ইসলামী আন্দোলন : নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের রূপরেখা ঘোষণা

আগের সংবাদ

কুরবানির পশুর দাম বেশি যে কারণে > আফতাবনগর হাট : এখনো জমেনি হাট গরুও উঠেছে কম

পরের সংবাদ

জি এম কাদের : বাজেটে আইএমএফের স্বার্থ দেখা হয়েছে

প্রকাশিত: জুন ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে দেশের জনগণের স্বার্থ না দেখে আইএমএফের শর্তের দিকে বেশি নজর দেয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধী দলের উপনেতা গোলাম মোহাম্মাদ কাদের (জি এম কাদের)। এদিকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বর্তমানে উচ্চমাত্রার মূল্যস্ফীতি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ। গতকাল রবিবার জাতীয় সংসদে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বাজেট আলোচনায় এসব কথা বলেন তারা।
জি এম কাদের বলেন, আইএমএফ তিনটি খাতে ৩০টি শর্ত দিয়েছে। কৃষিসহ প্রায় সব খাতে ঘাটতি কমিয়ে দিতে বলেছে তারা। আইএমএফের শর্ত অনুসারে চলতি জুন মাস শেষে বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ থাকতে হবে ২৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার এবং আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ২৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। এটি অত্যন্ত কঠিন। কারণ বর্তমানে নিট রিজার্ভ আছে ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে। এরপর বিভিন্ন ব্যয় রয়েছে।
অর্থাৎ এক মাসেই আরো সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার বাড়াতে হবে, এটা অসম্ভব। আর শর্ত বাস্তবায়নে আমদানি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এতে দেশের বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। বাজেটের লক্ষ্যগুলো বাস্তবতার সঙ্গে মিল নেই। সরকারের ভুল পদক্ষেপে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ক্রমান্বয়ে ব্যাপকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে আমরা কঠিন সময় পার করছি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মানুষের জীবনের চাহিদা মেটাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য আকাশচুম্বি এবং ব্যাংকিং খাতে ঋণখেলাপির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।
রওশন এরশাদ বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বর্তমানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে উচ্চমাত্রার মূল্যস্ফীতি। মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে, গত মে মাসে মূল্যস্ফীতির এই হার দাঁড়িয়েছে। এই হার গত প্রায় এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ। আগামী অর্থবছরের জন্য মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ শতাংশ। এটি অর্জন করতে হলে এখন থেকেই বিভিন্ন বাস্তবসম্মত ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। মূল্যস্ফীতি যদি ঠিক মতো নিয়ন্ত্রণ না করা যায়, তাহলে অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
জি এম কাদের বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।

এক কথায় বাজেটটি গতানুগতিক এবং চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) মতো সব খাতকে একটি নির্দিষ্ট হারে বাড়িয়ে নতুনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে (২০২৩-২৪) প্রস্তাবিত বাজেট। রাজস্ব আয় আহরণ, উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়ন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, প্রবৃদ্ধি অর্জন ইত্যাদিতে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। ফলশ্রæতিতে প্রস্তাবিত বাজেটটি বাস্তবায়ন সম্ভব বলে মনে হয় না।
তিনি জানান, বর্তমানে দেশি-বিদেশি ঋণ এবং প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ঋণ যোগ করলে আমাদের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ২১৭ দশমিক ৯২৬ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে বিদেশি ঋণের পরিমাণ হলো ১০৮ দশমিক ২০০ বিলিয়ন ডলার এবং দেশি ঋণের পরিমাণ হল ১০৯ দশমিক ৭২৬ বিলিয়ন ডলার। প্রস্তাবিত জিডিপির ৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ ঋণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে আমাদের বিদেশি ঋণের পরিমাণ ৯৬ দশমিক ২০০ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নেয়া হবে আরো ১০ বিলিয়ন ডলার এবং ঋণ পরিশোধের জন্য নিতে হবে আরো ২ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ মোট লোন নিতে হবে ১২ বিলিয়ন ডলার। মোডিস সার্বভৌম রেটিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান নিচে নেমে যাওয়ায় বিদেশি সূত্র থেকে ঋণ পাওয়া কষ্ট কর হবে।
তিনি বলেন, বিবিএস এর জরিপ অনুযায়ী চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে বিবিএস প্রকাশিত মূল্যস্ফীতির চেয়ে বাস্তবের মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি। জি এম কাদের বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বাড়ার প্রভাবে আমাদের দেশে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যায়, যদিও বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলসহ সব ধরনের পন্যের দাম কমলেও আমাদের দেশে কোনো পণ্যের দাম কমেনি।
তিনি আরো বলেন, এবারের বাজেটে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ের কথা বলা হয়েছে। ব্যয়ের দিক থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের পেছনে ব্যয় অনেক বাড়ানো হয়েছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট বরাদ্দের ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ ছিল জনপ্রশাসনে। এবার সেটি বাড়িয়ে ২২ শতাংশ করা হয়েছে। অর্থাৎ ব্যয়ের সবচেয়ে বড় অংশ যাচ্ছে সরকারি চাকরিজীবীদের পেছনে। গত বছরের চেয়ে যা আরো বেড়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়