জন্মদিনের শুভেচ্ছাপত্র

আগের সংবাদ

অদ্ভুদ আবাস!

পরের সংবাদ

‘আমি নাকি তাদের লাকি চার্ম!’

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

টলিউডের ব্যস্ততম অভিনেতাদের তালিকা বানালে তার নাম একদম উপরের দিকে থাকবে। কারণ শুধু টলিউডই নয়, তিনি বলিউড, তেলুগু সিনেমা, ওটিটি- সব মিলিয়ে সারাক্ষণ কাজ করছেন। কখনো কাজল, কখনো সামান্থা রুথ প্রভু- তার সহঅভিনেতাদের নামগুলোও যে কোনো নায়কের কাছে ঈর্ষণীয়। ২০১৮ সালে ‘এক যে ছিল রাজা’র পর তিনি ফের সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবিতে। তা-ও আবার পূজার থ্রিলারে। এবারে তিনি সিরিয়াল কিলারের ভূমিকায়। কথা বলেছেন ভারতীয় গণমাধ্যমের সঙ্গে। তারই চুম্বকাংশ মেলার পাঠকদের জন্য-

বাংলা ছবির জন্য যিশু সেনগুপ্তর ডেট নাকি পাওয়াই যায় না। শেষমেশ ছবিতে পাওয়া গেলেও মুক্তির আগে সাক্ষাৎকারের জন্য কিছুতেই পাওয়া যায় না। এই পরিস্থিতি কেন বলুন তো?
যিশু : আমি যে একদম ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গিয়েছি, এমনটা কিন্তু নয়। ‘পালান’ ছবিটা মে মাসে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। সে সময় আমি ব্যস্ত ছিলাম। কিন্তু হঠাৎই মুক্তি পিছিয়ে সেপ্টেম্বর হয়ে যায়। মুক্তির আগে আমি গোটা সময়টাই শ্রীলঙ্কায় ছিলাম। এখন হঠাৎই শুট বাতিল হওয়ায় দুই-তিন দিনের জন্য বাড়ি এসেছি। কিন্তু ফোনে আমায় সব সময় পাওয়া যায়।
পূজায় আবার সৃজিতের ছবিতে। নস্টালজিক লাগছে?
যিশু : সৃজিতের থ্রিলারের একটা আলাদা আবেদন অবশ্যই আছে। ওর পূজার ছবি আমি আগেও করেছি। তবে সৃজিতের সঙ্গে পূজার ছবিতে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্য এবং আমি। আবার ছবিটা থ্রিলার। এই চারটি দিক একসঙ্গে পূজায় আসায় অবশ্যই একটা বিরাট ব্যাপার হয়েছে।
সৃজিতের সঙ্গে আপনার মান-অভিমান চলতেই থাকে। এই ছবির জন্য কী করে রাজি হলেন শেষমেশ?
যিশু : আমি সব সময়ই বলেছি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মান-অভিমান চলবেই। কে স্বামী, কে স্ত্রী বলতে পারব না। তবে এই ঝগড়াটা আটকানো সম্ভব নয়। কিন্তু সৃজিতের সঙ্গে কাজ করার প্রধান কারণ ওর ছবির চিত্রনাট্য। এ নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। কিছু ক্ষেত্রে আমার ডেটের সমস্যা হয়েছে আগে। কখনো কখনো মন কষাকষিও হয়েছে। এক ছাদের তলায় থাকলে সংসারে তো ঝগড়া হবেই। তবে ‘দশম অবতার’ করছি শুধু গল্পের জন্যই।
শুধুই গল্প, নাকি ‘২২ শ্রাবণ’ এবং ‘ভিঞ্চি দা’র মতো সফল ছবির ফ্র্যাঞ্চাইজির অংশ হওয়াটাও আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল?
যিশু : না, না, শুধুই গল্প। সফল ফ্র্যাঞ্চাইজি একটা উপরি পাওনা বলতে পারেন। তবে আমি এমন অনেক ছবিতে অভিনয় করেছি যেখানে আমার চরিত্রটা খুবই ছোট অথচ গুরুত্বপূর্ণ। বাংলা, হিন্দি, তেলুগু- সবেতেই এমন বহু ছবি করেছি। আমি শুধু দেখি আমার চরিত্রটা গল্প থেকে বাদ দিয়ে দিলে গল্পটা এগোবে কিনা। এমন অনেক বলিউড বা ওটিটি সিরিজ আমি ছেড়ে দিয়েছি যেখানে চরিত্রের গুরুত্ব ছিল না। এমনকি তেলুগুতেও এমন দুটি ছবি ছেড়েছি, যেখানে খুব বড় বড় অভিনেতা ছিলেন। কিন্তু করিনি। কারণ আমার কিছু দেয়ার ছিল না চরিত্রটায়। আবার এমন ছবিও করেছি, যেখানে আমার হয়তো শুধু দুটি দৃশ্য। কিন্তু সেই দুটি দৃশ্য বাদ দিলে ছবির গল্প দাঁড়াবে না। ‘দশম অবতার’-এ যেমন নায়ক-নায়িকা কিন্তু বুম্বাদা আর অনির্বাণ। আমার চরিত্রটা সেই তুলনায় ছোট। কিন্তু সেটা বাদ দিয়ে দিলে ছবিটাই হবে না।
