জামায়াতে ইসলামী : রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞার আবেদন শুনানি ৩১ জুলাই

আগের সংবাদ

ভোটের আমেজে তৃণমূলে ঈদ : শেখ হাসিনার বার্তা নিয়ে এলাকায় আ.লীগ নেতারা

পরের সংবাদ

রাজশাহীর কুরবানির পশুর হাট : দাম চড়া থাকলেও শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে

প্রকাশিত: জুন ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সাইদুর রহমান, রাজশাহী থেকে : রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনের কারণে রাজশাহীবাসী যেন ভুলেই গিয়েছিলেন ঈদুল আজহার কুরবানির পশু কেনার কথা। দুই-চারদিন আগেও রাজশাহীর পশুরহাটগুলো সেইভাবে জমে উঠছিল না। কিন্তু হঠাৎ করে একেবারে শেষ সময়ে এসে শুরু হয়েছে জমজমাট পশুরহাটগুলো। তুলনামূলকভাবে দাম চড়া থাকলেও শেষ মুহূর্তের পশু কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ক্রেতারা।
জানা গেছে, সাধারণত কুরবানির ঈদের প্রায় এক মাস থেকে রাজশাহীতে পশুর হাটগুলো বেশ জমজমাট হয়। বিক্রেতা-ক্রেতার সম্মিলনে পশুহাটে যেন বিরাজ করে উৎসবের আমেজ। কিন্তু এবার সিটি নির্বাচনের কারণে ঈদের চাঁদ দেখা যাওয়ার পরও রাজশাহীর পশুহাটগুলো ছিল প্রকৃতপক্ষে ক্রেতাশূন্য। এতে অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়েছিলেন এ অঞ্চলের খামারিরা। তবে গত ২১ জুন সিটি করপোরেশন নির্বাচন শেষ হয়েছে। মূলত এরপর গত শুক্রবারই প্রথম ভিড় লক্ষ্য করা যায় পশুর হাটে। শনিবার থেকে সেই ভিড় পূর্ণতা পায়। আর রবিবার থেকে রাজশাহীর পশুর হাট যেন জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ সিটি হাটে যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। আর মাত্র একদিন পরই পবিত্র ঈদুল আজহা। তাই শেষ মুহূর্তে জমজমাট হয়ে উঠেছে পশুরহাট। তবে এখনো দাম কমছে না কুরবানির পশুর। তাই মানুষের ভিড়ে পশুর হাট জমে উঠলেও কেনাবেচা হচ্ছে কম। মানুষ দর-দাম করেই হাট মাতিয়ে তুলেছেন।
আগামী ২৯ জুন ত্যাগের মহিমায় ঈদ উদযাপিত হবে। মঙ্গলবার থেকেই শুরু হয়ে যাবে ঈদের ছুটি। সময় খুবই কম। তাই কুরবানির জন্য পছন্দের পশুটি কিনতে এখন বেশিরভাগ মানুষই হাটে ছুটছেন। তবে যাদের কুরবানির পশু রাখার জায়গা নেই তারা এখনো রয়েছেন চাঁদরাতের অপেক্ষায়।
হাটে একদিকে যেমন দর-দাম চলছে অন্যদিকে তেমন পশু কেনাবেচাও চলছে। তবে বাজারে মাংসের দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় কুরবানির পশুর দামও প্রায় দ্বিগুণ। খামারি ও ব্যবসায়ীরা মাংসের দামের কেজি হিসেবে পশুর দাম নির্ধারণ করছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার চেয়েও বেশি দাম হাঁকছেন। আর দাম বেশি হওয়ায় কম বাজেটে কুরবানির পশু কিনতে গিয়ে সাধারণ মানুষ হিমশিম খাচ্ছেন। অনেকেই সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় ঘটাতে ব্যর্থ হয়ে খালি হাতেই ফিরছেন বাড়ি। তবে যাদের সামর্থ্য রয়েছে- আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তারা বেশি দাম দিয়েই কুরবানির জন্য হাটের সেরা পশুটিই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। গত রবিবার ও সোমবার পশুহাটে মানুষের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। রাজশাহী সিটি হাট ঘুরে দেখা গেছে, কুরবানির জন্য সবাই ছোট ও মাঝারি আকৃতির গরুই বেশি খুঁজছেন। আর তাই বড় গরুর চেয়ে ছোট ও মাঝারি আকৃতির গরুর দামই বেশি। তবে এক লাখ টাকার নিচে গরুই যেন নেই। গরুর