জামায়াতে ইসলামী : রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞার আবেদন শুনানি ৩১ জুলাই

আগের সংবাদ

ভোটের আমেজে তৃণমূলে ঈদ : শেখ হাসিনার বার্তা নিয়ে এলাকায় আ.লীগ নেতারা

পরের সংবাদ

গুরুদাসপুরে আম-কাঁঠালের চাপে চিঁড়ে চ্যাপ্টা কলা : ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত কৃষক

প্রকাশিত: জুন ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. মাজেম আলী মলিন, গুরুদাসপুর থেকে : বিভিন্ন উপজেলার গ্রাম-গঞ্জ, পাড়া মহল্লা থেকে আসছে কলা। ছোট বড় ভ্যান, ট্রলিতে করে নিয়ে আসছেন হাটে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কেনা-বেচা চললেও মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না কলা চাষিদের। দাম জিজ্ঞেস করতেই মুখ কালো করে বললেন, আরে ভাই আম-কাঁঠালের রস বাদ দিয়ে এখন কি আর কেউ কলা খায়? দুঃখ প্রকাশ করে এভাবেই কথাগুলো বললেন সিংড়া উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রাম থেকে আসা কলা চাষি মো. জাহাঙ্গীর আলম।
তিনি বলেন, ৬টি পুকুর পাড়ে প্রায় ১৪ বিঘা জমিতে কলা চাষ করেছি। কলা চাষে খরচ, হাটের খাজনা, শ্রমিক খরচ, ট্রলি ভাড়ার খরচ তো আছেই সব হিসেব করলে বর্তমানে কলার বাজার খুব খারাপ। প্রতি কাইন কলা আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ২০০টাকায়। যা বিক্রি করে খরচই উঠছে না। কিন্তু করার তো কিছু নেই। চাষ যখন করেছি বিক্রি তো করতেই হবে। লাভ ক্ষতির হিসাব করলে তো চলবে না। গুরুদাসপুরের চাপিলা ইউনিয়নের মহারাজপুর গ্রামের কলা চাষি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এক কাইনে সর্বনি¤œ ২৫ থেকে ৩০ হালি পর্যন্ত কলা থাকে। সেই হিসেবে প্রতি হালি কাঁচা কলা ৪ থেকে ৬ টাকায় বিক্রি হয়। অথচ ওই কলাই বাজারে কিনতে গেলে প্রতি হালি ১২ থেকে ১৬টাকা দরে কিনে খেতে হয়।
নাজিরপুর হাট ইজারাদার নজরুল ইসলাম জানান, উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ছাড়াও নাটোরের সিংড়া ও বড়াইগ্রাম থেকেও প্রচুর পরিমাণে কলা আসে এই নাজিরপুর হাটে। এখানে প্রতি হাটে গড়ে ৬ থেকে ৮ ট্রাক কলা লোড হয়ে দেশের নানা প্রান্তে যাচ্ছে। এখন দেশীয় ফল আম, জাম, কাঁঠালের বেশি চাহিদা থাকায় কলার দাম একটু কম। তবে কুরবানির ঈদের পরই কলার ভালো দাম পাওয়া যাবে বলে তার ধারণা। কলার চাহিদা কম থাকায় মহাজনরাও কম আসছে। শুক্র-শনি বাদে সপ্তাহে ৫ দিনই কলা বেচা-কেনা হয় গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুরের এই কলার হাটে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন খাজনা আদায়কারী বলেন, কলা হাটের নিজস্ব কোনো জায়গা নেই। প্রতি বছর এই ৬৬ শতাংশ জমি লিজ নিয়ে এখানে কলা বেচা-কেনা হয়। পাশেই সরকারি অনেক খাস জায়গা রয়েছে যা অন্যরা দখল করে খাচ্ছে। ওই যায়গাগুলো কলার হাটে বরাদ্দ দিলে আমাদেরও ভালো হতো, পাশাপাশি সরকারও রাজস্ব পেতো। মৌসুমে প্রতিদিন প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ টন কলা আমদানি হয় এ হাটে। ফলে জায়গা সংকুলান হয় না।
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থেকে আসা কলার বেপারি মো. বাবু মণ্ডল এবং টাঙ্গাইলের সফিকুল সরকার বলেন, বর্তমানে মৌসুমী রসালো ফলের কারণে বাজার এবং মোকাম সব জায়গাতেই কলার দাম তুলনামূলক কম। ব্যবসা করে খাই, তাই কলা কিনতে এসেছি। কাঁচা মালের এমনিতেই নিশ্চয়তা নেই। কখনো লাভ আবার কখনো লোকসানও হয়। ৪ থেকে ৫ জন বেপারি মিলে এক ট্রাক করে কলা কিনে নিজ এলাকায় নিয়ে বিক্রি করি। তবে এই এলাকার কলার মানটা ভালো যে কারণে সব জায়গায় এ কলার চাহিদাটা একটু বেশি। আমরা প্রতি কাইন (ঘাড়া) কলা ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দরে কিনে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করি।
চাঁচকৈড় হাটের খুচরা কলা ব্যবসায়ী মোকলেছুর রহমান বলেন, আমরা ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কাইন কলা কিনে দোকানদারদের কাছে পাইকারি ১০ থেকে ১২টাকা হালি দরে বিক্রি করি।
স্থানীয় দোকানদার মো. সেলিম হোসেন বলেন, ১২ থেকে ১৪ টাকা হালি কলা কিনে আকারভেদে ১৮ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি করি। কাঁচা মালের কোনো নিশ্চয়তা নেই। কখনো বেশি লাভ হয় আবার কখনো বিক্রি করতে না পারলে পঁচে নষ্ট হয়ে যায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকতা মো. হারুনর রশিদ জানান, এ বছর শুধু গুরুদাসপুর উপজেলাতেই ৩০০ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ হয়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কলা চাষিদের সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। এখানে সাগর কলা, অমৃত সাগর, মেহর সাগরসহ বিভিন্ন উন্নত জাতের কলার চাষ হয়। বর্তমানে কলার দাম একটু কম। তবে পুষ্টিকর ফল হিসেবে এর চাহিদা রয়েছে দেশব্যাপী। আশা করছি কৃষকরা খুব দ্রুতই কলার ন্যায্যমূল্য পাবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়