খালেদার গুলশান কার্যালয়ে পুলিশের তল্লাশি

আগের সংবাদ

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হোক মূলমন্ত্র : সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম

পরের সংবাদ

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সাংস্কৃতিক জাগরণ

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ১৫, ২০২৩ , ৫:৩৭ অপরাহ্ণ

একটি ভয়াবহ তথ্য দিয়ে লেখাটি শুরু করছি। একটি বিভাগীয় শহরের শিল্পকলা একাডেমির নৃত্য এবং সংগীত বিভাগের বার্ষিক মূল্যায়নপত্র মূল্যায়ন করতে গিয়ে দেখা গেল সেখানে মোট ৪শ ছাত্রছাত্রীর মধ্যে মাত্র ১২ জন হচ্ছে মুসলিম আর অবশিষ্ট সব ছাত্রছাত্রী হচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বী। এখানে ‘অবশিষ্ট সব ছাত্রছাত্রী হচ্ছে সংখ্যালঘু’ এই বিষয়টি আনন্দের এবং আশাব্যঞ্জক। কিন্তু ‘৪শ জনের মধ্যে মাত্র ১২ জন মুসলিম ছাত্রছাত্রী সেখানে সংগীত এবং নৃত্য শিখতে এসেছে’ এ বিষয়টি শুধু হতাশজনকই নয়, রীতিমতো ভয়ংকর। দেশের সব জেলার চিত্রটি প্রায় একই রকম। তার মানে দেশের মুসলিম নাগরিকরা দিন দিন সাংস্কৃতিক চর্চা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে না, দূরে সরে গেছে।
সুমন কবিরের গাওয়া আমার পছন্দের একটি গানের চমৎকার একটি লাইন হচ্ছে ‘এ কথা তুমি কি ভাববে না, অনেক দিন গেছে দিন আনতে…’। বাংলার মুক্তি সংগ্রামের এক গুরুত্বপূর্ণ ধারা হচ্ছে সাংস্কৃতিক আন্দোলন। উদ্ভট দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে হওয়া দেশভাগের ভয়ংকর ভুলটি পরবর্তী ২৩ বছরে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে একাত্তর সালে আংশিক সংশোধিত হয়। সাম্প্রদায়িক দ্বিজাতি তত্ত্বের কবর রচনা করে প্রতিষ্ঠিত হয় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। সাতচল্লিশ-পরবর্তী সময় থেকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে রাজনৈতিক আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল সাংস্কৃতি ছিল তার প্রধান নিয়ামক। ১৯৪৮ সাল থেকে শুরু হওয়া ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই তৎকালীন পূর্ববাংলার সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয়ের মূল সূত্রটি বিকশিত হতে থাকে। পরবর্তীতে রাজনৈতিক আন্দোলন যত জোরদার হয়েছে, সাংস্কৃতিক আন্দোলনও তার সঙ্গে পথ চলেছে সমান তালে। ষাটের দশকের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় সৃষ্টি হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে এই সংগঠনগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতা। শত্রুকে পরাজিত করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার সেই গৌরবের দিনটি হচ্ছে আমাদের বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর। আজকের বাংলাদেশের সব অর্জনের শুরুটা হয়েছিল সেই ১৬ ডিসেম্বরের স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভাষা আন্দোলন হতে শুরু করে ২৩ বছরের আন্দোলন শুধু রাজনৈতিক আন্দোলন ছিল না সেই সঙ্গে ছিল সাংস্কৃতিক আন্দোলনও। তেমনি ৯ মাসের যুদ্ধ এ দেশের ছাত্র, যুবক, কৃষক, শ্রমিক এবং রাজনৈতিক কর্মীদের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কর্মীরাও বীরত্বের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছেন। বিজয়ের