উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গুলিতে ২ জন নিহত

আগের সংবাদ

সতর্ক থেকেই ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগ

পরের সংবাদ

সোহানের প্রয়াণে তারকাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরার একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ঢালিউডের জনপ্রিয় নির্মাতা
সোহানুর রহমান সোহান। সোহানুর রহমানের মৃত্যুতে শোবিজে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারকারা স্মরণ করছেন তার সঙ্গের নানান স্মৃতি। তারকারা জানিয়েছেন, সোহানুর রহমান সোহানের সঙ্গে সম্পর্ক ও তার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা

ঘুমের মধ্যেই চলে গেল আমার প্রিয় মানুষটি
ইলিয়াস কাঞ্চন

সোহান ও আমার ক্যারিয়ার শুরু একসঙ্গে। একই বছর, ১৯৭৭ সালে আমি অভিনয় শুরু করি, আর সোহান কাজ শুরু করে শিবলী সাদিকের সঙ্গে। তার প্রথম সিনেমাতেও আমি অভিনয় করেছি। আমার নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনেও সে আমার পাশে ছিল সব সময়। নিরাপদ সড়ক চাই-এর কার্যকরী পরিষদের সদস্যও ছিল সে। সব মিলিয়ে আমার জীবনের একটা বড় অংশ ছিল সোহান। সেদিন এফডিসির কমপ্লেক্স উদ্বোধনের দিন তার সঙ্গে আমার শেষ দেখা। বরাবরই যা হয়, দেখা হলেই দোয়া চায়, এবারো চেয়েছে। বুঝতে পারিনি জীবনের শেষ দোয়া চেয়ে নিল সে। ভালো মানুষ ছিলেন বলেই হয়তো আল্লাহ তাকে শান্তির মৃত্যু দিয়েছেন। ঘুমের মধ্যেই চলে গেল আমার প্রিয় মানুষটি। তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।

আমার শাকিব খান নামটি সোহান ভাইয়ের দেয়া
শাকিব খান

আমার এই শাকিব খান নামটি সোহান ভাইয়েরই দেয়া। সত্যি কথা বলতে, তার সম্পর্কে কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। এই তো কয়েক দিন আগেও সোহান ভাইয়ের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা হচ্ছিল। তিনি বলছিলেন, অসুস্থ। উন্নত চিকিৎসা নিতে জাপান যাবেন। কিন্তু আজ সন্ধ্যায় হঠাৎ করে খবরটি পেয়ে আঁতকে উঠলাম। জানলাম, ভাবির মৃত্যুর একদিন পরই সোহান ভাইও পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছেন। আহারে জীবন। ভাবি ও সোহান ভাইকে মহান আল্লাহ পরপারে শান্তিতে রাখুন। এটাই কামনা করছি।
সোহান ভাই তো আমার জীবনের অংশ
মৌসুমী

সোহান ভাই তো আমার জীবনের অংশ। তার ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমা দিয়েই আমি চলচ্চিত্র জগতে এসেছি। তার যত সৃষ্টি, যত সিনেমা, যত ভালো কাজ সব স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে। তিনি অনেক দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। তার ট্রিটমেন্ট হওয়ার কথা ছিল। খুব কষ্ট লাগছে, তিনি ট্রিটমেন্টটা নিতে পারলেন না। তার আগেই চলে গেলেন। অনেক দোয়া করি সোহান ভাই, আল্লাহ যেন আপনাকে ভালো রাখেন।

তার সঙ্গে তো আমার
পিতা-পুত্রের সম্পর্ক
ওমর সানি

এমন মৃত্যুর সংবাদ থমকে দেয় সবাইকে। স্ত্রী চলে যাওয়ার একদিন পরেই চলে গেলেন গুণী নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান। কী বেদনাদায়ক ঘটনা। তার সঙ্গে তো আমার পিতা-পুত্রের সম্পর্ক। মান-অভিমানও ছিল আমাদের মাঝে। আমি মনে করি, তিনি মৌসুমীকে সিনেমায় এনেছিলেন বলেই আজ তাকে আমি জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছি। মৌসুমীর কাছেও তো তিনি পিতার সমান। আমি নিজেও তার সিনেমায় অভিনয় করেছি। তার মতো জ্ঞানী আর গুণী নির্মাতা দেশের সম্পদ। দোয়া করি আল্লাহ তাকে ভালো রাখুন।

