নার্ভাস নাইনটিতে সবজির দাম

আগের সংবাদ

তৃতীয় শক্তিকে ক্ষমতায় এনে দেশকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র হচ্ছে

পরের সংবাদ

এই শরতে দেবী আসে

প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাড়িতে ঢুকে সাধন পালের মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে গেল। মালতি ছেলেকে কোলের ভেতর নিয়ে বসে আছে। সাধন ভেবেছিল বাড়িতে ঢুকতেই মালতি এগিয়ে আসবে। মালতি এগিয়ে আসেনি। সে ঘরের বাইরে একপাশে বসে আছে।
সাধনের বৌয়ের নাম মালতি। সাত বছর হলো বিয়ে হয়েছে তাদের। ছেলের বয়স পাঁচ বছর। তার মুখ দিয়ে লালা ঝরে। তাকে মুখে তুলে ভাত খাইয়ে দিতে হয়। এক বছর আগে সে কথা বলতে শিখেছে। কথা অস্পষ্ট। বয়স যত বাড়ছে তার জেদও তত বাড়ছে। জেদ হয়েছে অতিরিক্ত। রাগ হলে হাতের কাছে যা পায় তাই ছুড়ে মারে। সবকিছু ভেঙে চুরমার করে ফেলে। সাধন পালের মাঝমধ্যে মনে হয় মেরে এই ছেলের হাড়গোড় গুঁড়ো গুঁড়ো করে দিতে।
হাতের শেষ কাজটুকু রেখে সাধন দুপুরে খেতে এসেছে। ফিরে গিয়ে বাকি কাজ করবে। দেবী প্রতিমার চোখ আঁকানো শেষ কাজ। সামনে পুজো। সাধন এবার রায় বাবুদের ঠাকুর বানানোর কাজ পেয়েছে। এই কাজ পাওয়ার জন্য কতজন ঘুরঘুর করে। তার অনেক দিনের ইচ্ছা পুজোয় রায় বাবুদের জন্য ঠাকুর গড়ায়। রায় বাবু অন্য এলাকা থেকে মানুষ নিয়ে আসেন। তাকে ডাকেন না। সে মন খারাপ করে অন্যখানে চলে যায় প্রতিমা গড়তে। এবার রায় বাবু তাকে ডেকেছেন। ডেকে বললেন, পারবি তো সাধন?
সাধন বলল, বাবার কাজ আপনি দেখেছেন। ছোটবেলা থেকে বাবার সঙ্গে প্রতিমা গড়ছি।
শুনেছি প্রতিমা তুই ভালো গড়াতে পারিস।
আপনাদের আশীর্বাদ। ভালো মাটি, মাটিতে তুষের মিশেল। একমেটে, দোমেটে। হাত যেমন বোঝে।
আর মায়ের গড়ন?
চমকে উঠেছে সাধন। তার মনে হলো রায় বাবু বিশেষ কিছু বলতে চাইছেন। যদি বলে ফেলেন তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। পিয়ালিকে সে আর লুকিয়ে রাখতে পারবে না।
অভাবের সংসার। টানাটানি লেগেই থাকে। প্রতিমা বানিয়ে সংসার চালাতে গিয়ে তাকে হিমশিম খেতে হয়। বাবা-মা অকালে মরে সংসারে খাওয়ার খরচ কমিয়ে গেছেন। তবু সংসারে টানাটানি যায় না। চাল কিনলে সবজি কেনার পয়সা থাকে না। এখন আর আগের মতো কেউ আয়োজন করে প্রতিমা বানাতে ডাকে না। দোকানে গিয়ে কম দামে ছোটখাটো একটা প্রতিমা কিনে এনে কোনোমতে পুজো সেরে ফেলে।
সাধনের জেঠাত ভাই নিশিত পাল প্রতিমা বানানোর কাজ ছেড়ে দিয়েছে। সাধন ছাড়তে পারেনি। ছাড়তে পারেনি সে কেবল ওই পিয়ালির জন্য। প্রতিমার শরীরে হাত রেখে সে পিয়ালিকে অনুভব করে। মাটি দিয়ে ধীরে ধীরে সাধন প্রতিমা গড়ে। দেবী প্রতিমার শরীরের ভেতর সাধন পিয়ালিকে অনুভব করে। সে অতি যতেœ একটু একটু করে পিয়ালিকে গড়তে থাকে। পিয়ালির চওড়া পিঠ, সরু কোমর, পেলব দুই হাত। সাধন আলতো হাতে ছুঁয়ে যায়। প্রতিমার ঠোঁটে আঙুল ছুঁইয়ে পিয়ালিকে স্পর্শ করে। বুকে মাথা রাখে। দুই কাঁধে হাত রেখে চোখে চোখ রেখে তাকায়। তখন সাধনের চোখে নেশা। অদ্ভুত দিশেহারা ভাব। পিয়ালি চোখ বাঁকায়। তার গলার ভেতর গরগর আওয়াজ ওঠে। সে ওম-ওম গলায় বলে, কী দেখ অমন করে?
