ফেসবুকে প্রেম করে ধর্ষণের মামলায় যুবকের যাবজ্জীবন

আগের সংবাদ

দাম নির্ধারণের তোয়াক্কা নেই : সরকারের বেঁধে দেয়া দামে বিক্রি হচ্ছে না তিন পণ্য. ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানে জরিমানা

পরের সংবাদ

ছড়াকার আবদুল হামিদ মাহবুব ও তাকে নিয়ে মনুস্বর সংখ্যা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সিলেট-মৌলভীবাজার অঞ্চলে আমার একমাত্র ঘনিষ্ঠ বন্ধু জয়নাল আবেদীন শিবু। তিনি একাধারে কবি, প্রাবন্ধিক ও গবেষক। ‘জলমাটির প্রেম’ ও ‘ফসলরমণীর প্রেম’ নামে তার দুটি কবিতাগ্রন্থসহ অনেকগুলো গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া এনসাইক্লোপিডিয়া অব বাংলাদেশ ওয়ার অব লিবারেশন প্রজেক্ট, এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশে তিনি মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ও তথ্যসংগ্রাহক হিসেবে অনেক বছর কাজ করেছেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. হারুন অর রশীদের সম্পাদনায় এশিয়াটিক সোসাইটি প্রকাশিত ১০ খণ্ডের ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ’-এ তার অনেক ভূক্তি প্রকাশিত হয়েছে। তার এসব গুরুত্বপূর্ণ কাজের কারণে তার প্রতি আমার আন্তরিক শ্রদ্ধাবোধও অধিক।
শিবুর বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার তারাপাশা গ্রামে। ২০০৯ সালে শিবুর আমন্ত্রণে চট্টগ্রাম থেকে তার বাড়িতে গেলে সেখানে তাকে প্রথম দেখি। এর আগে লেখালেখি সংক্রান্ত বিষয়ে তার সঙ্গে ফোনেই পরিচয় ছিল।
শিবুর বাড়িতে কয়েকদিন ছিলাম। এ সময় শিবু মৌলভীবাজার অঞ্চলের অনেক কবি-সাহিত্যিকের সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে আকমল হোসেন নিপু, মুজাহিদ আহমদ, আবদুল হামিদ মাহবুব, শহীদ সাগ্নিক, লতিফা নিলুফার পাপড়ির কথা মনে পড়ে।
আবদুল হামিদ মাহবুবের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর তার সঙ্গে কথা বলে, তার লেখালেখি সম্পর্কে জেনে আমার মনে হয়েছিল, সত্যিকারের একজন গুণী ছড়াকার-শিশুসাহিত্যিক ও ভালো মানুষের সঙ্গে পরিচিত হলাম। তিনি তার রচিত কয়েকটা বই আমাকে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে সেগুলো পাঠ করে আমার মনে হয়েছিল, আমাদের চট্টগ্রামে যেমন একজন সুকুমার বড়ুয়া আছেন, তেমনি সিলেট-মৌলভীবাজার অঞ্চলে রয়েছেন একজন আবদুল হামিদ মাহবুব।

এরপর থেকে পত্র-পত্রিকায় আবদুল হামিদ মাহবুবের ছড়া পেলেই আমি মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। এখনো পড়ি। তার ছড়া আমাকে এমন মুগ্ধ করে যে, তার প্রতি শ্রদ্ধায় আমার মাথা নত হয়ে আসে। আমাকে মুগ্ধ করা তার কয়েকটি ছড়া :
মায়ের যখন অসুখ হয়
মনে কি আর স্বস্তি রয়?
বৈদ্যি ডাকি ওষুধ আনি
মায়ের মাথায় দিই যে পানি।
আশপাশের সবাই আসে
আমার প্রিয় মায়ের পাশে।
এই মাকে চেনো তুমি?
মা তো আমার জন্মভূমি।
[জন্মভূমি]

আইকম বাইকম
টাকাকড়ি পাই কম
বাজারেতে যাই কম।
আইকম বাইকম
পেটপুরে খাই কম
গান-টান গাই কম।

আইকম বাইকম
সবকিছু পাই কম।
[আইকম বাইকম]

ইল্লি বিল্লি
মুখে পুরে খিল্লি
হেঁটে যায় দিল্লি।

ইল্লি বিল্লি
জোরে দেয় চিল্লি
কেঁপে উঠে দিল্লি।
আবদুল হামিদ মাহবুব সমাজসচেতন ও দেশসচেতন ছড়াকার। সমাজ ও দেশসচেতনতামূলক ছড়া-শিশুসাহিত্য নিয়ে তার প্রকাশিত প্রন্থও অনেক। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়েও তিন আঞ্চলিক পর্যায়ে গবেষণা করেছেন। কিন্তু আজ অব্দি এমন কীর্তিমানের কর্মের মূল্যায়ন জাতীয় পর্যায়ে হয়নি বললেই চলে। আমার তো মনে হয়, তাকে বাংলা একাডেমি পদকে ভূষিত করা দরকার এবং বাংলা একাডেমির মাধ্যমে তার লেখনি সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া দরকার।