এই দিনে একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে আমরা এমন একটি জাতি রাষ্ট্র অর্জন করেছি যে দেশটির রয়েছে হাজার বছরের স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, যাকে আমরা বাঙালি সাংস্কৃতি বলি, যা শুধু আমাদের। তাই এ কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় দীর্ঘ ২৩ বছরের আন্দোলন আর ৯ মাসের যুদ্ধে আমরা একটি স্বাধীন দেশের পাশাপাশি পেয়েছি সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা, পেয়েছি বাংলা ভাষায় কথা বলার স্বাধীনতা। এ পাওয়া আমাদের বাঙালি সংস্কৃতি চর্চার একচ্ছত্র অধিকার দিয়েছে। বাংলাদেশে বসবাসের পাশাপাশি আমরা কোনো বাধা কোনো বিভাজন ছাড়াই বাঙালি সংস্কৃতির চর্চা করি এবং বাংলা ভাষায় কথা বলি। এ অর্জন অবশ্যই সামান্য নয়, অনেক বড়।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সাস্কৃতিক কর্মীরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ গঠনের ব্রত নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। শুরু হয় বাঙালি সংস্কৃতি চর্চার জোয়ার। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক মানসের পরিবর্তে স্বদেশি মনন গঠনের উদ্দেশ্য নিয়ে জেলায় জেলায় গড়ে ওঠে সাস্কৃতিক সংগঠন। বলা চলে ভাষা আন্দোলনকে ভিত্তি করে ষাটের দশকে পূর্ব বাংলায় যে সাংস্কৃতিক আন্দোলন দানা বেঁধে ছিল স্বাধীনতার পরও এসব সংগঠনের মাধ্যমে মহাআনন্দে চলমান ছিল। পরিতাপের বিষয় ১৫ আগস্টের নির্মম ট্র্যাজেডির পর তা আর অব্যাহত রাখা যায়নি।
দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলন ১৯৭৫-এর পর চূড়ান্তভাবে সামরিক রোষানলে পড়ে। জিয়া আর এরশাদের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনযন্ত্র, ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সূচনা এবং সংবিধান থেকে ‘সমাজতন্ত্র’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ দুটিকে তুলে দিয়ে বাংলাদেশকে আবারো পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হয়। ফলে সীমিত অথবা নিয়ন্ত্রিত সাংস্কৃতিক কার্যক্রম চললেও বাঙালি সাংস্কৃতি চর্চার বিকাশ ধারা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলস্বরূপ সমাজে এবং রাষ্ট্রে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প প্রবাহিত হওয়া শুরু করে। সামরিক দুঃশাসন, হঠাৎ গজিয়ে ওঠা রাজনৈতিক দল এবং স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির হাত ধরে ধীরে ধীরে সমাজের গভীরে ভয়ংকর জঙ্গিবাদ বিস্তার লাভ করে। সে সময়গুলোতে বাঙালি সাংস্কৃতি বিকাশের পথ ও বাঙালির জাতিগত বহুত্ববাদের দর্শন আরো সংকুচিত হয়ে মৌলবাদের রাস্তাটি হয়েছে আরো প্রশস্ত। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সাংস্কৃতিক কর্মতৎপরতা গভীর ক্ষত নিয়েই আবারো কিছু দিনের জন্য অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। দুঃখের বিষয় হলো, সে ক্ষতগুলো আজো সারিয়ে তোলা যায়নি। বরং আজকের বাংলাদেশে পুরো সমাজব্যবস্থা আকণ্ঠ সাম্প্রদায়িকতার জালে আবদ্ধ হতে চলেছে। প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনৈতিক ব্যর্থতা কিংবা সমঝোতা, সরকারের ভুল নীতি, আমাদের শিশু-কিশোর ও নতুন প্রজন্মকে ক্রমেই সাংস্কৃতিকবিমুখ করে তুলছে। সরকারের ডিজিটালাইজেশনের সুযোগ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমগুলোর অপব্যবহার, ইউটিউবে ওয়াজিদের আস্ফালন, ধর্মীয় অপব্যাখ্যা, ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর মাধ্যমে সমাজে মুক্ত ভাবনা, বিজ্ঞান চর্চা এমনকি সংস্কৃতি চর্চাকে দিন দিন কঠিন করে তুলেছে। কখনো কখনো বিজ্ঞান চর্চা এবং সংস্কৃতি চর্চাকে ধর্মের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। যার ফলে অফিস, আদালত, স্কুল, কলেজ, বিশ^বিদ্যালয়সহ সব স্তরে আজ বিজ্ঞানবিমুখতা, সাংস্কৃতিহীনতা আর সাম্প্রদায়কিতার অশুভ ছায়া বিস্তার লাভ করছে।
‘অৎঃ সধশবং ঁং যঁসধহ’ সংস্কৃতি চর্চা প্রাণী মানুষকে মানবিক মানুষ করে গড়ে তোলে। সংস্কৃতি বলতে শুধু সংগীত, নৃত্য আর নাটককেই বোঝায় না। সংস্কৃতি হচ্ছে একটি জাতির জীবনাচরণের প্রাত্যাহিক প্রকাশ, যা জাতির পরিচয়কে তুলে ধরে। খাদ্য গ্রহণ থেকে শুরু করে কথন, বলন, চলন, পোশাক, আচার, অনুষ্ঠান, ধর্মÑ সব বিষয়ে জনগণের স্বাতন্ত্র্যতার পরিচয় হচ্ছে সেই জাতির সংস্কৃতি। যে জাতির সাংস্কৃতি যতটা উন্নত তাকে ততটা সভ্য জাতি বলা হয়। সাংস্কৃতিবান মানুষই হচ্ছে সভ্য আধুনিক মানুষ। প্রবাহমান সাংস্কৃতিক চর্চার উৎকর্ষতা নাগরিকগণকে সভ্য করে তোলে।
দুই বছর আগে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করেছি। স্বাধীনতার এ ৫০ বছর পেরিয়ে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে চোখ রেখে নিচে তাকালে দেখা যাবে আমাদের অর্থনেতিক অর্জন অবশ্যই আকাশছোঁয়া। বিশেষ করে গত ১৫ বছর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়ন সূচকের ঊর্ধ্বগতি, অর্থনৈতিক মানদণ্ড, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, দেশব্যাপী চোখ ধাঁধানো সব অবকাঠামো বাংলাদেশের উন্নয়নের উজ্জ্বল স্বীকৃতি প্রদান করে। জনগণের মাঝে নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র নিয়ে কিছুটা খেদ থাকলেও দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিয়ে আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুলতে কোনো রাখঢাক দেখা যায় না। তবুও ভুলে গেলে চলবে না সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ছাড়া শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন একটি জাতিকে জ্ঞানে, বিজ্ঞানে, শিক্ষায় উন্নতির শিখরে তুলতে পারে না। এবং সে উন্নয়ন কখনো জনগণকে সুনাগরিক করে গড়ে তুলতে পারে না।
গত ১৫ বছর ধরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শে চালিত সরকার দেশ পরিচালনা করছে। অত্যন্ত দুঃখ নিয়ে বলতে হচ্ছে এই ১৫ বছরে সাস্কৃতিক কর্মীরা দেশের সব স্তরে যে সাংস্কৃতিক জাগরণের প্রত্যাশা করেছিলেন তা একবারেই পূরণ হয়নি। উল্টো সমাজের আনাচে-কানাচে আজ ধর্মান্ধতা দানা বাঁধছে।
গত ৫০ বছরে দেশের থিয়েটারভিত্তিক নাট্য আন্দোলনের ব্যাপ্তি প্রসারিত হলেও টিভি নাটকের বর্তমান অবস্থা একেবারেই মানহীন। বিশেষ করে ইউটিউবে প্রচারিত নাটকগুলোর বেশির ভাগই যাচ্ছেতাই। বাঙালির সংগীত বিশেষ করে লোকগান সবসময়ই সমৃদ্ধ। সংগীতে আধুনিকতার ছোঁয়া থাকলেও মানহীন চলচ্চিত্র বিশ^মানে উত্তীর্ণ হতে আরো সময় লাগবে। নৃত্য চর্চা ক্ষয়িষ্ণু। চিত্রকলা এগিয়েছে অনেকটা, তবে শহরকেন্দ্রিক। বাংলার গ্রামে-গঞ্জে যে যাত্রাপালা, জারি-সারি, ভাটিয়ালি কৃষক-যুবার বিনোদন আর সংস্কৃতি চর্চার নিত্য মাধ্যম ছিল, তাও আজ অতীত। গ্রামে-গঞ্জে আজ সুস্থ বিনোদনের পরিবর্তে জায়গা করে নিয়েছে ধর্মীয় জলসা, ওয়াজ। সেসব ওয়াজ থেকে নিত্য প্রচার করা হয় হিংসা, বিদ্বেষ আর বিভাজনের সাংস্কৃতি। ফলে আজ গ্রাম-শহর সবখানেই এক ভয়ানক অন্ধকার জেঁকে বসতে যাচ্ছে।
