ডিএমপির আদাবর থানা : ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার আসামি পালিয়েছে হাজতখানা থেকে

আগের সংবাদ

নাশকতার জবাব ভোটে দিন : ঢাকায় নির্বাচনী জনসভায় প্রধানমন্ত্রী

পরের সংবাদ

মেঘাচ্ছন্ন চাঁদনী

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নিঝুম রাত। চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার। দূরের ঝোপ থেকে ঝিঁঝি পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে। কোথাও কোনো জনমানবের সাড়া নেই। শুধু জেগে আছে চাঁদনী। কিছুক্ষণ আগেও আকাশে একটু চাঁদ দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু এখন আর চোখে পড়ছে না, লুকিয়ে গেছে মেঘের আড়ালে। আঁধার আর মেঘ যেন তার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে নিয়েছে। কিছুতেই তার পিছু ছাড়ে না, দেয় না একটু পরিত্রাণ।
চাঁদনী ও বদরুলের পারিবারিকভাবেই বিয়ে হয়। চাঁদনী শ্যামবর্ণের, কিন্তু বদরুল দেখতে বেশ সুদর্শন। চাঁদনী বদরুলকে প্রথমবার দেখেই প্রেমে পড়ে। তাই সে বদরুলের মনের খবর জানতেও চায়নি সেদিন। কোনোকিছু বাছ-বিচার না করেই কবুল বলেছিল। আর পবিত্র কালেমার বাঁধনে বাঁধা পড়েছিল দুজনে।
চাঁদনীর সংসার খুব ভালোই চলছিল। তার প্রতি বদরুলের প্রচুর ভালোবাসাও ছিল। শ্বশুর, শাশুড়ি, দেবর, ননদ সবাই তাকে ভালোবাসতো, যতœও করত। কিন্তু এ সুখ বেশিদিন সইল না তার কপালে।
বিয়ের মাস-তিনেক যেতে না যেতেই চাঁদনী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে বাপের বাড়ি চলে যায়। কয়েকদিন পরে শুনতে পায় বদরুল বিয়ে করেছে। তার প্রাক্তন প্রেমিকাকে নিয়ে পালিয়ে গেছে। এ কথা শুনে চাঁদনী হতবিম্ব হয়ে পড়ে, পায়ের তলার মাটি সরে যায় তার। যেন টর্নেডো আঘাত হানে তার হৃদয়ে!
খেয়ে না খেয়ে কেটেছে চাঁদনীর কত দিন আর রাত! দুখের কথা, হৃদয় নিগড়ানো কষ্টের কথা কাউকে বলতে পারেনি। বলার মতো কাউকে পাশেও পায়নি সেদিন।
প্রেগন্যান্সি নিয়ে সে গার্মেন্টসেও কাজ করেছে। কী আর করা! পেটের দায়ে তো কাজ করতেই হবে। তা ছাড়া অনাগত ভবিষ্যৎ। বাবা সন্তানকে ফেলে গেলেও মা কখনো পারে না। একটি পাগলীও নিজের নাড়িছেঁড়া ধনকে সবটুকু সত্তা দিয়ে আগলে রাখে। চাঁদনীর বাপের বাড়ির অবস্থা তেমন ভালো নয়। প্রাক্তনের সঙ্গে পালানোর পরে বদরুলও তার খোঁজ রাখেনি।
দেখতে দেখতে ৯ মাস কেটে যায়। চাঁদনীর কষ্টের কিছুটা অবসান ঘটে। বলতে হয় আল্লাহ হেফাজত করেছেন তাকে। তেমন কোনো সমস্যা ছাড়াই তার বাচ্চার জন্ম হয়।
আল্লাহর রহমতে তার কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে এক পরী! পরীর মায়াবী মিষ্টি মুখ সব যাতনা ভুলিয়ে দেয় তাকে। ভুলে যায় স্বামীহারা কষ্টও। কিন্তু মেয়েটার কথা ভেবে বড্ড কষ্ট হয়। শ্রাবণের ধারা বয় দুটি চোখে।
পরী জন্মের পরে বাবাকে দেখেনি। এমনকি ৪-৫ বছর হয়ে গেলেও বাবার ছায়া সে দেখেনি। বাবা ছাড়াই বেড়ে উঠল পরী। পরীর মা এখনো কাঁদে বদরুলের জন্য। কিন্তু পরী কাঁদে না, ফেলে না এক ফোঁটাও চোখের জল। কারণ নানাবাড়ি থাকার সুবাদে পরী বাবা সম্পর্কে সব জেনে গেছে। মায়ের মুখে বাবার কোনো কথাই সে শুনতে চায় না।