দুই.
সিলেট-মৌলভীবাজার অঞ্চল থেকে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ছোটকাগজ প্রকাশিত হয়; যেমন- শব্দপাঠ, কোরাস, লেখাবিল ও মনুস্বর প্রভৃতি। শিবুর আমন্ত্রণে আমি কয়েকটিতে লিখেছিও। সম্প্রতি শিবুর কল্যাণে কাজল রশীদ সম্পাদিত ‘মনুস্বর’ ছড়াকার আবদুল হামিদ মাহবুব সংখ্যা হাতে পেয়েছি। প্রকাশকাল এপ্রিল ২০২৩, সংখ্যা ৯। আবদুল হামিদ মাহবুবকে জানার ও বোঝার জন্য এই সংখ্যাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সম্পাদক কাজল রশীদ সম্পাদকীয় লেখায় ছড়াকার হিসেবে প্রচারবিমুখ আবদুল হামিদ মাহবুবের চিত্র ও অবস্থান চিহ্নিত করেছেন; ‘কোনোরকমের তর্ক-বিতর্ক ব্যতিরেখেই মেনে নেয়া যায়- বাংলা ছড়াসাহিত্যে অভিভাবকজনের উল্লেখযোগ্য একজন আবদুল হামিদ মাহবুব। নিভৃতচারী ও প্রচারবিমুখ হওয়ায় তার চেহারা আর ছড়াকীর্তি একসঙ্গে দুটি বিষয় সকলের চোখে ভেসে না উঠলেও বোদ্ধাদের বড়ো একটি অংশের মিষ্টভাষি ব্যক্তি মাহবুব, ছড়াকার মাহবুব ও তার ছড়া-রাজ্যের সঙ্গে রয়েছে হৃদ্যতা। বাংলা ভাষাভাষি পাঠককুলের হৃদয়ে একটা নিজস্ব গদি তৈরি করে নিয়েছেন বহু আগেই আবদুল হামিদ মাহবুব। তার বর্ণ-শব্দের ম্যাজিক দাগ কেটেছে সব বয়সি পাঠকের মগজ ও মননে’।
এই সংখ্যাটিতে আবদুল হামিদ মাহবুবের রচনা নিয়ে অনেকেই লিখেছেন। তাদের তালিকা : আমীরুল ইসলাম (আবদুল হামিদ মাহবুবের ছড়া), দীপংকর চক্রবর্তী (ছড়ায় জীবনের রূপায়ণ), চন্দনকৃষ্ণ পাল (ছড়াময় জীবনযাপন), মুজাহিদ আহমদ (তাঁর ছড়ার অন্তর্ভুবন), আনোয়ার কামাল (ছড়ার জাদুকর), অবিনাশ আচার্য (অখ্যাত স্টেশনের প্রখ্যাত ফেরিওয়ালা), ফকির ইলিয়াস (ছন্দের আনন্দ, শব্দের অধিকার), দীলতাজ রহমান (স্বভাবজাত একটু সাড়াশব্দ), যাযাবর মিন্টু (প্রিয়জন : প্রতিবাদী ছড়াকার), অপূর্ব শর্মা (ছড়ায় ছন্দে প্রতিবাদ), মোমিন মেহেদী (ভালোবেসে জ্বালা হয় : ভালোবাসার ধারাপাত), আহমদ সিরাজ (ছড়া নিয়ে কথা), তছলিম হোসেন হাওলাদার (আবদুল হামিদ মাহবুব ও তাঁর ছড়া), দীপংকর মোহান্ত (তাঁর ছড়ায় সমাজদর্পণ)।

এছাড়া সিরাজউদ্দিন শিরুল ও আবদুল হামিদ মাহবুবের ছড়ায় কথোপকথন এবং আবদুল হামিদ মাহবুবের একটি সাক্ষাৎকার (সাক্ষাৎকার গ্রহীতা জুননু রাইন) লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। উল্লেখিত লেখকদের বাইরে আরো অনেকেই আবদুল হামিদ মাহবুবের ছড়াকর্ম ও তার সাংবাদিকতাসহ বিভিন্ন দিক নিয়ে লিখেছেন। মনুস্বর সম্পাদক কাজল রশীদ আবদুল হামিদ মাহবুবকে নিয়ে ৩৫২ পৃষ্ঠার বিশাল একটি কাজ করেছেন।
আমি ‘মনুস্বর’-ছড়াকার আবদুল হামিদ মাহবুব সংখ্যা প্রচারিত-প্রসারিত হোক, এই কামনা করি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়