জামায়াতে ইসলামী : রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞার আবেদন শুনানি ৩১ জুলাই

আগের সংবাদ

ভোটের আমেজে তৃণমূলে ঈদ : শেখ হাসিনার বার্তা নিয়ে এলাকায় আ.লীগ নেতারা

পরের সংবাদ

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া : বিদেশি কমলা-মাল্টা চাষে স্বাবলম্বী আতাউর রহমান

প্রকাশিত: জুন ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এ রায়হান চৌধুরী রকি, পঞ্চগড় থেকে : পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার তিরনইহাট ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কৃষক আতাউর রহমান খাঁন। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ার পর আর পড়ালেখা করতে পারেননি। কোনো চাকরি না পেয়ে ঝুঁঁকে পড়েন নার্সারিসহ কৃষি কাজে। কীভাবে নিজস্ব চিন্তায় বিদেশি ফলের চারা তৈরি করা যায় তা নিয়েই ভাবতেন সারাক্ষণ। স্কুুলপড়–য়া ছেলে ফয়সালকে নিয়ে চালিয়ে যান কৃষি কাজ।
মহামারি করোনাকালে প্লাস্টিক বোতলে পেয়াজ-রসুন চাষ করেও অবাক করেছিলেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়া, বিভিন্ন পত্রিকাসহ টিভিতেও প্রচার হয় তার এই কৃষি কার্যক্রম। এতে তিনি আরো উৎসাহ পান। পরে ২৫ শতক জমির চা বাগানে মাল্টা চাষ করেন। রুট স্টক ও সায়নের মাধ্যমে জাম্বুরা গাছকে কমলা গাছে পরিণত করেন তিনি। এসব গাছে ধরেছে প্রচুর মাল্টা। একেকটি গাছে একশর মতো মাল্টা ধরেছে। এসব মাল্টা বিক্রি করে চা বাগান থেকে বাড়তি আয় করতে পারবেন বলে আশা করছেন আতাউর রহমান। করোনাকাল থেকেই কঠোর শ্রমের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠেন তিনি।
আতাউর বাড়ির পাশের পতিত ৫০ শতক জমিতে গড়ে তুলেছেন ‘অজি সাইট্রাস বিডি’ নামের নার্সারি। এ নার্সারিতে কলম ও রুট-সায়ন করে তৈরি করেছেন বিভিন্ন প্রজাতির বিদেশি কমলা-মাল্টার চারা। পাকিস্তানি ও দার্জিলিং কমলা, ইম্পেরিয়াল ম্যান্ডারিন, অস্ট্রিলিয়ান কমলা, মাল্টা বারি ওয়ান গাছের চারা তৈরি করে তা বিক্রির মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন তিনি। মাল্টা-কমলা ছাড়াও নার্সারিতে লাগিয়েছেন ইগ অব সান (সূর্যডিম) আলফ্রানসেস, চিয়াংমাই, ব্রোনাই কিং, কিং অব চাকাপাত, থ্রিটেস্ট, আমেরিকান কেন্ট, ন্যাম ডকমাই গ্রিন, ন্যাম ডকমাই ইয়েলোর মতো ৪০ প্রজাতির আমের গাছ। এসব গাছে ফল ধরতে শুরু করেছে। এসব গাছের চারা ফেসবুকের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অনলাইনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে বেশ অর্থ আয় করছেন তিনি। ছেলে ফয়সাল জানান, পড়ালেখার পাশাপাশি বাবাকে সহযোগিতা করছি। বাবার কাছ থেকে কাজ শিখছি। কীভাবে উন্নতমানের গাছ থেকে কলম করতে হয়, বিদেশি গাছ সংগ্রহ ও রোপণ পদ্ধতি বাবা শিক্ষকের মতো শেখাচ্ছেন।
আতাউর রহমান জানান, কয়েক বছর ধরে উচ্চমূল্যের বিভিন্ন ফলের গাছ সংগ্রহ করে কলম চারা তৈরি করছি। বিভিন্ন প্রজাতির বিদেশি চারা সংগ্রহ করে পরে সেটা রুট-সায়নের মাধ্যমে গ্রাফটিং করি। তা বিক্রি করে বেশ আয় হচ্ছে। এর পাশাপাশি চা বাগান করেছি। তিন বছর হলো ২৫ শতক জমির উপর চা বাগানে মাল্টা চাষ করেছি। বাগানে একশ জাম্বুরার চারা গাছ লাগিয়ে পরে সেটি রুট-সায়নের মাধ্যমে মাল্টা গ্রাফটিং করে সফল হয়েছি। গাছগুলো মাল্টা ধরেছে। চা বাগানে মাল্টা আবাদ করে বেশ আয় করতে পারব। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আমার কাছ থেকে অনেকে চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, এখানকার চায়ের জমিতে মাল্টা হচ্ছে। বিশেষ করে বেলে-দোআঁশ মাটিতে নানান বিদেশি ফল ও ফুল চাষ হচ্ছে। এখানকার চাষিদের মধ্যে তিরনইহাট এলাকার আতাউর রহমান অন্যতম। তিনি একজন নার্সারির মালিকও। সম্প্রতি তিনি চা বাগানে মাল্টা চাষ করে সফলতার মুখ দেখছেন। পাশাপাশি নার্সারিতে বিভিন্ন বিদেশি ফলের গাছের চারা তৈরি করে তা অনলাইনে বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। চা শিল্পাঞ্চলে মাল্টা চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। তাই মাল্টা চাষে আগ্রহী করে তুলতে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও উদ্বুদ্ধকরণসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়