নার্ভাস নাইনটিতে সবজির দাম

আগের সংবাদ

তৃতীয় শক্তিকে ক্ষমতায় এনে দেশকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র হচ্ছে

পরের সংবাদ

শমিতা

প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দুর্গাপূজার ছুটিতে কলকাতায় এসেছি দুদিন হয়ে গেল। এবার কলকাতায় দুর্গাপূজাটা ভালোভাবে ঘুরেফিরে দেখতে চাই। এখানে নাকি জমকালো আয়োজন থাকে পূজার। কলকাতার কয়েকটি পূজামণ্ডপের আয়োজন নাকি দেখার মতো। বিভিন্নজনের কাছে শুনেছি এতদিন। তাই অনেকদিনের সাধ কলকাতায় জমজমাট দুর্গাপূজা নিজের চোখে দেখা। আরো কয়েকদিন থেকে দিল্লি, মুম্বাই, আগ্রা যাওয়ার প্ল্যান আছে। চৌরঙ্গীতে দাঁড়িয়ে মানুষ, যানবাহন, ব্যস্ততা দেখছিলাম। হারিয়ে ফেলেছিলাম মনটা ওই জনস্রোতের মাঝে। ভাবছিলাম কী ব্যস্ততা মানুষের! একজনের দিকে আরেকজনের তাকানোর জো নেই।
‘আরে রঞ্জন না, তুমি!’ হঠাৎ এক মেয়েলী কণ্ঠের মিষ্টি ডাকে আমার তন্ময় ভাঙে। চমকে যাই। ফিরে তাকাই। দেখি সুন্দরী এক তরুণী আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। চিনতে পারি না। অচেনা ভাব নিয়ে তাকিয়ে তাকি কিছুক্ষণ। ‘আরে আমাকে চিনতে পারছ না, আমি শমিতা, কুমিল্লায় পাশাপাশি বাড়িতে থাকতাম আমরা।’
‘ওহ, শমিতা তুমি। একেবারেই চিনতে পারিনি। ইস্, এত বড় হয়ে গেছ বুঝিনি, আমি তো অবাক হয়ে গেছিলাম আমাকে আবার কে ডাকে এখানে? ’ শমিতাকে চিনতে পেরে আমি বলি। শমিতা নরেন কাকার মেয়ে। শমিতারা কুমিল্লায় আমাদের পাশের বাড়িতে থাকত। ওরা আমাদের আত্মীয় না হলেও বেশ ঘনিষ্ঠতা ছিল প্রতিবেশী হিসেবে। আত্মীয়ের মতোই ছিলাম আমরা। দুই পরিবারের মধ্যে দারুণ মিল ছিল। শমিতা আর আমি বয়সে অনেকটা কাছাকাছি বলে বেশ জমত ওর সঙ্গে আমার। মার্বেল খেলা থেকে শুরু করে এক্কাদোক্কা খেলা, গাছ থেকে পেয়ারা চুরি করে খাওয়া, এক সঙ্গে স্কুলে যাওয়া- সবই চলত ওর সঙ্গে আমার। শমিতারা ছয়-সাত বছর আগে বাংলাদেশের সব কিছু বেচে-টেচে দিয়ে ভারতে চলে এসেছে। অবশ্য শমিতারা বাংলাদেশ ছেড়ে আসার আগেই আমরা কুমিল্লা থেকে ঢাকা চলে আসি। বাবার বদলির চাকরি। শমিতারা বাংলাদেশ ছেড়ে আসার আগে আমাদের ঢাকার বাসায় বেড়াতে এসেছিল। তখন শমিতা ক্লাস নাইনে পড়ে। আমি কলেজে পড়ছি। এর মাঝে একবার খবর পেয়েছিলাম, নরেন কাকা মারা গেছেন। তারপর শমিতাদের কোনো খোঁজ-খবর আর জানা হয়নি। ‘ওই ছয়-সাত বছরেই আমার কথা ভুলে গেছ, দেখেও চিনতে পার না, বুঝেছি মানুষ এমনিভাবেই ভুলে যায় সব,’ শমিতা অভিমানের সুরে বলে।
‘না ভুলব কেন, তোমরাই তো কোনো খবর-টবর দাও না, কেমন আছ। আর না চেনারও কথা। তোমার যা চেঞ্জ হয়েছে এই ক’বছরে! ইস কি সুন্দরী হয়েছ, একবার তাকালে আর চোখ ফেরাতে মন চায় না- চিনব কী করে?’
