মার্চের স্মৃতি

আগের সংবাদ

দুর্ঘটনারোধে নেই কার্যকর ব্যবস্থা : এসি রুমে বসে দুর্ঘটনা দেখেন কর্মকর্তারা > আলোর মুখ দেখে না তদন্ত প্রতিবেদন

পরের সংবাদ

শ্রদ্ধা নিবেদনের সম্মিলিত আয়োজন বিভক্ত হওয়ায় ক্ষোভ

প্রকাশিত: মার্চ ২৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : সংস্কারের জন্য চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করা যায়নি দীর্ঘদিন ধরে। নির্মাণ ত্রæটি এবং জনবিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে নবনির্মিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারও চট্টগ্রামের সুধী সমাজ ও বিশিষ্টজনেরা ব্যবহার অনুপযোগী বলে আখ্যা দিয়েছেন। এতদিন নগরীর মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুল প্রাঙ্গণের অস্থায়ী শহীদ মিনারে সম্মিলিতভাবে শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজন হয়ে আসছে। কিন্তু এবার চট্টগ্রামে স্বাধীনতা দিবসে সম্মিলিত শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজনটি ভাগ হয়ে গেছে। সিটি করপোরেশন বরাবরের মতো অস্থায়ী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের জন্য শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজন করে। অন্যদিকে জেলা প্রশাসন আলাদাভাবে শহরের উপকণ্ঠে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে নবনির্মিত অস্থায়ী স্মৃতিসৌধে আরেকটি আয়োজন করে। এতে এবারের শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজনটি বিভক্ত হয়ে পড়ে।
চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারকে সংস্কারের নামে ব্যবহারের অনুপযোগী করে ফেলা, যাতায়াতের পর্যাপ্ত সুবিধাবঞ্চিত শহরের উপকণ্ঠে অস্থায়ী স্মৃতিসৌধ বানিয়ে জেলা প্রশাসনের শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজন এবং জাতীয় দিবসে সম্মিলিত শ্রদ্ধা জানানোর ঐতিহ্য ক্ষুণ্নের অপচেষ্টার প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), চট্টগ্রাম জেলা কমিটি। এসব ঘটনাকে ‘দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত’ উল্লেখ করে গতকাল মঙ্গলবার গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়েছেন সিপিবি, চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক অশোক সাহা ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম শহরের প্রাণকেন্দ্রে বিদ্যমান কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ষাটের দশক থেকে বাঙালির সকল প্রতিবাদ, আন্দোলন-সংগ্রাম, ঐতিহ্য-সংস্কৃতির মিলনকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছিল। বাঙালির মুক্তি ও স্বাধিকার আন্দোলনের পরিক্রমায় এবং পরবর্তীতে দেশের সকল গণআন্দোলনে এ শহীদ মিনার সর্বস্তরের মানুষের আবেগের ঠিকানা হয়ে উঠেছিল। একুশের প্রভাতফেরি, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসে শহীদ মিনারে সমবেত হয়ে আসছিলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, প্রগতিশীলতা ও অসা¤প্রদায়িকতায় বিশ্বাসী সর্বস্তরের মানুষ। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সংস্কার ও আধুনিকায়নের নামে গত তিন বছর ধরে শহীদ মিনারটিকে অকেজো করে রাখা হয়েছে। গত ডিসেম্বরে সেটি খুলে দেয়ার পর দেখা যায়, প্রাণের স্থাপনাটিকে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলা হয়েছে। সুড়ঙ্গপথ, দুই পাশে ইটের দেয়াল বানিয়ে শহীদ মিনারটিকে চোখের আড়াল করে ফেলা হয়েছে। দেখে মনে হয়, এটি যেন একটি ইট, কাঠ আর পাথরের জঞ্জাল! সর্বস্তরের রাজনৈতিক ও সংস্কৃতিকর্মীদের প্রতিবাদের মুখে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সেটি পুনঃসংস্কারের প্রস্তাব দেয়া হলেও বাস্তবে তা কতটুকু আলোর মুখ দেখবে আমরা সন্দিহান। এখনও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে আছে শহীদ মিনারটি, যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষের হৃদয়ে গভীর ক্ষত তৈরি করছে।