ফেসবুকে প্রেম করে ধর্ষণের মামলায় যুবকের যাবজ্জীবন

আগের সংবাদ

দাম নির্ধারণের তোয়াক্কা নেই : সরকারের বেঁধে দেয়া দামে বিক্রি হচ্ছে না তিন পণ্য. ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানে জরিমানা

পরের সংবাদ

একজন ভীতু মানুষের গল্প

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ভয় একটি স্বাভাবিক ও মনস্তাত্ত্বিক প্রক্রিয়া। জীবনে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণে মানুষ ভয় পেতে পারে। ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টারের বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী ড. ওয়ারেন ম্যানসেল তার একটি বইয়ে উল্লেখ করেছেন, ‘ভয় এক ধরনের অনুভূতি। তবে সাধারণ অনুভূতি নয়, বিশেষ এক ধরনের অনুভূতি যা চোখ বন্ধ করলেই মেরুদণ্ড বেয়ে শির শির করে নিচে নেমে আসে। এই অনুভূতি আমাদের তখনই হয় যখন আমরা ভীতিমূলক কোনো কিছু দেখি বা শুনি অথবা চিন্তা করি’।

দুই.
আমাদের আশপাশে এমন অনেককেই দেখা যায় যারা সামান্য একটা তেলাপোকা দেখে ভয়ে চিৎকার শুরু করে। আবার অনেকে পানিতে নামতে ভয় পায়। অনেকে লিফটে উঠতে ভয় পায়। আবার কেউ কেউ কারো সামনে গেলে ভয়ে পাথরের মতো নিশ্চল হয়ে যায়, কথা বের হয় না। এগুলো এক ধরনের আতঙ্ক যাকে আমরা ফোবিয়া বলি। ফোবিয়া শব্দের অর্থ হলো অমূলক ভয় বা আতঙ্ক। এ অমূলক ভয়েও মানুষের গলা শুকিয়ে যায়, মুখমণ্ডল ফ্যাকাসে হয়ে যায়, হাত-পা কাঁপে, বুক ধরফর করে। অর্থাৎ হৃদপিণ্ডের গতি বেড়ে যায়। তবে অনেকেই এই পরিস্থিতি সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারে আবার অনেকে পারে না। যারা পারে না তারাই ভীতু। যেমন- আমি পারি না। কারণ আমি ভীতু। ছোটবেলা থেকেই লাজুক এবং ভীতু প্রকৃতির। তবে ভীতু হলেও নীতিবান। ভেতরে একটা জেদ কাজ করে। এছাড়া আমার তেমন কোনো চাহিদাও নেই। অর্থাৎ অল্পতে বাঁচা একজন মানুষ। অল্পতেই তুষ্ট থাকি। তবে আমার নিজস্ব কিছু মূল্যবোধ আছে যেখানে আমি অটল থাকি।

তিন.
লাজুক প্রকৃতির বলেই হয়তো আমার মধ্যে সবসময় একটা সংকোচবোধ কাজ করে। তাইতো কোথাও সাবলীল হতে পারি না। স্কুল-কলেজে বরাবরই ছিলাম বেক বেঞ্চার। কোনো অপরিচিত লোকের সঙ্গে কথা বলতে গেলেও কেমন যেন নার্ভাস ফিল করতাম। মনে হতো সবকিছু গুলিয়ে ফেলছি। এটা শুধু ছোটবেলাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বড়বেলাতেও সেই ভীতিটা কাজ করে। নার্ভাসনেস এখনো আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। কোনো অনুষ্ঠানে গেলে এখনো পেছনে বসতেই স্বস্তিবোধ করি। সামনে বসার জায়গা থাকলেও বসিনা যে কে কি ভাবে। আবার অনেক সময় স্টেজে উঠে কথা বলতে গিয়ে গুছিয়ে কথা বলতে পারি না, খৈ হারিয়ে ফেলি। কি কথার পর কি কথা বলব তাও খুঁজে পাই না। সব যেন কেমন এলোমেলো হয়ে যায়। অথচ অন্যরা কত সুন্দর গড় গড় করে কথা বলেন।

