গাজীপুরে ট্রেনে কাটা পড়ে নারীর মৃত্যু

আগের সংবাদ

সরকারের তিন অগ্রাধিকার

পরের সংবাদ

ফুলের ঘ্রাণে পাখির গানে মা মাটির বাংলাদেশ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১২, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

‘কামাল চৌধুরীর কিশোর কবিতা গ্রন্থ’
কবি কামাল চৌধুরী। আমাদের বাংলা সাহিত্যের একটি উজ্জ্বল নাম। নামটি যে কেউ উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গে কামাল চৌধুরীর মুখচ্ছবি ভেসে উঠবে। তার সৃষ্টিগুলো স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল। তিনি বড়দের পাশাপাশি ছোটদের জন্যও বেশকিছু ছড়া কবিতা লিখেছেন। আলোচ্ছ্য গ্রন্থটির নাম ‘কামাল চৌধুরীর কিশোর কবিতা’। বইটি ৩২ পৃষ্ঠার। ২৮ টি কবিতা রয়েছে এতে। বইয়ের কবিতাগুলো পড়তে পড়তে যে কেউ হারিয়ে যাবে ফুলের বনে, পাখির গানে। তিনি বইটিতে একটি ছন্দে লেখেননি। স্বরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত কোনটা পাঁচ মাত্রার পর্বেও লিখেছেন। কখনো ছড়ার ছন্দ, কখনো কবিতার ছন্দের ব্যবহারে কবিতাগুলো দুলে দুলে উঠেছে।
যখন তুমি লেখার খাতায় দেখতে পাবে চাঁদ
তখন তুমি লিখবে শুধু আলো
তোমার জন্য বই, খাতা, মাঠ, বৃষ্টি, বুনোফুল
তোমার জন্য উল্কাপথে ছুটছে দুলদুল
তোমার জন্য ঘুঘুর চোখে দুপুর আছে লেখা
তোমার কাজ এখন শুধু স্বপ্ন দেখতে শেখা।
(আপন মনের পাঠশালাতে, পৃষ্ঠা- ৫)
আমাদের কিশোররা এনড্রয়ড ফোনের যুগে এখন। তারা মুঠোফোনেই দুনিয়া দেখে। সেখানে কবি কামাল চৌধুরী সেই কিশোরকে প্রকৃতির মাঠে স্বপ্নবান করে তোলার চেষ্টা করেছেন। স্বপ্নহীন মানুষ বেশিদিন বাঁচতে পারে না। তাকে বাঁচিয়ে রাখতেই কবির চমৎকার প্রয়াস আমরা দেখতে পাই। বইয়ের এটি প্রথম কবিতা। একটা কবিতা পড়েই পাঠক ভেতরে প্রবেশের জন্য আড়মোড়া দিয়ে উঠবে বলে আমার বিশ্বাস।
বইয়ের দ্বিতীয় কবিতাটিও আমরা যদি পড়ি কি দেখতে পাই?
তোমরা যারা আকাশ দেখার স্বপ্ন দেখো
তোমরা যারা পাখির মতো
উড়তে চাও
তোমরা যারা সবুজ পাতার শিশির মাখো
তোমরা যারা ভালোবেসে
বাঁচতে চাও

