সংবাদ সম্মেলনে ছেলের দাবি : হত্যা মামলায় ইউপি চেয়ারম্যানকে ফাঁসানো হয়েছে

আগের সংবাদ

কুরবানি ঘিরে চাঙা অর্থনীতি : ৭০ থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হওয়ার সম্ভাবনা, রেমিট্যান্স প্রবাহে রেকর্ড

পরের সংবাদ

অবণ্টিত অর্থ সিএমএসএফে জমা না দিলে জরিমানা : আলোচনা সভায় চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান

প্রকাশিত: জুন ২৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ২০২১ সালে ক্যাপিটাল মার্কেট স্টাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএফ) গঠনের পর কার্যক্রম শুরুর এক বছরের মধ্যেই কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হয়েছে বলে দাবি করেছেন সিএমএসএফ চেয়ারম্যান ও সাবেক মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান। সিএমএসএফকে ডিজিটালাইজেশন করাই এবারের লক্ষ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা খুব গুরুত্ব সহকারে এ বিষয়ে কাজ করছি। একজন গ্রাহক ঘরে বসেই তার দাবি আদায়ে সব ধরনের কার্যক্রম করতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশের যে কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন তার সঙ্গে আমরাও একত্মতা ঘোষণা করেছি।
গতকাল সোমবার যৌথভাবে জাতীয় প্রেস ক্লাব ও সিএমএসএফ আয়োজিত ‘সেনসিটাইজেশন অব জার্নালিস্ট এবাউট ক্যাপিটাল মার্কেট স্টাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএফ)’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ভোরের কাগজের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্তের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন। অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন সিএমএসএফের পরিচালক ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, ড. মোহাম্মদ তারেক ও একেএম দেলোয়ার হোসেন। নজিবুর রহমান বলেন, আগামী ৩০ জুনের মধ্যে নগদ লভ্যাংশ অথবা বোনাস শেয়ার সিএমএসএফে জমা দিতে ব্যর্থ হলে অনাদায়ী লভ্যাংশের উপর প্রতি মাসে ২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে সারচার্জ দিতে হবে। অর্থাৎ কোনো কোম্পানি যদি বিনিয়োগকারীদের নগদ ১০০ টাকা কিংবা ১০০ টাকার শেয়ার ফান্ডে জমা না দেয় তবে তাকে এ টাকার উপরে ২ টাকা ৫০ পয়সা করে প্রতি মাসে জরিমানা দিতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে বাজারে তালিকাভুক্ত ৪৬০টি কোম্পানির কাছে বিনিয়োগকারীদের নগদ ও বোনাস শেয়ার বাবদ পড়ে আছে ৭ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা। বছরের পর বছর ধরে পড়ে থাকা বিনিয়োগকারীদের এ টাকার মুনাফা কোম্পানিগুলো ভক্ষণ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সাবেক এই মুখ্য সচিব বলেন, ২০২১ সালে সিএমএসএফ গঠন করার পর তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে তিন বছরের বেশি সময় ধরে পড়ে থাকা দাবিহীন কিংবা অবিতরণকৃত লভ্যাংশ ফান্ডে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয় বিএসইসি। এ নির্দেশের পর গত তিন বছরের কিছু কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের নগদ ও বোনাস লভ্যাংশ জমা দিলেও অধিকাংশ কোম্পানি সেই অর্থ জমা দেয়নি। খাতওয়ারি কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাবিহীন অর্থ ও শেয়ার জমা না দেয়ার শীর্ষে রয়েছে ব্যাংক খাত।
অনুষ্ঠানে পুঁজিবাজারের সাংবাদিকদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের (সিএমজেএফ) সঙ্গে যৌথভাবে সিএমএসএফ বেস্ট রিপোর্টি এওয়ার্ড চালুর ঘোষণা দেন শ্যামল দত্ত।
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, দেশের শেয়ারবাজার নিয়ে অনেকের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। সিএমএসএফকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, এভাবে কাজ অব্যাহত থাকলে শেয়ারবাজারের প্রতি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ও ইতিবাচক আগ্রহ বাড়বে।
বিএসইসির তথ্য মতে, বিনিয়োগকারীদের দাবিহীন লভ্যাংশের পরিমাণ ৮ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩৫৪ কোম্পানির কাছে নগদ টাকার পরিমাণ ছিল ৫৯৯ কোটি আর ৩৪৯ কোম্পানির কাছে বোনাস শেয়ারের লভ্যাংশের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ১০৭ কোটি টাকা। সব মিলে ৪৬০টি কোম্পানির কাছে পাওনা ৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৫০টি কোম্পানি এখন পর্যন্ত নগদ ও বোনাস কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। আর ৩১০টি প্রতিষ্ঠানের আংশিক কিংবা অর্ধেক বাকি রয়েছে।
বিএসইসি সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ৩০ মার্চ পর্যন্ত কোম্পানিগুলো এই ফান্ডে মোট ১ হাজার ২১৩ কোটি টাকা জমা দিয়েছে। এর মধ্যে নগদ লভ্যাংশের টাকা জমা দিয়েছে ৫২০ কোটি আর বোনাস শেয়ারের অর্থ জমা দিয়েছে ৬৯৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ নগদ ৭৯ কোটি আর বোনাস শেয়ারের ৭ হাজার ৪১৪ কোটি টাকার এখনো জমা দেয়নি। যাদের নামে শেয়ার তারা কেউ মারা গেলে, বিদেশে চলে গেলে, কিংবা দীর্ঘদিন খোঁজ না রাখলে তাদের ব্যাংক হিসাব বন্ধ বা অকার্যকর হয়ে যায়। বিও হিসাবের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। এমন ক্ষেত্রে লভ্যাংশের টাকা বা শেয়ার বিনিয়োগকারীর ব্যাংক বা বিও অ্যাকাউন্টে জমা না হয়ে কোম্পানির কাছে ফেরত যায়।
বিনিয়োগকারীর মৃত্যুর পর অনেক সময় তথ্য বা কাগজপত্রের অভাবে তার মনোনীত উত্তরাধিকারও সেই টাকা বা শেয়ার আর দাবি করেন না। এর বাইরেও আইনি জটিলতা বা অন্য কারণে অনেক সময় বিনিয়োগকারীর হাতে লভ্যাংশ পৌঁছায় না। তখন কোম্পানি ওইসব লভ্যাংশ ‘সাসপেন্ডেড’ হিসাবে জমা দেখিয়ে চূড়ান্ত আর্থিক বিবরণী তৈরি করে।
উল্লেখ্য, বিএসইসি ২০২১ সালে এই দাবিহীন লভ্যাংশ এক সঙ্গে এনে বিনিয়োগকারীদের কাছে বিতরণ এবং পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য সিএমএসএফ গঠন করে। ফান্ড ইতোমধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে ১৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। বর্তমান বাজারকে সাপোর্ট দেয়ার জন্য ব্রোকার হাউজগুলোকে স্বল্প সুদে আরো ২৫০ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দেয়া হবে এ ফান্ড থেকেই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়