‘বেশ ফাজিল হয়ে গেছ এর মধ্যে, বুঝলাম। তা কোথায় উঠেছ, হোটেলে অবশ্যই। তা কী উদ্দেশ্যে কলকাতা আসা?’ শমিতা জিজ্ঞেস করে।
তোমাকে দেখতে, তোমার সঙ্গে প্রেম করে তোমাকে সঙ্গে নিয়ে যেতে এসেছি, দুষ্টুমি করে বলি আমি।
‘উহ, পুলকিত হলাম, ধন্য হলাম, রূপকথার রাজকুমার তার হারানো রাজকুমারীকে নিতে এসেছেন, দারুণ ফাসকেলাস- শমিতা হাততালি দিয়ে বলে ওঠে। পরে গম্ভীর হয়ে বলে, ‘বেড়াতে এসেছ বুঝেছি?’ আসলেই দারুণ সুন্দরী আর আকর্ষণীয় হয়েছে শমিতা। চমৎকার ফিগার আর ধারালো চেহারা। যে কোনো পুরুষ মানুষকে জয় করতে যথেষ্ট। রাজকুমারীর মতো লাগছে শমিতাকে। একটা রেস্তোরাঁয় চা খেতে খেতে শমিতা নিজের কথা বলে। কলকাতায় একটা অফিসে পার্সোনাল সেক্রেটারির কাজ করে। ছোট একটা অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিয়ে ওরই মতো আরেকটা মেয়ের সঙ্গে থাকে। শমিতার মা আর ছোট ভাই-বোনগুলো বর্ধমানে ওদের গ্রামের বাড়িতে থাকছে।
শমিতা ওর অ্যাপার্টমেন্টটা দেখাতে নিয়ে যায়। বেশ চমৎকার। দুই রুমের বেশ গোছানো ঘর। আমার ভাল্লাগে।
‘আচ্ছা একা একা এখানে থাকতে কোনো অসুবিধা হয় না তোমাদের?’ আমি জিজ্ঞেস করি ওকে।
‘না, কিসের অসুবিধা! আমার মতো কত মেয়ে এমনি একা একা আলাদা অ্যাপার্টমেন্ট নিয়ে থাকছে তো এখানে,’ শমিতা জবাব দেয়। আমার ভালোই হয়। শমিতার মতো এমন চেনা-পরিচয় একজনের দেখা পেলাম। কলকাতায় এসে ভাবছিলাম। নতুন জায়গা। চেনাজানা বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন তেমন নেই। কাকে নিয়ে বড় বড় পূজামণ্ডপে যাব, সবকিছু ঘুরে ঘুরে দেখব, শুধু ভাবছিলাম। শমিতাকে পেয়ে আমার সেই ভাবনাটা দূর হয়েছে। ভালোভাবে কলকাতাসহ অন্য জায়গাগুলোও দেখা যাবে। আর শমিতার মতো ছোটবেলার সাথীর দেখা পেয়ে আমারও খুব খুশি লাগছিল মনটায়। শমিতার সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমার কৈশোর বেলার অনেকটা সময়।
শমিতার সঙ্গে ঘুরে ঘুরে কলকাতার কিছুটা দেখি সে দিন। শমিতার অফিস ছুটি ছিল। ও আমাকে বিড়লা প্লানেটরিয়াম, আলিপুর চিড়িয়াখানা ঘুরে ঘুরে দেখায়। শমিতার মিষ্টি সান্নিধ্য আমাকে কেমন উতলা করে। ওর প্রতি আকর্ষণ বোধ করি। আসলে শমিতা এত সুন্দরী আর আকর্ষণীয়, যে কাউকে উতলা না করে পারে না। রাতে হোটেলে ফিরে অস্থির লাগে। শমিতার কথা, শমিতার মিষ্টি হাসি, শমিতার চেহারাটাই বারবার মনের পর্দায় ভেসে ওঠে। ঘুম আসে না চোখে। কোনোভাবে সকাল হয়। সাত সকালেই শমিতার অ্যাপার্টমেন্টে গিয়ে হাজির হই। ঘুম-ঘুম চোখে শমিতা দরজা খুলে অবাক হয়, ‘কী ব্যাপার রঞ্জন, এত সকালে, কী হয়েছে, কোনো বিপদ-টিপদ নয়তো?’