তোমরা যারা চিরকালের ফুল ও পাখি
তাদের জন্য আমার কলম নদীর জলে
ভাসিয়ে রাখি।
(তোমাদের জন্য, পৃষ্ঠা- ০৬)
কবি এই কবিতায়ও কিশোর মনের আবেগকে বারবার টেনে আনার চেষ্টা করেছেন মাটির পৃথিবীতে। মাটি আমাদের মা। মায়ের কাছেই সন্তানের বেঁচে থাকা, বেড়ে উঠা এবং একদিন স্বপ্ন দেখা। কবি তাদের জন্য তার লেখার কলমকে নদীর জলে ভাসিয়ে রাখার কথা বলে বোঝাতে চেয়েছেন কলমের কালি যেন কখনো নিঃশেষ না হয়।
পৃষ্ঠা ১০ এ ‘শিশুর হৃদয়’ নামে কবিতাটিতে কবি পাখির প্রতি ভালোবাসার কথা বলেছেন। পাখি যে আমাদের বন্ধু। কখনো পাখি যে কোনো শিশু বা কিশোরের হাতে মারা না পড়ে তার জন্য কবি তার কোমল হৃদয়ের নরম সুরে লিখেছেন,
দেবদারু গাছে দেখলাম ছোট পাখি
হলুদ বরণ কী নামে যে তাকে ডাকি
হাত বাড়ালেই পাখিটা নিকটে আসে
বলে, শোনো, আমি যারা খুব ভালোবাসে
তাদের বন্ধু! দেখে মনে হয় খোকা
তুমি খুব ভালো, আমাকে দেবে না ধোঁকা;
মানুষেরা দ্যায়; মানুষ শিকার জানে
কেন যে মানুষ পাখির হৃদয় হানে!

আমি ভালোবাসি। আমাকে পেয়ো না ভয়
শিশুর হৃদয় পাখি শিকারির নয়।
মাত্রাবৃক্ত ছন্দে ৬-৬-২ মাত্রায় লেখা কবিতাটিতে দুই মাত্রায় অপূর্ণ পর্ব রেখেছেন।
পাখির প্রতি ভালোবাসা জাগাতে কবি মিষ্টি মিষ্টি শব্দ ও ছন্দ ব্যবহার করেছে সূ²ভাবে। পাখি আমাদের প্রতিদিন উপকার করে। তারা গান গায়। গানের সুরে সুরে মাঠে মাঠে কৃষক শ্রমিকরা কাজে শক্তি অনুভব করে। ছোটরা হেলে দুলে মানের আনন্দে ঘুরে বেড়াই। কেউ কেউ পাখির মায়ায় ডুবে যায় আজীবন। পাখি পৃথিবীতে ভোরকে ডেকে আনে। পাখির ডাকে আমাদের ঘুম ভাঙে। সেই পাখিকে ঘিরে আমাদের কত না স্বপ্ন। কবি সেই কল্পনা ভাবনার কথাকে প্রকাশ করতে চেয়েছেন।
মা শব্দটি খুবই ছোট। কিন্তু আকাশ সমান তার ভার। মাকে ঘিরে আমাদের জীবন চলা। শৈশব-কৈশোর জীবন সবার মাকে ঘিরে থাকা সময়। মা ছাড়া তখন অন্য কিছুই ভাবতে পারি না আমরা। মায়ের হাতেই আমাদের সবার শিক্ষার হাতেখড়ি। শিশুর প্রথম পাঠ মানে মায়ের মুখে অ আ শেখা। সেই মাকে নিয়ে কবি কামাল চৌধুরী লিখেছেন,
তোমার জন্য দাঁড়িয়ে আছে মা
তুমি তাঁকে বিমুখ করবে না।
(মা, পৃষ্ঠা- ১৫)
মাত্র দুই লাইনে মাকে নিয়ে কবিতাটা লিখেছেন। মাকে বাদ দিয়ে কারো জীবন কখনো সুখের হতে পারে না। আদি কবির ভাষায়, ‘মা নাই গৃহে যার, অরন্য সংসার তার’। কি অসাধরণ বাক্য। মা মানে পৃথিবী। মা মানে জীবন। দুই লাইনেই মায়ের বিশালত্ব কে প্রকাশ করেছেন কবি। মায়ের মতন আপন কেউ নেই। মায়ের পায়ের নিচেই তো সন্তানের বেহেস্ত। পরম দয়াল সৃষ্টিকর্তা মাকে কত বড় সম্মানের আসনে বসিয়েছেন। মা সবার ঘরের ল²ী।
স্বাধীনতা একটা জাতির আজীবনের লালিত স্বপ্ন। স্বাধীনভাবে বাঁচা স্বাধীনভাবে মরা। এটুকু চাওয়া মানুষের খুব বেশি কিছু নয়। কিন্তু আমরা যখন পাকিস্তানের অধীন থেকে স্বাধীনতা চেয়েছি আমাদের ওপর নেমে আসে নির্মম নির্যাতন, হত্যা আরো কত কি। ২৪ বছরের লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়েই ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা স্বাধীনতা লাভ করি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে। সেই রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে আমাদের ৩০ লাখ বীরসন্তান প্রাণ দিয়েছেন। দুই লাখ মা-বোন তাদের ইজ্জত দিয়েছেন। সেই স্বাধীনতা নিয়ে কবি কামাল চৌধুরী লিখেছেন,
একদিন ছিল আমরা সবাই
লিখেছি একটি কবিতা
সবুজের গায়ে রক্তের ফোঁটা
কবিতাটা স্বাধীনতা।