তোমাকে দেখি।
তোমার দিকে তাকাতে আমার লজ্জা লাগে।
তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করে সবসময়।
বাবাকে বললে না কেন আমাকে বিয়ে করবে?
তুমি রাজি হতে?
এত ভালো তুমি বাসো আর আমি রাজি হতাম না!
বলিনি ভয়ে। যদি তুমি রাজি না হও।
আমাকে বলতে একবার!
কয়েকবার বলেছি। তুমি বুঝতে পারোনি। এড়িয়ে গেছ।
আমি বুঝতাম। সব বুঝেও না বোঝার ভান করেছি। তুমি ভুল করার ছল করে যতবার আমার হাত ধরেছ ততবার আমি বুঝেছি। তোমার শরীর কেঁপে উঠত। আমার বুক ধকধক করত। কেমন অবশ লাগত আমার। আমি হাত ছাড়িয়ে নিতে পারতাম না। তুমি ঝট করে হাত ছেড়ে দিতে।
তুমি বলোনি কেন?
ভয়ে।
কিসের ভয়ে?
বাবার ভয়ে। বাবা শুনলে আমাকে ঘরে আটকে রাখতেন। তোমাকে কেটে ইট বেঁধে নদীতে ভাসিয়ে দিতেন।
আমি অনাথ, দরিদ্র বলে তাই?
জানি না। অত অল্প বয়সে বাবাদের বোঝা যায় না।
সাধনের রাগ চড়চড় করে উঠে গেছে। সে চিৎকার করে ডাক দিল, সুদেব এই সুদেব!
ছেলে তাকাল না। ঘাড় ঘুরিয়ে মালতি তাকিয়েছে। সাধন আশা করেছিল মালতি ছেলেকে রেখে উঠে আসবে। মালতি উঠে আসেনি। সে বুকের ভেতর সুদেবকে চেপে ধরে আ-আ করে যাচ্ছে।
সাধনের রাগ আরও উঠে গেল। রাগ উঠেছে তরতর করে। তার অবস্থা হয়ে গেছে এলোমেলো। মাথার ভেতর ভয়ংকর দাপাদাপি শুরু হয়েছে। প্রতিমা গড়ে বাড়ি ফেরার সময় সাধনের মন ভালো থাকে। সে তখন পিয়ালিকে ছুঁয়ে আসে। গুন গুন করে গান গায়। একা একা কথা বলে, সাধন তুমি তাড়াতাড়ি ফিরবে।
এত তাড়া কিসের?
