যুবলীগ নেতার বদলে অন্যের জেল খাটার ঘটনা তদন্তের নির্দেশ

আগের সংবাদ

জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী : যুদ্ধ থামানোর উপায় খুঁজুন

পরের সংবাদ

একুশের গান…

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

‘অশ্বিনী তারার লোকগুলির মাতৃভাষা বাংলা’- এ পঙ্ক্তিটি কবি বিনয় মজুমদারের ‘অশ্বিনী তারায়’ কবিতার। তিনি হয়তো নিজেকে হারিয়ে অন্য কোনো কাল্পনিক জগতেও খুঁজে পেয়েছেন বাংলা ভাষাভাষী মানুষ, যেখানে বাংলা ভাষাতেই কথা বলেন সবাই। এমন ভাবনা ‘বাংলা ভাষা’র প্রতি কবির আবেগেরই বহিঃপ্রকাশ। বাংলা ভাষার প্রতি সবারই আবেগ কিংবা টান কাজ করে। কেননা যে ভাষার জন্য এত রক্ত ও প্রাণের আত্মত্যাগ, সে ভাষার প্রতি বাঙালি জাতির ভালোবাসা চির মজ্জাগত। আর ১৯৫২ সালে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ সেøাগানে যখন এ বাংলা ভূখণ্ডে ফাগুন এসেছিল, তখনই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকরা আন্দোলন দমনের নামে ১৪৪ ধারা জারি করে। নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ঢাকা শহরে মিছিল-মিটিং, সমাবেশের ওপর। এই নিষেধাজ্ঞা ভেঙে বাংলা ভাষার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও রাজনৈতিক কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ ১৪৪ ধারা অবমাননার অজুহাতে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। গুলিতে নিহত হন রফিক, সালাম, বরকত ও আব্দুল জব্বারসহ অনেকে। শহীদদের রক্তে রঞ্জিত হয় এ শহরের রাজপথ। যে ক্ষত ধারণ করে রচিত হয় হাজারো কবিতা-গান। ভবিষ্যতেও হবে কারণ ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি?’ এই গানটি একুশের প্রভাতফেরিতে বাঙালিদের প্রাণে বাজে। গানটি লিখেছেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। গানটি প্রথমে সুর করেছিলেন আবদুল লতিফ। পরবর্তী সময়ে এর সুর-যোজনা করেন সুরস্রষ্টা আলতাফ মাহমুদ। তবে এই গানটির আগেও রচিত হয়েছে আরো গান।
১৯৪৮-এ যখন ভাষা আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করে, কবি ও গীতিকার অধ্যাপক আনিসুল হক চৌধুরী লেখেন- ‘শোনেন হুজুর/বাঘের জাত এই বাঙালেরা/জান দিতে ডরায় না তারা/তাদের দাবি বাংলা ভাষা/আদায় করে নেবে তাই’। এতে সুরারোপ করেন গণসংগীত শিল্পী শেখ লুৎফর রহমান। পরবর্তী সময়ে আনিসুল হক চৌধুরী একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে আরো কিছু গান লেখেন। আর এই রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন শুধু ঢাকা বা শহরকেন্দ্রিকই ছিল না, সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়েছিল। এ প্রেক্ষাপটে প্রথম গান লেখেন ভাষাসংগ্রামী গাজীউল হক।
তিনি লেখেন- ‘ভুলব না, ভুলব না, একুশে ফেব্রুয়ারি ভুলব না’। এতে সুরারোপ করেছিলেন তারই অনুজ নিজাম উল হক। এর সুর অনুসরণ করেছিলেন তিনি হিন্দি গান ‘দূর হাঁটো দূর হাঁটো/ঐ দুনিয়াওয়ালে, হিন্দুস্তান হামারা হ্যায়’ থেকে। ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত একাধিক ভাষাসংগ্রামী তাদের একুশের স্মৃতিচারণামূলক লেখায় গাজীউল হকের এই গানটিকে একুশের প্রথম গান হিসেবে চিহ্নিত করেন।
১৯৫৩ সালে একুশের প্রথম বার্ষিকী ও প্রথম শহীদ দিবস পালনের প্রভাতফেরিতে ভাষাসংগ্রামী মোশারেফ উদ্দিন আহমদের ‘মৃত্যুকে যারা তুচ্ছ করিল/ ভাষা বাঁচাবার তরে/ আজিকে স্মরিও তারে’ গানটি গাওয়া হয়। প্রভাতফেরির প্রথম গান এটি। সুর আলতাফ মাহমুদের। আরেকটি বিষয় উল্লেখযোগ্য তাহলো ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ গানটির প্রথম সুরকার আবদুল লতিফ অমর একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে লিখেছেন আরো বেশকিছু গান। তার মধ্যে ‘ওরা আমার মুখের ভাষা/কাইড়া নিতে চায়/ ওরা কথায় কথায় শিকল পরায়/ আমার হাতে পায়’, ‘বুকের খুনে রাখলো যারা/মুখের ভাষার মান/ভোলা কি যায়রে তাদের দান?’, ‘আমি কেমন কইরা ভুলি/মুখের কথা কইতে গিয়া/ভাই আমার খাইছে গুলি’, ‘আবার এসেছে অমর একুশে/পলাশ ফোটানো দিনে/এ দিন আমার ভায়েরা আমায় বেঁধেছে রক্তঋণে’ গানগুলো উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের বা বাংলাভাষী অনেক কবি-গীতিকবিই লিখেছেন ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ নিয়ে অনেক গান-কবিতা। যাদের সবার কথা এই নিবন্ধে বলা সম্ভব হয়নি। প্রভাতফেরির আরেকটি কালজয়ী গান ফজল-এ-খোদা রচিত ‘সালাম সালাম হাজার সালাম/সকল শহীদ স্মরণে/আমার হৃদয় রেখে যেতে চাই/তাদের স্মৃতির চরণে’। ভাষা আন্দোলনের গান নিয়ে লেখা এই নিবন্ধটিও বাংলা মায়ের সব সূর্যসন্তানের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নিবন্ধিত।

:: মেলা প্রতিবেদক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়