জাবিতে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালিত

আগের সংবাদ

বাজারের পারদ চড়ছেই : নির্ধারিত দামের ধারেকাছেও নেই তিন পণ্য, আমদানির ডিম দেশে আসেনি এখনো

পরের সংবাদ

ফিলিস্তিনি-ইসরায়েলি সংঘাতের শুরু যেভাবে

প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ইউরোপে বসবাসকারী ইহুদিরা ব্যাপক বিদ্বেষ-নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। সেখান থেকেই ‘জাওনিজম’ বা ইহুদিবাদী আন্দোলনের শুরু। তাদের লক্ষ্য ছিল ইউরোপের বাইরে কেবলমাত্র ইহুদিদের জন্য একটি রাষ্ট্র পত্তন করা। সেই সময় প্যালেস্টাইন বা ফিলিস্তিন ছিল তুর্কী অটোমান সাম্রাজ্যের অধীন। এটি মুসলিম, ইহুদি এবং খ্রিস্টান- এই তিন ধর্মের মানুষের কাছেই পবিত্র ভূমি হিসেবে বিবেচিত। ইহুদিবাদী আন্দোলন দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ইউরোপের ইহুদিরা দলে দলে প্যালেস্টাইনে গিয়ে বসত গড়তে শুরু করে। কিন্তু তাদের এই অভিবাসন স্থানীয় আরব এবং মুসলিমদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করে। সে সময় আরব এবং মুসলিমরাই ছিল সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর তুর্কী অটোমান সাম্রাজ্য কার্যত ভেঙে পড়ে। তখন যে ‘লিগ অব নেশন’ গঠিত হয়েছিল, সেই বিশ্ব সংস্থার পক্ষ থেকে ব্রিটেনকে ‘ম্যান্ডেট’ দেয়া হয় প্যালেস্টাইন শাসন করার। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ যখন চলছিল তখন ব্রিটেন আরব এবং ইহুদি, উভয়পক্ষের কাছেই নানা রকম প্রতিশ্রæতি দিয়েছিল ফিলিস্তিনি নিয়ে। কিন্তু এসব প্রতিশ্রæতির কোনটিই ব্রিটেন রক্ষা করেনি। পুরো মধ্যপ্রাচ্য তখন কার্যত ভাগ-বাটোয়োরা করে নিয়েছিল ব্রিটেন আর ফ্রান্স। এই দুই বৃহৎ শক্তি পুরো অঞ্চলকে তাদের মতো করে ভাগ করে নিজেদের প্রভাব বলয়ে ঢোকায়।
ফিলিস্তিনি তখন আরব জাতীয়তাবাদী এবং ইহুদিবাদীদের মধ্যে দ্ব›দ্ব-সংঘাত শুরু হয়। ইহুদি এবং আরব মিলিশিয়াগোষ্ঠী পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে। অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর ফিলিস্তিনি ব্রিটিশদের অধীনে চলে যায়। এদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যেভাবে লাখ লাখ ইহুদিকে হত্যা করা হয় (হলোকাস্ট) তার পর ইহুদিদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় চাপ বাড়তে থাকে। ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের অধীনে থাকা অঞ্চলটি তখন ফিলিস্তিনি আর ইহুদিদের মধ্যে ভাগ করার সিদ্ধান্ত হয়। এই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই ১৯৪৮ সালের ১৪ মে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসরায়েল। কিন্তু পরদিনই মিসর, জর্দান, সিরিয়া এবং ইরাক মিলে অভিযান চালায় ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের অধীনে থাকা অঞ্চলে। সেটাই ছিল প্রথম আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ। ইহুদিদের কাছে এটি স্বাধীনতার যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত। জাতিসংঘ প্যালেস্টাইনে আরবদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় যে অঞ্চলটি বরাদ্দ করেছিল, এই যুদ্ধের পর তার অর্ধেকটাই চলে যায় ইসরায়েল বা ইহুদিদের দখলে। ফিলিস্তিনের জাতীয় বিপর্যয়ের শুরু সেখান থেকে। এটিকেই তারা বলে ‘নাকবা’ বা বিপর্যয়। প্রায় সাড়ে সাত লাখ ফিলিস্তিনিকে পালিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিতে হয়। ইহুদি বাহিনী তাদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করে। কিন্তু আরব আর ইসরায়েলিদের মধ্যে এটা ছিল প্রথম যুদ্ধ মাত্র। তাদের মধ্যে এক দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের সূচনা হলো মাত্র। ২০১৪ সালে গাজা যুদ্ধে সেখানে ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি বোমা মেরে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছিল ইসরায়েল। প্রায় দুই হাজারের বেশি মানুষ সেই যুদ্ধে নিহত হয়।
১৯৫৬ সালে যখন সুয়েজ খাল নিয়ে সংকট তৈরি হয়, তখন ইসরায়েল মিসরের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। কিন্তু সেই সংকটে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ব্রিটেন, ইসরায়েল আর ফ্রান্সকে পিছু হটতে হয়। ফলে যুদ্ধের মাঠ কোনো কিছুর মীমাংসা সেই সংকটে হয়নি।
এরপর এলো ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ। ৫ জুন থেকে ১০ জুন পর্যন্ত এই যুদ্ধে- যা ঘটেছিল, তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়েছিল পরবর্তীকালে।
ইসরায়েল বিপুলভাবে জয়ী হয় এই যুদ্ধে। তারা গাজা এবং সিনাই উপদ্বীপ দখল করে নেয়- যা কিনা ১৯৪৮ সাল হতে মিসরের নিয়ন্ত্রণে ছিল। অন্যদিকে পূর্ব জেরুসালেমসহ পশ্চিম তীরও তারা দখল করে নেয় জর্দানের কাছ থেকে। সিরিয়ার কাছ থেকে দখল করে গোলান মালভূমি। আরও পাঁচ লাখ ফিলিস্তিনিকে তাদের বাড়িঘর ফেলে পালাতে হয়।
আরব-ইসরায়েল সংঘাতের ইতিহাসে এর পরের যুদ্ধটি ‘ইয়োম কিপুর’ যুদ্ধ নামে পরিচিত। ১৯৭৩ সালের অক্টোবরের এই যুদ্ধের একদিকে ছিল মিসর আর সিরিয়া, অন্যদিকে ইসরায়েল। মিসর এই যুদ্ধে সিনাই অঞ্চলে তাদের কিছু হারানো ভূমি পুনরুদ্ধার করে। তবে গাজা বা গোলান মালভূমি থেকে ইসরায়েলকে হটানো যায়নি।
কিন্তু এই যুদ্ধের ছয় বছর পর ঘটলো সেই ঐতিহাসিক সন্ধি। মিসর প্রথম কোনো আরব রাষ্ট্র- যারা ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করল। এরপর তাদের পথ অনুসরণ করল জর্দান। কিন্তু তাই বলে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ শেষ হলো না। গাজা ভূখণ্ড যেটি বহু দশক ধরে ইসরায়েল দখল করে রেখেছিল, সেটি ১৯৯৪ সালে তারা ফিলিস্তিনিদের কাছে ফিরিয়ে দিল। সেখানে ইসরায়েলি এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে বড় ধরনের লড়াই হয় ২০০৮, ২০০৯, ২০১২ এবং ২০১৪ সালে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়