আমার একলা থাকতে খারাপ লাগে। তুমি এলে মন ভালো হয়ে যায়।
পিয়ালির সঙ্গে কথার মাঝখানে মালতি ঢুকে পড়ে। সাধন ভাবে বাড়ি গিয়ে মালতিকে সে প্রতিমা গড়ানোর গল্প শোনাবে। প্রতিমার খড় বাঁধতে গিয়ে কী হয়েছে বলবে। সেই কথা মনে হলে সাধন হাসে। বাড়িতে ঢুকে তার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। মালতি তখন সুদেবকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। মালতিকে কিছু বলা হয় না।
সাধনের সব রাগ গিয়ে পড়ে সুদেবের ওপর। ছুটে এসে চটাস করে সুদেবের পিঠে চড় বসিয়ে দেয়। হিসহিস করে বলে, সারাদিন মায়ের কোলের ভেতর ঘুনঘুন করিস কেন? মা ছাড়া তোর চলে না?
সুদেব কী বোঝে কী জানি। মাকে ছেড়ে দিয়ে সাধনকে আঁচড়াতে থাকে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে ভীষণ খেপে গেছে। তার মুখ দিয়ে লাগা গড়িয়ে পড়ছে। সুদেব গোঁ গোঁ আওয়াজ করতে করতে ভীষণ রাগে সাধনকে খামচে ধরে।
মালতি এসে ছোঁ মেরে সুদেবকে কোলে তুলে নেয়। সাধনের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলে, কী হয়েছে?
সাধনও খেপেছে। সে মাথা ঝাঁকিয়ে বলে, আমার হাতমুখ ধোয়া লাগে না?
মালতি তখন সুদেবকে থামাতে ব্যস্ত। সুদেব হাতপা ছুড়ছে। মালতি বলল, কলে জল আছে। হাতমুখ ধুয়ে নাও।
সাধনের মাথা ঘুরছে। মনে হচ্ছে ছুটে গিয়ে সুদেবের গালে কষে একটা চড় বসিয়ে দিয়ে আসে। সে দাঁত কিড়মিড় করে বলল, হাতমুখ ধুয়ে মুছব কিসে? গামছা কই?
গামছা ঘরে আছে।
ভাত কি হেঁশেল থেকে নিজেকে নিয়ে খেতে হবে?
সুদেব ঘু-ঘু করে কান্না শুরু করেছে। মালতি তাকে থামানোর চেষ্টা করছে। সুদেব থামছে না। সে হাত-পা ছুড়ে চিৎকার করে যাচ্ছে।
মাঝেমধ্যেই সাধনের মনে হয় সে আর সংসার করবে না। সব ছেড়েছুড়ে কোথাও চলে যাবে। কোথায় যাবে সে জানে না। বার দুয়েক চেষ্টাও করেছে। যাওয়া হয়নি। পিয়ালি তাকে আটকে রাখে। সংসারের নানান জটিলতা তাকে অস্থির করে রাখে। হাটে-বাজারে-পথে লোকজন অপমান করে। তবু সাধন স্থির থাকে পিয়ালির কথা ভেবে।
প্রতি বছর দেবী গড়ার সময় সে পিয়ালিকে অনুভব করে। একান্ত নিজের কাছে পায়। আদর করে। প্রাণভরে পিয়ালিকে ছুঁয়ে যায়। দেবী প্রতিমার ভেতরে পিয়ালিকে পেতে সাধন সব দুঃখ কষ্ট আপমান যন্ত্রণা সহ্য করে হাসিমুখে বেঁচে আছে।
সাধন সিদ্ধান্ত নিয়েছে আজ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে। আর কোনোদিন ফিরবে না। সে ঘরের ভেতর ঢুকে পড়ল। নীল জামাটা তার পছন্দের। গায়ের রং জ্বলে যাওয়া জামা বদলে নীল জামা পরল। বোতাম লাগাতে গিয়ে থমকে গেছে আচমকা। নীল জামায় নীল বোতাম লাগানো ছিল। সাধন এই জামা কিনে আনার তিনদিন পর মালতি বলল, নীল জামায় নীল বোতাম থাকবে না। থাকবে সাদা বোতাম।
সাধন জিগ্যেস করল, সাদা বোতাম থাকবে কেন?
মালতি বলল, নীল আকাশে তারাগুলো সব সাদা। মেঘ সাদা।
কথা ঠিক আছে। তা এখন সাদা বোতাম পাব কোথায়?
