‘গায়েবি’ জামিনে স্থগিতাদেশ : ‘উষ্মা’ প্রকাশ করে ডিএজির ব্যাখ্যা চাইলেন হাইকোর্ট

আগের সংবাদ

দুপুরের পর ‘গাড়ি চলে না’

পরের সংবাদ

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার লড়াই এখনো চলছে

প্রকাশিত: মার্চ ২৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বিদগ্ধজনের মতে ‘স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন’। সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু স্বাধীনতার পাঁচ দশকেরও বেশি সময় পেরিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দিক থেকে বাংলাদেশ কতখানি এগিয়েছে বা পিছিয়েছে সে হিসাব-নিকাশ চলছে। স্বাধীনতা অর্জনের এতগুলো বছরে কতটুকু প্রাপ্তি এবং পরবর্তীতে প্রত্যাশা কেমন; কীভাবে দেশকে সামনে এগিয়ে নেয়া যায়- তা জানালেন দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজনরা

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিতে হবে
সৈয়দ হাসান ইমাম, নাট্যব্যক্তিত্ব

শুধুমাত্র স্বাধীনতার জন্যই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ছিল না। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ে তোলার জন্য। ধর্মের ভিত্তিতে আমাদের ভারতবর্ষ ভাগ হয়েছে। কিন্তু ধর্মকে উপজীব্য করে কোনো দেশ ভাগ হতে পারে না। একটি দেশে সব ধর্মের মানুষ বসবাস করে। সে জায়গা থেকেও ধর্মের বেড়াজাল থেকে, ধর্মের দ্বারা শোষণের হাত থেকে মুক্তির জন্য আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে একটি জাতি হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াবার জন্য, যেখানে কেউ ধনী কেউ গরিব এ ব্যবধান থাকবে না- সে জন্য একটি দর্শন একটি চেতনাকে নিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করি। আজকে পাঁচ দশকেরও বেশি সময় পেরিয়ে এসে হিসাব করতে হচ্ছে কতটুকু পারলাম সে দর্শন এবং চেতনা অনুযায়ী দেশকে এগিয়ে নিতে। একই সঙ্গে এটি খুব বেশি সময় নয় পরিপূর্ণভাবে একটি দেশকে গড়ে তোলার জন্য। আমরা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যর্থ হচ্ছি, কোনো ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছি। এ হিসেবে আমাদের প্রত্যাশা অনেক অনেক বেড়েছে। সাম্প্রদায়িক হানাহানি রোধ করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।

আমাদের চেতনাগত বিপর্যয় ঘটেছে
মামুনুর রশীদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

স্বাধীনতার প্রাপ্তি-প্রত্যাশা কথাগুলো খুব সহজ। কিন্তু সহজ হলেও খুব সহজ নয়। আজকে এসে দেখা যাচ্ছে সাম্প্রদায়িক হানাহানি আগের চেয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সংস্কৃতির ক্ষেত্রে আমরা সেভাবে ভূমিকা রাখতে পারিনি বলেই এ হানাহানি বেড়েছে। মুক্তিযুদ্ধ তো হয়েছিল একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার জন্য। যেখানে সব ধর্মের মানুষ মিলেমিশে বাস করবে। বাঙালি সংস্কৃতির চর্চা করবে। কিন্তু আজকে এসে সেটা কি করতে পারছি? বাউল শিল্পীদের ঘরবাড়ি পোড়ানো হচ্ছে, মারধর করা হচ্ছে, জেলে ঢোকানো হচ্ছে! এর জন্য তো স্বাধীনতা সংগ্রাম হয়নি। যেখানে কেউ খাবে কেউ খাবে না, থাকবে না। বড়লোক গরিবকে ছুড়ে ফেলে দেবে না। শিক্ষা, চিকিৎসাসহ মৌলিক অধিকারগুলো সবাই সমানভাবে ভোগ করবে। কিন্তু সেটা হচ্ছে? আসলে আমাদের চেতনাগত বিপর্যয় ঘটেছে। গ্রামে গ্রামে সাম্প্রদায়িক আখড়া গড়ে উঠেছে। এগুলোকে প্রতিহত করতে হবে। পাঠাগার গড়ে তুলতে হবে, লোকজ সংস্কৃতি চর্চার পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। তখনই পরিপূর্ণ অর্থে সার্থক হবে স্বাধীনতা।

সংস্কৃতির সোনালি দিন হারিয়ে গেছে
কোহিনূর আক্তার সুচন্দা, অভিনেত্রী

স্বাধীনতার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি আমাদের নিজস্ব একটি ভূখণ্ড, নিজস্ব পরিচয় এবং লাল সবুজের পতাকা। স্বাধীন না হলে আমরা তা কখনোই পেতাম না। এখন একটি দেশ সময়ে সময়ে নানা চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে যায়। আমরা যাচ্ছি, আগামীতেও যাব। কিন্তু তারপরও সব কিছু মিলিয়ে ধীরে ধীরে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। পাঁচ দশকের বেশি সময় পেরিয়ে এসে আমরা বিশ্বের কাছে যতটা নিজেদের পরিচয় তুলে ধরতে পেরেছি তাকে এ সময়ে অনেকটাই বলা চলে। তবে দোষ গুণ মিলিয়েই সব কিছু গড়ে উঠে। তার মধ্য দিয়েই সকলে মিলে কাঁধে কাঁধ রেখে আমাদের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে হবে। অন্যদিকে আমি যেহেতু চলচ্চিত্রের মানুষ, সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত সে ক্ষেত্রে বিগত বছরগুলোতে আমাদের সংস্কৃতি অনেক অনেক পিছিয়েছে। যার কারণ সাম্প্রদায়িক কূপমণ্ডূকতা এবং মেধাবী মানুষের শূন্যতা। যার ফলে আগে আমাদের সংস্কৃতির যে সোনালি দিন ছিল তা হারিয়ে গেছে। আমি আশা করি আমরা আবারো আমাদের সেই সোনালি দিন ফিরে পাব।

:: মেলা প্রতিবেদক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়