‘সীতা রামণ’ বাছার সময়ও কি এমন ভাবনা ছিল?
যিশু : ওই ছবিটা করেছিলাম অনুরোধে। তেলুগু সিনেমায় আমার প্রথম পরিচালক কৃষ। আমার খুবই কাছের বন্ধু এখন। ‘সীতা রামণ’-এর প্রযোজক ওর বন্ধু ছিল। আর জানি না কেন, এই চরিত্রের জন্য ওরা আমাকেই চেয়েছিলেন। আমার ডেটের জন্য তিন মাস অপেক্ষা করেছিলেন তারা! অতিথি শিল্পী হিসেবে অভিনয় করি। পাঁচ দিনের মতো কাজ ছিল। আমার অংশটা সহজেই হায়দরাবাদে শুট করতে পারতেন ওরা। কিন্তু জানি না কেন, পুরোটাই রাশিয়াতে করলেন! দুদিন আমার প্যাচ শুট ছিল। সেটা হায়দরাবাদেই করেছি। কিন্তু চার দিনের সব ইনডোর শট রাশিয়ায় করলাম! তেলুগু ইন্ডাস্ট্রি আমায় ভালো অভিনেতা হিসেবে সেই সম্মানটা দেয়। আমি যে প্রযোজকের সঙ্গে এখন তিন নম্বর ছবি করছি, তারও একটা ছবিতে আমি অতিথি শিল্পী হিসেবে কাজ করেছি। কারণ তিনি নাছোড়বান্দা ছিলেন। বলেছিলেন, আমি নাকি তাদের ‘লাকি চার্ম’! এই ভালোবাসাটা পাই বলেই অনেক ছবি করি।
বাংলা ছবির ক্ষেত্রেও কি অনুরোধে কাজ করেন?
যিশু : এখানে তো আমায় সেভাবে কেউ অনুরোধ করেন না! তবে আমি এখানেও কিছু কিছু করেছি। ‘কিশমিশ’ করেছিলাম। আরো একজনের নায়কের ছবিতে সামনের বছর করব। কথা হয়ে গিয়েছে।
নিজেকে সিরিয়াল কিলারের চরিত্রে দেখবেন, কোনোদিন ভেবেছিলেন?
যিশু : আমি কোনো কিছু নিয়েই খুব একটা প্রত্যাশা রাখি না। আমি কোনো ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করব সেটাও ভাবিনি। সেটা প্রথম ‘রাজকাহিনী’তে আমায় সৃজিতই করায়। এই মুহূর্তে আমি যে তিনটি ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছি, বিশেষ করে তেলুগু সিনেমায় আমি যতগুলো চরিত্র করেছি, তার বেশির ভাগই খলচরিত্র। এখন অবশ্য একটা ছবির শুটিং চলছে, সেখানে আমার চরিত্রটা প্যারালাল হিরোর বলতে পারেন। তবে যেটা পূজায় ‘দশম অবতার’-এর সঙ্গেই মুক্তি পাচ্ছে, মানে ‘টাইগার নাগেশ্বর রাও’, সেটায় তো আমিই মুখ্য খলচরিত্র। আমি কিন্তু কোনো দিন ভাবিনি যে আমায় নায়ক হতে হবে বা ভিলেন হতে হবে। এসব নিয়ে চিন্তাভাবনাই করিনি। আমি একটা করে চিত্রনাট্য পড়ি আর সে অনুযায়ী কাজ করি।
অনেক দিন পর্যন্ত একটা ধারণা ছিল, ‘যিশুকে বড্ড ভালো দেখতে। শয়তানের রোলে মানাবে না’। কিন্তু এ বছর ‘দ্য ট্রায়াল’, ‘টাইগার নাগেশ্বর রাও’, ‘দশম অবতার’- সবেই আপনার ধূসর চরিত্র। সচেতনভাবেই কি নিজেকে অভিনেতা হিসেবে অন্যভাবে গড়ছেন?
যিশু : পর পর ছবিগুলো এভাবে মুক্তি পাচ্ছে বলে এ কথা মনে হতে পারে। আমি কিন্তু আগেও একটা সিরিয়াল কিলারের চরিত্রে অভিনয় করেছি। ছবিটা এখনো মুক্তি পায়নি। তবে সচেতনভাবে শুধুই ভিলেনের চরিত্র করব বলে কখনো ছবি বাছাই করি না। চিত্রনাট্য পড়ে যদি মনে হয়, আমার কিছু দেয়ার আছে, তাহলে করি। যেমন ‘পালান’ খুব মিষ্টি একটা ছবি। সেখানে আমার চরিত্রটা নেহাতই ভালো মানুষ। অবশ্যই ছবিটা মৃণাল সেনকে উৎসর্গ করা বলে আরো করতে চেয়েছিলাম। যেমন গত বছর সৌমিত্রজেঠুর (চট্টোপাধ্যায়) জন্য ‘অভিযান’ করেছিলাম। তবে কোনো দিনও কিন্তু ভাবিনি যে, এ ধরনের চরিত্রগুলো আমায় করে যেতে হবে।