আমার কাছে আছে। আমি এনে রেখেছি।
মালতি সুই-সুতা নিয়ে এই নীল জামায় সাদা বোতাম লাগাতে বসে। সাধনের কী জানি কী হয়। সে এগিয়ে গিয়ে মালতিকে জড়িয়ে ধরে চকাস করে তার গালে চুমু দিয়ে বসে। লজ্জা পেয়ে মালতি শুধু বলেছিল, এই যাহ ছেলে বড়ো হয়েছে না?
সাধন দাঁড়াল না। তার মেজাজ অতিরিক্ত খারাপ হয়েছে। সে নীল জামা গায়ে দিয়ে হনহন করে হেঁটে বাড়ি থেকে বেরিয়ে চলে গেল।

বিকেলের আলো মরে আসছে। এ সময়ে বাতাসে শীতল ভাব থাকার কথা। এবার আবহাওয়ার ভাবগতিক অন্যরকম। বাতাসের ভাব গরম।
দশ হাত মেলে দুর্গা মায়ের বিশাল প্রতিমা দাঁড়িয়ে আছে। ব্যাপক আয়োজন। বিরাট কাঠের পাটাতনের ওপর বাঁশ আর খড় দিয়ে খিলোন করা হয়েছে। প্রতিমার কাঠামো ফুটে উঠেছে তাতে। মাটির প্রলেপ দেয়ার কাজ শেষ করে শুকিয়ে নেয়া হয়েছে। প্রতিমার মুখ বানানো হয়েছে। চোখ বানালেই দেবী দুর্গা তাকাবেন।
সাধন সচেতনভাবে চোখ আঁকে। চোখে চেহারা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সাধন দেবী মায়ের শরীর গড়ে চোখ আঁকে অন্যরকম করে। সেখানে যেন পিয়ালিকে বোঝা না যায়। এক এক বছর দেবী দুর্গার মুখের গড়ন হয় একেক রকম। দুর্গা মা ভিন্ন দৃষ্টি নিয়ে তাকান। তবে সব বছর সব দেবী মায়ের শরীর হয় একইরকম। সেই শরীর পিয়ালির। শুধু চোখ পিয়ালির না। অন্যরকম কোনো চোখ। সাধন ভাবে, পিয়ালি বারোয়ারি হবে না। সে পিয়ালিকে ছুঁয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে চোখ আঁকতে থাকে।
পিয়ালি অন্ধ চোখে বলল, আমার বিয়ের সময় তুমি এলে না যে!
সাধন আলতো করে গাল ছুঁয়েছে পিয়ালির। মাথা নিচু করে বলল, পালিয়ে গিয়েছিলাম। বাড়ি থেকে অনেক দূরে।
কেন?
জানি না। আমি নিজেকে কোনোদিন বুঝতে পারিনি।
সাধন হাতের কাজ থামিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। মালতির জন্য খারাপ লাগছে। বাড়ি থেকে না খেয়ে রাগ করে চলে আসা ঠিক হয়নি। মালতি কষ্ট পেয়েছে। সে জানে মালতি এখন কাঁদবে। কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়ে ফেলবে। মুখে কিছু বলে না। কিন্তু বকা দিলে ভীষণ কষ্ট পায়। একটু বকা দিলেই কেঁদেকেটে একাকার করে।
