সব মামলায় জামিন : জহির উদ্দিন স্বপনের মুক্তিতে বাধা নেই

আগের সংবাদ

বিভীষিকাময় এই মৃত্যুর দায় কার : ভবন ঝুঁকিপূর্ণ জানিয়ে মালিককে তিনবার নোটিস দেয় ফায়ার সার্ভিস, রেস্টুরেন্ট কিংবা দোকানের অনুমোদন ছিল না

পরের সংবাদ

নতুনত্বের ছোঁয়ায় প্রশংসিত : সমধারা সাহিত্য উৎসব

প্রকাশিত: মার্চ ১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাংলা সাহিত্য জগতের আধুনিক কর্মযজ্ঞের অন্যতম পথিকৃৎ-সাহিত্য পত্রিকা ‘সমধারা’। যার কর্মপ্রেরণায় ও প্রবল উৎসাহে এই সমধারা সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশিত হয়ে আসছে তিনি হলেন কবি সাংবাদিক সালেক নাছির উদ্দিন। সালেক নাছির উদ্দিনের ফেসবুক আইডির শিরোনাম ‘মডেল পথ দেখায় আর সমালোচক শুধু সমালোচনাই করতে থাকে। আমি আমার বিশ্বাসের মডেল হতে চাই।’ ইতোমধ্যেই তিনি সমধারার নিরানব্বইটি সংখ্যা প্রকাশ করে প্রকৃতার্থেই সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদকদের মডেল হয়েছেন। এরই মধ্যে সারাদেশের ১০০ জন প্রতিশ্রæতিশীল কবিকে নিয়ে পরপর দশটি সংখ্যা প্রকাশ করেছেন, যা সাহিত্য জগতের কর্মকুশলীদের মধ্যে বেশ সমাদৃত হয়েছে। কবি ও সাহিত্যিকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এবং এ পত্রিকা কবিদের জন্য আশা-আকাক্সক্ষার বাতিঘর বা জায়গা বা ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। এতে প্রত্যেক কবির প্রায় ২৫টি করে কবিতা ও এসব কবিতার সারমর্ম-সমালোচনা করিয়ে তা সমধারায় প্রকাশ করেছেন এ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক কবি সালেক নাছির উদ্দিন। কবিতার আদ্য-প্রান্ত, ছন্দ, বোধ, উপমা, অলঙ্কার, শরীর ও গঠন নিয়ে নিখুঁত সমালোচনা করেছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি, প্রাবন্ধিক ও নাট্যকার ফরিদ আহমদ দুলাল। এছাড়া সমধারার প্রতিটি সংখ্যাকে নিবেদিত করেছেন বাংলা সাহিত্যের প্রথিতযশা সাহিত্যিকদের নামে। এই প্রথিতযশা সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্ম নিয়েও আলোচনা-সমালোচনা করেছেন সমধারার উজ্জ্বল সাদা কাগজের পাতায়। এইতো, ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনের প্রধান মিলনায়তনে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ তারিখ শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ইপসা-সমধারা দশম কবিতা উৎসব-২০২৪। এতে উপস্থিত ছিলেন সারাদেশ থেকে আগত প্রায় ২শ জন প্রথিতযশা ও তরুণ প্রতিশ্রæতিশীল কবি-সাহিত্যিক। এ উৎসবের মূল ফোকাস বা আকর্ষণ ছিল সমধারা সাহিত্য পুরস্কার প্রদান। পুরস্কার হিসেবে পোট্রেট ও নগদ অর্থ প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। উৎসবের প্রথম পর্ব সাজানো ছিল ‘ঘরের মানুষ কবিতার মানুষ’ শিরোনামে আমন্ত্রিত কবিদের কবিতা পাঠ। এ পর্বটির সভাপতিত্ব করেন কবি, প্রাবন্ধিক ও নাট্যকার ফরিদ আহমদ দুলাল। পর্বটি উৎসর্গ করা হয় সদ্য প্রয়াত কবি আসাদ চৌধুরীর নামে। এ আসরে উপস্থিত ৬০ জন কবি কবিতা পাঠ করেন। দ্বিতীয় পর্ব ছিল কবি হেলাল হাফিজের কবিতা নিয়ে প্রিয় রাজকুমার কথন শিরোনামে আবৃত্তি প্রয়োজনা।
