নার্ভাস নাইনটিতে সবজির দাম

আগের সংবাদ

তৃতীয় শক্তিকে ক্ষমতায় এনে দেশকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র হচ্ছে

পরের সংবাদ

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও উৎসব

প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গোৎসব। মন্দিরে মন্দিরে ঢাক-কাঁসর বাজা, ভক্তদের মনভরে দেবীর আরাধনা ও ভক্তিভরে অঞ্জলির মাধ্যমে শুরু হয় এ উৎসব। দুর্গাপূজা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসবই নয়, এটি এখন সার্বজনীন উৎসব। অশুভ শক্তির বিনাশ এবং সত্য ও সুন্দরের আরাধনা শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রধান বৈশিষ্ট্য। পূজা উদযাপন কমিটি জানিয়েছে, এবার সারা দেশে ৩২ হাজার ৪০৭টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা চলছে। এ হিসেবে গত বছরের চেয়ে এ বছর ২৪০টি বেশি পূজামণ্ডপ হচ্ছে সারা দেশে। বেদনাদায়ক বিষয় হচ্ছে, ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। প্রতি বছর পূজাকে কেন্দ্র করে একটি গোষ্ঠী অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করে। ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচারের মাধ্যমে অস্থিতিশীলতা তৈরি করে থাকে। পূজায় কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হোক- আমরা দেখতে চাই না। দেবী দুর্গা সত্য, শুভ ও ন্যায়ের পক্ষের সংগ্রামে মর্ত্যরে মানুষকেও সাহসী করে তোলেন। দূর করে দেন যত গøানি, হিংসা-দ্বেষ, মনের দৈন্য ও কলুষ। যাবতীয় মহৎ গুণাবলির প্রতি দেবী দুর্গা মানুষকে আকৃষ্ট করেন। এটি অনুপম সম্প্রীতি চেতনারই বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু এই সম্প্রীতিও মাঝে মাঝে অসুরের অবাঞ্ছিত কালো ছায়ায় ঢাকা পড়ে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখতে সুযোগসন্ধানীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে সবাইকে।
ইতিহাসের ধারায় দুর্গাপূজা
মা দুর্গা সাধারণের কাছে দেবী দুর্গা মহামায়া, মহাকালী, মহাল²ী, মহা সরস্বতী, শ্রী চণ্ডী ইত্যাদি নামে পরিচিত। সর্বশক্তি সর্বপ্রাণী আদ্যাশক্তি হলেন এই মা দুর্গা, তার দুর্গা নামটির মধ্যেই অসুর শক্তির নাশের পরিচয়। তাই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ডান হাতে তোর খরগ জ্বলে, বাঁ হাত করে শঙ্কা হরণ, দুই নয়নের স্নেহের হাসি, ললাট নেত্র আগুন বরণ।
দুর্গাপূজা কবে কখন কোথায় শুরু হয়েছিল তা নিয়ে নানা মতভেদ রয়েছে। ভারতের দ্রাবিড় সভ্যতায় মাতৃতান্ত্রিক দ্রাবিড় জাতির মধ্যে মাতৃদেবীর পূজার প্রচলন আছে। আর্য সভ্যতায় প্রাধান্য ছিল দেবতাদের। কিন্তু অনার্য সভ্যতায় প্রাধান্য ছিল দেবীদের। তারা পূজিত হতেন আদ্যাশক্তির প্রতীক হিসেবে। মাতৃতান্ত্রিক পরিবারের গঠন, দায়িত্ববোধ উর্বরতা, শক্তির সমন্বয়ের কথা বিবেচনা করে অনার্য সমাজে গড়ে ওঠে মাতৃপ্রধান পূজার সংস্কৃতির ধারণা। এই উপমহাদেশে অবশ্য মাতৃরূপে দেবী সংস্কৃতির ধারণা অতি প্রাচীন। প্রায় ২২ হাজার বছর পূর্বে ভারতীয় সংস্কৃতিতে দেবী পূজা প্রচলিত। মাতৃপ্রধান পরিবারে মা প্রধান, তার নেতৃত্বে সংসার পরিচালিত হয়। এই মত অনুসারে দেবী হলেন শক্তির রূপ।