গায়ে হাত রাখলেই যেন এক লাখ টাকা দাম চাওয়া হচ্ছে। মাঝারি আকৃতির গরুগুলো এক লাখ টাকার ওপরে দাম হাঁকা হচ্ছে। আর হাটে বড় আকৃতির গরুগুলোর দাম শুরুই হচ্ছে দুই লাখ থেকে। শেষ সময়ে দাম কমতে শুরু করলেও এবারের চিত্র যেন সম্পূর্ণ উল্টো। তাই দাম নিয়ে এক ধরনের অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে পশুর হাটে। শনিবার রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে পশুর হাট বসেছিল। তবে গত সোমবার থেকে রোজই পশু মিলবে রাজশাহীর প্রায় সব হাটে। সোমবার হাটে গিয়ে দেখা যায়, দূর-দূরান্ত থেকে মিনিট্রাক, নসিমন, করিমন ও ভটভটিবোঝাই গরু নিয়ে আসছেন মালিক, খামারি ও বেপারিরা। দুপুর ২টার পর এ হাট কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, এবার একটুও দাম কমাচ্ছেন না বিক্রেতারা। তবে বিক্রেতাদের দাবি, বাজারে গোখাদ্যের দাম বেশি। ফলে বছরজুড়ে গরু লালন-পালন করতে খরচ প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। তাই কুরবানির পশুর দামও বেড়েছে। এখানে তাদের করার কিছু নেই। এজন্য ঊর্ধ্বমুখী বাজার ব্যবস্থাকেই দায়ী করছেন বিক্রেতারা।
রাজশাহীর পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের তেবাড়িয়া গ্রাম থেকে সিটি হাটে কুরবানির জন্য নিজের পোষা গরু বিক্রি করতে আসা গোলাম মোস্তফা বলেন, বাজারে সব পণ্যের দামেই আগুন লেগেছে। তাহলে গরুর দাম বাড়বে না কেন? গ্রামের বাড়িতে আগে নিজের ও পাড়া-প্রতিবেশীর নুন-ফ্যানেই গরু পালা হয়ে যেত। কিন্তু সে সময় এখন আর নেই। গরুকে সবকিছুই বাজার থেকে কিনে খাওয়াতে হয়। সেই হিসেবে গরুর দামই ওঠে না অনেক সময়। আর খরচ হিসেবে গরুর দাম চাইলে ক্রেতারা বলছেন দাম বেশি। তাহলে আমরা কোথায় যাব? এক সময় খামারে গরুর উৎপাদন ও লালন-পালন কমে গেলে ভারত থেকে পশু আমদানি করা হতো। এরপর পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করল। এখন গ্রামে এমন কোনো বাড়ি নেই যেই বাড়িতে অন্তত একটি গরু নেই। এখন গরু-ছাগলে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠেছে দেশ। কিন্তু পশুর দাম না পেলে আবার আগের অবস্থা তৈরি হবে।
দাম নিয়ে কথা বলতে গেলে গরু নিয়ে হাটে আসা পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরের ব্যবসায়ী একরামুল হক বলেন, ‘তার কাছে ৩ মণ ওজনের গরু আছে দাম ১ লাখ টাকা, ৪ মণ ওজনের গরুর দাম ১ লাখ ২০ থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। আর ৫ মণ ওজনের গরু দেড় লাখ টাকা দাম চাইছেন। এছাড়া বড় গরুর দাম দুই লাখ টাকা থেকে শুরু।’
কুরবানির পশু কিনতে আসা রাজশাহী মহানগরীর সপুরা এলাকার সাইফুল ইসলাম বলেন, তীব্র গরম উপেক্ষা করে ভর দুপুরেই হাটে এসেছেন। হাটে প্রচুর মানুষের সমাগম। কিন্তু দাম বেশি। তাই হাটের ভিড় ঠেলে ঘুরে ঘুরে গরু দেখছেন। আজ অন্যান্য দিনের তুলনায় পশুর সরবরাহ বেশি। দর-দাম করে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কিনেছেন। বেপারি জানিয়েছেন, ওজন ৪ মণের একটু বেশি হবে। তবে ওজন দেখে তো আর কুরবানির গরু কেনা হয় না। পছন্দ হয়েছে তাই কিনেছি।
রাজশাহী সিটি হাটের ইজারাদার ফারুক হোসেন ডাবলু বলেন, এবার নানা কারণেই কুরবানির পশুর দাম বেশি। সীমান্তও বন্ধ। হাটে ভারতীয় গরু নেই। তাদের হাট দেশি জাতের গরুতেই ভরপুর। আর হাটে দেশি গরুই বেশি বিক্রি হচ্ছে। ঈদ ঘনিয়ে আসায় গরুর আমদানিও বেড়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়