পরী ছোট হলেও ঠিক বুঝতে পারে মায়ের কষ্ট। মায়ের জন্য তার অগাধ মায়া থাকলেও বাবার জন্য আছে এক পৃথিবী ঘৃণা। পরী বলে, ‘মা তুমি ওর জন্য কেঁদো না, ও আমাদের কেউ না। আমার কোনো বাবা নেই।’ পরীর মা কিছুতেই মেয়েকে বোঝাতে পারে না। কিছুতেই পরী বদরুলকে বাবা হিসেবে মানতে চায় না।
বদরুল তার ভুল বুঝতে পেরে এখন আফসোস করে। প্রাক্তন প্রেমিকার সঙ্গে সুখের সংসার বেশিদিন টেকেনি তার। ঢাকা শহরে নতুন টাকাওয়ালা, ধনাঢ্য ব্যবসায়ী দেখে বদরুলকেও ছেড়ে যায় প্রাক্তন প্রেমিকা। তারপর বদরুল আর কারোর সঙ্গে জড়ায়নি। আফসোস আর অনুতাপের আনলে পুড়েছে প্রতিটি মুহূর্তে। তবুও পায়নি পরিত্রাণ। হয়নি তার পাপের প্রায়শ্চিত্ত। তাইতো অপরাধ বোধ থেকে ফিরে আসে চাঁদনীর কাছে। আবারো পাততে চায় সুখের সংসার। মিথ্যা মরীচিকার পিছু ছেড়ে একটু সুখের আশায় পা বাড়ায়।
ইদানীং বদরুল প্রায়ই পরীকে দেখতে আসে অনেক খাবার ও খেলনা নিয়ে। বিনিময়ে সে মেয়েকে একটু কাছে পেতে চায়, মেয়ের মুখে ‘বাবা’ ডাকটি শুনতে চায়। কিন্তু পারে না। বদরুলের নামই শুনতে পারে না পরী। সে বদরুলকে প্রচুর ঘৃণা করে। তবুও বদরুল হার মানতে রাজি নয়। তার বিশ্বাস- ভালোবাসা দিয়ে একদিন ঠিকই মেয়ের মন জয় করতে পারবে। সেই ভালোবাসার জোরেই অবহেলা, অপমান সয়েও বারবার ফিরে আসে পিতৃত্বের টানে।
পরী মায়ের সঙ্গে বারান্দায় মাদুর বিছিয়ে হোমওয়ার্ক করছিল। তখনই বদরুল আসে। অনেক খেলনা আর খাবার নিয়ে। চুপচাপ বসে চাঁদনীর পেছনে। বদরুলের উপস্থিতি চাঁদনী টের পেলেও পরীর দৃষ্টিগোচর হয়নি এখনো। বদরুল একধ্যানে তাকিয়ে আছে মেয়ের দিকে।
আহা! কী সুন্দর মায়াবী মুখখানা! শুধু একবার বাবা ডাকলেই আমার আর কোনো চাওয়া থাকত না। পরী যেমন দেখতে সুন্দর, হাতের লেখাও তেমন সুন্দর। হোমওয়ার্ক শেষ, এবার পরী খেলতে যাবে। মাদুর থেকে উঠতেই পাশে অনেক খেলনা আবার খাবার দেখতে পায়। তার আর বুঝতে বাকি রইল না এগুলো কার কাজ। দু’পা বাড়াতেই পরী আবার পিছিয়ে যায়। মায়ের পেছনেই তার বাবা দাঁড়িয়ে আছে। এতদিন বদরুল দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকত, আজই প্রথম সাহস আর বিশ্বাস নিয়ে পরীদের ঘরে এসেছে। বদরুল মেয়ের দিকে এগিয়ে যায় খেলনা আর খাবার নিয়ে।
‘এই দেখ মা, তোমার প্রিয় খাবার আর কত খেলনা এনেছি। চলো আজ বাবার সঙ্গে খেলবে।’
রাগে পরীর চোখ লাল হয়ে যায়। প্রথমে সে কিছু বলতে পারল না। তারপরই খাবার আর খেলনাগুলো নিয়ে ছুড়ে মারল আর বলল- আমার কোনো বাবা নেই। আমার বাবা মৃত। তুমি আর কোনোদিন আমাদের সামনে আসবে না।
বদরুলের মুখটা আলগোছে মৃত্তিকামুখী হয়, চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে যায় সে।
চাঁদনী আঁচলে মুখ ঢেকে নির্বাক তাকিয়ে থাকে।
মেহেরুন ইসলাম : মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সাতক্ষীরা

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়