‘নারীরা জায়েদ খানে আটকায়’ বলায় লিগ্যাল নোটিস

আগের সংবাদ

পিতার সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা : টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে কন্যা হাসিনা-রেহানা

পরের সংবাদ

সংবাদপত্রে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট

প্রকাশিত: আগস্ট ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের সংবাদপত্রে পঁচাত্তরের আগস্ট মাসটি ভিন্নভাবে উপস্থাপিত হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হন। তার শাহাদতবরণের পরের দিন ১৬ আগস্ট ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক বাংলা, দৈনিক ইত্তেফাক, দি বাংলাদেশ অবজারভার, দি বাংলাদেশ টাইমস প্রভৃতি পত্রিকা ১৫ আগস্ট মোশতাকের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের ঘটনাকে গুরুত্ব দিয়ে ফলাও করে খবর ছাপায়। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডকে লিড নিউজ করে সেদিন কেউ সংবাদ পরিবেশন করেনি; নিহতের সংখ্যা কত তাও প্রকাশ করা হয়নি। ১ থেকে ১৫ এবং ১৫ থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সংবাদ প্রকাশের সেই ভিন্ন আচরণের কিছু নমুনা এখানে তুলে ধরা হলো।
‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি বর্জন করে ১৬ আগস্ট দৈনিক বাংলার শিরোনাম ছিল ‘শেখ মুজিব নিহত : সামরিক আইন ও সান্ধ্য আইন জারি।’ সশস্ত্র বাহিনীগুলোর আনুগত্য প্রকাশ। এর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির বেতার ভাষণ ছাপা হয়। বিভিন্ন স্তরের জনসাধারণের অভিনন্দন বলতে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সহসভাপতি, বাংলাদেশ গণকর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ, জাতীয় হকার্স লীগের সভাপতির কথা লেখা হয়। কিছু এমপি এ ঘটনায় আনন্দিত হয়ে সরকারকে অভিনন্দন জানান। ১০ মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের নাম প্রকাশ করা হয়। মন্ত্রীরা হলেন- বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী, অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ আলী, ফণী মজুমদার, মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন, আবদুল মান্নান, মনোরঞ্জন ধর, আব্দুল মোমিন, আসাদুজ্জামান খান। প্রতিমন্ত্রী- শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, দেওয়ান ফরিদ গাজী, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর, নুরুল ইসলাম চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মজুর, কে এম ওবায়দুর রহমান, ড. আজিজুর রহমান মলিক, ড. মোজাফ্ফর আহমদ চৌধুরী।
নতুন গঠিত মোশতাকের সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। পাকিস্তানের স্বীকৃতি দানের সিদ্ধান্তের কথা জানতে পারি আমরা। নতুন সরকারের জন্য বিশেষ মোনাজাত করা হয়। রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেন জোটনিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ করা হবে। ‘দুর্নীতির সঙ্গে আপস নয়’ এ কথাও বলেন তিনি। সরকার থেকে বলা হয় বিদেশি মিশনগুলোর স্বার্থ মর্যাদার সঙ্গে রক্ষা করা হবে। সে সময় সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন মেজর জেনারেল কে এম সফিউল্লাহ, বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খোন্দকার ও নৌবাহিনীর প্রধান কমোডর মোশাররফ হোসেন। তারা সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত জনসাধারণকে ঘরের ভেতর থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। নতুন সরকারের সঙ্গে দেশের সব দেশপ্রেমিক ও শান্তিপ্রিয় নাগরিককে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানানো হয়। বক্স করে প্রচার করা হয় এই বাক্যগুলো- ‘দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সর্বতোভাবে সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করুন।’
