্তের শেষ দিক থেকেই তাপমাত্রা রুষ্ট হতে থাকে।
রাজধানীর মালিবাগ, মৌচাক, কাকরাইল, পল্টন, শাহবাগ ও রামপুরা ঘুরে দেখা যায় রিকশাচালক ও অন্যান্য শ্রমজীবী মানুষ ছায়া খোঁজার চেষ্টা করছেন। কোনো ভবন কিংবা গাছের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। যারা রাস্তায়-ফুটপাতে বসে চা-পান বিক্রি করেন তারাও রোদের তীব্রতা থেকে বাঁচতে মাথায় ছাতা নিয়ে বসেছেন কিংবা কাপড় দিয়ে সামিয়ানা টানিয়েছেন। রিকশাচালকরা যাত্রী পেলে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে বের হচ্ছেন। গরমের কারণ দেখিয়ে ভাড়া চাইছেন বেশি। হকারদের অনেককে মাথায় গামছা দিয়ে ঘুরতে দেখা গেছে। খাঁ-খাঁ রোদে সড়কগুলোতে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি অনেক কম। মূলত ঈদের ছুটির আমেজ এখনো কাটেনি; মানুষের উপস্থিত নগন্য।
কমলাপুর রেলস্টেশনের বাইরে যাত্রীর জন্য অপেক্ষায় থাকা রিকশাচালক পলাশ মিয়া বলেন, এমন রোদ আর গরম জীবনে দেখি নাই। বারবার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। সকাল থেকে কয়েক লিটার পানি খাইছি। একটা ট্রিপ মারার পর বিশ্রাম নিতে হচ্ছে। এভাবে বেশিক্ষণ কাজ করতে পারব না। এখন গ্যারেজে চলে যাব। রোদ কমলে বিকালে কিংবা সন্ধ্যার দিকে আবার বের হব।
তাপপ্রবাহে কষ্টে পড়েছেন রাইড শেয়ারিংয়ের মোটরসাইকেল চালকরা। বেশ কয়েকজন জানালেন, রোদের কারণে মানুষ এখন মোটরসাইকেলে যেতে আগ্রহী নয়। দীর্ঘসময় অপেক্ষা করেও কোনো ট্রিপ পাওয়া যাচ্ছে না। হাসিব বিল্লাহ নামে এক মোটরসাইকেল চালক বলেন, সকাল থেকে মাত্র দুটি ট্রিপ পেয়েছি। একটি পান্থপথ থেকে মতিঝিল আরেকটি মতিঝিল থেকে নিউমার্কেট। প্রচণ্ড রোদ আর গরমে মানুষ বাইকে চড়তে চাচ্ছে না। আমরা নিজেরাই দুর্বল হয়ে গেছি। সন্ধ্যার পর বের হওয়া ছাড়া উপায় নেই। এই রোদে থাকলে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথা জানান তিনি।
মালিবাগের বাসিন্দা অমল শীল বলেন, বেলা ১০টার দিকেই গরম তীব্রতা ধারণ করে। ভবনের ফ্লোর গরম হয়ে যায়; পা রাখা কষ্ট হয়ে যায়। আর ফ্যান ঘুরলেও বাতাস নয়; মনে হয় যেন আগুন বের হচ্ছে। গরমে শরীর থেকে ঘাম ঝড়ার কথা, কিন্তু ঘামে না, অবস্থা অসনীয়।
গরমের এ পরিস্থিতি সহসা স্বাভাবিক হবে না বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম। তিনি জানান, চলমান এই তাপপ্রবাহ আরো কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পেতে পারে। তবে মঙ্গলবার রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা কিংবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টিও হতে পারে।
গতকাল সকালে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশে আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। তাপপ্রবাহের বিষয়ে বলা হয়েছে, রংপুর ও নীলফামারী জেলাসহ রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। এর ফলে সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।
আজ মঙ্গলবারের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, ময়মনসিংহ এবং সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। বিরাজমান তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে এবং সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আগামীকাল বুধবার সকাল থেকে পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। বিরাজমান তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে। উত্তরপূর্বাঞ্চলে দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পেতে পারে এবং তা অন্যত্র প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। বর্ধিত পাঁচ দিনের আবহাওয়ায় তাপমাত্রা বাড়তে পারে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়