সৈয়দুল কাদের, কক্সবাজার থেকে : হামুনের প্রভাবে প্রবল ঝোড়ো হাওয়ায় কক্সবাজারের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টিপান চাষে বিপর্যয় নেমে এসেছে। পানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হওয়ায় পান চাষের পরিমাণ চলতি মৌসুমে বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু গত ২৪ অক্টোবর প্রবল ঝোড়ো হাওয়ায় প্রায় ১২০০ হেক্টর মিষ্টিপান চাষ পুরোপুরিভাবে বিপর্যস্ত হয়। অধিকাংশ পানচাষি এনজিওর ঋণগ্রস্ত হওয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তাদের দাবি, অন্তত ছয় মাস এনজিওদের কিস্তি উত্তোলন বন্ধ রাখা।
কক্সবাজারের গ্রামীণ অর্থনীতির অন্যতম চাবিকাঠি মিষ্টি পান চাষ করে মধ্যবিত্ত পরিবার। পান চাষে জড়িতরা প্রতি বছর শীত মৌসমের শুরুতেই মৌসুমী মিষ্টিপান চাষ শুরু করে। যা থেকে আয় হয় শত শত কোটি টাকা। গত মৌসুমে পান চাষে আয় হয়েছিল অন্তত সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা। যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছর জেলায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে পান চাষ করেন চাষিরা। এর মধ্যে ১২০০ হেক্টর পান চাষ পুরোপুরি নষ্ট হয়েছে। তন্মধ্যে ৭০০ হেক্টর নষ্ট হয়েছে মহেশখালীতে। ১৬০০ হেক্টর জমিতে পান চাষ করেছেন মহেশখালীর চাষিরা। টেকনাফে ৫৭০ হেক্টর, উখিয়ায় ৪৫০ হেক্টর, রাতুতে ২০০ হেক্টর, সদর ১০০ হেক্টর, চকরিয়া ৬০ হেক্টর এবং পেকুয়া ২০ হেক্টর জমিতে চাষিরা পানের চাষ করেছেন।
মহেশখালী কালার মাছ ছাড়া পান ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মিয়া জানিয়েছেন, এই এলাকার অর্থনীতির মূল চাবিকাঠি মিষ্টি পান। প্রতি শীত মৌসুমের শুরুতে অধিকাংশ মধ্যবিত্ত পরিবার পান চাষ শুরু করে। এখন শুরুতে যেভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে তাতে সাধারণ মানুষের পরিবারে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিতে পারে। এছাড়া অধিকাংশ পানচাষি এনজিও কর্তৃক ঋণগ্রস্ত হযওয়ায় চরম বিপাকে পড়ছে। আগামী ৬ মাস যদি এনজিও ক্ষুদ্রঋণের কিস্তি উত্তোলন বন্ধ রাখে তাহলে চাষিরা উপকৃত হবে। পুনরায় পানের বরজ সংস্কার করতে পারবে। অন্যথায় না খেয়ে থাকতে হবে অনেক পরিবারকে। কক্সবাজার সদর উপজেলার খরুলিয়া এলাকার নূর মোহাম্মদ জানান, মূলত এই এলাকার সীমিত সংখ্যক মানুষ পান চাষ করলেও অনেক পরিবারের ভাত জোগাড় হয় পান চাষ থেকে। এখন মৌসুমের শুরুতে হামুনের প্রভাবে ঝড়ো হাওয়ায় সব পানের বরজ বিনষ্ট হয়েছে। এছাড়া পিএএমখালীসহ অধিকাংশ এলাকায় একই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। টেকনাফের বাসিন্দা বিশিষ্ট পান চাষি নূর খোকন জানিয়েছেন, তাদের এলাকায়ও একই অবস্থা। কম ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থায় প্রভাব পড়বে। পানের বরজের উপকরণের দাম বেশি হওয়ায় এমনিতেই পানের বরজ তৈরি করতে খরচ বেশি পড়ছে। মহেশখালী উপজেলায় কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কায়সার উদ্দিন জানিয়েছেন, মৌসুমী পানের বরজ প্রায় ৯৫ শতাংশ নষ্ট হয়েছে যা পুষিয়ে নেয়া চাষিদের পক্ষে সম্ভব নয়। মহেশখালীর হোয়ানক ইউনিয়নের বাসিন্দা রমজান আলী বলেন, গত ১০ বছর ধরে পানের বরজ করছি। পান চাষ করে আমার সংসার চলে। ফলন যেমন ভালো হয়েছে তেমনি দামও ভালো পেয়েছি। কিন্তু ২৪ অক্টোবরের ঝড়ো হাওয়ায় আমাদের আশা-আকাক্সক্ষা, সব ভবিষ্যৎ হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জেলার ৩০ শতাংশ মানুষের পানের বরজ আছে। এরমধ্যে পান চাষের জন্য বিখ্যাত মহেশখালী। পুরো জেলায় প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পান চাষে জড়িত। এরমধ্যে ৩০ হাজারেরও বেশি পানচাষি রয়েছে মহেশখালীতে। জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো কবির হেসেন জানিয়েছেন, হামুনের প্রভাবে ঝড়ো হাওয়ায় জেলায় সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পান চাষ। ইতোমধ্যেই প্রতিটি উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্তদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।