আমাদের অদম্য অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান

আগের সংবাদ

বাজার তদারকি দৃশ্যমান নয়

পরের সংবাদ

কৃষি ব্যাংক এমডি শওকত আলী খান : জুনের মধ্যেই খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশে নামানোর লক্ষ্য

প্রকাশিত: মার্চ ২৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ভোরের কাগজ : ব্যাংকটিকে নিয়ে আগামীর পরিকল্পনা কী?
শওকত আলী : প্রথম পরিকল্পনা খেলাপি ঋণ কমানো। বর্তমানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১২ শতাংশ রয়েছে। যা আগামী জুনের মধ্যে ১০ শতাংশে নিয়ে আসব। আগামী ২০২৬ সালের মধ্যে খেলাপি ঋণ ৮ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া শীর্ষ খেলাপিদের কাছ ঋণ আদায়, বিভিন্ন শাখার লোকসান শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসাসহ বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। আমাদের অ্যাসেট কোয়ালিটি যথেষ্ট খারাপ ছিল। এ বিষয়ে আমি সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছি। বিশেষ করে খেলাপি আদায় করা, ভালো বা কোয়ালিটি ঋণ দেয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া ইত্যাদি। আমাদের অ্যাসেট কোয়ালিটি ভালো হলে রিটার্ন ভালো হবে। সেক্ষেত্রে ব্যাংকের লোকসানও অনেক কমে আসবে। কৃষি ঋণ দেয়ার পাশাপাশি কৃষিভিত্তিক প্রকল্পে ঋণ দেয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। কৃষিকেন্দ্রীক যে সব কাজ রয়েছে সব কিছুই কৃষি ব্যাংক করতে আগ্রহী।
ভোরের কাগজ : একজন দক্ষ ব্যাংকার হিসেবে দীর্ঘদিন ধুঁকতে থাকা কৃষি ব্যাংকটির লোকসান কাটিয়ে সাফল্যের পথে এগিয়ে নিতে কোন বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন?
শওকত আলী খান : খেলাপি আদায়ে ঋণের পুনঃতফসিল এবং সুদ মওকুফের দিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। কোয়ালিটি ঋণের পাশাপাশি লোকসান কমাতে অন্য খাতে ঋণ দেয়ার প্রতি মনোযোগ দিচ্ছি। কৃষি ব্যাংকের লোকসানের মূল কারণ হলো ব্যাংকটি প্রধানত কৃষি খাতে ঋণ দেয়, যেখানে সুদের হার সরকার নির্ধারণ করে দেয়। আর এটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণের হারের চেয়ে অন্তত তিন থেকে চার শতাংশীয় পয়েন্ট কম। যদিও আমানতের সুদ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মতোই। অর্থাৎ ক্রমাগত লোকসানের জন্য খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি ও নেতিবাচক নিট সুদ আয় দায়ী। কম বিনিয়োগ আয় লোকসানের আরেকটি কারণ। অতীতে ব্যাংকটি বিপুল পরিমাণ ঋণের সুদ ও ঋণ মওকুফ করলেও কোনো ভর্তুকি পায়নি। ফলে, মূলধন ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ব্যাংকটির প্রায় ৬৫ শতাংশ ঋণ যায় কৃষি খাতে।
লোকসান কমাতে এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের (এসএমই) কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা করছে। নতুন ম্যানেজমেন্ট সুদহার মওকুফ করেও খেলাপি ঋণ উদ্ধারের চেষ্টা করছে। ম্যানেজমেন্ট মুনাফা ও সেবা উভয়ের দিকেই নজর দিয়েছে এবং এসএমই খাতে ৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। আমরা ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম ও নারী উদ্যোক্তাদের জন্য কাজ করছি। আরো বেশি রেমিট্যান্স আনার দিকেও নজর দিচ্ছি। আমি যোগ দেয়ার পরে ১০০ দিনের একটি কর্মসূচি দেই। তাতে আমানত ও খেলাপি ঋণ আদায় থেকে বেশ কিছু পরিবর্তন হয়েছে। এছাড়া ১৪০টির মতো লোকসানি শাখা কমাতে সক্ষম হয়েছি।
