ওয়ারীতে আগুন : ৯৯৯-এ কল পেয়ে উদ্ধার ৮০ জন

আগের সংবাদ

নির্বাচন পরবর্তী বোঝাপড়া

পরের সংবাদ

‘ছবি বানাতে বানাতে সেটেই মরতে চাই’

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাংলা সিনেমা থেকে নিজের শেষ ছবি, বলিউডের সাম্প্রতিক ট্রেন্ড থেকে সন্দীপ রেড্ডি, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজের ইচ্ছা- সব নিয়েই ভারতীয় গণমাধ্যমের সঙ্গে আড্ডা দিলেন পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপ। তারই চুম্বকাংশ মেলার পাঠকদের জন্য

প্রশ্ন : কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘কেনেডি’ নিয়ে উন্মাদনা ছিল। এবার কেমন লাগছে?
গতবার অনেকে দেখতে পাননি ছবিটা। আশা করব, এবার যেন তারা দেখতে পান। আসলে গতবার যারা দেখতে পাননি, তাদের জন্য আমার ভীষণ অপরাধবোধ হচ্ছিল।
প্রশ্ন : গতবার আপনার ছবির প্রদর্শনীতে লাঠিচার্জ হয়, দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। এমন উন্মাদনা দেখলে পরিচালক হিসেবে কেমন অনুভূতি হয়?
পরিচালক হিসেবে আমার সব সময় একটাই জিনিস মনে হয়, কত বেশি সংখ্যক দর্শকের কাছে ছবিটা পৌঁছতে পারল। আর কলকাতার দর্শকদের কাছে থেকে বরাবরই ভালোবাসা পেয়ে এসেছি আমি।
প্রশ্ন : ২০২৩ সালে বলিউডে বড় বাজেট, বড় তারকাদের ছবি রমরমায় চলেছে বক্স অফিসে। ১ হাজার কোটির নিচে রোজগার হলে ওই ছবিকে সফল ধরা হচ্ছে না। কী মনে হয়, দর্শক বদলে গিয়েছেন, না কি ব্যবসার ধরন?
সিনেমায় ব্যবসার ধরন বদলে গেছে। এটার ভালোমন্দ দুটো দিক আছে। ভালো দিক হলো বড় বড় ছবি বৃহত্তর ইন্ডাস্ট্রির জন্য অর্থ আনতে পারছে, ব্যবসায়িক সাফল্য পাচ্ছে। খারাপ দিকটা হলো একটা নির্দিষ্ট ঘরানার সিনেমা ও তাদের পরিচালকদের জন্য কোনো জায়গা রইল না। তবে গত বছর বিধু বিনোদ চোপড়ার মতো পরিচালকের প্রত্যাবর্তন হলো। সেটাও তো একটা ভালো দিক।
প্রশ্ন : আপনি ‘অ্যানিম্যাল’ ছবিটিকে ২০২৩ সালের ‘গেম চেঞ্জার’ কেন বললেন?
‘গেম চেঞ্জার’ শব্দটা সব সময় যে পজিটিভভাবেই দেখতে হবে, তেমনটা নয়। আমার কাছে এর দুটি দিক রয়েছে। আসলে সিনেমা ব্যবসার ধরনটা বদলে যেতে সবাই এখন ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ চরিত্রই করতে চাইছেন।
প্রশ্ন : সিনেমার ব্যবসার মতো বিভিন্ন পুরস্কারের ধরনও কি বদলেছে?
আমি বলিউডের অ্যাওয়ার্ড শোতে যাই না, তাই ভাবিও না। আসলে পুরস্কার দিয়ে ছবি কিংবা জুরির বিচার করা যায় না। পুরস্কারগুলো জুরিতে যারা থাকেন, তাদের মতোই।
প্রশ্ন : চলচ্চিত্র উৎসবের জুরির ওপরও কি তা হলে আপনার বেশি আস্থা?
আসলে জুরি সব সময়ই পুরস্কারের পক্ষে থাকেন। তাই একটা ছবি পুরস্কার না পেলে সেটা বাজে ছবি হয়ে গেল, তেমন ভাবার দরকার নেই। আবার পুরস্কার জিতল মানেই সেটা দুর্দান্ত ছবি, সেটা ভাবারও কারণ নেই।
প্রশ্ন : ‘অ্যানিম্যাল’ ছবিটা দুবার দেখেছেন। কী কারণে আপনার এতটা দৃষ্টি আকর্ষণ করল এই ছবি?