সাধন কতবার ভেবেছে সে মালতিকে আর বকবে না। তবু নিজেকে সামলাতে পারে না। বকা দিতে থাকে। তাকে কেন মালতি বোঝে না। বাড়ি ফিরলে ছেলেকে রেখে তারদিকে খেয়াল করলেই তো আর রাগ হয় না। বললেই পারত, হাতমুখ ধুয়ে এসো আমি ভাত দিচ্ছি। আজ তোমার জন্য সরষে ইলিশ রান্না করেছি। ওল ভরতা করেছি। সরষে ইলিশ সাধনের অত্যন্ত প্রিয়। এই কথা কি মালতি জানে? সে যে ওল ভরতা খেতে পছন্দ করে মালতি সেটা কোনোদিন খেয়াল করেনি। খেতে বসলে ভাত হয়ে যায় ঠাণ্ডা পানি-পানি। সে গরম ভাত খেতে চায়। মালতি ছেলেকে ঘরে রেখে আসতে পারত বা বলতে পারত, সুদেবকে রেখে আসছি। তুমি বসো। মালতি এসব কিছুই বলল না। বলল পানি আছে কলে। গামছা ঘরে। ভাত রান্নাঘরে শুকাচ্ছে।
সাধনের ভেতর অস্থিরতা শুরু হয়েছে। তার ভাবনায় জট পাকিয়ে যাচ্ছে। সে জানে সুদেব অসুস্থ। নিজে ছেলেকে সময় দিতে পারে না। ছেলে একা কিছু করতে পারে না। মালতি যতœ না নিলে তার যতœ নেওয়ার আর কে আছে? কেউ নেই।

সাধন পালের হাত থরথর করে কাঁপছে। চোখ বানানো শেষ হয়েছে। চোখ মেলে দেবী তাকিয়েছেন। সাধন দেবী প্রতিমার চোখের দিকে স্থিরভাবে তাকিয়ে আছে। তার চোখে বিস্ময় আর মুগ্ধতা। মালতি বড়ো বড়ো চোখ মেলে শান্তভাবে তারদিকে তাকিয়ে আছে।
সাধন পাল হাঁটছে ধীরপায়ে শান্তভঙ্গিতে। তার কোনো তাড়া নেই। সে জেনে গেছে কোথায় যেতে চায়। দেবী প্রতিমার চোখ দুটো মনে ভাসছে। মালতির শান্ত গভীর চোখ। সেই চোখে তীব্র ভালোবাসা।
সাধন বাড়ি ফিরে এসেছে। মালতি গামছা এগিয়ে দিল। সাধন হাতমুখ ধুয়ে এসে খেতে বসে চমকে উঠেছে। থালায় গরম ভাত। গরম ভাতের পাশে ওল ভরতা। সামনে বাটিতে ইলিশ মাছের তরকারি। সরষে দিয়ে রান্না ইলিশ।
মুখে ভাত নেয়ার আগেই সাধনের মনে হলো গলায় যেন কিছু আটকে গেছে। সে হতভম্ভ চোখ তুলে মালতির দিকে তাকাল। মালতির চোখ লাল হয়ে আছে। সে কাঁদছিল। কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে।
সাধন নরম গলায় বলল, তুমি খেয়েছ?
মালতি ভেজা গলায় বলল, না।
সাধন বলল, সুদেব কোথায়?
মালতি বলল, ঘরে।
ডাকো তাকে।
আটকে রেখেছি। এখানে এলে বিরক্ত করবে।
ছোট মানুষ। বিরক্ত করবে কেন? নিয়ে এসো।
মালতি উঠে দাঁড়াল। সাধন ঝট করে উঠে পড়েছে। মালতির দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার ভাত বাড়ো। একসঙ্গে খাব। সুদেবকে আমি নিয়ে আসছি।
মালতি গুছিয়ে নিজের জন্য থালায় ভাত বাড়ছে। গরম ভাত থেকে ধোঁয়া উঠছে। সুদেব গলা জড়িয়ে ধরে আছে সাধনের। সাধন তাকে কোলে ঝুলিয়ে নিয়ে এসেছে। সুদেবের মুখ থেকে লালা ঝরে সাধনের কাঁধ ভিজে গেছে। সুদেব মুখের ভেতর গোঁ গোঁ আওয়াজ করার মতো একটানা ‘বাবা-বাবা’ বলে ডেকে যাচ্ছে।
সাধন তাকিয়েছে মালতির দিকে। মালতির চোখ শান্ত। সাধন বলল, রায় বাবুদের দেবী প্রতিমা এবার অসাধারণ হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়