ঢাকার জিনজিরা : বিয়ের পরদিনই বরের মৃত্যু

আগের সংবাদ

তৃণমূলে কোন্দল বাড়ার শঙ্কা

পরের সংবাদ

তারকাদের বই পড়ার গল্প

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

প্রযুক্তির যুগে বিজ্ঞান এনে দিয়েছে বেগ, কিন্তু অনেকখানি কেড়ে নিয়েছে আবেগ। যে আবেগে বই নিয়ে হুড়োহুড়ি পড়ে যেত, সে আবেগ এখন যন্ত্রের বুকে। তাই তো বাঙালির বই পড়ার প্রয়োজনটা অনেকটা গৌণ। তবে কিছু মানুষের এখনো বই পড়ার আগ্রহটা আছে। আর আছে বলেই বসন্তের বাতাসে ভেসে আসে বইমেলার নতুন বইয়ের গন্ধ। তারকাদের বই পড়ার গল্প নিয়ে থাকছে মেলার এ বিশেষ আয়োজন

শরৎচন্দ্রের লেখা আমার
খুবই ভালো লাগে
ফজলুর রহমান বাবু

যতটুকু মনে পড়ে আমাদের বাসাতেই একটা বই ছিল। মা অথবা ভাই, কেউ একজন হবে- সেই বই পড়ার জন্য রেখেছিল। নিমাই ভট্টাচার্যের একটা উপন্যাস। সেটাই আমার প্রথম বই পড়ার স্মৃতি। পাঠকপ্রিয় এই উপন্যাসের নামটা এই মুহূর্তে আমার খেয়ালে আসছে না। এই বইটা যে উপন্যাসের ছিল তখন তাও বুঝতাম না। গল্পের বই মনে করেই সেদিন পড়ে ফেলেছিলাম। এখন অনেকের লেখাই পড়ি, অনেকের লেখা পড়েই রীতিমতো মুগ্ধ হই। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, শহীদুল জহির, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, সমরেশ মজুমদার, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়সহ আরো অনেকের লেখা আমার ভীষণ প্রিয়। তাদের লেখা আমাকে খুব টানে। বিশেষ করে শরৎচন্দ্রের লেখা আমার খুবই ভালো লাগে। আর কবিদের মধ্যে জীবনানন্দ দাশ, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আল মাহমুদ, শামসুর রাহমানসহ বিভিন্ন কবির কবিতা এখনো পড়ি। তবে এখন পড়তে গেলে বেশি পড়ি নির্মলেন্দু গুণ। নতুনদের লেখা খুব বেশি পড়া হয় না। তবে পত্রিকা পড়ার সুবাদে সাহিত্য পাতায় যদি কারো লেখা ভালো লাগে তবে তার কবিতার বই পড়ি। আর একটা সময় আমাদের দেশে প্রচুর রুশ সাহিত্যের বই বের হতো। তখন লিও তলস্তয়, ফিওদর দস্তয়ভস্কি তাদের লেখা পড়তাম। গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের গল্প-উপন্যাস, পাবলো নেরুদার কবিতা এসব পড়তাম। কিছুদিন আগে আলবেয়ার কাম্যুর ‘প্লেগ’ পড়েছি। আর কাম্যুর ‘আউটসাইডার’ উপন্যাসের কথা না বললেই নয়, দারুণ একটা উপন্যাস। বেশ কয়েকবার পড়েছি। দস্তয়ভস্কির ‘বঞ্চিত লাঞ্ছিত’ পড়ে রীতিমতো অবাক হয়েছি। যদিও এখন গল্প-উপন্যাস থেকে বেশি পড়া হয় নাটক কিংবা সিনেমার স্ক্রিপ্ট। পড়াশোনার জন্য খুব বেশি সময় বের করতে পারি না। তবে সময় পেলেই পড়ি। আর বইমেলা নিয়ে প্রচুর স্মৃতি আছে। নব্বই দশকের শুরুতে যখন থিয়েটার করতাম তখন বন্ধু-বান্ধব মিলে আড্ডা দিতাম বইমেলা প্রাঙ্গণে, বাংলা একাডেমির বটতলায়। এরশাদের আমলে আমরা বন্ধুরা মিলে স্বৈরাচারবিরোধী ‘পথ নাটক’ করতাম বইমেলার পাশেই। তা আমার জীবনের উল্লেখযোগ্য এক অধ্যায়।