কোনো ছবির মান ও মেধা নিয়ে সেই ছবির পরিচালকের সঙ্গেই আমি কথা বলি। আসলে আমি প্রতিদিনই অনেক ছবি দেখি। কিন্তু কোনো ছবি ৪০ দিন ধরে ভাবতে বাধ্য করে না। এখন সমাজমাধ্যমের যুগে ছোটখাটো সব বিষয়ে মতামত দেয়ার জন্য লোক রয়েছে। সিনেমার রেটিংয়ের ভিত্তিতে তার সাফল্যের মাপকাঠি নির্ধারিত হয়, এটা কি ঠিক! আমরা এমন একটা সময়ে বাস করছি, যখন কে যে কী করছে বুঝতে পারছি না। চারদিকে ‘ট্র্যাজিক কমেডি’ চলছে।
প্রশ্ন : সন্দীপ রেড্ডি বঙ্গার সঙ্গে ছবি দিয়ে তার প্রশংসা করায় বরুণ গ্রোভর বা বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানের মতো আপনার বন্ধুরা আপনার সঙ্গে সহমত হননি।
হ্যাঁ, আমি জানি। কিন্তু আমি আসলে এত কিছু ভাবি না। বেশি ভাবলে আমি শেষ হয়ে যাব। আমার যেটা ভালো লাগে আমি সেটা করি, সেটা করতে কখনো লজ্জা পাই না। কাউকে প্রশংসা করতেও পিছপা হই না।
প্রশ্ন : ‘অ্যানিম্যাল’ ছবির পর উগ্র পৌরুষ নিয়ে চারপাশে যে চর্চা হচ্ছে, তাকে আপনি সাধুবাদ জানান। কিন্তু কোনো বিষয়কে সমাজের কাছে তুলে ধরতে গিয়ে চিত্রায়ণের দিকটায় কি পরিচালকের নজর দেয়ার প্রয়োজন নেই?
আমি কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল তা নিয়ে ভাবছি না। কিন্তু কথা হচ্ছে তো। কার জন্য আলোচনা-চর্চা হচ্ছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। অনেক ফালতু বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করি। তবে দেখুন, সমাজের একটা বড় অংশ, ভারতের প্রায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ দর্শক ‘অ্যানিম্যাল’ দেখে দারুণ আনন্দ পেয়েছেন। তা হলে সবাই মিলে একটা মানুষের মধ্যেই কেন সমস্যা দেখতে পাচ্ছেন? যারা এই ছবি দেখছেন, তাদের মধ্যেও সমস্যা রয়েছে। এত বড় তারকারা কাজ করেছেন, তাদের কোনো দায় নেই? সমস্যা তা হলে তাদেরও আছে। যে কোনো একটা মানুষকে টার্গেট করা সেটা ঠিক নয়। আমি সেই মানসিকতায় সমস্যা দেখতে পাই।
প্রশ্ন : আপনি কি সন্দীপ রেড্ডি বঙ্গার প্রতি সহানুভূতিশীল?
এটা ভীষণ কঠিন প্রশ্ন! আমি সব থেকে খারাপ মানুষটার প্রতিও সহানুভূতিশীল। সন্দীপ এবং তার মাথায় কী চলে তা নিয়ে খুব উৎসাহী ছিলাম। ছবিটা দেখার পর ভীষণ কৌতূহল হচ্ছিল ওর চিন্তা-ভাবনা নিয়ে। সেটা কে পূরণ করবেন? যিনি পরিচালক, তিনিই। তাই ওর কাছেই গিয়েছিলাম।
প্রশ্ন : একজন পরিচালকের সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকা উচিত, না কি ছবির ব্যবসায়িক সাফল্যই শেষ কথা?
শুধু পরিচালকেরই কেন দায়বদ্ধতা থাকবে? সেই পেশায় যারা রয়েছেন, সবাইকে সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে! দেখুন, বিভিন্ন ফেস্টিভ্যালে গিয়ে আমি এমন কিছু কথা বলে ফেলি, তারপর আমাকে ‘ক্যানসেল’ করে দেয়া হয়। আমি আর ও দিকে পা দিচ্ছি না।
প্রশ্ন : আপনাকে যখন বারবার ‘ক্যানসেল’ করা হয়, কীভাবে ঘুরে দাঁড়ান?