বোন গেয়েছিল মুক্তির গান
বহু বোন গেছে হারিয়ে
তাদের স্মৃতিতে আগুন জ্বেলেছি
সব হানাদার তাড়িয়ে

সেই কবিতাটা এখনো লিখছি
কবিতাটা স্বাধীনতা।
(স্বাধীনতা, পৃষ্ঠা- ২৩)
বইটিতে স্বাধীনতা, প্রকৃতি, ফুল, পাখি নানা বিষয়ে তিনি লেখার চেষ্টা করেছেন।
বইয়ের কবিতা, খোলা আকাশ, চাঁদনি রাতের গ্রাম, বই, ভোর, পরিচয়, জীবনের ছবি, ছোট ছোট নদী, এক পৃথিবী কবিতাগুলো অনন্য। আমরা পুরো বইয়ের কবিতাগুলো যদি পড়তে পাই জীবনকে অন্য রঙে আঁকা যাবে। এক একটা কবিতা হৃদয়ের গভীরের অনন্ত ভালোবাসা দিয়ে গড়া যেন মানবিক মন্দির। কবির এত ভালোবাসা যেন নদীর কোমল ঢেউ। রাতের আকাশের তারা হয়ে ধরা দিয়েছি কবির হাতে। কি ব্যঞ্জনাময় প্রতিটি কবিতার লাইন।
বইয়ের শেষ কবিতার নাম বাংলার কবি’,
একটি কবিতা জনকের নামে লেখা
একটি কবিতা পতাকায় আঁকা ছবি
সবুজে রক্ত একটি কবিতা নদী
একটি মানুষ সারা বাংলার কবি।

একটি কবিতা শক্রর মুখে ছাই
পদ্মা-গঙ্গা নদী তীরে বরাভয়
একটি কবিতা হিজল তমাল শাখা
একটি মানুষ অ¤øান অক্ষয়।

একটি কবিতা রক্ত পলাশে লেখা
একটি মানুষ পতাকায় আঁকা ছবি
বুকে একতারা শ্যামা দোয়েলের গান
মুজিবুর আজ সারা বাংলার কবি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এই অসাধারণ কবিতাটি কবি শেষ কবিতা হিসেবে রেখেছেন। শেষ মানে পিরামিডের চূড়া। মুজিবুর যে নাম বাঙালি হৃদয়ে লেখা। যার জন্ম না হলে হয়তো আমরা স্বাধীনতায় পেতাম না। আজকে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে আমরা গর্ব করি। মা মাটি দেশ বাংলাদেশ। মাটির সোঁদা গন্ধ শুকে যে জাতির সন্তান মাথা উঁচু করে হাঁটে পৃথিবীর বুকে।
বইটি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি। প্রচ্ছদ করেছেন খ্যাতিমান শিল্পী ধ্রæব এষ। বইটি বোড বাইন্ডিং অফসেট কাগজে ছাপা। দাম রাখা হয়েছে মাত্র তিনশ টাকা। বইটির বহুল প্রচার কামনা করি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়