শেখ হাসিনাকে জাতিসংঘ মহাসচিবের অভিনন্দন

আগের সংবাদ

সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা

পরের সংবাদ

এক ব্যাগেই স্টাইল ও কাজ!

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সাদিকুর রহমান সাকিব
অনেক সময় কাজের প্রয়োজন কিংবা আবহাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেও বদলে যায় ফ্যাশন। শুধু ফিটফাট পোশাক আর স্টাইলিশ জুতাতেই এখন আর ‘ফ্যাশনেবল’ শব্দটা আটকে নেই। সুন্দর একটা ব্যাগও কিন্তু আপনার পুরো লুকে নিয়ে আসতে পারে চমক। আপনার পোশাক-আশাক, সাজে যোগ করতে পারে বাড়তি সৌন্দর্য। তবে বেশ গতবছর থেকে ওভারসাইজ ব্যাগ হিসাবে ফ্যাশনে বেশ চলতি টোট ব্যাগ। এতে এক ব্যাগেই হয়ে যায় স্টাইল ও কাজ!
ইতিহাস যা বলে
সা¤প্রতিক সময়ে গতানুগতিক একটু বড় ব্যাগ, পার্স বা ভ্যানিটি ব্যাগের প্রচলন তরুণীদের ফ্যাশন স্টেটমেন্টে এনেছে ভিন্নতা। তবে, এখনকার জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা এসব হ্যান্ডব্যাগের ব্যবহার শুরু হয় ষোড়শ শতকের দিকে। সে সময় বিভিন্ন ধরনের মুদ্রা আলাদা আলাদা করে রাখতে ছোট ছোট ব্যাগ ব্যবহার করা হতো। পরবর্তী সময়ে ফরাসি বিপ্লবের পর মেয়েদের বাহ্যিক পোশাকের মধ্যে স্কার্টের ডিজাইনে পরিবর্তন আসে।
মূলত ওই সময়ে ফ্যাশনকে ফুটিয়ে তুলতে তখন অপেক্ষাকৃত অপ্রশস্ত এসব পোশাকের সঙ্গে হাতে ব্যাগ বহন শুরু করেন তরুণীরা। বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় অষ্টাদশ এবং ঊনবিংশ শতকের দিকে হাতে ব্যাগ বহন আধুনিকতার প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে ব্যাগ ব্যবহার, প্রয়োজনের পাশাপাশি স্টাইলের মাপকাঠিতেও গুরুত্বপূর্ণ।
কেননা, পোশাক আর প্রয়োজনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ব্যাগ বাছাই করাটাই সঠিক রুচির পরিচায়ক।

ম্যাটারিয়ালের ভিন্নতা
সময়টা এখন ফিউশনের। সেজন্য পোশাক, গহনা, সাজগোজ থেকে শুরু করে জুতা কিংবা ব্যাগ সবকিছুতেই ট্রেন্ড চলমান। ব্যাগ নির্বাচনের ক্ষেত্রে রঙ কিন্তু বেশ প্রভাব বিস্তার করে। সেজন্য জেনুইন লেদারের তৈরি বেশিরভাগ ব্যাগের রঙে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে ব্লাক এবং ব্রাউন কালার। এছাড়া ডার্ক নেভি ব্লæ, গ্রীণ, পেস্টল পিঙ্ক, ব্লæ, আকাশি ইত্যাদি কালারের ব্যাগও রয়েছে।
পাশাপাশি নানা ধরণের উপাদান ?দিয়ে তৈরি হচ্ছে ব্যাগ। পরিবেশবান্ধব ডেজার্টো চামড়া দিয়ে তৈরি অনেক ধরনের ব্যাগ এখন কিনতে পাওয়া যায়। এছাড়াও কাপড়, সুতা এমনকি পাট এবং কাঠ দিয়েও তৈরি করা হচ্ছে বাহারি সব ডিজাইনের ব্যাগ। এসব ব্যাগ একদিকে যেমন ফ্যাশনেবল অন্যদিকে পরিবেশবান্ধব। পাটের তৈরি ব্যাকপ্যাক ও ট্র্যাভেল ব্যাগও মেলে বাজারে। পাট, চামড়া ও সুতা দিয়ে তৈরি বাহারি এই ব্যাগগুলো বেশ হালকা হওয়ার ব্যবহার করতে সুবিধা হয়।
এছাড়া গুজরাটি গোল ব্যাগ, জামদানী ব্যাগ, জুট কটন, ফ্লাওয়ার ভ্যানিটি, গুজরাটি লেডিস, গøাস রিবন, ল্যাদার ভ্যানিটি, কলেজ ব্যাগ, কয়েন পার্স, স্টুডেন্ট ব্যাগ, হ্যান্ড পার্স, ঝোলা ব্যাগ, প্যান্ট পেইন্ট মুরটা, থামি ব্যাগ, বাটিক পার্স, টোট্যা ব্যাগ, থামি কুচি, ঢাকনা ব্যাগ এবং সূর্য ব্যাগ ইত্যাদি নানা ধরণের ব্যাগ এখন কিনতে পাওয়া যায়।

