পীরেরবাগে ভাঙারির দোকানে বিস্ফোরণে দগ্ধ এক

আগের সংবাদ

কী বার্তা পেল জাতীয় পার্টি : গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জি এম কাদেরের বৈঠক, আসন সমঝোতার আলোচনা

পরের সংবাদ

মিষ্টু মিয়ার মিষ্টি বরই : ২৫ লাখ টাকা বিক্রির আশাবাদ

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সাইফুল ইসলাম বাবু, জৈন্তাপুর (সিলেট) থেকে : সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় এক সফল বরই চাষি মিষ্টু মিয়া। তার মিষ্টি বরই বাগানের নাম স্থানীয়দের মুখে মুখে গত দুই মৌসুম ধরে। উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম মোকামটিলা আলুবাগান এলাকায় নিজ প্রচেষ্টায় গড়ে তুলেছেন এ মিষ্টি বরই বাগান।
ভোরের কাগজকে মিষ্টু মিয়া জানান- বছর তিনেক আগেও বরই বাগান লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকলেও ২০২১ সালে ফেসবুক-ইউটিউবের কল্যানে স্থানীয় পর্যায়ে ছাড়াও সিলেট জেলার প্রত্যন্ত এলাকার ছড়িয়ে পড়ে বরই বাগানের নামডাক। তার এ সফলতা দেখে মোকামবাড়ী আলুবাগান এলাকার অনেকেই ঝুঁকছেন বরই চাষে।
মিষ্টু মিয়ার আসল বাড়ি নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলায়। কৃষিকাজের পাশাপাশি গরু ছাগলের খামার ছিল তার। টিভিতে নিয়মিত দেখতেন কৃষিবিষয়ক অনুষ্ঠান। তিনি জানান- এক অনুষ্ঠানে বরই চাষের প্রতিবেদন দেখে তার আগ্রহ জন্মে। কিন্তু নরসিংদী জেলায় কোন পতিত জমির সন্ধান না পেয়ে বরই চাষের উপযুক্ত জমি খুঁজতে থাকেন। প্রথম দিকে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুরে জমির সন্ধান পেলেও শেষ পর্যন্ত সেখান থেকে ফিরে আসেন।
পরে ২০২০ সালে জৈন্তাপুরের এক আত্মীয়ের সুবাদে জৈন্তা হিল রিসোর্টের উত্তর পশ্চিম দিকে পাহাড়ের পাদদেশে বেশ কিছু পতিত ও বরই চাষে উপযোগী জমির সন্ধান পান। স্থানীয় বাসিন্দা আবু হানিফা ও ব্যবসায়ী শামিমের নিকট থেকে ১০ বছর মেয়াদি চুক্তিতে ১৮ বিঘা জমিতে চাষ করেন কুল বরইয়ের। শুরু থেকে ১৩০০ গাছের চারা রোপণ করে প্রথম বছরেই গাছ ছোট থাকা অবস্থায় ফলন আসে। তবে সেই ফলন তুলনামূলক কম ছিলো। পরের বছর ২০২২-২৩ মৌসুমে ফল আসলে বাগানেই বিক্রি শুরু করেন। বাগানে এসে ক্রেতারা তার বরইবাগানের দৃশ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিলে পরিচিতি পেতে শুরু করে মিষ্টু মিয়ার বরই বাগান।
বলসুন্দরী ও আপেল কুল জাতের বরই নজর কাড়ে স্থানীয়দের। যারা এখানে ঘুরতে এসে বরই কিনেন তাদের অধিকাংশই ফেসবুকে ছবি পোস্ট করলে বাগানে এসেই সতেজ ফল কিনতে ভিড় জমায় ক্রেতারা। বাগানে ক্রেতাদের ভিড়ের কারণে কোনো পাইকারি আড়তে গত ২ মৌসুমে বরই বিক্রির প্রয়োজন হয়নি।
মিষ্টু মিয়া জানান, শুরুতে দুই মৌসুমে শুধু বাগান থেকে খুচরা পর্যায়ে ১২ লাখ টাকার বরই বিক্রি হয়েছে। প্রথম বছরে গাছ ছোট থাকায় ফলন কম ছিল। চলতি মৌসুমে গাছ পূর্ণাঙ্গ হওয়ায় কাক্সিক্ষত ফলন আশা করছেন তিনি। প্রতি বছর বাগান পরিচর্যা খরচ বাবদ ব্যয় হয় ৭ লাখ টাকা। সারাবছর ২ জন শ্রমিক মাসিক বেতনে এবং মৌসুম শুরুর দেড় মাসে ১৫-২০ জন শ্রমিক বাগানে কাজ করে। গত তিন বছরে তার বিনিয়োগ হয়েছে ৩০ লাখ টাকার মতো।
চলতি ২০২৩-২৪ মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি নাগাদ ফল বিক্রি শুরু করবেন। এ বছর ফল বিক্রির লক্ষমাত্রা ২৫ লাখ টাকা বলে তিনি আশা করছেন। সেই হিসাবে বাগান শুরু থেকে মোট বিনিয়োগের মূল টাকা উঠে লভ্যাংশের পর্যায়ে যাবে বলেও তিনি আশাবাদী।
বলসুন্দরী ও আপেলকুল এ দুই প্রজাতির মিষ্টি বরই রয়েছে তার বাগানে। এ গাছ একবার রোপনের পর সঠিক পরিচর্যা করলে ২৫ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। তবে এর জন্য নিয়মিত পরিচর্যা, সেচ ও সার প্রয়োগ করতে হয়।
মৌসুমের সময় তার বাগানে কৌতূহলী মানুষের ভিড় লেগে থাকে। ভারত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশের মনোরম দৃশ্য দেখা, সেই সঙ্গে গার্ডেন ফ্রেশ বরই কিনতে জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারিতে বাগানে খুচরা ক্রেতার সমাগম বাড়তে থাকে।
তাছাড়া বাগানের ১ কিলোমিটারের ভেতরে দুটি রিসোর্ট থাকায় সিলেটের বাহিরে থেকে আসা দর্শনার্থীরা বিকালে বরই বাগানে ঘুরতে ও ফল কিনতে আসেন।
এ ব্যাপারে জৈন্তাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামিমা আক্তার ভোরের কাগজকে বলেন, আলুবাগানের এ বিস্তীর্ণ এলাকার জমি দীর্ঘদিন অনাবাদি হিসেবে পড়ে থাকত। মিষ্টু মিয়ার বরই বাগানের মাধ্যমে জমিগুলো কৃষির আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। তবে কৃষক নিজে জৈন্তাপুরের স্থানীয় বাসিন্দা না হওয়ায় কৃষি অফিস থেকে প্রদর্শনী দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে বাগানে নিয়মিত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে তদারকি ও বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
পাশাপাশি ডিলার রেটে সার ক্রয়ের ব্যবস্থাও করে দেয়া হয়েছে। ফলের মৌসুমে গত ২ বছর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে তিনি ও জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা একাধিকবার মিষ্টু মিয়ার বাগান পরিদর্শন করেছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়