বাংলা চলচ্চিত্রে অমর হয়ে থাকবেন
অপু বিশ্বাস

সোহান ভাইয়ের মৃত্যুর সংবাদটা শোনার পর বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। তার স্ত্রী মারা গেছেন। ভেবেছিলাম, সেই খবরটাই মনে হয় ছড়িয়েছে। যখন শুনলাম সত্যি তিনি আর নেই, তখন আমার মধ্যে একটা শূন্যতা কাজ করছিল। ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না এটা কত কষ্টের। আমার সৌভাগ্য হয়েছে তার মতো গুণী নির্মাতার সঙ্গে কাজ করার। সোহান ভাইয়ের সঙ্গে প্রথম কাজ করেছি ‘কথা দাও সাথী হবে’ সিনেমায়। তার সঙ্গে আমার খুব মিষ্টি মধুর সম্পর্ক ছিল। আমার মনে আছে কথা দাও সাথী হবে সিনেমার শুটিং হওয়ার কথা ছিল গুলশানে। ব্যস্ত এলাকা হওয়ার কারণে আমি শুটিং করতে রাজি হচ্ছিলাম না। তখন ওনার সঙ্গে আমার চুক্তি হয়েছিল প্রতিটি শটের পর আমাকে কিটক্যাট চকলেট দিতে হবে। পরে তিনি পকেটে ২০টির মতো চকলেট রেখে দিয়েছিলেন। সব চকলেট নেয়ার জন্য অল্প করে শট দিচ্ছিলাম। এ কারণে পরে আমি তাকে সরি বলেছিলাম। তিনি হেসে দিয়ে বললেন, ‘আরে পাগল তুমি তো আমার মেয়ের মতো। আমি জানতাম, তুমি সব চকলেট খাবে। এ জন্য আমিও অল্প করে শট নেয়ার পর ওকে ওকে বলছিলাম। যাতে তুমি সব নিতে পার।’ আরো কত কথা যে আছে তাকে নিয়ে। এই মুহূর্তে একটি কথা খুব মনে পড়ছে। একবার চ্যানেল আইতে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন সোহান ভাই। সেখানে তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আপনার হাত ধরে অনেক জনপ্রিয় শিল্পী তৈরি হয়েছেন। বিশেষ এ দিনে এখানে আরেকজন অতিথি থাকলে আপনার পাশে কোন শিল্পীকে রাখতে চান। তিনি বলেছিলেন, আমি অপু বিশ্বাসকে আমার পাশে দেখতে চাইতাম। এটা আমার জীবনের অন্যতম বড় কমপ্লিমেন্ট। তার কাছ থেকে এ রকম মন্তব্য শোনা সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। এছাড়া আমার প্রযোজিত প্রথম সিনেমা লাল শাড়ির প্রিমিয়ারে তিনি উপস্থিত ছিলেন। তাকে কাছে পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছিল। সোহান ভাই বাংলা চলচ্চিত্রে অমর হয়ে থাকবেন। একটাই চাওয়া, তিনি যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক। তার পরিবার যেন এই কঠিন সময়ে শক্ত থাকতে পারে।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরেই স্নায়বিক সমস্যায় ভুগছিলেন সোহানুর রহমান সোহান। টাঙ্গাইলে স্ত্রীর দাফন শেষে উত্তরার বাসভবনে ফিরে আসেন তিনি। গত বুধবার দুপুরে ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে সন্ধ্যা নাগাদ তার সাড়া মিলছিল না। এ অবস্থায় তাকে দ্রুত উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মঙ্গলবার রাতেই মারা গেছেন সোহানের স্ত্রী প্রিয়া। স্ত্রীর মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই তিনিও চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
সোহানুর রহমান সোহান ক্যারিয়ার শুরু করেন নির্মাতা শিবলী সাদিকের সহকারী পরিচালক হিসেবে। নির্মাতা হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ ১৯৮৮ সালে ‘বিশ্বাস অবিশ্বাস’ সিনেমা দিয়ে। ১৯৯৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমা দিয়ে নির্মাতা হিসেবে জনপ্রিয়তা পান তিনি। সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত আলোচিত সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘আমার দেশ আমার প্রেম’, ‘স্বজন’, ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’, ‘অনন্ত ভালোবাসা’, ‘স্বামী ছিনতাই’, ‘আমার জান আমার প্রাণ’, ‘পরান যায় জ্বলিয়া রে’ ইত্যাদি।

:: মেলা প্রতিবেদক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়