‘না বিপদ হবে কেন, তোমার কাছে এলাম, আজ তোমাকে নিয়ে সারা শহর চক্কর দেব।’
‘আরে পাগল, আমার আজ অফিস আছে না! অফিসে যেতে হবে তো, আজ কীভাবে তোমার সঙ্গে বেরুব বল?’ শমিতা আমার কথার জবাব দেয়। ওর কথা শুনে আমার মনটা খারাপ হয়ে যায়। ‘কত আশা করেছিলাম আজ। কিন্তু আজকে কী করে কাটাব,’ হতাশ কণ্ঠে বলি আমি।
‘আজ কোনোভাবে কাটাও, কাল থেকে আমি পূজার জন্য কদিন ছুটি নেব, তখন ইচ্ছে মতো বেড়াতে পারবে আমার সঙ্গে, কোনো বাধা নেই,’ শমিতা বলে। সে-ই আমাকে সব পূজামণ্ডপে নিয়ে যাবে বলেছে। শুধু আমার জন্য সে বর্ধমানে পূজার ছুটিতে বাবা-মায়ের কাছে না গিয়ে কলকাতায় থেকে যাবে।
আর কী করা। একা একা ঘুরে দেখতে চেষ্টা করি কলকাতাটা। ভাল্লাগে না, গড়ের মাঠের কাছে এসে আমার মনটা ফাঁকা মনে হয়, ওটার মতোই। কী হলো আমার দুদিনের মধ্যে। মন-টন এমন হয়ে গেল বুঝতে পারি না। শমিতার জন্যই কি বুকের মধ্যে এমন তোলপাড় অনুভব করি? এর মধ্যে শপিংয়ে গিয়ে শমিতাকে চমৎকার একটা শাড়ি কিনে গিফট করেছি। নীল রং আমার পছন্দ। নীল রঙের শাড়িতে ওকে ভীষণ মানাবে- কল্পনা করেই কিনেছি। শমিতাও আমাকে ভীষণ সুন্দর একটা পাঞ্জাবি কিনে দিয়েছে পছন্দ করে। ওর দেয়া পাঞ্জাবিটাও আমার অনেক পছন্দ হয়েছে।


শমিতা আজ একটা সুন্দর নীল রঙের শাড়ি পরেছে, শাড়ির সঙ্গে ম্যাচ করে নীল ব্লাউজ, টিপ কপালে, আশ্চর্য পায়ের স্যান্ডেলগুলোও নীল রঙের। অদ্ভুত লাগে। শমিতাকে নীলপরী মনে হয় আমার কাছে।
‘আচ্ছা রঞ্জন, কুমিল্লাতে তোমরা যাও-টাও তো এখন, আগের মতোই আছে না শহরটা?’ শমিতা জিজ্ঞেস করে।
‘বদলেছে অনেক, সবকিছুই বদলে যায়, পরিবর্তন হয়, যেমন বদলেছ তুমি, কত সুন্দরী হয়েছ।’ আমি বলি।
‘ধেৎ, ভাল্লাগে না ফাজলামো বারবার, আমি জানতে চাইছি কী আর উনি বলছেন কী!’ শমিতা রেগে যায়।
আমি তখন ওকে আশ্বস্ত করতে বলি, ‘ওহ কুমিল্লার কথা বলছ, তুমি গেলে তো চিনবে না আমাদের ওই পাড়াটাকে। কী সুন্দর সুন্দর বিল্ডিং উঠেছে, চমৎকার আলীশান সব বাড়ি, রীতিমতো রেসিডেন্সিয়াল এরিয়া।’
‘তাই বুঝি,’ শমিতা যেন দুঃখ পায়।
‘কী ব্যাপার, দুঃখ পেলে মনে হয়?’