তবে মৌলবাদীদের কাছে বাঙালি সংস্কৃতি কোনোদিন হার মানেনি। এ দেশের সাংস্কৃতিক কর্মীরা সবসময় অন্ধকারকে পরাজিত করে বাংলাদেশকে আলোর পথে নিয়ে এসেছে। সে আলো নিশ্চয়ই বাংলাদেশকে একটি ন্যায়ভিত্তিক আধুনিক ও উন্নত দেশ হতে পথ দেখাবে। কিন্তু হঠাৎ করে এ আলো আসবে না। অন্ধকার থেকে বের হয়ে আসতে হলে প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাঙালি সাংস্কৃতির জাগরণ। দেশের ভেতরে ও প্রবাসে সব সাস্কৃতিক সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই সাংস্কৃতিক জাগরণে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে পরিচালিত সরকারেরও উচিত জনগণের মধ্যে সাংস্কৃতিক জাগরণ সৃষ্টিতে এক মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা।
আগামীর বাংলাদেশে উন্নয়নের রোড ম্যাপে যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে সাংস্কৃতিক জাগরণ ছাড়া তা একবারেই অর্জন করা সম্ভব হবে না। স্মার্ট নাগরিক ব্যতীত স্মার্ট দেশ গঠন অসম্ভব। আর প্রকৃত স্মার্ট নাগরিক হচ্ছে সেই ব্যক্তি যিনি সাংস্কৃতিবান, শিক্ষা, আচরণ, জ্ঞানে-বিজ্ঞানে আধুনিক। তাই বাংলাদেশকে জ্ঞানে-বিজ্ঞানে উন্নত-সমৃদ্ধ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে অবশ্যই বাঙালি সাংস্কৃতিক চর্চাকে একেবারে জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। জীবনমুখী এবং বাস্তবমুখী শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হবে। পর্যাপ্ত বাজেটের সংস্থান করে দেশের সব স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের সাংস্কৃতিক চর্চার মধ্যে আনতে হবে। স্কুল-কলেজের প্রতিটি শ্রেণিতে সাস্কৃতিক দল তৈরি করা বাধ্যতামূলক করতে হবে। প্রতিটি স্কুলে সাংস্কৃতিক চর্চার শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে, সাংস্কৃতিক উপকরণ দিতে হবে। প্রতি বছর ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মতো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নাট্য প্রদর্শনীর আয়োজন করতে হবে। সমাজে সাংস্কৃতিক চর্চার মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে পদ্মা সেতুর চেয়ে কিংবা মেট্রোরেলের চেয়ে সাংস্কৃতিক চর্চা মোটেও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ সাংস্কৃতিক কর্মীদের মধ্যে আজ এক মিশ্র অনুভব প্রতীয়মান। একদিকে দেশ সত্যিই অভাবনীয় উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে যা আশার কথা, আরেকদিকে দেশে ধর্মবিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার, নৈতিকতার অভাব, লোভ, সর্বোপরি সাংস্কৃতিকহীনতা সমাজের সংস্কৃতিবান সভ্যদের ভাবিয়ে তুলেছে। এমন একটি অস্থির সময়ে দাঁড়িয়ে মনে হয় একটি সাংস্কৃতিক জাগরণ বড় প্রয়োজন। না হলে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ থেকে পথভ্রষ্ট হবে নিশ্চিত।

 

 

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়