১৬ আগস্ট থেকেই পত্রিকাগুলো সরকারের পক্ষে সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। দৈনিক বাংলা’র সম্পাদকীয় ছিল- ‘ঐতিহাসিক পদক্ষেপ’। লেখা হয়- ‘জাতীয় জীবনে একটি ঐতিহাসিক ক্রান্তির সূচনা হয়েছে। জাতীয় জীবনে সূচিত এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপকে স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন দিয়েছেন জনগণ ও মুক্তিযোদ্ধারা।’ দেশের সর্বত্রই স্বাভাবিক অবস্থা দাবি করা হয়। প্রশংসা করা হয় সশস্ত্র বাহিনীর। বলা হয়, তারা পবিত্র দায়িত্ব পালন করেছে। জাতির সামনে তারা খুলে দিয়েছে সম্ভাবনার স্বর্ণতোরণ, উন্মোচন করেছেন সমৃদ্ধির নব দিগন্ত। সেদিনের শনিবারে দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদকীয় ছিল ‘ঐতিহাসিক নবযাত্রা’। এই দৈনিকটি মোশতাকের ক্ষমতা গ্রহণের ঘটনাকে দেশ ও জাতির এক ঐতিহাসিক প্রয়োজন পূরণের নিদর্শন হিসেবে চিহ্নিত করে। বঙ্গবন্ধুর শাসনকালকে বলা হয়- ‘সেসময় দেশবাসী বাস্তবক্ষেত্রে যাহা লাভ করিয়াছে তাহাকে এক কথায় গভীর হতাশা ও বঞ্চনা ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না।’ মোশতাকের সুরে সুর মিলিয়ে লেখা হয়- ‘গণমানুষের ভাগ্যোন্নয়নের পরিবর্তে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির আশ্রয়গ্রহণ করিয়া এবং একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে স্থায়ীভাবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রাখিবার দুর্নিবার আকাক্সক্ষায় মাতিয়া উঠিয়া স্বাধীনতার সুফল হইতে জনগণকে নির্মমভাবে বঞ্চিত করা হইয়াছে।’ নতুন সরকারের সংকল্পকে পবিত্র বলে জয় কামনা করেছে পত্রিকাটি। এসবই ছিল নতুন সরকারকে খুশি করার প্রচেষ্টা। ১৫ আগস্ট প্রচারিত মোশতাকের বেতার ভাষণে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা প্রকাশ করা হয়; যা ছিল মিথ্যা। তিনি বলেন, বিগত দীর্ঘকাল দেশের ভাগ্য উন্নয়নের কোনো চেষ্টা না করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা এবং সেই ক্ষমতাকে স্থায়ীভাবে আঁকড়ে রাখার ষড়যন্ত্রের জাল রচনা করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্র, সামাজিক, অর্থনৈতিক নীতি সম্পর্কে মোশতাক নেতিবাচক মতামত তুলে ধরেন।
১৬ আগস্ট দৈনিক ইত্তেফাকের প্রথম পৃষ্ঠার শিরোনামগুলো ছিল এ রকম- ‘দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি উচ্ছেদ। সুবিচার ও মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ঘোষণা। খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে সশস্ত্র বাহিনীর শাসন ক্ষমতা গ্রহণ’,

দৈনিক বাংলা যে কথা বলেনি সেটি ইত্তেফাক বলে দিল- ‘সশস্ত্র বাহিনী জাতির বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষমতা গ্রহণ করেছে।’ লন্ডনের হাইকমিশন ভবনে বিক্ষোভ করে বঙ্গবন্ধুর ছবি নামিয়ে ছিঁড়ে ফেলার খবর রয়েছে এদিনের সংবাদপত্রে।
১৭ আগস্ট সব পত্রিকাতে মোশতাকের জীবনালেখ্য এবং সৌদি আরব ও সুদানের স্বীকৃতির সংবাদ প্রকাশ করা হয়। জীবনীতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার সম্পর্কের সবিস্তার বর্ণনা রয়েছে। ভারতীয় মুখপাত্র বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলে অভিহিত করে। কারফিউ ধীরে ধীরে শিথিল করা হয়। মন্ত্রিসভার বৈঠকে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি সন্তোষজনক বলে আলোচিত হয়। সাবেক রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুর মরদেহ পূর্ণ মর্যাদায় দাফন করা হয় টুঙ্গিপাড়ায়। কোনো পত্রিকা এই সংবাদটিকে গুরুত্ব দিয়ে ছাপায়নি। দেশে যেমন জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অভিনন্দন তেমনি নতুন সরকারের প্রতি লন্ডন প্রবাসী বাঙালিদের সমর্থন জানা যায়। নতুন সরকারের প্রতি মওলানা ভাসানী পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করেন। ১৮ আগস্ট তর্কবাগীশ অভিনন্দন জানান সরকারকে। ১৪ আগস্ট ও তার আগের প্রামাণ্যচিত্র ও সংবাদচিত্র প্রত্যাহার করে সরকার। মোশতাকের প্রশংসা করে দৈনিক বাংলার সম্পাদকীয়তে বলা হয় ‘বলিষ্ঠ, বিচক্ষণ বৈদেশিক নীতি; দুর্নীতির সঙ্গে আপোস নেই।’ ইত্তেফাকও ‘সবার প্রতি বন্ধুত্ব’ শীর্ষক সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। পরদিন সম্পাদকীয় ছিল ‘স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা এবং সৌদি আরবের স্বীকৃতি। ১৮ তারিখে দৈনিক বাংলা ‘মূল্যবোধের প্রতিষ্ঠা’ শিরোনামে মোশতাকের ভাষণকে অবলম্বন করে সম্পাদকীয় প্রকাশ করে।