‘নাহ, কিসের দুঃখ,’ শমিতা জবাব দেয়। আমি স্পষ্ট বুঝি আমাদের স্মৃতিময় সে পাড়াটা, সে জায়গাটা বদলে যাওয়াতে শমিতা মনে মনে কষ্ট পেয়েছে।
আমরা তখন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল দেখে বেরিয়েছি মাত্র। হঠাৎ ঝম ঝম করে বৃষ্টি নামে। সঙ্গে ছাতাটাতা ছিল না। বৃষ্টিতে ভিজেই আমি আর শমিতা হেঁটে চলি। শমিতা ভিজতে ভিজতে বাচ্চা মেয়ের মতো আনন্দে হেসে ওঠে। শাড়ি-ব্লাউজ সব বৃষ্টিতে ভিজে ওর ফর্সা শরীরের সঙ্গে মিশে যায়, দেহের বাঁক স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। ওর শরীরের দিকে চেয়ে থাকি। কেমন একটা শির শিরে অনুভূতি সারা শরীরের কোষে কোষে ছড়িয়ে পড়ে যেনে। মনে পড়ে যায় কিশোর বেলার এক বৃষ্টির দিনের কথা-
বর্ষাকাল ছিল তখন। রোজই বৃষ্টি আসে। স্কুল ছুটির পর বেশ জোরে বৃষ্টি শুরু হলো। শমিতাকে দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছিলাম। ওর ক্লাস আমার আগে শেষ হয়। বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বেশ সময় কেটে গেল। কিন্তু শমিতার কোনো দেখা নেই। বেশ রাগ হলো ওর ওপর। শেষে বৃষ্টি মাথায় করেই বাড়ির দিকে চললাম। মনে মনে শমিতার ওপর অভিমান ঝরে পড়েছিল। বৃষ্টি মাথায় হাঁটছি, রাস্তায়ও হাঁটুজল, কিছু দেখা যাচ্ছে না ভালো। কোথায় গর্তটর্ত আছে নাকি। হঠাৎ পেছন থেকে শমিতার ডাক শুনলাম, ‘রঞ্জন, দাঁড়াও, আমি আসছি, তোমার সঙ্গে একটু লুকোচুরি খেললাম আর কি।’ আমার রাগ আরো চড়ে গেল। কিছু না বলে হন হন করে হাঁটতে থাকলাম। ‘আরে শোন না, একটুতেই রাগ করে ফেললে, দাঁড়াও না’ শমিতা পেছন থেকে বলেই চলেছে।
আমার হাঁটার গতি বেড়ে গেল। হঠাৎ একটা গর্তে ডান পা’টা পড়ে যেন মচকে গেল। ভীষণ ব্যথায় কঁকিয়ে উঠলাম। ওই পানির মধ্যে রাস্তায় বসে গেলাম, ব্যথায় চিৎকার করে উঠলাম। শমিতা তখন আমার কাছে এসে গেছে, ‘বেশ মজা হয়েছে, আমার সঙ্গে রাগ দেখানোর ফল, আমি খুশি হয়েছি- এত বড় ছেলের আবার রাগ কত,’ শমিতার কথা আমার গায়ে আগুন জ্বালাল। কিন্তু আমার করার কিছুই নেই, অসহায় আমি। বাড়ি ফিরতে হলে ওর সাহায্য লাগবেই। অগত্যা কী করা, ওর বাড়িয়ে দেয়া হাতটা ধরলাম, ওর কাঁধে ভর দিয়ে বৃষ্টির মধ্যে আবার চলতে লাগলাম। বৃষ্টিতে ভিজে আমার শরীর একেবারে বরফের মতো ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শমিতার শরীরের উষ্ণতার ছোঁয়ায় আমার শরীরটা কেমন ঝিমঝিম