কবিতাসমগ্র

আগের সংবাদ

অন্তর্দ্বন্দ্ব ঠেকাতে কঠোর বার্তা

পরের সংবাদ

কমেছে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ : বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ১৬, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : কমেছে বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এ খাতে ঋণ কমেছে আরো ১৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। মূলত ডলারের সুদের হার বেড়ে যাওয়া, টাকার মান কমে যাওয়ার শঙ্কা, ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোর আগ্রহ কমে যাওয়াসহ নানান কারণে এ ধরনের ঋণের পরিমাণ কমেছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য থেকে জানা গেছে- গত ফেব্রুয়ারি মাসে বেসকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ কমে দাঁড়িয়েছে ১১.০৭ বিলিয়ন ডলারে। এ নিয়ে চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ কমেছে ৭০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি। ২০২২ সাল শেষে এ ঋণের পরিমাণ ছিল ১৬.৪২ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ১৪ মাসের ব্যবধানে এটি ৫.৩৪ বিলিয়ন বা ৩৩ শতাংশ কমেছে।
বায়ার্স ক্রেডিট, ডেফার্ড পেমেন্ট, ফরেন ব্যাক টু ব্যাক এলসি, স্বল্পমেয়াদি ঋণ এবং অন্যান্য স্বল্পমেয়াদি দায়ের আউটস্ট্যান্ডিং ফিগারকে যোগ করে বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ হিসাব করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে- স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে বায়ার্স ক্রেডিট। ২০২২ সাল শেষে ৯.৫৭ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এর আউটস্ট্যান্ডিং দাঁড়িয়েছে ৫.৭৭ বিলিয়ন ডলার। সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি মাসেও এটি প্রায় ১৯৪ মিলিয়ন ডলার কমেছে।
বিদেশি উৎস থেকে দেশের বেসরকারি খাতের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের সর্বোচ্চ এক বছর মেয়াদের জন্য তহবিল ঋণ নেয়াকে স্বল্পমেয়াদি ঋণ হিসেবে ধরা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য আমদানিকারকরা বিদেশি ঋণদাতাদের থেকে ঋণ নেন, যা বায়ার্স ক্রেডিট নামেও পরিচিত। আমদানি দায় পরিশোধে ব্যাংকগুলোও বিদেশি উৎস থেকে স্বল্পমেয়াদি ঋণ গ্রহণ করে থাকে।
বেশ কয়েকটি ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যারা বায়ার্স ক্রেডিট দেয় এবং এই ধরনের স্বল্পমেয়াদি ঋণ যারা নিচ্ছেন তাদের দুই পক্ষের আগ্রহ কমার কারণেই বায়ার্স ক্রেডিটের আউটস্ট্যান্ডিং কমেছে।
তারা বলেন, বিদেশি ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহক ব্যাংকের পক্ষ থেকে বায়ার্স ক্রেডিট দিয়ে থাকে। বাংলাদেশের রিজার্ভ আগের তুলনায় অনেক বেশি কমে যাওয়ায় তারা ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে দেশীয় ব্যাংকগুলোকে খুব বেশি ভরসা করতে পারছে না। এছাড়া বেশ কিছু গ্রাহক ও ব্যাংক ২০২২ এবং ২০২৩ সালে ডলার সংকটসহ নানান কারণে এসব ঋণ সময়মতো পরিশোধ করেনি। এ কারণে তারা ঋণ দেয়া আগের তুলনায় কমিয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে ইউরোপীয় ব্যাংকগুলোতে এ ধরনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, বিদেশি ঋণের বিপরীতে সর্বোচ্চ সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট (এসওএফআর) ৩.৫ শতাংশ, যা এখন বেড়ে ৫.৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আগে একটা সময় এই হার ১ শতাংশের নিচে ছিল। অর্থাৎ, আন্তর্জাতিক বাজারে সুদের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই এমন উচ্চ সুদহারে ঋণ নিতে আগ্রহ হারাচ্ছে ঋণ গ্রহীতারা। এছাড়া, বিদেশি ব্যাংকগুলো দ্বারা অরিতিক্ত চার্জ আরোপের কারণেও এ ধরনের ঋণ কমে এসেছে।
এসওএফআর হলো আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের ঋণে সুদহার নির্ধারণের একটি বেঞ্চমার্ক। এটি লন্ডন ইন্টারব্যাংক এক্সচেঞ্জের প্রতিস্থাপক হিসেবে কাজ করে। এদিকে গত বছর দুয়েকের মধ্যে টাকার মান অনেক কমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে প্রায় ৩১ শতাংশ। আগামী ছয় মাস পর টাকার মান আরো কমে যেতে পারে এমন আশঙ্কা রয়েছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। এর আগেও টাকার মান কমার কারণে ব্যবসায়ীদের অনেক ক্ষতির শিকার হতে হয়েছে। এসব কারণে ব্যবসায়ীরাও এখন ঋণের বদলে সাইট পেমেন্ট করার দিকেই বেশি আগ্রহী।

এ ব্যাপারে এক বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানান- গ্রাহক এখন ঋণ নিলে ৬ মাস পর কত পরিশোধ করতে হবে, সেটি তারা নিশ্চিত হতে পারছেন না। কারণ এক্সচেঞ্জ রেট রিস্ক, ইন্টারেস্ট রেট রিস্কসহ অনেক কিছু তাদের বিবেচনায় নিয়ে আসতে হচ্ছে। ফলে নতুন ঋণ যতটুকু পাওয়া যাচ্ছে, সুদসহ পরিশোধ করতে হচ্ছে তারচেয়ে বেশি। এসব কারণেই স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ কমছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়