দেবী দুর্গা হলেন শক্তি এবং ন্যায় বিচারের দেবী, যিনি যেকোনো পরিস্থিতিতে বিশৃঙ্খলা ধ্বংস এবং সংঘাতের জন্য করুণা শান্তি এবং শৃঙ্খলা নিয়ে আসেন।
দেবী দুর্গার স্বরূপ প্রসঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, ভারতের নারীর সর্ববৃহৎ রূপের মধ্যে মাতৃমুক্তিরূপ সবার উপরে, মা সর্বাবস্থায় সন্তানের পাশে পাশে থাকেন, ত্রিপুত্র মানুষকে ত্যাগ করতে পারে; কিন্তু মা কখনো সন্তানকে ত্যাগ করতে পারে না, আবার মাত…শক্তি পক্ষপাত শূন্য মহাশক্তি। মায়ের কাছে প্রতিনিয়ত অকুণ্ঠ স্বরানুভূতি আমাদের শান্তি দিতে পারে, তার জন্য তাকে ভালোবাসা ভয়ে নয় বা কিছু পাওয়ার আশায় নয়, তাকে ভালোবাসার কারণ তুমি তার সন্তান যখন তাকে আমরা এইরকম অনুভব করি তখন আমাদের মনে আসে চিরশান্তি- এটাই মায়ের স্বরূপ।
পরিবেশগত রাজনৈতিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় সংকটের মুখোমুখি হই তখন হাজার বছরের পুরনো পুরাণের কাহিনি দেবী মাহাত্ম্য ও মহান দেবী দুর্গার সহস্রাব্য পূরণের আচার উপাসনা সেই শক্তিগুলোর মধ্যে দার্শনিক এবং আধ্যাত্মিক অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে, যার রূপান্তরের গভীর প্রক্রিয়ায় আমাদের সাহায্য করে এবং আমরা এর মুখোমুখি হই।
দুর্গা হলেন মা, যিনি আমাদের সীমাবদ্ধতা এবং মানসিক অস্পষ্টতাগুলো দূর করতে সাহায্য করেন, যা আমাদের সবার হৃদয়ে বহন করা ঐশ্বরিক আলোকে আলোকিত করতে সহায়তা করেন দুর্গা যার অর্থ অজয় অপ্রতিরোধ্য এই শক্তিশালী ও সাহসী দেবী আমাদের শিক্ষা দেন যে, সত্য ও প্রজ্ঞার ঐশ্বরিক আলো সর্বদা এবং সব বেদনার উপরে বিজয়ী হবে। পুরাকালে মহিষাসুরের অত্যাচারে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হয়ে দেবতারা শ্রীবিষ্ণু এবং মহাদেবের কাছে সাহায্যের জন্য প্রস্তুত হন। প্রবল পরাক্রমশালী মহিষাসুরকে বধ করার জন্য সব দেবতার দেশ থেকে এক অপূর্ব নারীর সৃষ্টি হয়। সব দেবতা তাকে নিজেদের অস্ত্র ও অলংকার দিয়ে সজ্জিত করেন। এই নারী মহিষাসুরকে যুদ্ধা বহন করেন। প্রচণ্ড যুদ্ধের পর ত্রিশূল দিয়ে বধ করেন, দুর্গা পরাজিত করেন তিনি।
শ্রী শ্রী চণ্ডীতে বর্ণিত আছে প্রাচীনকালে রাজা সুরত ও সমা দিবস ও সর্বহারা হয়ে নিজেদের সবকিছু ত্যাগ করে বনে গমন করেন। বনের মধ্যে তারা এক মনির কাছে যান। মেধা মনি নামের ঐ ঋষি সব শোনার পর তাদের বলেন, বিশ্ব সংসারকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য জগতের পালনকর্তা বিষ্ণুর যে মহামায়া শক্তি তারই প্রভাব এরকম হয়। সেই মহামায়া প্রসন্ন ও বড়দা হলে মানবের মুক্তি লাভ হয়। মনের সমাধি মাটির প্রতিমা করে তিন বছর কঠোর তপস্যার পর দেবী তুষ্ট হয়ে তাদের দেখা দেন এবং মনোবাসনা পূর্ণ করেন। পরবর্তীতে বসন্তকালে দুর্গাপূজার উপযুক্ত সময় নির্ধারণ করে বাসন্তী পূজার প্রচলন করেন। সূচনা করেছিলেন শ্রী রামচন্দ্র। রাবনের হাত থেকে সিতাকে উদ্ধার করার জন্য লঙ্কা গমন করার আগে অকালবোধন করে শরৎকালে দুর্গাপূজার শুরু করেন সুদর্শন চক্র।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়