সাদিকুর রহমান সাকিব

পপ কালচার বলি, আর ফ্যাশন- মাইকেল জ্যাকসন একাই একশ।
তিনি পরিচিত ছিলেন তার ব্যতিক্রমী ও আলোচিত ইউনিসেক্স পোশাক ও সাজের জন্য। আশির দশকে ফ্যাশনে এক নতুন অধ্যায়ের সূত্রপাত করেন এই সংগীত শিল্পী। গত ২৯ আগস্ট ছিল মাইকেল জ্যাকসনের জন্মদিন। মাথায় নিজস্ব স্টাইলের টুপি, ছিপছিপে শরীরের সঙ্গে মিশে যাওয়া বডি হাগিং লেদার ট্রাউজার্স, পায়ে সাদা মোজা, বুক খোলা শার্ট, আইকনিক জ্যাকেট, গøাভস আর ডিজাইন বৈচিত্র্যের জুতায় নিজেকে বহিঃপ্রকাশ করা একজন কালোত্তীর্ণ ফ্যাশন আইকন হিসেবও তিনি চিরস্মরণীয়।

একঘেয়েমিতে ভর করা সত্তরের পপ ফ্যাশনকে ভাসিয়ে দিয়ে মাইকেল একাই ফ্যাশনে বিপ্লব নিয়ে আসেন।
তিনি বেশি পরেছেন স্লিম ফিটিং শর্ট প্যান্ট, কখনো সাদা বা গিøটার দেয়া মোজা আর পোশাকের অনেক জায়গায় থাকত চোখধাঁধানো ঝলমলে সিকুইনের নিরীক্ষাধর্মী কাজ। ফ্যাশন তাকে অনুসরণ করত, তিনি ফ্যাশনকে না। স্টেজে প্রতিটি গানের শেষেই তংার পোশাক পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত থাকতেন দক্ষ কর্মীরা। মূলত: মাইকেলের উত্থান শুরু হয় ১৯৬৪ সালে একজন শিশুশিল্পী হিসেবে, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গঠিত ‘জ্যাকসন ফাইভ’ ব্যান্ড নিয়ে। তখন বয়স সবেমাত্র সাত বছর। পরবর্তী সময়ে এই ব্যান্ডের গানগুলো সারা বিশ্বে অনেক সাড়া ফেলে।
এখনকার সময়ে, বড় বড় ফ্যাশন ব্র্যান্ড যেমন, ভোগ, দিওর, গিভেঞ্চি, লুই ভিতোঁ মাইকেল জ্যাকসনের স্টাইলকে এক নতুন ধারায় নিয়ে গেছে। তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন ফ্যাশন উইক ও শোতেও।

থ্রিলার জ্যাকেট
ক্যান্ডি-অ্যাপল শেডের লালের সঙ্গে কালো স্ট্রাইপ যুক্ত জ্যাকেটটি মাইকেল প্রথম পরেন ১৯৮৩ সালে, ‘থ্রিলার’ গানটিতে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক লাইফস্টাইল ম্যাগাজিন রোলিং স্টোনের প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা যায়, এই জ্যাকেটটি এতটাই জনপ্রিয়তা লাভ করে যে পরবর্তী সময়ে ১.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে নিলামে বিক্রি হয় তা।
তা ছাড়া ‘বিট ইট’ গানটিতেও তার প্রিয় লাল রঙের লেদার জ্যাকেটটিও সেই সময়ে অনেক জনপ্রিয়তা পায়।
মিলিটারি জ্যাকেট
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত স্টেজ পারফরম্যান্সে প্রায়ই মিলিটারি স্টাইলের জ্যাকেট পরতে দেখা যেত মাইকেল জ্যাকসনকে। সামরিক বাহিনী ও তাদের পোশাকের প্রতি আগ্রহ আর ভালোবাসা থেকেই তা পরতেন তিনি। সাথে থাকতো সানগøাসও।