রঙিন নকশার টোট
বিভিন্ন নকশার প্রিন্ট করা টোট ব্যাগগুলোও এখন বেশ ইন ট্রেন্ড। প্রিন্ট হিসেবে দেখা যাচ্ছে ফ্লোরাল, লেপার্ড, বিভিন্ন লেটার ও জ্যামিতিক মোটিফ। এ ছাড়া হাতলের সঙ্গে ছোট স্কার্ফ বা বো বাঁধা টোট ব্যাগগুলোও পছন্দের তালিকায় রয়েছে। পুঁতির মালা বা চেইন ব্যাগগুলোতে যোগ করেছে ফেস্টিভ লুক।

লেদার টোট ব্যাগ
সিনথেটিকের বা লেদার টোট ব্যাগগুলো বর্তমানে কর্মজীবী মেয়েদের অন্যতম পছন্দ। দেখতে ফ্যাশনেবল হওয়ার পাশাপাশি ব্যাগগুলোর কোয়ালিটিও বেশ ভালো। টেকসই ও মজবুত হওয়ায় অফিসে ল্যাপটপসহ প্রয়োজনীয় সব কিছু ক্যারি করা যায়। ভেতরে বেশ কিছু চেম্বার থাকায় বিভিন্ন জিনিস গুছিয়েও রাখা যায়। ইউনিভার্সিটিতে যেতে বা কাজের ক্ষেত্রে কোথাও যাওয়ার জন্যও এই ব্যাগগুলো উপযুক্ত। এই ব্যাগগুলো সাধারণত কালো, ন্যুড বা বাদামি রঙেরই বেশি হয়ে থাকে। এগুলো দারুণভাবে মানিয়ে যায় ফরমাল পোশাকের সঙ্গে।

ঝোলা ব্যাগ
বিভিন্ন ম্যাটেরিয়ালের ঝোলা সদৃশ ব্যাগ ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে অনেককেই। এগুলো সাধারণত কাপড়ের তৈরি হয়। তবে ম্যাটেরিয়ালের ভিন্নতা রয়েছে। কখনো নরম ক্লাউড কাপড়, কখনো ডেনিম আবার জুট দিয়েও তৈরি হয় ঝোলা ব্যাগ। অ্যাস্থেটিক ধরনের হওয়ায় এর জনপ্রিয়তা এখন বেশ তুঙ্গে।

সুতার বুননে ব্যাগ
কাপড় বা লেদারের পাশাপাশি সুতার বুননে তৈরি ক্রচেট ব্যাগও চলছে নতুন করে। এ ধরনের ব্যাগগুলো বিচে ঘুরতে গেলে বিচ গাউনের সঙ্গে দারুণ মানানসই। ক্রচেট ব্যাগের রয়েছে রকমফের। কখনো মোটা নাইলন সুতার আবার কখনো জুটের সুতায় বোনা হয় এ ব্যাগগুলো। রঙিন বা নিউট্রাল দুই ধরনেরই হয়। সাধারণত প্যাস্টেল শেইডের ক্রচেট ব্যাগুগুলো এখন বেশি দেখা যাচ্ছে। ডিজাইনে চলছে ফ্লোরাল মোটিফ বা জ্যামিতিক প্যাটার্ন। সঙ্গে ছোট বা মাঝারি হাতল।
জেন্ডার নিউট্রাল ব্যাগ
ইদানিং স্ট্রিট ফ্যাশনে যে টোট ব্যাগগুলো ভীষণ জনপ্রিয় হয়েছে সেই তালিকায় ওপরের দিকে রয়েছে ক্যানভাস টোট ব্যাগ। কাপড়, জুট বা ডেনিমের তৈরি হওয়ায় এই টোট ব্যাগগুলোকে ধরা হয় জেন্ডার নিউট্রাল হিসেবে। ফলে নারী-পুরুষ উভয়ের নির্ভরতার জায়গা নিচ্ছে এই টোট ব্যাগ। এই ব্যাগগুলোর শৈল্পিক আবেদনও কম নয়। পাটের বা কাপড়ের ক্যানভাস ব্যাগে রঙতুলির আঁচড় বা সুই-সুতার কাজ ব্যাগগুলোকে দারুণ ফ্যাশনেবল করে তুলছে। এ ছাড়া ক্যারি করা সহজ হওয়ায় এই ধরনের ব্যাগের চাহিদা বাড়ছে। শাড়ি, কামিজ বা জিনস কুর্তি যে কোনো পোশাকের সঙ্গেই এই ব্যাগগুলো দারুণ মানানসই। মানিয়ে যায় ফতুয়া বা পাঞ্জাবির সঙ্গেও। প্রথম দিকে ছোট হাতলের টোট ব্যাগের প্রচলন থাকলেও হালের ফ্যাশনে মাঝারি হাতল যুক্ত হয়েছে টোট ব্যাগে। ফলে চাইলে ঘাড়েও ঝোলানো যায় সহজেই। এই ব্যাগগুলোর মূল উপকরণ সাধারণত ক্যানভাস কাপড়, ডেনিম বা জিনস। এর ওপর করা হয় বিভিন্ন ধরনের নকশা বা কারুকাজ।