চার.
আসলে সুন্দর করে কথা বলা একটা আর্ট। স্মার্টনেসের প্রথম শর্ত এটি। অনকেই আছেন যারা কথা বলার জন্য মুখিয়ে থাকেন। সুযোগ পেলেই গড় গড় করে অনর্গল কথা বলেন। কথা বলাতেই যেন তাদের আনন্দ। আমি মোটেও বাকপটু নই। কথা বলতে গেলে রাজ্যের জড়তা আমাকে পেয়ে বসে। অন্যরা যখন কথা বলে আমি শুধু মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি এবং মুগ্ধ হয়ে শুনি। তাছাড়া কথার পিঠে কথা আমার আসে না। তাইতো মাঝে মাঝে নিজেকে প্রশ্ন করি, কেন আমার এত সংকোচ, কেন এত ভীতি, কেন আমি অন্যদের মতো হতে পারি না, কেন আমি সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে পারি না? জানি এ প্রশ্নগুলোর কোনো জবাব নেই। সান্ত¡না ভেবে মনে করি এগুলো জীবনেরই একটা অংশ। হুমায়ূন আহমেদ বোধ করি তার উপলব্ধি থেকে এজন্যই বলেছেন, জীবনে কিছু কিছু প্রশ্ন থাকে যার কখনো উত্তর মেলে না। কিছু কিছু ভুল থাকে যা শোধরানো যায় না, কিছু কিছু কষ্ট থাকে যা আর কাউকে বলা যায় না।
পাঁচ.
ভয় নামক অনুভূতিটির সঙ্গে আমাদের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের পরিচিতি ঘটে। কারো থাকে উড়োজাহাজভীতি, কারো থাকে সাগরভীতি, আবার কারো থাকে উঁচু জায়গা বা পাহাড়ে উঠার ভীতি, কারো আবার পানিতে ভীতি। আমার কিন্তু এর সবটিতেই ভীতি। তাইতো কোনো কিছুতেই নিজেকে মেলে ধরতে পারি না। আমি বুঝি এটা আমার একটা ত্রæটি। এটাও বুঝি যে প্রতিটি মানুষের মধ্যেই কম বেশি ত্রæটি আছে। কেউই শতভাগ পারফেক্ট নয়। তারপরও কেন যেন নিজের মধ্যে গুটিয়ে থাকতেই ভালো লাগে।

ছয়.
লজ্জা এবং সংকোচ বোধ আমার নিত্যসঙ্গী। তাই তো কোনো মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কও গড়ে তুলতে পারিনি। কোনো পছন্দসই মেয়ের সামনে গেলেই গলা শুকিয়ে আসত। হাত-পা আড়ষ্ট হয়ে যেত। কিন্তু এটাও বুঝতাম যে, ভালোবাসার একটা শাশ্বত রূপ আছে যা মানুষকে সজীব ও সতেজ থাকতে অনুপ্রেরণা জোগায়। কিন্তু কেন যেন আমার হয়ে ওঠেনি। আর হয়তো হয়ে উঠবেও না। নিয়তি আসলে সবকিছু নির্ধারিত করে রাখে। আর এজন্যই পারস্যের কবি শেখ সাদি বলেছেন, ‘মানুষের জীবন এক অনিশ্চিত ভ্রমণ, সবসময় সবকিছু সে পায় না’।

সাত.
আমি আসলে অন্যদের থেকে কিছুটা পিছিয়ে পড়া মানুষ। তবে নিজের কথা লিখি অকপটে। লজ্জিত হই না। নিজের অনুভূতির কথা লিখতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। ফেসবুকসহ বিভিন্ন ফোরামের কল্যাণে এখন আমার অনেক বন্ধু যাদেরকে আমি আপনজন মনে করি। আমার ভাবনাগুলো, কষ্টগুলো তাদের সঙ্গে শেয়ার করি। এতে কিছুটা হলেও নিজেকে হালকা বোধ করি। সময় সুযোগ পেলেই ফেসবুকে চোখ রাখি। বন্ধুদের স্ট্যাটাস পড়ি। লাইক দেই। মন্তব্য করি। তবে কাউকে আঘাত দেয়ার জন্য কখনো কিছু লিখি না।

আট.
আমি আমার শৈশব-কৈশোর তারুণ্যের কথা কখনো ভুলি না। সেসব আমাকে বেশ তাড়িয়ে বেড়ায়। আবেগমথিত করে। যখন মনে কষ্ট হয় অতীতের স্মৃতিগুলো হাতড়ে বেড়াই। মন ভালো হয়ে যায়। আসলে মন এক রহস্যময় জিনিস। ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না, বোঝা যায় না। মন এই মুহূর্তে এখানে পরক্ষণেই ছুটে যায় অন্য কোথাও। তবে এ কথা সত্যি যে কারো মন কারোর মতো নয়।

নয়.
মানুষের জীবন বড়ই অদ্ভুত। ভাবনাগুলো আরো অদ্ভুত, ছন্নছাড়া জটিল। প্রত্যাশা-প্রাপ্তির বিষয়গুলোও বেশ জটিল। কার জীবনে কখন কী ঘটবে তা একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কেউ বলতে পারে না। যোগ্যতা, সামর্থ্য ও পারিপার্শ্বিকতা থাকলেও সবসময় মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয় না। অর্থাৎ চেষ্টা করলেও সবসময় সবকিছু অর্জন করতে পারে না। তারপরও চেষ্টা করতে হয়, সব গøানিকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যেতে হয়। তবেই তো মিলে জীবনের সার্থকতা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়