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ব্যবহার করতে না পারায় সিটি করপোরেশনের নির্মিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ এতদিন জাতীয় দিবসগুলোতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে আসছিলেন। এবার সেই সম্মিলনেও বিপত্তি তৈরি করা হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে অন্তত ১৪ মাইল দূরে সাগরপাড়ে একটি অস্থায়ী স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেছে। বলা হচ্ছে, সেখানেই পরবর্তীতে স্থায়ী স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হবে। স্মৃতিসৌধ নির্মাণের দাবি চট্টগ্রামবাসীর ছিল। কিন্তু সেটি নির্মাণের আগে চট্টগ্রামের জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন, পেশাজীবী, ছাত্র, যুব এবং সংস্কৃতিকর্মীদের সঙ্গে একবারও আলোচনার প্রয়োজন বোধ করেনি জেলা প্রশাসন। এটা দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত। শহরের উপকণ্ঠ দক্ষিণ কাট্টলী, সেখানে রিজার্ভ গাড়ি ছাড়া সহজে যাতায়াতের কোনো সুযোগ নেই। জনমানবহীন-নির্জন ওই এলাকায় স্মৃতিসৌধ নির্মাণের আগে একবারও কেন চিন্তা করা হলো না, সেখানে সাধারণ মানুষ কীভাবে শ্রদ্ধা জানাতে যাবে ?
বিবৃতিতে সিপিবি নেতারা বলেন, চট্টগ্রামের মানুষের মতামত না নিয়ে আমলাতান্ত্রিক সিদ্ধান্তে স্মৃতিসৌধ বানিয়ে এখন জেলা প্রশাসক অনেকটা হুকুম দিচ্ছেন সেখানে সবাইকে শ্রদ্ধা জানাতে যেতে। নিজেরাই বাসে করে লোকজন নিয়ে গিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর মতো একটি আয়োজনকে হাস্যকর করে তুলেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষ তার হৃদয়ের অনুভূতি-আর্তি থেকেই শহীদ মিনারে যান। সেই অনুভূতি নিয়ে এমন ‘ছেলেখেলা’ কাম্য নয়।
সিপিবি নেতারা বলেন, শহীদ মিনার-স্মৃতিসৌধ কোনো আমলার ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়, এগুলো চট্টগ্রামবাসীর সম্পদ, রাষ্ট্রের সম্পদ। জেলা প্রশাসক প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী মাত্র। মানুষের আবেগ-মতামতকে অবজ্ঞা করে একক সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার তিনি রাখেন না। তার এমন কর্মকাণ্ড বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর সম্মিলিত আয়োজনকে খণ্ডিত করেছে, ঐতিহ্য-সংস্কৃতি বিনষ্ট করেছে, যার প্রমাণ আমরা এবার স্বাধীনতা দিবসে সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের পৃথক আয়োজনের মধ্যে পেয়েছি। আমরা এর তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সিপিবি নেতারা আরও বলেন, চট্টগ্রামের মানুষের প্রাণের দাবি মেনে নিয়ে অবিলম্বে শহরের প্রাণকেন্দ্রে স্থায়ী স্মৃতিসৌধ নির্মাণের আহ্বান জানাচ্ছি। তবে তার আগে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সব রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী, ছাত্র, যুব, সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের মতামত নিতে হবে। বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর সম্মিলিত আয়োজনের ঐতিহ্য কোনোভাবেই খর্ব করা চলবে না। এমন অপচেষ্টা অব্যাহত রাখলে সিপিবি রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী, ছাত্র-যুব ও সংস্কৃতিকর্মীদের নিয়ে গণআন্দোলন গড়ে তুলবে। একই সঙ্গে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংস্কারকাজ শেষ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার খুলে দেয়ার দাবি জানানো হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়