স্ট্র্যাপ বাকল জ্যাকেট
লেদারের কালো মটো লুকের জ্যাকেটটিতে রয়েছে অসংখ্য জিপার ও স্ট্র্যাপ বাকল। এর সঙ্গে বটমে কালো স্কিনটাইট জিনস আর চোখে আইলাইনার তার একটা আইকনিক লুক।

সাদা গøাভস
মাইকেল জ্যাকসন প্রথম সাদা সিকুইন দেয়া গøাভসটি পরেছিলেন ১৯৮৩ সালে, একটি টিভি শোতে। বিখ্যাত ‘বিলি জিন’ গানটি প্রথমবারের মতো উপস্থাপন করেন সেখানে তিনি। এ সময় তিনি কালো লেদার প্যান্টের সঙ্গে কালো সিকুইনসজ্জিত জ্যাকেট পরেছিলেন। এর সঙ্গে ডান হাতে পরেছিলেন সাদা সিকুইনের গøাভস। এই গøাভসটি তখন যথেষ্ট সাড়া ফেলে দিয়েছিল ফ্যাশন জগতে।

সাদা-কালো স্যুট
‘ব্লাক অ্যান্ড হোয়াইট’ গানে সাদা কালো রঙের স্যুট পরে বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়েছিলেন মাইকেল জ্যাকসন। বলা যায়, পপসম্রাটের আরেকটি বিখ্যাত আউটফিট এই সাদা-কালো রঙের স্যুট। কখনো সাদা শার্ট, টিশার্টের সঙ্গে কালো স্লিম শর্ট প্যান্ট। আবার কখনো কালো শার্টের সঙ্গে সাদা টিশার্ট আর পায়ে কালো লোফারের সঙ্গে সাদা মোজা।

আর্মব্যান্ড
মাইকেল জ্যাকসনকে ডান বাহুতে স্যুট বা শার্টের সঙ্গে সাদা, কালো বা লাল রঙের আর্মব্যান্ড পরতে দেখা যেত। পরবর্তী সময়ে তার এই স্টাইল ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক আলোড়ন সৃষ্টি করে। মাইকেলের মতে, তার এই আর্মব্যান্ডটি মূলত সারা বিশ্বের শিশুদের কষ্টের প্রতীক।

ফিডোরা হ্যাট
স্টেজের বাইরে যেমন যেকোনো পার্টি কিংবা শপিং মলেও দেখা তাকে সাধারণত সাদা ও কালো রঙের ফিডোরা হ্যাটে দেখা যেতো। পরবর্তী সময়ে এটা তার আইকনিক স্টাইলে পরিণত হয়েছিল। যদিও ফিডোরা হ্যাট স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে অনেকেই ব্যবহার করে আসছেন। মাইকেল জ্যাকসনের ফ্যাশনের প্রভাব এতটাই বিস্তৃত ছিল যে তখনকার হলিউড, বলিউড তারকারাও বিভিন্ন সময়ে তার স্টাইল ধারণ করতে চেষ্টা করেছিলেন। শুধু তখন নয়, এখনো তার আউটফিট আর স্টাইল অনেককেই প্রভাবিত করে।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ জুন, ক্যালিফোর্নিয়া শহরে মৃত্যুবরণ করেন এই পপস্টার। তিনি এমনই একজন ব্যক্তিত্ব, যিনি সবার মনের একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছেন এখনও। বর্তমান প্রজন্মের মধ্যেও বেঁচে রয়েছেন অনুপ্রেরণা হয়ে। বর্তমান সময়ের অনেক সফল তারকা মাইকেলের স্টাইল থেকে অনুপ্রাণিত হন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য লেডি গাগা, জাস্টিন টিম্বারলেক, জাস্টিন বিবার, ফেরেল উইলিয়াম, রিয়ানা, ঋত্বিক রোশন, শহীদ কাপুর, ম্যাডোনা, বিয়ন্সে, কানিয়ে ওয়েস্ট, জায়ান মালিকসহ অনেকেই আছেন।

সূত্র : হাইসনোবেটি, ভোগ, হালফ্যাশন