মোহাম্মদপুরে ২৫ দিন ধরে শিকলে বেঁধে তরুণীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ

আগের সংবাদ

পাল্টে যাচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা : শিখনকালীন ৪০ শতাংশ, ৩০ নম্বর হাতেকলমে এবং ৩০ নম্বর সামষ্টিক মূল্যায়ন

পরের সংবাদ

আগামীর তারকা রিশাদ

প্রকাশিত: এপ্রিল ২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচই ছিল শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ। সেদিন সিরিজের শেষ ম্যাচে শিরোপা নিজেদের করে নিতে টাইগারদের সবচেয়ে বেশি সহায়তা করেছেন তরুণ লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। তবে বল হাতে নয়। বোলার হলেও সেদিন রিশাদ জ¦লে উঠেছিলেন ব্যাট হাতে। মাত্র ১৮ বলে ৪৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস হাঁকিয়ে টাইগারদের শিরোপা নিশ্চিত করেছেন রিশাদ।
সেদিন চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে তাইজুল ইসলামের জায়গায় সুযোগ হয় ২১ বছর বয়সি রিশাদের। আর রিশাদের জন্য সুযোগ জিনিসটা বিরল। কারণ ঘরোয়া ক্রিকেটে তার খেলার সুযোগ আসে কালেভদ্রে। জাতীয় দলেও তিনি নিয়মিত নন, বিশেষ করে ওয়ানডে ক্রিকেটে। সেই রিশাদই সেদিন ম্যাচটাকে নিজের করে নিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে। বোলিংয়ে ৫১ রান দিয়ে প্রতিপক্ষ দলের অধিনায়ক কুশল মেন্ডিসের উইকেট নিয়েছেন। এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে যা করলেন, তা ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে অনেক দিন। দলের জয়ের জন্য যখন দরকার ৫৮ রান, তখন তার ব্যাট থেকে আসে ১৮ বলে ৪৮ রানের অবিশ্বাস্য এক ইনিংস। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচেও বাংলাদেশকে প্রায় জিতিয়েই ফেলেছিলেন রিশাদ। কিন্তু সেদিন ৩০ বলে ৫৩ রানের বিস্ফোরক ইনিংসের পরও বাংলাদেশ হেরেছে ২৮ রানে।
ব্যাট হাতে এই দুই ইনিংসের সঙ্গে বোলিংয়ে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজের ৪ ইনিংসে ৪ উইকেট নেয়া রিশাদ এখন বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে আলোচিত নাম। নীলফামারীর এই তরুণ অবশ্য কয়েক বছর ধরেই জাতীয় দলের নেটে নিয়মিত। লেগ স্পিনার বলেই জাতীয় দলের নেটে তার চাহিদা ছিল। প্রতিপক্ষ দলের লেগ স্পিন খেলার প্রস্তুতিটা রিশাদের বোলিং খেলেই নিতেন মুশফিক-সাকিবরা। শুধু জাতীয় দল নয়, হাই-পারফরম্যান্স দল, ‘এ’ দল, টাইগার্স-বিসিবি তাদের প্রতিটি প্রোগ্রামে রেখে রিশাদকে দিয়েছে নিজেকে গড়ে তোলার সুযোগ। ঘরোয়া ক্রিকেটের দলগুলোর লেগ স্পিনবিমুখ মানসিকতা তাকে কখনোই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট, লিস্ট ‘এ’ ও বিপিএলে নিয়মিত হতে দেয়নি।
২০১৮ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষিক্ত রিশাদ এখন পর্যন্ত দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে ম্যাচ খেলেছেন মাত্র ১৯টি, লিস্ট ‘এ’ ৩টি এবং ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি ১৮টি। এর বাইরে থাকে শুধু বিসিবির বয়সভিত্তিক দল, হাই-পারফরম্যান্স প্রোগ্রাম, টাইগার্স ও ‘এ’ দলের খেলা। রিশাদকে এসব প্রোগ্রামে রেখেই একটু একটু করে গড়ে তোলা হয়, ২০২৩ সালে এসে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয় রিশাদের, একই বছর নিউজিল্যান্ড সফরে সুযোগ পেয়ে যান ওয়ানডে ক্যাম্পে। এরপর থেকেই বাংলাদেশ দলে তিনি নিয়মিত মুখ।
তবে এই রিশাদ জাতীয় দলে এলেন কীভাবে। বাঁ-হাতি স্পিন-সংস্কৃতির বাংলাদেশে শীর্ষ পর্যায়ে লেগ স্পিনার হিসেবে জায়গা করে নেয়া নিশ্চয়ই সহজ ছিল না। নীলফামারী জেলা শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে নিজপাড়া এলাকার ছেলে রিশাদকে সে কঠিন পথটাই পাড়ি দিতে হয়েছে। তবে পেশাদার ক্রিকেটার হওয়ার নেশা রিশাদের কঠিন পথটা পাড়ি দিতে সাহায্য করেছে। রিশাদের ক্রিকেটার হিসেবে পথচলার শুরুটা হয় জেলা শহরের ছমিরউদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট থেকে। সেই টুর্নামেন্টে ধারাবাহিকভাবে ভালো করার পর ক্রিকেটের নেশা পেয়ে বসে রিশাদকে। তখন থেকে নীলফামারীর নজরুল স্মৃতি একাডেমির হয়ে জেলার শেখ কামাল স্টেডিয়ামে অনুশীলন শুরু করেন।
২০১৭ সালে একাডেমির কোচদের পরামর্শে রিশাদ রবি স্পিনার হান্টে যোগ দেন। সেখানে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে নির্বাচিত হয়ে রিশাদ চলে আসেন জাতীয় পর্যায়ে। সেখানেও বিচারকদের পছন্দের তালিকায় জায়গা করে জিতে নেন সেরা ‘অ্যাকুরেসি’ স্পিনারের পুরস্কার। সেই প্রতিযোগিতার জয়ী স্পিনারদের নিয়ে বিসিবি দুটি ক্যাম্প করেছিল। সেখান থেকে রিশাদের জায়গা হয় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৭ দলে। রিশাদকে এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি ২০২০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের প্রাথমিক দলেও ছিলেন। তবে মূল দলে জায়গা না হলেও বিসিবি রিশাদকে হাই-পারফরম্যান্স প্রোগ্রামে রেখে অনুশীলন ও ম্যাচের মধ্যে রাখার সুযোগ করে দেয়। এর পরের গল্পটা সবারই জানা।
তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রিশাদের পথচলা মাত্র শুরু। তার মধ্যে ব্যাটিং প্রতিভার ছাপ আগে থেকেই ছিল। দীর্ঘদেহী হওয়ায় লেগ স্পিনেও বাউন্সটা তার সহজাত।

:: রিয়াজ উল্লাহ

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়