কোন পোশাকে কোন ব্যাগ

পেশা ও ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মিলিয়ে সবাই বেছে নেন পছন্দ এবং স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যাগ। কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যায় ফ্যাশনপ্রেমীরা পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে একটি করে ব্যাগও নিজেদের কালেকশনে রাখেন। জেনে নেই কোন পোশাকের সঙ্গে কেমন ব্যাগ মানানসই-

১. শাড়ি, কুর্তি, সালোয়ার কিংবা স্যুট ইত্যাদি সব কিছুর সঙ্গেই বেশ মানিয়ে যায় স্লিং ব্যাগ বা সেকেলে ঝোলা ব্যাগ।

২. বাকেট ব্যাগগুলো সাধারণত সালোয়ার-কামিজের বা কুর্তি টাইপ পোশাকের সঙ্গে ভালো মানায়। এছাড়াও সালোয়ার-কামিজ, জিনস, কুর্তি ও পশ্চিমা পোশাকের সঙ্গে ব্যাকপ্যাক ব্যবহার করে অনেকেই।

৩. হাল ফ্যাশনে সব থেকে জনপ্রিয় মেসেঞ্জার ব্যাগ। এ ধরনের ব্যাগ সাধারণত ওয়েস্টার্ন পোশাকের সঙ্গে মানানসই। তরুণীদের কাছে এর চাহিদা সব থেকে বেশি। এই ব্যাগে লম্বা হাতল থাকে বলে সহজে কাঁধে বহন করা যায়। আকারে এই ব্যাগ ছোট ও মাঝারি হয়। প্রয়োজনীয় অল্প কিছু জিনিস নেয়া যায়। সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণীরা এটি বেশি ব্যবহার করে থাকেন।

৪. যেকোনো পার্টি ড্রেসের সঙ্গে সিকুইন ক্লচ ব্যাগ বেশ মানানসই। এই ব্যাগগুলোর বেশির ভাগই জরি, সুতা, পুঁতি-পাথর ও সিকুইনের হয়ে থাকে। তাই আলোতে চকচক করে ওঠে ব্যাগগুলো।
এছাড়াও পার্টিতে ক্যারি করতে পারেন মানসম্মত টেকসই আনমল হ্যান্ড ব্যাগ। অনেক ক্ষেত্রে ক্লাচ ব্যাগকে পার্সও বলা হয়। এটি আকারে ছোট ও পাশে লম্বা হয়। দেখতে অনেকটা আয়তাকার। এই ব্যাগ হাতে বহন করতে হয়। কাঁধে নেয়ার সুযোগ নেই কেননা এর কোনো হাতল নেই। এ ধরনের ব্যাগ সাধারণত বিয়ে, জমকালো কোনো অনুষ্ঠানে কনে এবং অন্য মেয়েরা সঙ্গে রাখে। ক্লাচ বা পার্স জাতীয় এই ব্যাগগুলো শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, লেহেঙ্গা, গাউন এ ধরনের পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে যায়।

৫. ক্যাজুয়াল আউটফিটের সঙ্গে ফরমাল কোন প্রোগ্রামে ক্যারি করতে পারবেন আন্না মিডি হ্যান্ডব্যাগ অথবা ক্রস বডি ব্যাগ। যা ফ্যাশনে নতুনত্ব যোগ করে।

ছবি : গুটিপা, যাত্রা, রঙ ও পটের বিবি

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়