করে উঠেছিল সেদিন। শমিতা একটা মেয়ে মানুষ, ওর কাছে আমার চাওয়ার-পাওয়ার অনেক কিছু আছে, সেদিন আমি আবিষ্কার করেছিলাম। ওর প্রতি আকর্ষণটা বেড়ে উঠেছিল দিন দিন। তারপর কুমিল্লায় আর বেশি দিন থাকিনি আমরা। বাবা ঢাকায় বদলি হয়ে চলে এলেন। আমার খুব খারাপ লেগেছিল। সেই কিশোর বয়সে শমিতাকে ফেলে আসতে। আজ এই মুহূর্তে কলকাতার বৃষ্টিঝরা দিনেও শমিতার পাশে রয়েছি আমি, ইস, সারা জীবন যদি শমিতাকে নিয়ে এভাবে হাঁটতে পারতাম, ও যদি সব সময় পাশাপাশি থাকত আমার, কী যে ভালো হতো।
কয়েকদিন স্বপ্নের মতো কেটে যায় আমার। ভুলে যাই দিল্লি, মুম্বাই, আগ্রা ঘুরে বেড়াবার কথা। শমিতা বুঝে আমার ভালোলাগা। আমি শমিতাকে বলি, ‘শমি, এত বছর পরে তুমি আবার আমার জীবনে এলে, তোমাকে আর হারাতে চাই না, চলো, আবার আমার সঙ্গে বাংলাদেশে।’ শমিতা হাসে শুধু, কিছু বলে না-
স্বপ্নের মধ্যে হারিয়ে যাই আমি। সুন্দর একটা সুনসান জায়গা দেখতে পাই। একটা কোন নির্জন নদীতীর। পরে বিশাল জায়গাজুড়ে ধু-ধু বালিয়াড়ি। কেমন অপরূপ নির্জনতা ছড়িয়ে আছে। মৃদু বাতাস বয়ে যায়। আমরা দুজন শুধু ওখানে। আর কেউ নেই। আমি আর শমিতা। বাতাসে বারবার শমিতার আঁচল খসে পড়ে। আমি আর শমিতা ওই ধু-ধু বালিয়াড়ির মাঝে একটা গাছ খুঁজে পাই। আমরা দুজন ঐ গাছটার নিচে গিয়ে বসি। শমিতা আমাকে জিজ্ঞেস করে, ‘তুমি আমাকে খুব ভালোবাসো তাই না?’
‘হুম, খুব ভালোবাসি, তোমাকে যে কত ভালোবাসি আমি বলে বোঝাতে পারব না,’ আমি জবাব দিই। আমার কথা শুনে শমিতা ঠোঁট টিপে হাসে, কেমন আলাদা একটা মুগ্ধ ভাব ছড়িয়ে পড়তে দেখি ওর সারা মুখে, আমার ভালো লাগে, ওকে দারুণ লাগে তখন। শমিতা আবেগে চোখ বুজে থাকে, আমার কোলে শরীর এলিয়ে দেয়। ওর শরীরে কেমন নেশা ধরানো গন্ধ পাই আমি। আমাকে উতলা করে দেয় ওই গন্ধ। আমি আর কিছু বলতে পারি না। শমিতাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাই। আমার স্বপ্ন ভেঙে যায়। রাতে আর ঘুম হয় না। পায়চারী করে হোটেলের রুমে রাত কেটে যায় আমার।
গতকাল আগ্রা এসেছি। শমিতাই জোর করে পাঠিয়ে দিল। ওকে ছেড়ে আসতে চাইনি। ওকে ছেড়ে কোথাও যেতে ইচ্ছে করেনি। শমিতাকে সঙ্গে আসতে বলেছিলাম। শেষে অফিসের কাজের ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে ও সঙ্গে আসেনি। নিজেই এক রকম জোর করে আমাকে আগ্রা পাঠিয়ে দিল, ‘বেড়াতে এসেছ, দেখতে এসেছ, কিছু না দেখে চলে যাবে, শুধু আমার সঙ্গে থাকলে তো আর দেখা হবে না কিছু, তোমার এবারের ট্রিপটা মাটি হবে।’ আর কী করা, বাধ্য হয়ে আসতে হলো। সকালেই আবার কলকাতার উদ্দেশ রওনা দিই। ভালোভাবে তাজমহলটাও দেখা হয় না। মনটা পড়ে থাকে কলকাতার শমিতার কাছে। মনে মনে বলি, ‘শমি, তুমি অপেক্ষা কর, আমি আসছি।’