ঘড়ির কাঁটায় ঠিক বিকাল ৫টা। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যায় প্রিয় রাজকুমার কথন পর্বটি। বাংলা সাহিত্য অঙ্গনের কবিতার বরপুত্র বা রাজপুত্র কবি হেলাল হাফিজ। কবি হেলাল হাফিজকে নিয়েই এই রাজকুমার কথন পর্বটি সাজানো। কবি হেলাল হাফিজের কবিতা নিয়ে আবৃত্তি প্রয়োজনা ছিল সবার কাছে আলাদা ইমেজের। অনেক শ্রম, মেধা-মনন, প্রজ্ঞার সাহায্যে যতœশীল সুন্দর কাজ করেছেন এ পর্বের কুশলীরা। এই পর্বের উৎসব সৃজনে : মাসুম আজিজুল বাসার, ফারিন তামান্না, বৈশাখী দে, ঋতুরাজ ফিরোজ, সালেক নাছির উদ্দিন, বাসু দেবনাথ, জান্নাত আরা মমতাজ, নাজহাতুল ত্বোয়া, জাকির মোল্লা, মামুন প্রামাণিক, শাহনাজ বেগম, জেবুন্নেসা মুনীয়া, অনন্যা রেজওয়ানা, কনক ইসলাম, শ্রাবন্তী ঘোষ, শ্রাবন্তী দে, সারা রায়, তিথি মজুমদার, তাসনিতা মাহবুব নওরীন, জান্নাতুল ফেরদৌস মুক্তা ও নাসরিন নাহার। অনুষ্ঠানটি অসাধারণ ও স্বতন্ত্র ইমেজ নিয়ে দর্শকদের রোমাঞ্চিত করে। এ পর্বে কয়েকটি গানও পরিবেশিত হয়। কবিগুরুর সেই বিখ্যাত গান ‘আনন্দলোকে… মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্য সুন্দর ’ গানটি দ্বারা উৎসবের এ পর্বের সূচনা হয়। অনুষ্ঠানটি এত মায়াময় ও মধুর আকর্ষণে ভরপুর ছিল যা দর্শকদের বিমোহিত করে। আবৃত্তি প্রযোজনার গ্রন্থনা ও নির্দেশনায় ছিলেন সালেক নাছির উদ্দিন। উৎসবের তৃতীয় পর্ব ছিল অনুষ্ঠানের বিশেষ এবং প্রধান আকর্ষণ ‘সমধারা সাহিত্য পুরস্কার প্রদান’। সাহিত্যবিষয়ক পত্রিকা ‘সমধারা’ প্রতিবছর সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় গুণীদের ‘সমধারা পুরস্কার প্রদান’ করে আসছে। এই পুরস্কার প্রদান পর্বটি শুরু হয় ২০১৬ সাল থেকে। কবি হেলাল হাফিজ থেকে শুরু হয়ে কবি মজিদ মাহমুদ ও কথাসাহিত্যিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী পর্যন্ত চলে এসেছেন। ঠিক সন্ধ্যা ৬টায় সমধারা পুরস্কার পর্বটি শুরু হয়ে যায়। সমধারা সাহিত্য পুরস্কার-২০২৪ গ্রহণ করেছেন কবিতায় মজিদ মাহমুদ, কথাসাহিত্যে বিশ্বজিৎ চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন লেখক, গবেষক ও সংগঠক ইপসার প্রধান নির্বাহী ড. মো. আরিফুর রহমান, উপস্থিত ছিলেন শিশুসাহিত্যিক রহীম শাহ, শিশুসাহিত্যিক স. ম. শামসুল আলম, শিশুসাহিত্যিক ড. ধনঞ্জয় সাহা, কবি নজমুল হেলাল, লেখক ও কবি আশফাক রহমান ও কবি ও প্রাবন্ধিক আদ্যনাথ ঘোষ। বিগত বছরগুলোতে সমধারা সাহিত্য পুরস্কার-২০২৩ গ্রহণ করেন কথাসাহিত্যে হরিশংকর জলদাস, কবিতায় ফরিদ আহমদ দুলাল ও শিশু সাহিত্যে স. ম. শামসুল আলম। সমধারা সাহিত্য পুরস্কার-২০২২ গ্রহণ করেন কথাসাহিত্যে আনোয়ারা সৈয়দ হক, কবিতায় ওমর কায়সার। সমধারা সাহিত্য পুরস্কার-২০২১ গ্রহণ করেন কথাসাহিত্যে ইমদাদুল হক মিলন, কবিতায় সরোজ দেব। সমধারা সাহিত্য পুরস্কার-২০২০ গ্রহণ করেন কথাসাহিত্যে সেলিনা হোসেন, শিশুসাহিত্যে রহীম শাহ। সমধারা সাহিত্য পুরস্কার-২০১৯ গ্রহণ করেন কবি মৃণাল বসু চৌধুরী, সমধারা সাহিত্য পুরস্কার-২০১৮ গ্রহণ করেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা, সমধারা সাহিত্য পুরস্কার-২০১৭ গ্রহণ করেন কবি নির্মলেন্দু গুণ, সমধারা সাহিত্য পুরস্কার-২০১৬ গ্রহণ করেন কবি হেলাল হাফিজ। অনুষ্ঠানে ২০০ জন কবির কবিতা নিয়ে পদাবলীর যাত্রা-২০২৪ নামে দশম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেছেন, যা কবিদের মধ্যে অনেক উৎসাহ ও উদ্দীপনা বাড়িয়ে তুলেছে। তরুণ কবিরা এসব কবিতা পড়ে কবিতাকে আরো মার্জিত ও স্মার্ট কীভাবে করা যায় সেদিকে দৃষ্টি রাখবেন বলে আমার বিশ্বাস। কীভাবে কবিতা, কবিতা হয়ে ওঠে তরুণ কবিরা তাদের যাপিত জীবনে বা কবিতার ঘর-সংসারে এসব গূঢ় তাৎপর্য খুঁজতে ‘পদাবলীর যাত্রা’ গ্রন্থটির দ্বারে উপস্থিত হবেন বলে আশা রাখি। সমধারার অধিকাংশ কবি নারী। সালেক নাছির উদ্দিন সাহিত্যাঙ্গনে নারীদের নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছেন এবং নারী জাতিও যেন সাহিত্য সৃষ্টিতে পিছিয়ে না পড়ে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রেখেছেন। তিনি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে নারী জাতিও যেন অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন এবং নারী জাতিও যেন তাদের লেখনিতে স্মার্ট বাংলাদেশের অংশীজন হন। এ কারণে সমধারা সাহিত্য পত্রিকাতে নারীদের একটু বেশি গুরুত্ব পেয়ে আসছে। আমি মনে করি এটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। যেমন- সমধারার ৮৫তম সংখ্যার কথাই ধরা যাক। সংখ্যাটি নিবেদন করেছেন গ্রামীণ জীবনের অনন্য রূপকার সত্তর দশকের শক্তিমান লেখক বুলবুল চৌধুরীর নামে। এ সংখ্যায় বুলবুল চৌধুরীকে নিয়ে আহমেদ আব্বাস, হুমায়ুন কবীর ঢালী, হামিদ কায়সার, মনি হায়দার প্রবন্ধ লিখেছেন। এ প্রবন্ধগুলো পড়লে বুলবুল চৌধুরী ও তার কর্মযজ্ঞ সম্পর্কে জানা যাবে। পাঠকদের জন্য সমধারার এ সংখ্যাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া এ সংখ্যায় দশজন কবির কবিতা ও তাদের কবিতাগুলোর সমালোচনাও প্রকাশিত হয়েছে। এভাবে সমধারার সবগুলো সংখ্যা পাঠকদের ও লেখকদের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। আরেকটি সংখ্যার পাঠ তুলে ধরা হলো। যেমন- সমধারার ৯৭তম সংখ্যা ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা’ বিষয়ক। এ সংখ্যায় অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান চৌধুরী, ড. আতিউর রহমান, সেলিনা হোসেন, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আনোয়ারা সৈয়দ হক, ফরিদ আহমদ দুলাল, আশফাক রহমান, কামরুল হাসান বাদল, বিদ্যুৎ কুমার দাশ, ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ, ড. এম এ মোমেন, অজয় দাশ গুপ্ত, আর কে চৌধুরী, মযহারুল ইসলাম বাবলা, দাউদ হায়দার, কুমার প্রীতীশ বল ও ফারুক যোশীর প্রবন্ধ রয়েছে। এছাড়া চারটি গল্প এ সংখ্যায় স্থান পেয়েছে। রফিকুর রশিদ, রেজাউল করিম খোকন, স. ম. শামসুল আলম ও খান মুহাম্মদ রুমেলের গল্প। এই প্রথিতযশা কবি ও লেখকদের লেখা পাঠ করলে আমরা বাংলাদেশকে একটি স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তর করার যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সেগুলো সম্পর্কে জানতে পারব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ অগ্রযাত্রার সঙ্গে আমরাও একাত্মতা প্রকাশ করে কাজে শামিল হতে পারব। এছাড়া বিখ্যাত গল্পকারদের গল্প পড়ে আমরা আমাদের বোধকে শানিত বা জাগ্রত করতে পারব। মননশীল লেখা মানুষের মনকে আরো শানিত করে এবং মননশীল কাজের দিকে উদ্বুদ্ধ করে। এভাবে প্রত্যেকটি সংখ্যাই আমাদের ও পাঠকদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সমধারার প্রতিটি সংখ্যা সংগ্রহ করে আমরা পড়তে পারি। বই পড়লে মন আলোকিত হয়। বই পড়া মানুষ আলোকিত মানুষ। বই কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করে না। মানুষ বিশ্বাসঘাতকতা করে। সমধারা সাহিত্য পত্রিকা অন্য সাহিত্য পত্রিকা থেকে অনেকটাই আলাদা এ কথা। এই আলাদা বা স্বাতন্ত্র্যই সমধারার বৈশিষ্ট্য বা প্রকৃতি। এভাবে সমধারা শত শত বছর ‘বাংলা সাহিত্য’ পত্রিকার ধারায় প্রকাশিত হোক; আমাদের প্রত্যাশা বা অঙ্গীকার। আসুন আমরা একটি সেøাগানে শামিল হই- ‘আমরা সমধারার সঙ্গে আছি এবং নিরন্তর থাকব।’ সমধারার জয় হোক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়