মাদকবিরোধী অভিযান : রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার ২০

আগের সংবাদ

ভোগান্তি মেনেই ঘরে ফেরা : ঈদযাত্রা

পরের সংবাদ

সুখস্মৃতির ঈদ

প্রকাশিত: এপ্রিল ৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৮, ২০২৪ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঈদ নিয়ে আমাদের কৈশোরকালের কত স্মৃতি! বাড়িতে টিভি আসার পরের ঈদগুলো ছিল অন্যরকম আনন্দের!
রমজানের শেষভাগে টিভির সামনে সবাই টান টান উত্তেজনা নিয়ে বসে থাকতাম চাঁদ ওঠার খবরের অপেক্ষায়। চাঁদ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বেজে উঠত- ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ/তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে/শোন আসমানী তাগিদ।’ আহারে, পৃথিবীর সপ্ত আশ্চর্যের একটা আশ্চর্য ছিল, চাঁদ ওঠার পর এই গান শুনতে পাওয়া…।
তারপর শুরু হতো আমাদের মেহেদী পরা, আমাদের সময় টিউব মেহেদী ছিল না। মা-চাচিরা মেহেদী গাছের পাতা বেটে কাঠি দিয়ে হাতে লাগিয়ে দিতেন। একহাতে ফুল-পাতা থাকত, আরেক হাতে ‘ঈদ মোবারক’ লেখা হতো।
মেহেদী তুলে সরিষার তেল মাখিয়ে, কার মেহেদীর চেয়ে কারটা বেশি লাল হয়েছে তা নিয়ে অনেক রাত পর্যন্ত উঠানে হইচই চলত। মা-চাচিরা চালের গুড়ি দিয়ে সোয়াই বানাতেন আর গল্প করতেন…!
পরদিন সকালে গোসল করে নতুন জামা পরার মধ্য দিয়ে ঈদ শুরু হতো। সেজেগুজে বড়দের সালাম করে সালামি পাওয়া, চালের গুড়া দিয়ে তৈরি মায়ের হাতের রান্না সেমাই আর চালের রুটি খাওয়া, পাটি বিছিয়ে দুপুরে পরিবারের সবার সঙ্গে পোলাও কোরমা খাওয়া ছিল অবধারিত। এরপর বিকেলে আশপাশের বান্ধবীদের নিয়ে এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়ানো। আর রাতে টিভিতে আমজাদ হোসেন অভিনীত ঈদের বিশেষ নাটক দেখা কি যে আনন্দের ছিল…!
একাধারে পাঁচ দিন ঈদের বিশেষ নাটক প্রচারিত হতো। আফজাল হোসেন, সুবর্ণা মুস্তাফা, হুমায়ূন ফরিদী, আসাদুজ্জামান নূর, ফেরদৌসী মজুমদার, তারিক আনাম, রাইসুল ইসলাম আসাদ, নিমা রহমান… আরো অনেক প্রিয় অভিনয়শিল্পীর নাম এখন মনেও পড়ছে না। আহা, কী অবাক হয়ে নাটকগুলো দেখতাম। দুপুর ৩টা বা সাড়ে ৩টায় বিটিভির প্রোগ্রাম শুরু হতো, রাত ১২টায় শেষ হতো।
প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আমরা টিভির সামনে বসে থাকতাম। কেননা আমাদের একমাত্র বিনোদন ছিল এই চৌকোনা জাদুর বাক্স! তখনকার ‘আফজাল-সুবর্ণা’ জুটির নাটক আমার হার্টবিট বাড়িয়ে দিত। কারণ আফজাল হোসেন ছিলেন আমার হার্টথ্রব, এখন হার্টথ্রবকে বলা হয় ক্রাশ…! আসাদুজ্জামান নূরের অভিনয় ও ভরাট কণ্ঠের আবৃত্তি শুনে মুগ্ধ হয়ে যেতাম। তার ভরাট কণ্ঠে, ‘নূরলদীনের সারাজীবন’ কবিতার গম গম করা শেষ লাইন আজো কানে বাজে- ‘জাগো বাহে কুনঠে সবায়…!’
অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে বিজ্ঞাপন আর সঙ্গে মনকাড়া জিংগেল শুনে প্রাণ ভরে যেত। বিজ্ঞাপনের মডেলদের কী যে সুন্দর লাগত, সেই দিনগুলো ছিল স্বপ্নের দিন…!
তারপর এলো তৌকির আহমেদ, বিপাশা হায়াত, জাহিদ হাসান, শমী কায়সার, নোবেল, মৌ…। আহারে আহারে, কী সুখের দিন ছিল, কী সুখের ঈদ ছিল!
আর আজকাল ঈদ মানেই বড় বড় শপিংমলে গিয়ে হাজার হাজার টাকার শপিং করা। একজন আরেকজনকে ফেসবুকে ঈদ মোবারক জানায়। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়। ঈদের সারাটা দিন ঘুমিয়ে কাটায়। তারপর রাতে দামি জামা-কাপড় পরে সেলফিতে ফেসবুক সয়লাব করে।
কোথায় পরিবারের সঙ্গে সারাদিন ঈদ কাটানো, কোথায় বিটিভিতে ঈদ অনুষ্ঠান দেখার আনন্দ, কোথায় অল্পতে তুষ্ট আমাদের ঈদ আনন্দ…!
মনকে সান্ত¡না দিই এই বলে- অ্যানালগ ও ডিজিটাল, উভয় যুগের সাক্ষী আমি।
সবার জন্য ঈদের শুভেচ্ছা, ঈদ মোবারক।
– সালমা রুহী : আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়