কী কী ছবি করছেন, তা নিয়ে আগে না হয় ভাবতেন না। এখন তো তিন-তিনটি ইন্ডাস্ট্রিতে চুটিয়ে কাজ করছেন। এখনো পরিকল্পনা ছাড়াই এগোন?
যিশু : অ্যাবসোলিউটলি। আমি কখনো নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করি না। আসলে অভিনেতারা শুধু শুধু পরিকল্পনা করে কী করবে? সে রকম স্ক্রিপ্টও তো আসতে হবে। না হলে আবার প্রযোজক হয়ে যেতে হয়! আর আমার অত পয়সা নেই যে নিজে প্রযোজনা করে নিজের মতো ছবি করব। আর করলেই যে সে ছবিগুলো চলবে, তা-ই বা কে বলতে পারে! তাই এসব নিয়ে কোনো রকম পরিকল্পনা করি না। আমি দিনের শেষে অভিনেতা হতে চাই। সেই অভিনেতা নায়কও হতে পারে, তারকাও হতে পারে। কিন্তু অভিনেতা হওয়াটাই সবচেয়ে জরুরি। আর অভিনেতা হিসেবে আমার এখনো অনেক কিছু শেখা বাকি।
বাংলায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বলিউডে পাড়ি দিয়েছেন। বলিউডে ‘মণিকর্ণিকা’র মতো বড় ছবি করার পর তেলুগু সিনেমায় চেষ্টা করেছেন। বারবার নিজের কমফর্ট জোন ছাড়তে ভয় লাগে না?
যিশু : সেই ২০০১-২০০২ সালে শ্যাম বেনেগালের ‘নেতাজি দ্য ফরগটেন হিরো’ দিয়ে বলিউডে যাওয়া। ওখানে বাঙালি পরিচালকরা সবাই আমায় চিনতেন বলে পর পর ‘বরফি’, ‘মর্দানি’, ‘পিকু’র মতো ছবি করেছি। ‘মণিকর্ণিকা’ করার পর মনে হলো অন্য ইন্ডাস্ট্রিতে চেষ্টা করে দেখি। সত্যি বলছি, এমন কিছু ভেবে করিনি। ভাষা নিয়ে একটু ভয়ে ছিলাম। কিন্তু কৃষ আমায় অনেকটা গাইড করেছিল। পরে চিরঞ্জীবী স্যার আমায় শেখান, কী করে করে ভাষা না জানলেও সংলাপ বলতে হয়। সিনেমার কোনো ভাষা হয় না, আরো একবার মনে করিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তবে ওখানে গিয়েও কিন্তু আমায় যথেষ্ট স্ট্রাগল করতে হয়েছে।
অসুবিধা হয়নি?
যিশু : একদমই না। ওখানে থাকার জায়গা ছিল। কারণ নীলাঞ্জনার একটা ফ্ল্যাট ছিল ওখানে। এখন অবশ্য আমি পাশের ফ্ল্যাটটা কিনে নিয়েছি। তাই বড় ফ্ল্যাট হয়েছে আমাদের। গাড়ি হয়েছে এখন। কিন্তু প্রথম প্রথম আমি কিন্তু উবার করেই মিটিং করতে যেতাম। এমনকি অটো করেও গিয়েছি। কলকাতায় তখন আমার বাড়িতে তিনটি গাড়ি। এ দিকে ওখানে আমি অটো করে ঘুরছি! আমার কখনো মনে হয়নি, একটা গাড়ি ভাড়া করে নিই। ধীরে ধীরে ওখানেও আমি একটা সেটআপ তৈরি করেছি।
অভিনেতা হিসেবে এখন তা হলে আপনি তৃপ্ত?
যিশু : না বাবা, যে দিন সেটা বলতে পারব, সে দিনই আমার ক্যারিয়ার শেষ।
পূজার কী পরিকল্পনা?
যিশু : পূজায় একসঙ্গে আমার দুটি ছবি। ‘টাইগার নাগেশ্বর রাও’ও একই দিনে মুক্তি পাচ্ছে। রবি তেজা সাধারণত একটু বড় মাপের ছবিই করেন। কিন্তু এই ছবিটা যেন আগেরগুলোও ছাপিয়ে গিয়েছে। আমার আরো একটা হিন্দি ছবিও মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওটা একটু পিছিয়েছে। না হলে আরো ব্যস্ততা থাকত। এমনিতে কলকাতাতেই থাকব। পুরনো পাড়ায় পূজা হয়। ইচ্ছা আছে দুদিন থেকে কয়েক দিনের জন্য গোটা পরিবার মিলে বেড়াতে যাওয়ার।

:: মেলা ডেস্ক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়