তিন দিন পর ১৮ ও ১৯ তারিখের সংবাদে বহির্বিশ্বের স্বীকৃতি ও নিরবচ্ছিন্ন জীবনযাত্রার খবরকে গুরুত্ব দেয়া হয়। ১৯ আগস্ট দৈনিক ইত্তেফাকের গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ হচ্ছে, ব্রিটেনের সানডে টাইমসে এন্টনি ম্যাসকারেনহেসের রিপোর্ট অনুসারে বঙ্গবন্ধু সরকারের পতনের তিনটি কারণ হলো- সামরিক বাহিনীর প্রতি বঙ্গবন্ধুর অবিশ্বাস, ইসলামের অবনয়ন এবং জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া। এ তিনটি কারণই ছিল অসত্য। কারণ বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সেই সময় দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির পথ অন্বেষণ করে বাকশালের কর্মকাণ্ডকে বেগবান করে তোলার প্রচেষ্টায় নিয়োজিত ছিলেন। আর ইসলামের প্রতি তার ঐকান্তিক নিষ্ঠার কথা ২০১২ সালে প্রকাশিত ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ থেকে আরো স্পষ্টভাবে জানা যায়।
২১ আগস্ট রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সর্বময় ক্ষমতা গ্রহণ করার খবর প্রকাশিত হয়। সংবিধানের আংশিক সংশোধনের পরও পার্লামেন্ট অব্যাহত থাকে; রাষ্ট্রীয় মূলনীতি অপরিবর্তিত রাখা হয়। ৭২ সালের সংবিধানের রাষ্ট্রপতির ৯ নম্বর আদেশ বাতিল করা হয়।(২৩ আগস্ট, ইত্তেফাক) এর আগেই নতুন সরকার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্রের মারফতে প্রতিশ্রæতি পায় ব্যাপক মার্কিন সাহায্য অব্যাহত থাকবে বলে। খাদ্যশস্য নিয়ে ১৯টি জাহাজ বন্দরে ভিড়ে। ২২ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পায় মোশতাক। অথচ ৭৪-এর দুর্ভিক্ষের সময় বঙ্গবন্ধু সরকারের সঙ্গে মার্কিনিদের বিরূপ আচরণ সবার মনে থাকার কথা।
৩ নভেম্বর ঢাকার জেলখানার মধ্যে জাতীয় চারনেতাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়; সেই ঘটনার সূচনা ২৩ আগস্ট থেকে। অর্থাৎ ২৪ তারিখে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ প্রকাশিত হয় দৈনিক ইত্তেফাকে। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে সাবেক উপরাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ ২৬ জন গ্রেপ্তার হন। জাতীয় চার নেতা মনসুর আলী, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এ এইচ এম কামারুজ্জামানসহ অনেক সিনিয়র আওয়ামী লীগের নেতাদের বন্দি করা হয়। একই তারিখের পত্রিকা থেকে জানা যাচ্ছে, রাষ্ট্রপতির সামরিক আইন বিধি অনুসারে সামরিক আদালত গঠনের ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে। বলা হয়- ‘বেআইনি অস্ত্র, অবৈধ সম্পত্তি ও দুর্নীতির সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড।’
২৫-৮-১৯৭৫ তারিখের সংবাদ থেকে জানা যায়, সেনাবাহিনী প্রধান পদে জেনারেল জিয়া নিয়োগ পেয়েছেন। এরশাদেরও পদোন্নতি হয়েছে। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক ওসমানীকে রাষ্ট্রপতির প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা করা হয়। ৩১ আগস্ট দেখা গেল, ‘রাজনৈতিক দল ও কার্যকলাপ নিষিদ্ধ’ করেছে সরকার। ব্রিটিশ পত্রিকা ফিন্যান্সিয়াল টাইমস ১৬ আগস্ট লিখেছে- দারিদ্র্য, হিংসাদ্বেষ, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি প্রভৃতি গুরুতর সমস্যার সমাধানে ব্যর্থতার জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট বঙ্গবন্ধু নিজেই বহুল পরিমাণে দায়ী। এর আগে ৩০ আগস্ট দ্য টেলিগ্রাফের বরাদ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর পতন সম্পর্কে বলা হয়- শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে বিগড়ে দিয়েছিলেন তিনি; যারা তাকে একসময় নেতা বানিয়েছিল। ১৫ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে মধ্যে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় সূচনার খবর এলো ২৬ আগস্টের পত্রিকায়। আগস্টের ঘটনা ধারা থেকে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে পাকিস্তানি চক্রান্তের পরিচয় আজ পরিষ্কার হয়েছে।