আল মাহমুদের কবিতা আমার ভীষণ প্রিয়
ফাহমিদা নবী

একেক সময় একেক ধরনের বই পড়তে বেশি ভালো লাগে। যেমন ছোটবেলায় আমার রূপকথার গল্প বেশি পছন্দের ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পছন্দেরও পরিবর্তন হয়েছে। একটা সময় আমি রোমান্টিক ধাঁচের বইও পছন্দ করতাম। এখন আমি ডিটেকটিভ ও পারিবারিক গল্প পড়তে বেশি পছন্দ করি। প্রথম দিকের বইমেলায় আমরা যখন যেতাম, তখন বইমেলা হতো বাংলা একাডেমিতে। বইমেলার পাশাপাশি গান, নাচ, আবৃত্তি চলত সারাদিন। প্রতিযোগিতা হতো বিভিন্ন বিষয়ে এবং সন্ধ্যায় ফলাফল ঘোষণা হতো। তখনকার বইমেলায় খুবই আনন্দ ছিল। প্রাণবন্ত সময় কাটিয়েছি সেই সময়ে। আম্মা আমাকে অনেক ছোটবেলা থেকেই বই কিনে দিত। রূপকথার গল্প কেনা হতো অনেক ছোটবেলা থেকেই। যদিও সঠিকভাবে মনে নেই কার বই প্রথম বা কী বই কিনেছিলাম। অনেক লেখকের বই পড়েছি। এখনো নিয়মিত পড়ি। আমাকে অনেকেই তাদের বই দেন, আমি সেগুলো পড়ি। আমি মোটামুটি সব ধরনের বই পড়ি। আল মাহমুদের কবিতা আমার ভীষণ প্রিয়। বই পড়লে অনেক ধরনের শিক্ষা হয়। যে কোনো বয়সের মানুষের জন্যই বই পড়া জরুরি। বই মানুষকে বিকশিত করে। প্রযুক্তি আমাদের যা দেখায় সব কিছু আসলে সত্যি না। তাই বই পড়া উচিত, তাতে মানুষের মন ও মানসিকতার বিকাশ ঘটে, জ্ঞানও বৃদ্ধি হয়। লেখালেখি করা হয়। তবে এখনো বই লেখা হয়নি। আমি সবসময় মানুষের বোধ নিয়ে লিখি। অনেকেই আমাকে বলেছে বই লিখতে। আমার এখনো মনে হয়নি বই লেখা উচিত, তবে দেখা যাক, হয়তো লিখব।

কবিতা আমার ভীষণ পছন্দের
খায়রুল বাশার

ছোটবেলায় পাঠ্যবইয়ের বাইরে তেমন বই পড়ার সুযোগ ছিল না। ধীরে ধীরে যখন বড় হচ্ছি তখন আমার বড় ভাই আমার জন্য বই নিয়ে আসত। যতদূর মনে পড়ে আমার পড়া প্রথম বই ছিল সেলিনা হোসেনের মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা একটা উপন্যাস। স্কুলে পড়ার সময় গল্প পড়া হতো বেশি। এক সময় উপন্যাসের প্রতি ঝোঁক তৈরি হয়। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এদের উপন্যাস প্রথম দিকে পড়া হতো। পরে অন্যদের লেখাপড়া শুরু করি। ছোটবেলায় বাইরের বই কম পড়ার কারণেই হয়তো পাঠ্যবইয়ের গল্পগুলো এখনো মাথায় গেঁথে আছে। আমার মনে হয় পাঠ্যবইয়ের গল্পগুলো যেভাবে আমাদের মনে থাকে সেভাবে বাইরের বইয়ের গল্প মনে থাকে না। বই মানসিক বিকাশের জন্য বই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বই পড়ার মাধ্যমে আমাদের কল্পনার জগতে আমরা নানান চিত্র আঁকতে পারি। এটি আমাদের সৃজনশীলতা বাড়ায়। বই আমাদের বিভিন্ন ঘটনার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। যেসব ঘটনা পড়ার কারণে আমরা মানবিক হয়ে উঠি, প্রেমিক হয়ে উঠি। একজন নির্মল মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে বই পড়াটা জরুরি। আমার সব লেখকের লেখাই ভালো লাগে। কোনো একজন লেখকের লেখা যখন ভালো লাগে তখন আমি ভালো লাগার কারণ খুঁজি। তেমনি কোনো একজন লেখকের লেখা যদি ভালো না লাগে সেটারও কারণ খুঁজতে থাকি। এ কারণেই সবাই আমার কাছে প্রিয় লেখক। আমি যে লেখকের বই পড়ি না কেন সবার লেখাই কোনো না কোনোভাবে আমাকে প্রভাবিত করে। বুদ্ধদেব বসুর লেখা ‘রাত ভরে বৃষ্টি’ বইটি পড়ে মুগ্ধ হয়েছি। বলা যায় এই বইটি আমার পছন্দের। আমি এই বইটা বারবার পড়ব। গল্প কিংবা উপন্যাসের চেয়ে কবিতা আমার ভীষণ ভালো লাগে। একজন অভিনেতা হিসেবে মনে হয় কবিতার মাধ্যমে আমি প্রভাবিত। খুব ছোট একটা কবিতা পড়ে আমি অনেক বড় একটা গল্পের অনুভূতি পাই। কবিতার প্রতিটি লাইনে ভিন্ন ভিন্ন বার্তা থাকে, ঘটনা থাকে। একটা কবিতা পড়ার সময় অনেকগুলো ঘটনা যেন একসঙ্গে দেখতে পাই। অভিনেতা না হলে হয়তো আমি কবি হতাম। কবিতা আমার ভীষণ পছন্দের। আমি যদি আনন্দের জন্য কবিতা লিখি তাহলে সে আনন্দ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। যদি বিরহের জন্য লিখি তাহলে সে বিরহ কেটে যায়। এখন কাজের চাপে তেমন লেখার সুযোগ হয় না।