যারা ভালো পরিচালক, তারা সমাজকে উসকানি দেবেন। সমাজ তাদের বাতিলও করবে। কেন সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে বলা হতো তিনি ‘পভার্টি পর্ন’ (দারিদ্র্যকে বিক্রি করা) বিক্রি করে ছবি সফল করতেন। পিয়ের পাওলো পাসোলিনি ধর্মাচরণের বিরুদ্ধে ছবি করায় কুপিয়ে খুন করা হয়।
প্রশ্ন : আপনি বিভিন্ন সময় হিন্দু কট্টরপন্থিদের রোষের মুখে পড়েছেন। দেশ ছেড়ে কিছু দিন বিদেশে কাটাতে হয়। এ ঘটনাগুলো আপনার মধ্যে কী পরিবর্তন এনেছে?
আসলে আমি গত ২০ বছর ধরে টার্গেট হচ্ছি। …পরিবর্তন জানি না। সারা বিশ্বেই আসলে এগুলো হচ্ছে। আপনি দেশের বাঁদিকে যান কিংবা ডানদিকে চিত্রটা কমবেশি এক। হয় আপনি মানিয়ে নিন, নয়তো রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করুন। দেখুন সবাই আগে নিজের পিঠ বাঁচাতে চান। পেটে তিন বেলা ভাতের দরকার, চুপ করে থাকার এটাই সবচেয়ে বড় কারণ।
প্রশ্ন : এই মুহূর্তে দেশে সব থেকে চর্চিত বিষয় রামমন্দির…
এ বিষয়ে কোনো উত্তর দিতে চাই না।
প্রশ্ন : আপনার জীবনের কোনো আক্ষেপ রয়েছে?
আক্ষেপ নিয়ে বাঁচা সম্ভব নয়। তাই কোনো আক্ষেপ নেই আমার।
প্রশ্ন : জীবনে সাফল্য ও ব্যর্থতা দুটোই কীভাবে সামলান?
আমি তো জীবনে কখনো সফল হইনি। ব্যর্থতা দেখতে দেখতে অভ্যস্ত। প্রথম সাত বছরই নিষিদ্ধ ছিলাম। কখনোই আমার ছবি বক্স অফিসে দারুণ কিছু কামাল করেনি। তাই ব্যর্থতা সামলানোর অভ্যাস রয়েছে। সফল যে দিন হয়ে যাব, সে দিন বুঝতে পারব না কীভাবে সামলাব সবটা।
প্রশ্ন : আপনার নিজস্ব একটা ব্র্যান্ড হয়েছে এত বছরে। সেটা কি অস্বীকার করবেন?
নাম আর ব্র্যান্ড তো লোকে বানিয়ে দেন। সেটার আলাদা খেসারত দিতে হয়।
প্রশ্ন : অনুরাগ কাশ্যপের মন খারাপ হলে কী করেন?
শুধু ঘুমাই।
প্রশ্ন : বাংলা সিনেমা দেখেন?
না, দেখা হয় না। বাংলা সিনেমায় এখন ভীষণ রকম তামিল-তেলুগু ছবির প্রভাব। শুধু বাংলা নয়, হিন্দি ছবিতেও দক্ষিণের প্রভাব ভীষণ রকম। আসলে বাংলায় এমন কিংবদন্তি সব পরিচালক ছিলেন, তার জয়জয়কারটাও তাই বেশি ছিল। তেমনই পতনের সময় আওয়াজটাও বেশি। খানিকটা এভারেস্ট থেকে পড়ার মতো।
প্রশ্ন : শেষ কোন বাংলা ছবি দেখেছেন?
শেষ আমি ‘পদাতিক’ দেখেছি। তার মানে এই নয় যে, বহু বছর আগে দেখেছি। কিছু ছবির কাছে বারবার ফিরে যাই। ‘পদাতিক’ তেমনই একটা ছবি।
প্রশ্ন : আপনি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের কাজ দেখেছেন?
ওহ্ বুম্বাদা! প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলতে আমি খানিক বুঝতে পারিনি। বুম্বাদার সঙ্গে কাজ করব আমি কথা দিয়েছি। বিক্রমাদিত্যর (মোটওয়ানে) সঙ্গে উনি ‘জুবিলি’তে কাজ করেছেন। এবার আমার কথা রাখার পালা।
প্রশ্ন : আপনার শেষ ছবি কী হবে?
কোনো শেষ ছবি হবে না। ছবি বানাতে বানাতেই সেটেই মরতে চাই, এটাই একটা পরিচালকের স্বপ্ন। মরলে সেটেই মরব।

:: মেলা ডেস্ক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়