১৫ আগস্ট পত্রিকায় ছিল ‘বঙ্গবন্ধু আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করবেন’; বিদেশিদের মুখে বাংলাদেশের অগ্রগতিতে মুগ্ধ হওয়ার কথাও ছিল। কিন্তু ষড়যন্ত্র চলছিল। বন্দর থেকে ৪৯ লাখ টাকার গম আত্মসাৎ করে চক্রান্তকারীরা। ওয়াগন ভেঙে ব্যাপকহারে খাদ্য পাচার হয়। (৬ ও ৭ আগস্ট) ৭৮টি জাহাজ থেকে ৪ কোটি টাকার খাদ্যশস্য লাপাত্তা করা হয়।(১০ আগস্ট) বিভিন্ন পত্রিকায় চরমপন্থি গ্রেপ্তার ও নিহতের সংবাদও বের হয় (১৩ ও ১৪ আগস্ট)। তবে ১ আগস্ট থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সরকারের কর্মকাণ্ডসহ বাকশালের সংবাদ ছিল প্রধান। অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য দ্বিতীয় বিপ্লবের সেই কর্মযজ্ঞে বঙ্গবন্ধুসহ প্রধান ব্যক্তিত্বদের কর্মচাঞ্চল্য দেখার মতো ছিল।
১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসের ১৫ তারিখের পর দেশের সংবাদপত্রগুলো উল্টোমুখে চলা শুরু করে। পত্রিকাগুলো বঙ্গবন্ধুর কথা বলার সময় বারবার বিদেশি পত্রিকার বরাদ দিলেও একই সময় সেসব দেশের অনেক ইংরেজি ভাষার পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর প্রশংসা করে যেসব সংবাদ প্রকাশিত হয় তা উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকে। দেশের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর শাসনকাল নিয়ে সমালোচনা কিংবা তার হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ নিয়েও সংবাদ নেই। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর পরিস্থিতি নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন ছিল। মোশতাকের ক্ষমতা গ্রহণকে জনসাধারণ অভিনন্দন জানায় বলা হলেও মার্শাল ল’-এর মধ্যে মুজিবের অজস্র ভক্ত হয়তো মাঠে নামেনি; কিন্তু অন্তরে রক্তক্ষরণ কি থেমে ছিল? সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানানো মানুষ কিছুদিন পর যে খেলার সূচনা দেখেছিল তার ফল তারা নিজেরাই ভোগ করেছে স্বৈরশাসকদের দ্বারা নিপীড়িত হয়ে। মীরজাফরের মতো মোশতাকরা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। ভবিষ্যতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বিরোধীরা একই পরিণতি লাভ করবে।
এভাবে বঙ্গবন্ধুর মতো মহামানবের মহাজীবন ছড়িয়ে আছে সংবাদপত্র আর মানুষের স্মৃতিতে। নিরন্তর ভালোবাসায় এখানে উদ্বেল হয়েছেন সাংবাদিক ও অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ। বিংশ শতাব্দীর বাঙালির নবজাগরণের প্রতিভূ বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের প্রধান পুরুষ তিনি। বাঙালির আত্মপরিচয়ের সংকট মোচনে তার অবদান বিশ্বস্বীকৃত। বারবার কারাগারে আটক ছিলেন তিনি; রাজনীতিতে মানবমুক্তিই তার আরাধ্য ছিল। স্বাধীনতাকামী মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন তিনি। নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ আর অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে শিখিয়েছিলেন। বাঙালির চেতনায়-মননে-জীবনে বঙ্গবন্ধু স্পন্দিত নাম। এই মহাপুরুষ ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের শিকার হলে মানুষ থমকে যায়, স্তব্ধ হয়ে পড়ে। তারপর নিজের গোপন ব্যথা প্রকাশ করা শুরু করে। হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত করে ঘাতকচক্র বাংলাদেশকে রসাতলে নিয়ে যেতে চেয়েছিল, পারেনি। কারণ এদেশের মানুষের অন্তরে তখনো তিনি জাগ্রত, এখনো। তার কণ্ঠস্বর শাশ্বত ন্যায়ের গতিপথে বিকশিত। বঙ্গবন্ধু বাঙালির আপন ঘরের মানুষ, ভালোবাসা শ্রদ্ধায় তিনি পুণ্যাত্মা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়