বেশি পড়ি গল্প কিংবা উপন্যাস
ফারজানা ছবি

ছোটবেলা থেকেই বই পড়তে ভালো লাগে। আমার বড় ভাই জন্মদিন উপলক্ষে আমায় ‘ঈশপের গল্পসমগ্র’ উপহার দিয়েছিল। তা দিয়েই আমার প্রথম বই পড়া, গল্পগুলো পড়তে যেমন মজা লাগত তেমনই ছিল শিক্ষণীয়। আজকাল কবিতার চেয়ে বেশি পড়ি গল্প কিংবা উপন্যাস। কবিতা পড়ার মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম; তাদের কবিতা পড়েছি একসময়। জীবনানন্দ দাশ পড়েছি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গীতাঞ্জলি’, ‘সঞ্চয়িতা’সহ বেশ কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ পড়েছি। আরো অনেকের লেখাই প্রিয়। তার মধ্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা অসম্ভব ভালো লাগে। তার বই পড়ার সময় উপন্যাসের চরিত্রগুলোর দিকে লক্ষ্য করি। গল্প কিংবা উপন্যাস পড়ার সময় দৃশ্যপটগুলো আমার চোখে ভেসে ওঠে। তাছাড়া একসময় প্রচুর হুমায়ূন আহমেদের লেখা পড়তাম। এখনো মাঝেমধ্যে পড়ি। তবে আগে যেমন বই পড়তাম, দিন দিন সে অভ্যাসটায় ভাটা পড়েছে। তবুও যতটুকু পারি পড়ার চেষ্টা করি, জানার চেষ্টা করি। কিছু প্রিয় বইয়ের কথা উল্লেখ করতে পারি- ইয়েস্তান গার্ডারের ‘সুফির জগৎ’, ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মা’, শওকত আলীর ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’, গজেন্দ্র কুমার মিত্রের ‘কলকাতার কাছেই’। তাছাড়া সমরেশ মজুমদার, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ ভালো লাগে। আর সময় পেলে নিজেও মাঝেমধ্যে লেখার চেষ্টা করি। তবে গল্প কিংবা উপন্যাস কোনোটাই এ পর্যন্ত লিখতে পারিনি, চিত্রনাট্য লিখেছি; এবং সেগুলোর নাট্যরূপও দিয়েছি। যদিও খুব বেশি কিছু এখন পর্যন্ত লেখতে পারিনি, তবে সামনের দিনগুলোতে লেখার চেষ্টা থাকবে। ভবিষ্যতে নিজের জীবনবোধ নিয়ে যেসব অভিজ্ঞতা রয়েছে সেগুলোকে লেখায় রূপ দেয়ার ইচ্ছা আছে।

– মেলা প্রতিবেদক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়