ভোরের কাগজ : কৃষি ব্যাংক এসএমই খাতেও ঋণ দিচ্ছে, এ বিষয়ে জানাবেন?
শওকত আলী : মানুষের মধ্যে একটি ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে যে, কৃষি ব্যাংক শুধু কৃষি ঋণই দেয়। বিষয়টি তা নয়, এর পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তা ঋণ, এসএমই ঋণও দিয়ে থাকে, চা খাতে সব ধরনের ঋণ একমাত্র কৃষি ব্যাংকই দিয়ে থাকে। আছে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমও। যদিও কৃষি ব্যাংকের প্রধান কাজ হচ্ছে কৃষকদের সুরক্ষা দেয়া। কৃষি খাতে ঋণ দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে আমরা তার চেয়েও বেশি ঋণ বিতরণ করে থাকি। এ বছরেও বাংলাদেশ ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে গিয়ে ঋণ দিতে চাই।
মূলত ঘাটতি মেটানোর জন্য কৃষির পাশাপাশি অন্য খাতেও কিছু ব্যবসা করে থাকি। তা না হলে সামঞ্জস্য রাখা কঠিন হয়ে যাবে। রপ্তানি বাড়াতেও জোর দিয়েছি। অর্থাৎ কৃষির পাশাপাশি কিছু লাভজনক খাতে, যেগুলো কম ঝুঁকিপূর্ণ- এসব খাতে বিনিয়োগ করছি। নতুন গ্রাহক কীভাবে বের করে আনতে পারি তারও একটা পরিকল্পনা রয়েছে। প্রবাসীদের জন্য বিশেষ সেবা চালু করতে চাই। যাতে প্রবাসী গ্রাহকরা বিদেশ থেকে আসার পথে কোনো রকম হয়রানির শিকার না হন। তাদের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা ও এয়ারপোর্টে মালামাল নিরাপদে আনার ব্যবস্থা করব।
ভোরের কাগজ : জনবল সংকট কাটাতে কত দিন লাগবে বলে মনে করেন?
শওকত আলী : পনের হাজার চারশ বিয়াল্লিশ জনের মধ্যে নয় হাজাররের মতো লোক দিয়ে বর্তমান কার্যক্রম চলছে। তবে শিগগিরই দুই হাজারের মতো জনবল যোগ হচ্ছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ১৯৭৯ জন অফিসার ও সি. অফিসার পদে নিয়োগ দিয়েছে। আশা করি এতে জনবল সংকট অনেকটা কেটে যাবে।
ভোরের কাগজ : বর্তমানে স্মার্ট বাংলাদেশের সঙ্গে তাল মেলাতে কৃষি ব্যাংক কতখানি ভূমিকা রাখছে।
শওকত আলী : ডিজিটালাইজেশনের জায়গায় কৃষি ব্যাংকের অবস্থা অনেক ভালো। আমাদের ১০৩৮টি শাখার সবগুলোই অনলাইনভিত্তিক। আমরা বর্তমানে একটি মোবাইল অ্যাপস তৈরির কাজ হাতে নিয়েছি। আশা করছি খুব শিগগিরই চালু করতে পারব। এর ফলে কৃষকরা ঘরে বসেই কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে। বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের যে লক্ষ্য তার সঙ্গে কৃষি ব্যাংকও তার অংশীদার হতে চায়, সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে চলছে।
কৃষি ব্যাংকে ৩৫ লাখের বেশি ঋণ গ্রহীতা, ১ কোটি ৪৫ লাখেরও বেশি গ্রাহক। উন্নততর কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্পে অর্থায়ন, কাচাঁমাল আমদানি, পণ্য রপ্তানি, রেমিট্যান্স সংগ্রহ সবই করছে। রেমিট্যান্স সংগ্রহে দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে অবস্থান এখন ৬ষ্ঠ। কৃষিনির্ভর এসএমই খাতকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছি। গ্রাহক চাইলে যে কোনো শাখা থেকে টাকা জমা বা তুলতে পারছে। ‘বাংলা-ক্যাশ’ নামে কৃষি ব্যাংকের নিজস্ব মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম রয়েছে। শিগগিরিই একটি অ্যাপ চালু করতে যাচ্ছি, গ্রাহকরা ঘরে বসে সব ধরনের লেনদেন করতে পারবে। বিদেশে বসেও গ্রাহকরা একাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে সব ধরনের লেনদেন করতে পারবে। নতুন নতুন কৃষককে খুঁজে বের করে ৪ শতাংশ সুদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ঋণ সুবিধা দিচ্ছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়