কলকাতায় ফিরে আর হোটেলে উঠি না। সোজা শমিতার অ্যাপার্টমেন্টে চলে আসি। পথে আসতে শমিতার জন্য তরতাজা কিছু ফুল কিনে নিই। ফুল নাকি মনকে সুন্দর করে। ফুল পবিত্রতার প্রতীক। ফুল পাপ-পঙ্কিলতাকে ধুয়ে-মুছে দেয়। আমি যখন শমিতাদের অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের সিঁড়ি বেয়ে উঠছি তখন রাত হয়ে গেছে অনেক। সিঁড়িতে আলো জ্বলছে। সিঁড়ি বেয়ে তিন তলায় উঠি। তিন তলায় শমিতারা থাকে। ওর দরজায় নক করতে যাব। কিন্তু দেখি দরজাটা ভেজানো। ভেজানো দরজাটা হঠাৎ খুলে যায়, লুজ হয়ে যাওয়া টাইয়ের নট ঠিক করতে করতে এক অপরিচিত মাঝবয়সি পুরুষ আমার মুখোমুখি পাশ কেটে নেমে যায়। কেমন খটকা লাগে আমার মনে।
আমি উঁকি দিয়ে রুমের ভেতরটা দেখতে চেষ্টা করি। শমিতা তখনো উপুড় হয়ে বিছানায় শুয়ে। ওর শাড়ি, ব্লাউজ, পেটিকোট আর ব্রা ফ্লোরে লুটোচ্ছে। সম্পূর্ণ নগ্ন শমিতা তখনো বিছানায় শুয়ে। এরপর ও উঠে দাঁড়ায়, বিছানার পাশে ছড়িয়ে ছিল অনেকগুলো টাকার নোট, বিবস্ত্র অবস্থাতেই হেঁটে গিয়ে শমিতা টাকাগুলো ওর ভ্যানিটি ব্যাগে পুরে রাখে। তারপর ফ্লোর থেকে শাড়ি, ব্লাউজ, পেটিকোট আর ব্রা তুলে নিয়ে বাথরুমে ঢোকে। এত কিছুর মাঝে একবারও দরজার দিকে তাকায় না। দরজা বন্ধ করে দেয়ার মতো কোনো তাড়াও অনুভব করে না। কেমন নির্লিপ্ত-নির্বিকার ভাব। যেন ওকে কেউ দেখেনি, দেখছেও না এ অবস্থায়।
শমিতাকে এমনভাবে দেখব, কল্পনা করতে পারিনি, সারাটা পৃথিবী আমার কাছে মিথ্যা হয়ে যায়। এ কোন শমিতাকে দেখলাম আমি। যাকে আমি ভালোবাসা দিতে চেয়েছিলাম, ভালোবাসার বাঁধনে বাঁধতে চেয়েছিলাম। আমি চেয়েছিলাম শমিতা শুধুই আমার হবে, আর কারো না। শমিতার জন্য ফুল এনেছিলাম। ফুল নাকি মনকে পবিত্র করে, পাপকে দূরে ঠেলে দেয়। ফুলের তোড়াটা ওর বিছানার ওপর রেখে আবার সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসি নিচে। শমিতা স্নান শেষে বাথরুম থেকে ফিরে এসে বিছানায় ফুলের তোড়াটা দেখে হয়তো অবাকই হবে। ভাববে, কে আবার দিয়ে গেল ফুল!

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়